হুমায়ূনের ম্যাজিক নিয়ে যা বললেন জুয়েল আইচ

লেখালেখির পাশাপাশি ম্যাজিক অর্থাৎ জাদুর প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল হুমায়ূন আহমেদের। প্রিয়জন অর্থাৎ কাছের মানুষদের জাদু দেখিয়ে বেশ আনন্দ পেতেন। বিশ্বখ্যাত জাদুকর জুয়েল আইচ স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদের জাদু দেখে মুগ্ধ হতেন। যদিও জাদু বিদ্যায় হুমায়ূনের হাত পাকানোর পেছনে জুয়েল আইচের অবদান অনেক। প্রসঙ্গক্রমে জুয়েল আইচ বললেন, ক্লোজআপ ম্যাজিকের ক্ষেত্রে হুমায়ূন ভাই অসাধারন পারদর্শি ছিলেন। বিশেষ করে পাসিং এ তাঁর দক্ষতা অবিশ্বাস্য। হুমায়ূন আহমেদ হাতের তালুতে একটি কয়েন রেখে মুহূর্তের মধ্যে সেটাকে অদৃশ্য করে দিতেন। তারপর সেই কয়েনটি বের করে আনতেন সামনে বসা কারও মাথার চুল বা কানের ভিতর থেকে। তাঁর আরেকটি জনপ্রিয় ম্যাজিক ছিল কেউ একজন হাত মুঠো করে রাখলে, হুমায়ূন আহমেদ সিগারেটের ছাই নিয়ে সেই মুস্টিবদ্ধ হাতের উপর রাখতেন এবং আঙ্গুল দিয়ে ঘষে মিলিয়ে দিতেন। তারপর যখন হাত খোলা হতো, দেখা যেত ছাই লেগে আছে হাতের তালুতে। তিনি তাসের ম্যাজিকের ক্ষেত্রেও সমান দক্ষ ছিলেন।

হুমায়ূন আহমেদের জাদু বিদ্যার গুরুত্বপুর্ন তথ্য প্রকাশ করেছেন পাক্ষিক অন্যদিক এর সম্পাদক, কথাসাহিত্যিক মাজাহারুল ইসলাম। স্মৃতির জানালা খুলে মাজহার বললেন, একটা স্টিলের ট্রাংকে হুমায়ূন আহমেদের জাদুর সরঞ্জাম থাকতো। মজা করে নিজের নামের আদ্যাক্ষরের সঙ্গে আমার নামের আদ্যাক্ষর মিলিয়ে একটি ম্যাজিক কোম্পানী খুলেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন এইচ এম ম্যাজিশিয়ান কোম্পানী। ধানমন্ডিতে দক্ষিণ হাওয়া অথবা নুহাশ পল্লীতে কোনো অতিথি এলেই এইচএম ম্যাজিশিয়ান কোম্পানী জাদু দেখতো। মূলত: হুমায়ূন আহমেদ জাদু দেখাতেন আমি থাকতাম তাঁর সহকারি। নতুন কোনো জাদু শিখলেই খবর দিতেন বিশ্বনন্দিত জাদুকর জুয়েল আইচকে। সময় বের করে জুয়েল আইচ ছুটে আসতেন। হুমায়ূন আহমেদ তাকে জাদু দেখাতেন। জুয়েল আইচ নীরবে হুমায়ূনের জাদু উপভোগ করতেন। জুয়েল আইচকে জাদু দেখাতে পেরে শিশুর মতো খুশি হতেন হুমায়ূন আহমেদ।

আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমানকেও একবার জাদু দেখিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। সেই দিনের স্মৃতি তুলে ধরে রেজানুর রহমান বললেন, আনন্দ আলোর কোনো এক ঈদ সংখ্যার লেখা আনার জন্য ধানমন্ডিতে দখিন হাওয়ায় গিয়েছিলাম। হুমায়ূন আহমেদ ঈদ সংখ্যার লেখা দিলেন। আমি চলে আসব ভাবছি। তিনি বললেন, রেজানুর বস। তোমাকে একটা জাদু দেখাব। তাঁর কথা শুনে আমি বিস্মিত। ড্রয়িং রুমের মেঝেতে বসে পড়লাম। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর জাদুর বাক্স খুলে একটা দড়ি বের করলেন। দড়ির দুই মুখ খোলা। আমাকে বার বার সেটা দেখালেন। তারপর হাতের কারসাজিতে কী যে করলেন, চেয়ে দেখি দড়ির মুখ বন্ধ। জোরে টান দিয়েও খুলতে পারলাম না।