সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
ফারুক হোসেন
শিশুদের পাঠ দুই ধরণের। প্রথম পাঠ, তাকে পড়ে শোনানো হয়। বাবা, মা, ভাই-বোন ও কাছের মানুষরা তাকে, তার কানের কাছে জোরে জোরে পড়ে শোনানো দিয়েই শুরু হয় শিশুর পাঠাভ্যাস। তার পর শিশু আস্তে আস্তে নিজেই পড়তে শুরু করে। দুটোপর্ব মিলেই শিশুসাহিত্য। শিশুর পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হলে এই দুইপর্ব মিলে ৮ টি টিপস আছে। টিপসগুলো বিশ্বব্যাপি প্রচলিত।
প্রথম টিপস: শিশু যখন জন্মের পর হাসপাতাল থেকে ঘরে ফিরছে, তখনই তার কানের কাছে পড়তে হবে ছন্দবদ্ধ ছড়া। তালে তালে পড়া ছন্দ তাকে অনুরণিত করবে। তার ভেতরে খেলে যাবে ছন্দ, ছন্দের ঢেউ। সে আগ্রহী হয়ে উঠবে, এক নতুন অনুভুতিতে। এভাবেই তাকে প্রতিদিন ধীরে ধীরে কানের কাছে দেয়া যায় পাঠ, ছড়া, ছোট্টগল্প-সে না বুঝলেও শুনবে শব্দ, শব্দের ধ্বনি, তাল এবং আগ্রহী হয়ে উঠবে বারবার শুনতে।
দ্বিতীয় টিপস: কাছের মানুষদেরকে পড়তে হবে। শিশু দেখবে তার আপনজনরা বই নামের একটা কিছ ুহাতে নিয়ে দেখছে, চোখ বুলাচ্ছে, পড়ছে। এই কর্মটি দেখে সেও ভাববে, এটি একটি নিত্য কার কাজ। পাঠে বাবা-মায়ের মনোনিবেশ, উত্তেজনা, হাসি সে লক্ষ করবে। সেও তা করার চেষ্টা করবে।
তৃতীয় টিপস: ঘরে বড়ো বুক সেলফ থাকতে হবে, পড়ার ঘর থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। শিশুর চোখে পড়ে এমন সুন্দর ছোট্ট একটি বই কর্ণার অথবা দৃশ্যমান হয় এমন করে বই সাজানো থাকলেই চলবে। এতে শিশুটির দৃষ্টি বারবার বইয়ের দিকে যাবে এবং সে বইকে ভালোবেসে উঠবে। তার জন্য বই পড়ার একটি জায়গাও করে রাখা যেতে পারে।
চতুর্থ টিপস: কাছের লাইব্রেরিতে নিয়ে যেতে হবে শিশুকে। সে বই দেখবে এবং স্পর্ষ করবে। বই পছন্দ করবে এবং হাতে নেবে। আবার অন্য শিশুকেও দেখবে বই পড়তে এবং লাইব্রেরিতে সময় কাটাতে। বইয়ের এরকম একটি বড় জগত দেখে সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠবে।
পঞ্চম টিপস: শিশুকেই তার বইটি পছন্দ করতে দিতে হবে। সে নিজের মতো বই রাজ্যে ঘুরবে এবং তার ভালোলাগা আবিষ্কার করবে। প্রয়োজনে তাকে একদম হস্তক্ষেপ না করে, সহায়তা করা যেতে পারে। বইয়ের ভেতর কোন চাপ্টার নির্বাচনে সহায়তা করা যেতে পারে।
ষষ্ঠ টিপস: বইপড়া মানেই টেবিলে বসে একটি বই পড়তে হবে এমন নয়, তাকে সব সময়ই পড়ারসুযোগদিতেহবে। যেমনবাইরে ঘোরারসময়তাকেদিয়েসাইন বোর্ড পড়ানো যেতেপারে। রেস্টুরেন্টে বসে সে পড়তে পারে মেনু। রান্নার রেসিপি পড়তে পড়তে সে প্রশ্ন করতে মাকে রান্নার নানা বিষয়ে।
সপ্তম টিপস: একটি বই একবার পড়া থাকলে আবার পড়তে চাইলে বারণ করা যাবে না। যদি কোন বই বারবার সে পড়তে চায়, সে তার ভালো লাগা থেকেই তা করছে এবং এতে তার পড়ার অভ্যাস তৈরি হবে। তাকে বিরত রাখা যাবে না এই জন্য যে, ওই বইয়ের কাহিনী, শব্দ, বাক্য যেটি সে মনোযোগের সঙ্গে আগে পড়েনি, সেটিকে এবার পড়বে। তাকে পাঠের গভীরে যেতে সাহায্য করবে।
অষ্টম টিপস: বাবা-মা শিশুর প্রথম শিক্ষক। তিনিই শিশুকে প্রথম গাইড করেন। তাকে শিশুর পাশে দাঁড়াতে হবে ভালো কাজে, ভালো পদক্ষেপে। কোন বয়সে কোন বইটি আসলে তার প্রয়োজন সেটি প্রথমে বাবা-মাকেই বুঝতে হবে। আর সেই বোধ জাগাতে হবে শিশুর মনে কৌশলে। এভাবেই শিশু একদিন সঠিক পাঠক হয়ে উঠবে। সে পথভ্রষ্ট হবে না।