Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ক্যান্ডেল লাইট ডিনার- ভালোবাসার দিনে ভালোবাসার আনন্দ

সৈয়দ ইকবাল: ছেলেটি একটি ডাবিং রুমে ডাবিং করছে। খানিকবাদেই স্টুডিওতে প্রবেশ করে একটি মেয়ে। এডিটর ছেলেটিকে মেয়েটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এটাই প্রথম সাক্ষাৎ। মঞ্চ এবং টিভি নাটকে অভিনয়ের সুবাদে বেশকিছু অনুষ্ঠান এবং শুটিং স্পটে দেখা হয় দু’জনের। একসময় ফোন নম্বরও বিনিময় হয়। একদিন একটি ধারাবাহিক নাটকে একসঙ্গে অভিনয় শুরু করে। এভাবেই পরিচয় বাড়তে থাকে দু’জনের। রাতে দু’জনে নানান কথায় শেয়ার করতে থাকে। ভালো লাগার সেইসব কথার কোনো সীমা ছিলো না। একসময় দু’জনেরই মনে হয় এতো আবেগ যেই মানুষটির জন্য সেই মানুষের কাছে সারাজীবন থাকতে হবে। তাই তো একদিন মনের অজানেত্মই দু’জন বলে ফেলে দু’জনের ভালোবাসার কথা। সেটা মুখে বলেননি কেউই। তবে দু’জনই বুঝে নিয়েছেন দু’জনের ভালোবাসার ভাষা। ২০১০ সালের শেষের দিক থেকে তাদের ভালোবাসার ভেলা ভাসতে থাকে। একসময় দু’জনে ঘর বাঁধারও স্বপ্ন দেখেন। তাই তো ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। আর গত মাসের ১৬ তারিখ অনুষ্ঠিত হয় তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।

পাঠক, এই তারকা দম্পতি হলেন অভিনেতা-নির্মাতা রাজিব সালেহীন ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী শর্মীমালা। আর তাই তো এই তারকা দম্পতির কাছে এবারের ভালোবাসা দিবসটা অন্যরকম। বিয়ের পর প্রথম ভ্যালেন্টাইন ডে বলে কথা! যদিও একদিনের ভালোবাসায় দু’জনের কেউই বিশ্বাসী নন, তারপরও ভ্যালেন্টাইন ডে যেহেতু এখন একটা দিবস বলেই তা অন্যভাবেই পালন করবে বলে জানান তারা। প্রিয় মানুষকে নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে যাওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান রাজিব সালেহীন। তাই তো আনন্দ আলোর ভ্যালেন্টাইন সংখ্যায় ক্যান্ডেল লাইট ডিনার-এর শ্যুটে অংশ নেন সদ্য বিবাহিত এই জুটি। ক্যান্ডেল লাইট ডিনার শ্যুটের পাশাপাশি বলেছেন নিজেদের প্রেম-ভালোবাসার নানান গল্পও।

