সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
সবার পছন্দ কাবাব, কিমা আর ঝুরা মাংস
ঈদের রান্না কেমন হওয়া উচিৎ? সেই সাথে রান্নার প্রস্তুতির ধরনই বা কেমন হতে পারে? ঈদ এলেই এ ধরনের নানা প্রশ্ন গৃহিনীদের মাথায় ঘুরপাক খায়। অথচ একটু সচেতন হলেই এ ব্যাপারে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা সম্ভবণ্ড এমনটাই বললেন রন্ধন তারকারা। আনন্দ আলো এবং হোম এন ডেকোরের যৌথ আয়োজনে ঈদের রান্না বিষয়ক এক আড্ডায় রন্ধন তারকাদের যৌথ পরামর্শ ছিলণ্ড সব কিছুর মতো রান্না ও যত্ন চায়। এজন্য গৃহিনীদের সচেতনতাই জর“রি। আনন্দ মুখর এই আড্ডায় দেশের ঐতিহ্যবাহী রান্নার পাশাপাশি প্রায় হারিয়ে যেতে বসা আঞ্চলিক রান্নাকে গুর“ত্ব দেবার আহবান জানান হয়। দেশের ৯ জন রন্ধন তারকা যথাক্রমেণ্ড আলীয়া ওয়াহাব, ইয়াসমিন চৌধুরী লিপি, আঞ্জুমান্দ জাহিদ সেতু, নূরজাহান বেগম গুলু, উম্মাহ মোস্তফা, কানিজ ফাতিমা রিপা, জেবুন্নেসা বেগম, কাজী নাহিদ সুলতানা, শাইলী আহমেদ ও অভিনেত্রী মাহবুবা রেজানুর আড্ডায় বক্তব্য রাখেন। আড্ডার শুর“তে ভুমিকাপত্র পাঠ করেন আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমান। হোম এন ডেকোরের প¶ে বিটিআই’ এর ম্যানেজার মার্কেটিং ও ব্র্যান্ড তুহিন সুলতানা আড্ডায় উপস্হিত ছিলেন।
সহজ পদ্ধতিতে ও কম সময়ে শিক কাবাব
আলিয়া ওয়াহাব
কাবাব আইটেমের প্রতি আগ্রহ বেশি থাকে। একেক কাবারের জন্য একেক ধরণের মাংস প্রয়োজন হয়। কোরবানি ঈদে বিভিন্ন ধরণের মাংস একসাথে পাওয়া যায় সুতরাং কাবাবের মাংস সহজেই আলাদা করা সম্ভব। অনেকেই কাবাব তৈরির ¶েত্রে বিশেষ করে শিক কাবাব তৈরি সময়সাপে¶ ভেবে এড়িয়ে যান। সবাই কর্মব্যস্ত, কারোই সময় নেই অনেক সময় ধরে রান্নাঘরে থাকার। এ কারণেই আমি কত সহজে শিক কাবারের মত লোভনীয় খাবারগুলো তৈরির সময়সীমা কমিয়ে আনা যায় সে কথাই বলছি। ঈদে আমাদের দেশে সাধারণত গর“ ও খাসি কোরবানি দেয়া হয়। বাড়িতে প্রচুর মাংস জমে যায়। যদিও মাংসের বিভিন্ন আইটেম রান্না করা হয়। তবে স্বাস্হ্যকর রান্না হিসেবে আমরা মাংস ও সবজি একসাথে রান্না করতে পারি। আমাদের মায়েরা আগে অনেক সময় ধরে অনেক পরিশ্রম করে রান্না করতো। মায়েদের সময়কার রান্না হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমনি একটি রান্না আচারি মাংস। পাঁচ ফোড়ন ও টক দই দিয়ে আচারি মাংস রান্না করতেন আমার মা। অসাধারণ স্বাদের সেই আচারি মাংস। এখন কেউ আর এসব রান্না করতে চায় না। কোরবানির মাংস সংর¶ণের জন্য সিরকা, টকদই ব্যবহার করা যেতে পারে। এই উপাদানগুলো মাংস সেদ্ধ হতেও সাহায্য করে।
