Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

নায়ক রাজের বিয়ের গল্প শর্ত একটাই আগে মেয়েকে দেখাতে হবে

-নায়করাজ রাজ্জাক

একজন নারী কন্যা, জায়া, জননী এই তিন রূপে আমাদের সমাজ সংসারে তার ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এক্ষেত্রে সবার ভূমিকা সমান থাকে না। সবাই সমান ভূমিকা নেনও না। তবে খায়রুন্নেসা একটু ব্যতিক্রম। যাকে বলে আটপৌরে, খায়রুন্নেসা তেমনি। তার কোনো অভিযোগ, অনুযোগ, প্রতিবাদ, কিছুই ছিল না, আজও নেই। ষাটের অর্ধেক, সত্তর ও আশির দশকের সুন্দরতম, পৌরুষদীপ্ত. জনপ্রিয় একজন নায়ক ছিলেন খায়রুন্নেসার স্বামী। এমন চৌকশ স্বামীকে ঘিরে নায়িকাদের প্রণয়, ভালোবাসা, মধুচন্দ্রিমায় যাওয়ার কতশত গল্প কথা আর অনুযোগ খায়রুনের কানে আছড়ে পড়তো কিন্তু ভ্রুক্ষেপ করতেন না খায়রুন। মুচকি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলতেন ও আমি বিশ্বাস করিনেকো। এজন্যই তার আরেক নাম লক্ষ্মী।

এমন সতী সাদ্ধী স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে নায়কের মায়া হতো। তাই কখনো সহকর্মী সুন্দরী নায়িকাদের দিকে তাকাতে পারতেন না। তাকে ছুঁতে পারেননি কোন গছিপ। মনে মনে আর পর্দায় সবার হৃদয়ের নায়ক হলেও বাসৱবে তিনি শুধু খায়রুনের অর্থাৎ লক্ষ্মীরই নায়ক। তাই তো তিনি এখনো ছেলে বুড়ো তরুণ-তরুণী এবং সব বয়সী মানুষের নায়করাজ রাজ্জাক আর খায়রুন্নেসা নায়করাজের প্রাণপ্রিয় ঘরনী এবং এদেশের নারী গৃহবধূ এবং আদর্শ স্ত্রীর একপ্রতিচ্ছবি।

এদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পুরনো এক মীথ এখনো সবার মাঝে ছড়িয়ে আছে সেটি হচ্ছে বিবাহিত নায়ক আর বিবাহিত নায়িকা দর্শকদের কাছে গ্রহণীয় হয় না। কিন্তু রাজ্জাক যখন প্রথম সিনেমা বেহুলার নায়ক তখন তার ছেলে বাপ্পার বয়স দুই বছর। নায়করাজ রাজ্জাকের বিয়ে এবং নায়ক হওয়ার আগে কেনইবা বিয়ে করেছিলেন সেই গল্প তার মুখ থেকেই শোনা যাক।

razzak-1আমার জন্ম কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। অত্যন্ত রক্ষণশীল ছিল আমাদের পরিবার। বলা যায় গোড়া মুসলিম। আমি যখন অভিনয় নিয়ে মোটামুটি ব্যসৱ হয়ে পড়ি, ঠিক তখনি আমার পরিবার থেকে বাধা আসে। কিন্তু আমার ইচ্ছা শক্তির কাছে সেই বাধা পেরিয়ে যেতে পেরেছি। এক্ষেত্রে আমার মেঝভাই অর্থাৎ প্রিয় মেঝদা আবদুল গফুর আমাকে সহযোগিতা, সাহস ও উৎসাহ দিয়ে গেছেন। তিনি আমাকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন যদি সিরিয়াস ভাবে অভিনয়কে পেশা  হিসেবে নিতে পারিস তাহলে অভিনয় নিয়ে ভাব। এরপর থেকে সত্যিকারেই অভিনয় নিয়েই চিনৱা আর স্বপ্ন দেখা শুরু করি। তবে মেঝদা এবং পরিবারের শংকা ছিল আমি আবার অভিনয়ের নাম করে অহেতুক ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ঘুরে বেড়াই কি না। কখনো যদি বান্ধবীদের সঙ্গে উল্টা পাল্টা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। তাই তারা নিশ্চিত হতে চাইলেন বিয়ে দিয়ে। শুধু অভিনয়ের স্বার্থে আমি বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম। তবে বিয়েরও শর্ত একটাই ছিল আমাকে আগে মেয়ে দেখাতে হবে। যদিও আমাদের পরিবারের রেওয়াজ ছিল বিয়ের আগে মেয়ে না দেখা। কিন্তু আমি এই শর্ত ভাঙতে চাইলাম। শেষ পর্যন্ত মেয়ে দেখার শর্ত পরিবার থেকে মেনে নেয়া হয়। একদিন আমি পরিবারের সঙ্গে মেয়ে দেখতে গেলাম। দেখার পর মনে হলো- হ্যাঁ এই মেয়েটি আমার জীবনসাথী হওয়ার মতো। তাকে বেশ পছন্দ হলো। কোনো কথা না বলে সম্মতি জানালাম। আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। ঘরে নিয়ে এলাম মেয়েটিকে। যার নাম খায়রুন্নেসা, ডাক নাম লক্ষ্মী। ১৯৬২ সালের ২ মার্চ এক সুন্দর দিনে আমরা বিয়ে করি। ওই সময় আমার বয়স ছিল ১৯ বছর।

লক্ষ্মীর সঙ্গে আমার সংসার শুরু হওয়ার প্রথম দিকেই আমি আমার সম্পর্কে তাকে ধারণা দিয়েছিলাম। শুধু তাই নয় আমার পারিপার্শ্বিক জীবন, পরিবেশ সম্পর্কেও তাকে ধারণা দেই। আমার প্রথম প্রেম সম্পর্কেও তাকে বিসৱারিত বলে দেই। কারণ কোনো দিন যদি আমার প্রেম সম্পর্কে অন্য কারো কাছ থেকে জেনে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে, তাই আগে থেকে সব বলে দেই।

মানুষের জীবনে দুরন্ত ও অস্থির এক সময় আসে টিনএজ বয়সে। ওই সময়টায় মানুষ প্রথম প্রেমে পড়ে। প্রেমে পড়ার ওই সময়টায় ঘুম আসে না, বুক ব্যথা করে কষ্টে, কেঁদে হালকা হতে ইচ্ছে করে। এমন একটি সময় আমিও পার করেছি। আমি তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। ওই সময় একটি মেয়েকে ভালোবেসেছিলাম। কি অদ্ভুত ভালোলাগার টান অনুভব করতাম তখন। কারো কাছে কিছুই বলতে পারতাম না। শুধু নিরবে ভালোবেসে গিয়েছি। সেই প্রেম মেট্রিক পাস করা পর্যন্ত টিকে ছিল। তাকে শুধু দূর থেকে দেখেছি। কাছে গিয়ে কিছু বলতে পারিনি। নির্জনে কোথাও দু’জনে বসে কথা বলার প্রচণ্ড ইচ্ছা হতো কিন্তু সম্ভব হয়নি। এই যে আমার প্রথম ভালোবাসার গল্প এটা লক্ষ্মী জানে, তাকে আমি সব বলেছি। বলা খুব দরকার ছিল। আসলে একজন নারীকে যখন বউ করে ঘরে নিয়ে আসা হয় তখনই তার কাছে সব বলা উচিত। কারণ স্ত্রী স্বামীর সব জানার অধিকার রাখে। না জানালে বরং অসুবিধা।