কিংবদন্তির জন্মদিনে শুভেচ্ছা
হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে ও চলেচ্চিত্রের ক্ষেত্রে একজন কিংবদন্তির নাম। একজন জাদুকরের নাম। তাঁর হাতে ছিল একটি জাদুর কলম। সেই কলম দিয়ে তিনি একেছেন বাংলা ভাষাভাষি মানুষের জীবন সংগ্রাম। পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যের পাঠক সৃষ্টি করেছেন। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায় তিনি রচনা করেছেন কালজয়ী সব আখ্যান। এ-দেশের সাধারণ মানুষের কথা তাঁর কলমে উঠে এসেছে পরম মমতায়। কখনো তিনি মানুষকে হাসিয়েছেন, কখনো কাঁদিয়েছেন। বাংলা ভাষাভাষি মানুষের আনন্দ-বেদনায় হুমায়ূন এক অনিবার্য নাম।
এটা সর্বজন বিদিত যে, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পর এমন জনপ্রিয় লেখক বাংলাভাষায় আর আসেননি। আবার কবে আসবেন তাও আমরা জানি না। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে লেখাপড়া জানা কোনো মানুষ যদি সারা জীবনে হাতেগোনা কিছু গল্প-উপন্যাস পড়ে থাকেন তাহলে তার মধ্যে অবশ্যই হুমায়ূন আহমেদের একটি বই হলেও ছিল। শুধু গল্পকার, ঔপন্যাসিক হিসেবে নয়, টিভি-নাটক, চলচ্চিত্র রচনা ও পরিচালনায়ও তিনি অর্জন করেছিলেন অনন্য উচ্চতা। তাঁর রচিত এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, আজ রবিবার, নক্ষত্রের রাত, উড়ে যায় বকপক্ষী ইত্যাদি নাটকগুলো আজও সমান জনপ্রিয়। আজকের তরুণপ্রজন্মও খুব আগ্রহ নিয়ে সেসব নাটক দেখে ইউটিউবে। কিন্তু তারা কি কল্পনা করতে পারবেন নব্বই দশকে হুমায়ূন আহমেদ ঠিক কেমন ছিলেন? বইমেলায় তাঁর উপস্থিতি কীরকম তুফান ছুটিয়ে দিত অজস্র পাঠকের মনে! বইমেলায় তাঁর বই কেনার জন্য কতদূর পর্যন্ত গড়াত পাঠকের লাইন? তার একেকটি ছবি মুক্তি পেলে ঠিক কীরকম হৈচৈ পড়ে যেত এই বাংলাদেশে! শুধু তাঁর ছবি মুক্তি উপলক্ষে অনেক সিনেমা হল নতুন করে সাজানো হতো। মাসের পর মাস প্রদর্শিত হতো তাঁর একেকটি ছবি। বাংলাদেশের সাহিত্য-টিভি নাটক-চলচ্চিত্রে হুমায়ূন আহমেদ এক যুগ স্রষ্টার নাম।
আজ ১৩ নভেম্বর, বাংলাদেশের বাংলা ভাষার এই কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিকের ৭৮ তম জন্মদিন। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে আনন্দ আলোর এই আন্তরিক আয়োজন। আজ সারাদিন শুধু হুমায়ূনকেই নিয়ে কথা চলবে। মূলত এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মনে হুমায়ূন আহমেদকে নতুনভাবে তুলে ধরতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। পাশাপাশি পুরনো দিনের মানুষ, হুমায়ূন-ভক্তদের সাথে কিছুটা স্মৃতি নিজেদের ভাগাভাগী করে নেওয়া। শুভ জন্মদিন নির্মানের মহান কারিগর, বাংলা ভাষার সেরা লেখক হুমায়ূন আহমেদ।