Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আহমেদ ইমতিয়াজের স্থাপত্য ভাবনা

আধুনিক স্থাপত্য শিল্পে যারা দেশের জন্য সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে স্থপতি আহমেদ ইমতিয়াজ খান অন্যতম। ২০০০ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০১ সালে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর ২০০৪ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান থাইল্যান্ডে। সেখানে এশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (AIT) থেকে তিনি এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দিয়ে বন্ধু স্থপতি ওয়াহিদ আসিফকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ফোর ওয়ালস ইনসাইড আউটসাইড নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। বর্তমানে তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। স্থাপত্য চর্চার পাশাপাশি শিক্ষকতাও করছেন। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় আর্কিটেক্ট আহমেদ ইমতিয়াজ খান। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। কিন্তু জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ইমতিয়াজের বাবার নাম মরহুম মো: ইউনুস খান। তিনি জাতি সংঘে চাকরি করতেন। মা আফরোজা ইউনুস গৃহিণী। খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯২ সালে। ১৯৯৪ সালে বিএএফ শাহিন কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। ২০০০ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই তিনি স্থপতি রাশেদুল হাসানের অধীনে নয় মাস কাজ করেন সহকারি স্থপতি হিসেবে। ২০০১ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ খান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এর স্থাপত্য বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি স্থাপত্য বিভাগে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর মাঝে ২০০৪ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যান থাইল্যান্ডে। সেখানে এশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (অওঞ) থেকে তিনি এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।
২০০৬ সালে দেশে ফিরে এসেই তিনি আবার যোগ দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এর স্থাপত্য বিভাগে। এরপর ২০০৭ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ চাকরি ছেড়ে বন্ধু স্থপতি ওয়াহিদ আসিফকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ফোর ওয়ালস ইনসাইড আউট সাইড নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এই প্রতিষ্ঠানের পার্টনার হিসেবে আছেন স্থপতি ওয়াহিদ আসিফ। ইতোমধ্যে তিনি দেশের নামকরা হোটেল, ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, ইউনিভার্সিটি, ট্রেনিং সেন্টার, রিসোর্ট, অফিস বিল্ডিং কমার্শিয়াল বিল্ডিং, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন। নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের হয়ে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ তেজগাঁও এ ঢাকা গ্র্যান্ড হায়াত, গুলশানে রেডিসন রেড হোটেল, উত্তরায় দুসিত প্রিন্সেস, কক্সবাজারে হোটেল রেডিসন বøু, সোনারগাঁও এ কনকর্ডের দাড়িয়াকান্দি রিসোর্ট, গাজীপুরে রয়না রিসোর্ট, কক্সবাজারের ইনানীতে তিন তারকা হোটেল, উত্তরায় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির (ডটই) মূল ক্যাম্পাস ভবন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে এমই এস ট্রেনিং সেন্টার, ইস্কাটনে এবিসি ক্রিসেন্ট কোর্ট, বসুন্ধরায় ইকোভাস, পাবনার ঈশ্বরদীতে কামেনী হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, মানিকগঞ্জে গ্রীন ফ্যাক্টরী, এসপায়ার গার্মেন্টস, ময়মনসিংহের ভালুকায় গ্রীণ ফ্যাক্টরি এইচ আর টেক্সটাইলস লিমিটেড, কুমিল্লা ইপিজেড এ কাদেনা স্পোর্টস ওয়ার, উত্তরায় স্বপ্ননীড়, মিরপুরে স্কয়ার রেসিডেন্স, রাজশাহীতে চেম্বার অব কমার্স বিল্ডিং, বাংলা মটরে পদ্মা লাইফ টাওয়ার, রাঙামাটিতে আরণ্যক রিসোর্ট, সাভার ইপিজেড এ লেডি ফ্যাশন ও হোপলুন ফ্যাক্টরি সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন।

