Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

জনপ্রিয় হচ্ছে মিউজিক ভিডিও

রেজানুর রহমান: গান তো এক সময় ছিল শুধুমাত্র শোনার বিষয়। রেডিও অথবা গ্রামোফোনে গান শোনা যেত। তবে গ্রামোফোন ছিল সাধারনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সাহেব বাবুদের বৈঠক খানায় শোভা পেত গ্রামোফোন। তাতে রেকর্ড বাজিয়ে গান শুনতেন সাহেব বাবুরা।

রেডিও ছিল সাধারণ মানুষের কাছে খুবই আগ্রাহর বিষয়। তবে ঘরে ঘরে রেডিও ছিল এমনটা নয়। শুধুতো রেডিও থাকলেই হবে না। তার জন্য ব্যাটারির প্রয়োজন। ব্যাটারি কেনার অর্থনৈতিক ঝক্কি ঝামেলা এড়াতে সহজে কেউ রেডিও কিনতে চাইতেন না। তবে একটু অবস্থাপন্ন যারা, শহরের মানুষের সাথে যোগাযোগ আছে, অথবা ‘বাবুগিরি’ মানসিকতার যারা ছিলেন তারা রেডিও কিনতেন। খবর শুনতেন নিয়মিত। তবে গানই ছিল সবার প্রথম পছন্দ। এইতো মনে হয় সেদিনের কথা। আমাদের দেশে রেডিও ছিল দারুন জনপ্রিয় প্রচার মাধ্যম। স্বাধীনতার আগে সংবাদপত্রের চেয়েও রেডিও ছিল বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে রেডিওতে গানের অনুষ্ঠান শোনার জন্য সবাই উম্মুখ হয়ে থাকতো। তখনকার দিনে সিনেমা ছিল বিনোদনের একমাত্র জনপ্রিয় মাধ্যম। সিনেমায় যে গানটি জনপ্রিয় হতো রেডিওতে সেই গানটিই বাজতো বেশী বেশী করে। অনুরোধের আসর সহ সঙ্গীত বিষয়ক একাধিক অনুষ্ঠান প্রচার হতো রেডিওতে। আর তা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন বাসা বাড়ি, অফিস আদালত সহ ফসলের ক্ষেতে কর্মরত কৃষক ভাইয়েরাও। রেডিওতে অনুষ্ঠান মানেই ছিল গানের উপস্থিতি। গান ছাড়া যেনো অনুষ্ঠান জমে না। এখনকার মতো টিভি চ্যানেলের আধিক্য না থাকায় তখনকার দিনে গানের শিল্পীরা চেহারা দেখানোর সুযোগ পেতেন না। তবুও তারা ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয় শ্রোতাদের কাছে। এক্ষেত্রে পত্র-পত্রিকার ভূমিকা ছিল বেশ গুরুত্বপুর্ণ। প্রিয় শিল্পীর ছবি প্রকাশ হয়েছে বিনোদন পত্রিকায়। সে কারনে বিনোদন পত্রিকার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিল সবার।

হঠাৎ করেই যেন যুগ পাল্টে গেল। শিল্পীদের গানের ক্যাসেট বের হলো। ফিতার মধ্যে শিল্পীদের গান যুক্ত হলো। এলো টেপ রেকর্ডার। এর ফলে গান শোনার ক্ষেত্রে আগ্রেহর স্রোতে এলো পরিবর্তন। রেডিওতে সময় বেধে দেওয়া আছে কোন অনুষ্ঠান কখন হবে। কাজেই ইচ্ছে করলেই তো প্রিয় শিল্পীর গান শোনা সম্ভব নয়। কিন্তু গানের ক্যাসেট ও টেপ রেকর্ডার নতুন পথ খুলে দিল। ক্যাসেট আর টেপ রেকর্ডার থাকলেই তো যখন তখন প্রিয় শিল্পীর গান শোনা যায়। ব্যস, গান শোনার নতুন পথে অনেকেই পা বাড়ালেন।