মিট কেক হতে পারে নতুন আইটেম
ঈদে প্রত্যেকেই নতুন নতুন আইটেম রান্না করতে উদ্যোগি হয়। এবারের ঈদে নতুন একটি আইটেম করতে পারেন সেটা হল মিট কেক। খুব সহজ পদ্ধতিতে তৈরি করা যায়। কিন্তু খেতে অতুলনীয়। মাংস সংর¶ণের জন্য ভিনেগার খুব ভালো। এ¶েত্রে অল্প মসলা ও ভিনেগার দিয়ে মাংস আধা সেদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। ফ্রিজে জায়গা না থাকলে ঐ মাংসকে ডেকচিতে জ্বাল দিয়ে রাখা যেতে পারে। এভাবে প্রতিদিন জ্বাল দিয়ে দিয়ে মাংস প্রায় এক মাস পর্যন্ত সংর¶ণ করা যায়। এভাবে জ্বাল দিতে দিতে মাংস ঝুরা হয়ে যায়। কোরবানি ঈদে সবার পছন্দের খাবার এই ঝুরা মাংস। এই ঈদে বাড়তি কিছু মাংস নিয়ে ঝুরা করে ফেলতে পারেন।
মাংসের সাথে গোটা গোটা রসুন দিতে পারেন
আঞ্জুমান্দ আরা জাহিদ সেতু
এখন সবাই স্বাস্হ্য সচেতন। সে কারণেই অনেকে ভয়ে মাংস খেতে চান না। তাদের উদ্দেশ্যে বলব, মাংস থেকে অতিরিক্ত চর্বি ফেলে দিয়ে রান্না কর“ন। এতে করে স্বাস্হ্যগত সমস্যায় পড়তে হবে না। এছাড়া কোরবানির মাংস রান্নার সময় গোটা গোটা রসুন দিতে পারেন। রসুন স্বাস্হ্যকর একটি মসলা এবং মাংসের গোটা রসুন খেতেও অসাধারণ। ফ্রিজ ছাড়াও কোরবানি ঈদের মাংস সংর¶ণ করা যায়। যারা অনেকদিন মাংস সংর¶ণ করতে চান তাদের বলব একটা বড় ডেকচিতে করে জ্বাল দিয়ে মাংস সংর¶ণ করতে পারেন। এভাবে জ্বাল দিতে থাকলে কয়েকদিন পর মাংস ঝুরা ঝুরা হয়ে যায়। সেই ঝুরা মাংস দিয়ে সকালের র“টি খাবার মজাই আলাদা। শর্মা, স্যান্ডউইচ, বার্গার, কাবাব, পুলি পিঠা থেকে শুর“ করে এই ঝুরা মাংসকে অনেকভাবে ব্যবহার করা যায়। ভিনেগার দিয়ে মাংস আধা সেদ্ধ করে ফ্রিজে সংর¶ণ করতে পারেন। যখন তখন সেই মাংস বের করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রান্না করে ফেলতে পারবেন। ঈদের দিন মাংস রান্নার সময় কয়েক টুকরা পেঁপে দিয়ে দেখুন নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই মাংস সেদ্ধ হয়ে যাবে।
কোরবানীর মাংস সেমি সেদ্ধ করে ফ্রিজে সংর¶ণ কর“ন
