পরকীয়া অনেকটা তুষের আগুন…
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে, আমাদের রাজধানী শহরে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সামান্য কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটছে। একটা সময় স্বামী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা ছিল বেশি। এখন উল্টো চিত্র। স্ত্রী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা বাড়ছে। সামান্য কথা কাটাকাটি অথবা মনমালিন্য থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভের শুরু। একজন অন্যজনকে ছোট করে দেখার প্রবণতা, পরস্পরকে তুচ্ছ করে দেখার মানসিকতা তুষের আগুন হয়ে ওঠে। হঠাৎ তুষের আগুন জ্বলে ওঠে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্ত্রীই স্বামীর উদ্দেশে বলে ওঠে, থাকব না আমি তোমার সঙ্গে। তুমি তোমার মতো থাকো। আমি আমার মতো থাকি। গুড বাই।

সংসার হলো বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিভূমি। শ্রদ্ধা+সম্মান+ভালোবাসা+আদর-স্নেহ= একটি সুখি পরিবার। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ইদানিং অনেক পরিবারে এই বিষয়গুলো গুরুত্ব পায় না। যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে খান খান অবস্থা। একক পরিবরে স্বামী, স্ত্রী আর তাদের সন্তানদ্বারা আর কোনো সদস্য থাকে না। ফলে কথা বলার মানুষের অভাব। এই সুযোগটা নেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কথাটা আরেকটু পরিস্কার করা দরকার। সুযোগটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নেয় না। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুকে সুযোগ নেই। একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই:
স্বামী-স্ত্রীর ছোট্ট সংসার। স্বামী প্রতিদিন সকালে নাস্তা খেয়ে অফিসে চলে যায়। ফেরে সন্ধ্যা অথবা রাতে। স্ত্রীর পাশে সারাদিন কেউ থাকে না। তার সঙ্গী হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেসবুক চর্চায় মেতে ওঠে। ফেসবুকে কত যে বন্ধু! মেয়েদের জন্য বন্ধুর অভাব হয় না। সুন্দরী নারী হলে তো কথাই নেই। পুরুষ মৌমাছির নানান প্রলোভন শুরু হয়। সারাদিন তুমি একা থাকো কী করে! তোমার জীবনটা তো দেকখি তেজপাতা হয়ে গেছে। আমি তোমার বন্ধু হতে চাই। কত যে মিষ্টি কথার ফুলঝুরি! সর্বনাশা এক নেশার খপ্পরে পড়ে স্ত্রী। আগে হয়তো লুকিয়ে ফেসবুক-বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতো। একটা সময় স্বামীর সামনেই ফেসবুক-বন্ধুর সাথে কথা বলে। রাতে হয়তো পাশাপাশি শুয়ে আছে, কিন্তু স্ত্রীর কথা চলছে তার ফেসবুক-বন্ধুর সঙ্গে। স্বামীর মনে সন্দেহের ক্ষোভ বয়ে যায়। স্ত্রীকে প্রশ্ন করতেই বাধে বিপত্তি। কী তুমি আমাকে সন্দেহ করো! থাকব না তোমার সাথে।
স্ত্রী সিন্ধান্ত নেয় এই বন্দীজীবনে আর একদিনও না। মুক্তজীবন খুঁজে নেয় স্ত্রী। অথচ একটু সমঝোতা, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসাকে গুরুত্ব দিলে সংসারটা সত্যিকার অর্থেই সুন্দর হতে পারতো। স্বামী বাসায় ফিরে কাজটা ভাগাভাগী করে নিলেই সংসার ভাঙ্গন রোধ করা যেত।
এ কথা সত্য বিচ্ছেদ প্রকৃত অর্থে স্বামী-স্ত্রী কারো জন্যই মঙ্গল বয়ে আনে না। স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছেদের বলি হয় কোমলমতি সন্তানেরা।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ দেখে যে সন্তানেরা বড় হয় তারা সুন্দর সৃজনশীল শৈশব পায় না। ফলে তারা অনেকটা প্রতিশোধ পরায়ণ মানসিকতার নিয়ে বেড়ে ওঠে।
পরকীয়া কখনোই সুখের হয় না। সুখের হাতছানি দেয় ঠিকই, শেষ পর্যন্ত সুখ স্থায়ী হয় না। কাজেই বন্ধু সাবধান!