Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি খান

ভাই, আপনার বয়স কত? ডাক্তারের প্রশ্ন শুনে হবিবর একটু থতমত খেলেন। কোন বয়সটা বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। সার্টিফিকেট অনুযায়ী এখন তার বয়স চলছে ৪৭। তবে অরিজিনাল বয়স আরও বেশি হবে। ৪৭ এর সঙ্গে দুই বছর যোগ করতে হবে। তাহলে প্রকৃত বয়স দাঁড়াবে ৪৯ বছর। সরকারি চাকরি পেতে যাতে সুবিধা হয় সে জন্য এসএসসি পরীক্ষায় ফরম বোর্ডের ফিলআপের সময় বয়স দুই বছর কমিয়ে দিয়েছিল হবিবর। ডাক্তার আবার একই প্রশ্ন করলেন, ভাই আপনার বয়স বলেন ৫০ ক্রস করেছে?

না, এখনও ৫০ ক্রস করে নাই। এসএসসির সার্টিফিকেট অনুযায়ী আমার বর্তমান বয়স ৪৭। আর যদি অরিজিনাল বয়স ধরেন তাহলে ৪৯।

হবিবরের কথা শুনে ডাক্তার মৃদু হেসে বললেন, আপনার ওজন কত?

হবিবর বিব্রত হয়ে বলল, ডাক্তার সাহেব ওজন তো কোনোদিন মাপি নাই।

ডাক্তার কলিং বেল টিপলেন। পিয়ন দৌড়ে এসে বলল,

জি স্যার…

ডাক্তার পিয়নকে ওজন মাপার যন্ত্র আনতে বললেন। পিয়ন দৌড়ে গিয়ে ওজন মাপার যন্ত্র নিয়ে এলো। ডাক্তারের নির্দেশ মতো হবিবর নিজের ওজন মাপলেন। শরীরের ওজন দাঁড়িয়েছে ৮৩ কেজি। পিয়ন ওজন মাপার যন্ত্র নিয়ে চলে গেল। হবিবর চেয়ার টেনে নিয়ে ডাক্তারের মুখোমুখি বসতেই ডাক্তার আবার প্রশ্ন করলেনÑ আপনার হাইট?

হবিবর বলল, ৫ফুট ৫ইঞ্চি।

কি খেতে পছন্দ করেন? মাছ না মাংস?

ডাক্তারের প্রশ্ন শুনে হবিবর ভেবে নিয়ে বলল, মাছ মাংস দুটাই পছন্দ। তবে গরুর মাংস একটু বেশি পছন্দ! গরুর মাংসের রান্না দেখলে নিজেকে সামলাতে পারি না। হবিবরের কথা শুনে ডাক্তার অবাক হয়ে বললেন, এই বয়সে গরুর মাংস খাচ্ছেন এটা তো ঠিক নয় ভাই।

ডাক্তারের কথা শুনে হবিবর আগের মতোই বলল, ডাক্তার সাহেব ছোটবেলা থেকেই গরুর মাংস আমার ফেভারিট খাবার। এক বাসায় দেড়কেজি গরুর মাংস খাবার রেকর্ড আছে আমার। এখন অবশ্য সেটা পারি না। তবুও হাফ কেজি না হলে চলে না।

হবিবরের কথা শুনে ডাক্তার একটু যেন চিন্তিত হয়ে গেলেন। রোগীর স্বাস্থ্য যেমন মোটা সেই তুলনায় খাবারের ক্ষেত্রে তো বাচ-বিচার নাই। এই লোক খাবারের ব্যাপারে সচেতন না থাকলে তো বিপদে পড়বে।

ডাক্তার এবার আগ্রহভরে হবিবরের দিকে তাকালেনÑ আচ্ছা, আপনি কি নিয়মিত চা খান?

হবিবর বলল, হ্যাঁ। চা ছাড়া আমার চলে না।

দিনে কয় কাপ?

তা ধরেন গিয়ে কম করে হলেও ৮/১০ কাপ। কোনো কোনো দিন তারও বেশি খাই…

নিশ্চয়ই দুধ চা।

হ্যাঁ। দুধ ছাড়া চা খেলে আমি তৃপ্তি পাই না।

সঙ্গে কি চিনি থাকে?

হ্যাঁ। চিনি ছাড়া চা খেতে মজা নাই। চা না খেলে আমি মাথা ঠিক রাখতে পারি না।

ডাক্তার এবার সত্যি সত্যি অবাক হলেন। হবিবরের জন্য তার দুশ্চিন্তা হচ্ছে। এই লোক খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সচেতন না হলে, চিনিসহ চা খাওয়া কমিয়ে না দিলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে। হবিবরের দিকে সহানুভ‚তির দৃষ্টিতে তাকালেনÑ

ভাই আমি একজন ডাক্তার। আমার একটা পরামর্শ রাখবেন?

হবিবর আগ্রহ দেখিয়ে বললÑ পরামর্শ! বলেন।

একটা বয়সে খাবার-দাবারের ব্যাপারে প্রতিটি মানুষের উচিত সচেতন থাকা। এটা কি বিশ্বাস করেন? হবিবর মাথা নেড়ে বললÑ হ্যাঁ বিশ্বাস করি। কিন্তু জিহŸারে তো কন্ট্রোল করতে পারি না।

ডাক্তার বললেনÑ যে কোনো মূল্যে জিহŸাকে কন্ট্রোল করতেই হবে। আর একটা কথা। প্রতিদিন সাধারণ দুধ দিয়ে কাপের পর কাপ চা খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

চা খাওয়া বন্ধ করতে হবে শুনে হৈ হৈ করে উঠলো হবিবরÑ আপনি কি বলতেছেন এইসব? চা ছাড়া তো আমার একদÐ চলবে না।

ডাক্তার মৃদু হেসে বললেনÑ আমি আপনাকে চা খেতে নিষেধ করতেছি না। তবে সাধারণ তিনি দিয়ে চা খেতে নিষেধ করছি। সাধারণ চিনি খাওয়া একদম বাদ। হবিবর অবাক হয়ে বললÑ চিনির আবার সাধারণ, অসাধারণ আছে নাকি?