এখনকার মেয়েরা বেশিরভাগই কর্মজীবি। ইচ্ছে থাকলেও তাদের প¶ে কিচেনে বেশি সময় কাটানো সম্ভবপর হয় না। তাই বলে কি বাসায় অতিথি আসবে না? সত্যি হল নিজেকেও খেতে হয় আবার অতিথি আপ্যায়নও করতে হয়। আর তাইতো প্রথমেই একজন কর্মজীবি নারীকে মাথায় রাখতে হয় অল্প সময় ব্যয় করে কিভাবে রান্না শেষ করা যায়। তাদের জন্য বলব ঈদের মাংসকে সেমি সেদ্ধ করে ফ্রিজে সংর¶ণ কর“ন। নিজের প্রয়োজনে কিংবা অতিথি আপ্যায়নে সেমি সেদ্ধ মাংস বের করে চটপট রান্নাটা সেরে ফেলতে পারবেন। যেহেতু মাংস অর্ধেক সেদ্ধ করাই আছে সে¶েত্রে অতিথি আপ্যায়নে কিংবা নিজের কাজের প্রেসার থাকলে রান্নাজনিত মেন্টাল স্ট্রেস কম থাকবে। মাংসে টকদই ও ভিনেগারের ব্যবহার যেমন রান্নাকে সুস্বাদু করে তেমনি স্বাস্হ্যের জন্যেও ভালো। ভিনেগারের মাধ্যমে মাংসকে অনেকদিন পর্যন্ত সংর¶ণ করা যায়।
কোরবানীর মাংসের একটি বড় অংশ কিমা করে রাখুন
মাংস দিয়ে কত রকমের যে ঢাকাইয়া রান্না আছে! অনেক রান্না আবার হারিয়েও যেতে বসেছে। কোরবানির ঈদে প্রত্যেকের বাড়িতেই প্রচুর মাংসের আয়োজন থাকে। মাংস সংর¶ণ এবং পরবর্তীতে সেই মাংসের সঠিক ও স্বাস্হ্যকর ব্যবহারবিধি জানে না অনেকেই। আমি কোরবানীর মাংসের একটি বড় অংশ কিমা করে রাখি। সেই কিমা দিয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন রকমের চটজলদি রান্না করি। ফ্রিজে কিমা রেডি করা থাকলে বাচ্চাদের টিফিন তৈরি, হুটহাট মেহমানদারি, নাস্তা, নানা রকম পিঠা সবই চটজলদি করা সম্ভব হয়। মাংস তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হওয়ার কিছু টিপস জানা থাকলে কোরবানির দিনে কিচেনে অযথা সময় নষ্ট হবে না।
মাংসে পেঁপে বাটা, জায়ফল ইত্যাদি দিলে তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়
কোরবানির ঈদে সবার ঝোক থাকে কাবাব আইটেমের দিকে। যেকোন কাবাব তৈরিতেই মাংসের কিমা লাগে। আর তাই কোরবানির মাংসের একটা বড় অংশ যদি কিমা করে ফেলা যায় তাহলে ঈদে তো অবশ্যই এছাড়াও নিজের প্রয়োজন মত যেকোন সময় খুব সহজেই কাবাব তৈরি করা যায়। ঈদের দিন স্বাভাবিকভাবে সবাই খুব ব্যস্ত থাকেন। সে¶েত্রে মাংসের মসলা যদি আগে ভাগে কেটে কিংবা বেটে রাখতে পারেন তাহলে কাজের প্রেসার কম হবে। মাংসে পেঁপে বাটা, জায়ফল ইত্যাদি দিলে মাংস তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়। ভিনেগার খুব ভালো প্রিজারভেটিভ। রান্নার স্বাদও বাড়িয়ে দেয়। মাংস রান্না এবং সংর¶ণের পরপর কিচেন ভালো করে পরিস্কার কর“ন। তা নাহলে উটকো গন্ধ সৃষ্টি হবে।
মসলা আগের রাতে বেটে রাখুন
