টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের স্থপতি মেরিনা
মার্কিন সাময়িকী টাইম’র করা বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। স¤প্রতি প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির এই তালিকা প্রকাশ করেছে টাইম। তালিকায় স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম উদ্ভাবক শ্রেণিতে স্থান পেয়েছেন।
তার সঙ্গে তালিকায় থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন— রাশিয়ার ইউলিয়া নাভালনায়া, শান্তিতে নোবেলজয়ী ইরানের মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মোহাম্মদী, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কসহ পরিচিত অনেক মুখ। ভারতের চলচ্চিত্র অভিনেত্রী আলিয়া ভাট শিল্পী শ্রেণিতে এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
স্থানীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ ধরে রেখে প্রকৃতিবান্ধব টেকসই নকশা তৈরির প্রতিশ্রুতির জন্য এই তালিকায় উদ্ভাবক বিভাগে নাম যুক্ত হয় মেরিনা তাবাসসুমের। একইসঙ্গে অভিন্ন গ্রহটি যেসব ঝুঁকির মুখোমুখি হয় সেগুলোকে তিনি অগ্রাধিকার দেন বলে জানানো হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। টাইম ম্যাগাজিনের জন্য হার্ভার্ড স্কুল ফর ডিজাইনের ডিন সারাহ হোয়াইটিংয়ের লেখা তাবাসসুমের প্রশংসাপত্রে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বড় ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশে মেরিনা তাবাসসুম এমন এক ঘরানার বাড়ি তৈরি করেছেন, যার নির্মাণ ব্যয় যেমন কম, তেমনি এই বাড়ি সহজে স্থানান্তরও করা যায়।
বাংলাদেশের ঢাকায় মেরিনার বানানো বাইত উর রউফ মসজিদ মর্যাদাপূর্ণ আগা খান পুরস্কার জিতেছে উল্লেখ করে সারাহ বলেন, ‘কৃত্রিম কোনো সাহায্য ছাড়াই এই ভবনে আলো—বাতাস প্রবেশ করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যার ঝুঁকি বাড়তে থাকা একটি দেশে তিনি এমন সব বাড়ির নকশা করেছেন যেগুলো কম খরচে নির্মাণ করা যায় ও সহজে সরিয়ে ফেলা যায়। ভবনগুলোতে কেবল প্রাকৃতিকভাবে আলো—বাতাস প্রবেশই নয়; প্রকৃতির কোনো ক্ষতির কারণ যেন না হয় সেদিকেও খেয়াল রেখেছেন তিনি।’
তিনি বলেন, তাবাসসুম একজন শিক্ষক ও বক্তা হিসেবেও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। মেরিনা স্থাপত্যকে ব্যক্তিগত কাজ হিসেবে নয় বরং একে সম্মিলিত আন্তর্জাতিক রূপে তুলে ধরেছেন। আবদুল্লাহপুরের বাইত উর রউফ মসজিদের জন্য তার তৈরি নকশা দিয়ে পরিচিতি পান। মসজিদটিতে দেশের ঐতিহ্য নকশায় ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের স্থপতিদের অনুপ্রাণিত করেছেন। গম্বুজের ব্যবহার না করা, ব্যতিক্রমী স্তম্ভ, মাটির প্যালেটের ব্যবহার এবং সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে যেটি, সেটি হলো ছাদ ও দেয়ালের ছিদ্র দিয়ে মসজিদের ভেতরে আলোর প্রবাহ।
এর আগে ২০১৬ সালে স্থাপত্যে ভূমিকা রেখে আগা খান পুরস্কার এবং ২০২১ সালে আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস অ্যাওয়ার্ডসের সোয়ান পদক পেয়েছিলেন মেরিনা। ২০২২ সালে লিসবন আর্কিটেকচার ট্রিয়েনালে মিলেনিয়াম লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী হন তিনি। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টস। ১৯৯৪ সালে বুয়েট থেকে সড়বাতক হওয়ার পর ১৯৯৫ সাল থেকে আরবানায় কর্মরত ছিলেন। এর সহপ্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন তিনি।
রাজু আলীম