HEALTH-1ডাক্তার বললেনÑ অবশ্যই আছে। আপনি চিনি দিয়ে চা খেতে চাইলে জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনির প্রতি ভরসা রাখতে পারেন। শুধু চায়ে নয়, পায়েসসহ মিষ্টি জাতীয় খাবারেও জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি ব্যবহার করুন। চর্বি জাতীয় ও মুখরোচক খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন দেখবেন আপনার শরীর অনেক ঝরঝরা লাগবে। কাজ কর্মে শক্তি পাবেন। আমার পরামর্শগুলো মেনে চলবেন প্লিজ…

ডাক্তারের কথা শোনার পর হবিবরের কেন যেন মনে হলো খাবারের অভ্যাসগুলো একবার বদলে ফেলে দেখি না অবস্থা কি দাঁড়ায়। মুখরোচক খাবার পরিহার করতে থাকলো হবিবর। চায়ে সাধারণ চিনির পরিবর্তে জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি খেতে শুরু করলো। কয়েকমাস পর তার মনে হলো শরীর আগের চেয়ে হালকা বোধ হচ্ছে। আগের মতো মাথা ব্যথা নেই। নেই অবসাদ। যখন তখন ঝিমুনি, ঘুম ঘুম ভাব এখন আর হয় না। হবিবর যাকেই কাছে পায় তাকেই পরামর্শ দিতে শুরু করলোÑ ভাইরে খাবার নিয়ন্ত্রণ করেন। সাধারণ চিনি দিয়ে দুধ চা খাবেন না। চায়ে যদি চিনি খেতেই চান তাহলে জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনির প্রতি গুরুত্ব দিন।

সাম্প্রতিক কালের এক গবেষণায় দেখা গেছে দেশে উৎপাদিত ও বিদেশ থেকে আমদানি করা চিনিতে নানান ধরনের কেমিক্যাল মেশানোর কারণে মানুষের প্রচুর অসুখ-বিসুখ দেখা দিচ্ছে। যাদের বয়স ৪০ অতিক্রম করেছে ক্যালরীসম্পন্ন চিনি খাওয়ার ফলে তাদের হাই প্রেসার, ডায়াবেটিস, অবসাদগ্রস্ত হওয়া, রক্তে কোলস্টেরল বেড়ে যাওয়াসহ নানান অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডাক্তারের মতে চিনি বর্জন করে জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি ব্যবহার করলে মারাত্মক সব রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি ব্যবহার করে আপনি যে উপকার পাবেন তার মধ্যে আছেÑ

১। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারাও এই চিনি নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন।

২। সব বয়সী মানুষ এই চিনি সব খাবারের সঙ্গে খেতে পারবেন।

৩। চা, কফি ও পায়েসের সঙ্গে এই চিনি ব্যবহার করে খেলে স্বাদ সাধারণ চিনির মতোই মনে হবে।

৪। যারা অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তারা এই চিনি খেলে অবসাদ দূর হয়ে যাবে।

৫। চিনি ব্যবহারে প্রেসারের ঝুঁকি কমাবে।

৬। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে।

৭। এই চিনি সব ধরনের খাবারে ব্যবহার করা যাবে যেমন দই, মিষ্টি, পায়েস, শরবতসহ মিষ্টি জাতীয় নানা খাবার।

জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি শুধু খেলেই ডায়েট সম্পন্ন হবে না। তার সঙ্গে ব্যায়াম করাও জরুরি। অনেকে জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার সময় পান না। তাঁরা বাসায় হালকা ব্যায়ামও করতে পারেন।

বাজারে অনেক জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনির প্যাকেট পাওয়া যায়। দাম সাধারণ চিনির মতোই। সাধারণ চিনির চেয়ে দানা একটু ছোট। স্বচ্ছ ও পরিষ্কার সাদা দানার এই জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি বাজারের প্রতিটি স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। তবে আপনাকে আসল জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি বেছে নিতে হবে। ভালো ব্র্যান্ডের জিরোক্যালরী চিনি কিনতে ভুলবে না।

শুধু অতিরিক্ত মোটা বা মেদবহুল মানুষ জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি খাবেন এমন কোনো কথা নেই। যারা স্বাস্থ্য সচেতন, যারা আগামী দিনে সুস্থ থাকতে চান, সুন্দর স্বাভাবিক জীবন চান তাদের এই চিনি খাওয়া উচিত। এই চিনি খাওয়ার ফলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। ডাক্তাররাও ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন সাধারণ চিনি না খাওয়ার জন্য। অনেকেই চায়ে কম চিনি খান অর্থাৎ এক কাপে এক বা দেড় চামচ চিনি খান। কিন্তু কম চিনি খেলেও তাতে ক্যালরী কিন্তু ঠিকই থাকে। তাই যতটুকু সম্ভব জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি অর্থাৎ ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হাইপ্রেসার ও কোলস্টেরেল কম হবে।