কোরবানির মাংস কাটা ও পরবর্তীতে সংর¶ণজনিত কাজে আমাদের প্রচুর সময় ব্যয় হয়। তাই ঈদের দিনের কিছু কাজ যদি আগের রাতে করে রেখে দেয়া যায় তাহলে সময় ও শ্রম দুটোই কমে যাবে। যেমন পেঁয়াজ থেকে শুর“ করে অন্যান্য মসলা আগের রাতে বেটে রাখা যেতে পারে। অনেক সময় অতিরিক্ত মাংস ফ্রিজে সংর¶ণ করার মত জায়গা থাকেনা। সে¶েত্রে অল্প মসলা মিশিয়ে মাংস হাড়িতে জ্বাল দিয়ে রাখতে পারেন। প্রতিদিন নিয়মিত কয়েকবার করে মাংস জ্বাল দিন। এভাবে অনেকদিন পর্যন্ত ঈদের মাংস সংর¶ণ করা যায়। ঈদের রান্না হিসেবে কালিয়া, রেজালা সবার প্রিয়। এবারের ঈদে আপনিও চেষ্টা করতে পারেন অসাধারণ এই রান্নাগুলো।
শাক ও রসুন বাটায় গর“র মাংস
শাক বাটা ও রসুন বাটা দিয়ে আমার মা গর“র মাংস রান্না করতেন। অমৃত সমান ছিল সেই রান্না। আমি কাউকেই সেই রান্নাটি করতে দেখিনা। আমার মা নিশ্চয়ই শিখেছিলেন তার মা কিংবা অন্য কারো কাছ থেকে। রান্নাটি আস্তে আস্তে হারিয়েই যাচ্ছে। আমাদের রন্ধনশিল্পীরা হারিয়ে যাওয়া রান্নার ব্যাপারে সচেতন হবেন বলে আমার প্রত্যাশা। এবারের ঈদে আপনি রাঁধতে পারেন আপনার অঞ্চলের বিশেষ কোন ঐতিহ্যবাহী রান্না। নতুন নতুন রান্না যেমন আমাদের সৃষ্টি করতে হবে ঠিক তেমনি পুরাতন রান্নাকেও সংর¶ণ করতে হবে। ঈদে কাবাব একটা বিশেষ পদ হতে পারে। সবাই পছন্দ করেন। তাই এবারের ঈদে কাবারের কয়েকটি আইটেম করে ফেলতে পারেন।
মাংসের হাড্ডি দিয়ে ডাল
আমি বরিশালের মেয়ে। দেশের ঐতিহ্যবাহী রান্নার একটি হল কোর্মা। খেয়াল করেছি অনেক ঘরেই এখন কোর্মা রান্নার চল নেই। অসাধারণ এই রান্না এবারের ঈদে আপনি করে দেখতে পারেন। পরিবারের সবাই পছন্দ করবে বলে আমার বিশ্বাস। এখন যেহেতু সবাই স্বাস্হ্য সচেতন তাই মাংসের চর্বির লোভ না করাই ভালো। মাংস থেকে চর্বি কেটে ফেলে দিন। রান্নাকে আরেকটু স্বাস্হ্যকর করতে দার“ণ একটা কাজ করতে পারেন সেটা হল মাংসের সাথে সবজির ব্যবহার। মাংস ও সবজি মিলিয়ে স্বাস্হ্যকর একটা খাবার তৈরি হতে পারে। কোরবানির অতিরিক্ত মাংস সংর¶ণ করতে অল্প পরিমাণে আদা রসুন বাটা দিয়ে মাংসকে সেদ্ধ করে ফ্রিজে সংর¶ণ করা যেতে পারে। কিমা করে রাখা যেতে পারে। চটপট বাচ্চাদের টিফিন তৈরিতে কিমা খুব ভালো কাজে দেয়। একটু বয়স হয়ে গেলে অনেকেই ভয়ে মাংস এড়িয়ে চলেন। ডাক্তারও নিষেধ করে দেয় রেড মিট খাওয়া চলবে না। তবে বছরের এই একটি দিনে অল্প পরিমাণে হলেও মাংসের স্বাদ নিতে কেউই ভোলেন না। তুলনামূলক বয়স্কদের জন্য একটি স্পেশাল রেসিপি হতে পারে মাংসের হাড্ডি দিয়ে ডাল। হাড্ডি বলতে সব মাংস ছাড়িয়ে শুধু হাড্ডি না। গর“, ছাগলের মাথার হাড্ডি দিয়ে খুব মজার ডাল রান্না করা যায়।