আহা! আমার ভাইটা নেই

আহসান হাবীব

বেঁচে থাকলে তার বয়স হত ৭৭ বছর। তার জন্মদিনে তাকে নিয়ে একটা গল্প শেয়ার করি। ১৯৭৫ সাল। আমার মেট্রিক পরীক্ষা চলছে। বাংলা ফার্স্ট পেপার সেকেন্ড পেপার পরীক্ষা হয়ে গেছে।

ইংরেজী ফার্ষ্ট পেপার পরীক্ষাও হয়ে গেছে। পর্শু সেকেন্ড পেপার পরীক্ষা। বাবর রোডের বাসায় চিলেকোঠায় বসে পড়ছি। রাত বাজে দুটো। এর মধ্যে বড় ভাই এসে হাজির। এসেই বলল “যাতো দুটো সিগারেট নিয়ে আয়।” আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, রাত দুটোয় সিগারেট আনতে যেতে হবে। আমার যে মেট্রিক পরীক্ষা তার কোনো গুরুত্বই নেই। কি আর করা! বেজার মুখে
সিগারেট আনতে ছুটলাম। সিগারেটের দোকান খোলাই থাকে। দুটো বৃস্টল সিগারেট কিনলাম।

No photo description available.

ফিরে এসে দেখি সে আমার ইংরেজী গ্রামার বই হতে নিয়ে বসে আছে, মানে ঘাটাঘাটি করছে। মনে মনে ভাবলাম সাড়ে সর্বনাশ এখন যদি ট্রান্সলেশন ধরে বসে তাহলে তো আমার কম্মো সাবার। ঠিক তাই হল,
বলল, “তারা বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলেছিল।” এর ইংরেজী কি হবে? আমি বললাম-
– they played football under the rain.
– হয় নাই, they played football in the rain.
আরো দুটো ট্রান্সলেশন ধরল। সে দুটাও মনে হয় ভুল করলাম। আসলে ভয়ের চোটে ভুল করছিলাম। সে
দেখলাম ভ্রু কুঁচকে ফেলেছে। বলল,
– সাদা কাগজ আছে?
– আছে।
– লেখ “আমি অতি অবশ্য ইংরেজীতে ফেল করিব।”, লিখেছিস?
– হ্যাঁ লিখেছি।
– দেখা।
দেখালাম। সে পর পর দুই বৃস্টল সিগারেট ধ্বংস করে ভ্রু কুঁচকেই চলে গেল। আমি মেজাজ খারাপ করে বসে থাকলাম। তবে না ফেল করিনি। ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েই পাশ করেছিলাম মোহম্মদপুর স্কুল থেকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে। পরবর্তীতে বড় ভাইয়ের মেট্রিকের মার্কশীট দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। মনে আছে সে তখন মেট্রিকে বোর্ডে সেকেন্ড হয়ে পাশ করেছিল। পেপারে তার ছবি ছাপা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মার্ক শীটে দেখি সব সাবজেক্টে তার লেটার মার্ক শুধু ইংরেজী সেকেন্ড পেপার মাত্র ৩৪!! যাকে বলে কানের পাশ দিয়ে গুলি। আর আমি পেয়েছিলাম ৫৪ … তার থেকে ২০ বেশি … হা হা হা। তবে তার এই ৩৪ পাওয়ায় সে নাকি ভিতরে ভিতরে রেগে গিয়েছিল। রাগের চোটে আস্ত একটা ডিকশনারীর সব শব্দ সে মুখস্ত করে ফেলেছিল দু-তিন মাসে! ভাবা যায়?

সম্পর্কিত

আহা আমার বড় ভাইটা নেই। বেঁচে থাকলে এই ঘটনাটা পারিবারিক কোন আড্ডায় তার সাথে শেয়ার করা যেত এখন। “আমি অতি অবশ্য ইংরেজীতে ফেল করব” লেখা কাগজটা হয়ত খুঁজলে এখনো পাওয়া যাবে। কাগজটা দেখাতাম। সে কি বলত? কে জানে তার কোন হাসির নাটকের হয়ত বিষয় হয়ে যেতাম! ব্যাপারটা এমন না যে পরে আমি ইংরেজীর জাহাজ হয়ে গেছি। এখনো ডুবো জাহাজই আছি। তবে ভুল করলে এখন আর সুধরে দেয়ার মানুষটা যে আর নেই। শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ… আমাদের দাদাভাই!