বিদেশে কাজের মধ্যে রয়েছে নেপালে হোটেল প্লাটিনাম, কম্বোডিয়াতে রেসিডেন্স বিল্ডিং, কানাডার টরেন্টোতে রেসিডেন্স বিল্ডিং। এছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন তারা। স্থাপত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি দেশে-বিদেশে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর (ঘটঝ) এ ডিজাইন জুরিতে অংশ নিয়েছেন। এ বছর গেস্ট লেকচার হিসেবে অংশ নিয়েছেন জাপানের টোয়ো ইউনিভার্সিটিতে। বর্তমানে এই স্থপতি ঢাকা ইউনিভার্সিটি বিজনেস স্কুল এ গেস্ট লেকচার এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডভাইজার হিসেবে আছেন।
২০০৪ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম শামীমা খুরশীদ শিপু। তিনিও একজন স্থপতি। ২০১৩ সালে ব্রেইন হেমারেজ হয়ে দুমাস কোমাতে ছিলেন শিপু। দেশে-বিদেশে পাঁচটি ব্রেইন অপারেশনের পরে শিপুর জ্ঞান ফিরে আসে। বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে। এই স্থপতি দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী। মেয়ের নাম সুজানা ইমতিয়াজ খান। ছেলে ইশাম ইমতিয়াজ খান।
স্থপতি আহমেদ ইমতিয়াজ খান বলেন, স্থাপত্যকে ব্যবহারিক শিল্প হিসেবে দেখি, যেখানে যে কোনো স্থাপনার যথার্থ ব্যবহারিক বিষয়কে প্রাধান্য বেশি দেয়ার মূল ইচ্ছা থাকে। যে কোনো ভবন বাহ্যিক ভাবে যেন তার অভ্যন্তরিন ব্যবহারকে বাহির থেকেও বোধগম্য করে। ওই আঙ্গিকেই ভবন গুলোর নকশা এবং সৌন্দর্য বিষয়ক উপাদনকে গুরুত্ব দেয়া হয় সব প্রজেক্টে। ইদানিংকালের প্রচলিত অর্গানিক আর্কিটেকচার আমাকে উদ্বেলিত করে। ব্যবহারকারি উপাদন এবং ভবন এর মাঝে আন্তরিকতা তৈরিতে ভবনের আঙ্গিক ও মেটারিয়াল এর ব্যবহারে সচেতন থাকি।
নিজেকে বিশেষজ্ঞ স্থপতি হিসেবে কোনো একটি বা দুইটি বিশেষায়িত স্থাপনায় বিশেষত্ব এবং পারদর্শি হিসেবে দেখতে চাই। সেই লক্ষ্যে হোটেল এবং স্পেশালাইজড ফ্যাক্টরির দিকে ফোকাস দিতে চেষ্টা করি। এখন সময় এসেছে স্থপতিদের বিশেষায়িত প্রকল্পের ক্ষেত্রে পারদর্শিতার। দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে প্রকল্পের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থাপত্য, স্থপতিদের প্রতি মানুষের আস্থাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই নিজেকে সব ধরনের কাজে নিয়োজিত দেখার ইচ্ছা থাকলেও হোটেল, রিসোর্ট এবং বিশেষায়িত ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ভবিষ্যতে নিজেকে দেখতে চাই। সেই লক্ষ্যে ট্রেনিং ও শিক্ষা চলবে। তিনি আরও বলেন, ডিজাইনের বাইরেও আমি প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এর প্রতি আগ্রহী। একটি স্থাপনায় যথাযথ উদ্যোক্তা, উদ্যোক্তার আন্তরিকতা অনেক বেশি আবশ্যিক। শুধুমাত্র নকশা এর সৌন্দর্য একটি স্থাপত্যকে বাস্তবতা দেয় না। এক্ষেত্রে প্রয়োজন স্থপতি ও উদ্যোক্তার মধ্যে আন্তরিকতা ও সঠিক বোঝাপড়া। আমি আমার সকল স্থাপত্যকর্মে উদোক্তা এর সাথে আন্তরিকতা বজায় রাখতে সচেতন থাকি। তাকে গুরুত্ব সহকারে প্রজেক্টের সাথে সংযুক্ত রাখি এবং যথাযথ প্রজেক্ট ম্যানেজম্যান্টকে গুরুত্ব দেই।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু প্রকৃতিতে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন আহমেদ ইমতিয়াজ খান। পাশাপাশি পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে তৎপর থাকেন সর্বদা।