এবার হঠাৎ নয় আগাম জানান দিয়েই এলো নুতন ধারনা। ক্যাসেটের বদলে এলো গানের সিডি। কম্পিউটারে চালিয়ে সিডিতে সহজেই গান শোনা যায়। রেকডিং এর মান ভালোা। স্পষ্ট আওয়াজ। গানের সিডির প্রতি এবার ঝুকলেন শ্রোতারা। ফিতা বন্দী ক্যাসেটের যুগ যেন হারিয়ে গেল। এলো অডিও সিডির যুগ। ঘরে ঘরে কম্পিউটারে বাজতে শুরু করলো অডিও সিডি।

কিন্তু আবারও এলো পরিবর্তন। শুধু গান শুনে যেনো মন ভরছে না। সাথে শিল্পীকেও দেখার অগ্রহ দেখা দিল। শ্রোতার এই অগ্রহের পালে হাওয়া লাগালেন কিছু মিউজিক ভিডিও নির্মাতা। তারা গানের সাথে শিল্পীকেও দেখানো শুরু করলেন। মনোরম লোকেশনে নানা ভঙ্গিমায় গানের সাথে নেচে গেয়ে পারফরমেন্স করতে থাকলেন শিল্পীরা। শ্রোতারা নতুন পথের দিশা পেলেন। যিনি গাইবেন তাকেও দেখাও যাচ্ছে। কাজেই আগ্রহের জায়গা থেকে সরে যেতে থাকলো অডিও সিডি। ক্যাসেট তো আগেই সরে গেছে। শুরু হলো ভিডিও গানের নতুন যুগ। এখন গান মানেই শিল্পীর উপস্থিতি চাই। তাই মিউজিক ভিডিওর প্রতিই তখন শ্রোতার ব্যাপক আগ্রহ।

আনন্দ আলোর এই শীর্ষ কাহিনীর প্রয়োজনে সঙ্গীতাঙ্গনের অনেক তারকার সাথে আমাদের কথা হয়েছে। সকলে এক বাক্যে স্বীকার করেছেন ‘মিউজিক ভিডিও এখন সময়ের দাবী’। অর্থাৎ গান জনপ্রিয় করতে হলে ‘মিউজিক ভিডিও’র ধারনায় যুক্ত হতেই হবে।

music-video-1আমরা আনন্দ আলো যুগের প্রয়োজনকে অস্বীকার করতে চাই না। সেজন্য আমরা একথাও বলতে চাই না ক্যাসেটে গান শুনুন। এটা হলো পুরনো পদ্ধতি। যে সময়ে মানুষের হাতে হাতে একাধিক স্মার্ট ফোনের উপস্থিতি সেই সময়ে ক্যাসেটে গান শোনার কথা বলাই অযৌক্তিক। বরং অডিও সিডিও এই সময়ে কার্যকর নয়। পথে যেতে যেতে মোবাইল ফোনের স্ক্রীনে প্রিয় শিল্পীর গান শোনার সময় যদি তার ছবি দেখারও সুযোগ থাকে তাহলে আমি কেন থাকবো ক্যাসেট অথবা অডিও সিডির জামানায়। আমি নতুন পথেই পা ফেলবো। এটাই তো যুগের দাবী।

হ্যা, আমরাও বলি এটাই যুগের দাবী। তাই বলে আমরা যেন আমাদের শেকড়কে ভুলে না যাই। মিউজিক ভিডিওর নামে ইদানিং এমন কিছু হচ্ছে যা আমাদের সংস্কৃতির সাথে যায় না। মিউজিক ভিডিওতে গানের বানী, সুর জরুরি নাকি লোকেশন ও শিল্পীর শারিরীক অশোভন অঙ্গভঙ্গি জরুরি? এ ব্যাপারে সচেতনতা দরকার।

এক সময় গান ছিল শুধুমাত্র শোনার বিষয়। যুগের প্রয়োজনে দেখার বিষয়ও হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মানে এই নয় গান শোনাতে গিয়ে, গান দেখাতে গিয়ে অন্যকিছু দেখালাম। গানের সুরও বানী-গুরুত্ব পেল না। গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠলো অন্য কিছু…

এই ধারা বেগবান হলে গান আর গান থাকবে না।

প্রিয় পাঠক, বাংলা গান শুনুন। বাংলা গানের পক্ষেই থাকুন। সবার জন্য রইল শুভ কামনা।