বেড়াতে যেতে তাদের দু’জনেরই বেশ ভালো লাগে। দু’জনরই পছন্দ সমুদ্র। তাই এবারের ভালোবাসা দিবসে কক্সবাজার যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ভালোবাসার দিন সারাক্ষণ ঘুরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়ার পর রাতে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে যাবেন তারা। আড্ডার এক পর্যায়ে উঠে আসে প্রেম-ভালোবাসার নানান কথা। ভালোবাসা মানে কী? এমন প্রশ্নে রাজিব বলেন, ‘ভালো লাগা অনেক মানুষের ক্ষেত্রেই তৈরি হতে পারে। তবে ভালোবাসার সংজ্ঞা আমার কাছে একেবারেই ভিন্ন। যাকে দেখা মাত্রই একপ্রকার অনুভূতি কাজ করতে হবে। দেখা করার জন্য উদগ্রীব থাকা, চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যে দু’জনের সামঞ্জস্য তৈরি হওয়াসহ এমন নানান বিষয় মিললেই তাকে আমি ভালোবাসা বলবো। তবে সবকিছুর উপর দু’জনের মধ্যে একটা কমিটমেন্ট থাকাটা জরুরি। আর বিশ্বাসও থাকতে হবে।’ শর্মীমালা নিজের ভালোবাসার কথা বললেন একটু অন্যভাবে। কথায় কথায় বললেন, ‘আজকে আমার যেই বয়স, চাওয়া-পাওয়া, অনুভূতি কিংবা ব্যসত্মতা এটা ত্রিশ বছর পর থাকবে না, ঠিক সেই সময়ে এমন একজন মানুষকে চাই যার সাথে কথা বলে, আড্ডা দিয়ে, ঘুরে বেরিয়ে আনন্দ পাবো এবং অন্যরকম এক সঙ্গ পাবো- যেটা আমি রাজিবের মধ্যে দেখেছি। তাই আমার এই অনুভূতিই ভালোবাসা। যা আমি রাজিবের কাছে পেয়েছি। তাই আমার কাছে ভালোবাসা মানে রাজিব।’ কথাগুলো বলে শর্মীমালা রাজিবের দিকে একটা রোমান্টিক লুক দেন। রাজিবও তাকান তার দিকে। যেনো দু’জনের চোখে নিমিষেই খেলে গেলো ভালোবাসার ভিন্ন কোনো খেলা। এবার দু’জনের মধ্যে কে কাকে কখন ভালোবাসার কথা বলেছে তা নিয়ে আলোচনা। তবে দু’জনের কেউই নাকি ভালোবাসার কথা বলেননি। ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’- এই কথা বলেনি কেউই। তবে তাদের দু’জনের মনে হয়েছে সবসময়ই একে অন্যকে বলেছে ‘ভালোবাসি ভালোবাসি…’। সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে নয়। চলতে ফিরতে অনেকবারই মনে হয়েছে একে অন্যকে বলেছে ‘ভালোবাসি’। ‘এটা আসলে সত্যিই অন্যরকম এক অনুভূতি। কেউ কাউকে বলিনি ভালোবাসি। তবে ঘুরতে-ফিরতে অনেকবার বিভিন্ন কাজে মনে হয়েছে শর্মী আমাকে ভালোবাসে’- কথাগুলো একপ্রকার আনন্দ নিয়েই  বললেন রাজিব সালেহীন। আর শর্মীমালারও একই কথা। বললেন, ‘আসলে যাকে ভালোবাসি এটা তাকে বলতে হবে কেন? সে তো বিভিন্ন কাজে তা বুঝেই নিতে পারে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আমরা একে অন্যকে এই বিষয়ে দারুণভাবে বুঝি। আর বুঝি বলেই প্রথম থেকে নানানভাবে মনে হয়েছে আমরা একে অন্যকে ভালোবাসি। তবে তা কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়নি।’

ক্যান্ডেল লাইট ডিনার: ক্যান্ডেল লাইট ডিনার এর ধারনা মূলত এসেছে ডিনার এবং বিনোদনের মিশ্র কনসেপ্ট থেকে। ‘ক্যান্ডেল লাইট থিয়েটার রেস্টুরেন্ট’ থেকে প্রথম এই বিষয়টি চালু হয়। এই রেস্টুরেন্টটি ওয়াশিংটনে অবস্থিত ছিলো। তবে এটি ওই নামে প্রচার ছিলো না। বিল পুলিন্সি নামের একজন থিয়েটারের স্টুডেন্ট প্রথম ১৯৫৯ সালে বিনোদনের এই কনসেপ্টটা  রেস্টুরেন্ট থেকে নেন এবং পরে শিকাগোতে নিজেই তা এ্যাপ্লাই করেন। সেখানে অফিসিয়ালি আরো কিছু সুবিধার সাথে সাথে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করার ব্যবস্থা আছে বলে প্রচার করেন। আর তা ধীরে ধীরে রোমান্টিক ডিনারের জন্য ক্যান্ডেল লাইট ডিনার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আর বর্তমানে ভ্যালেন্টাইন ডে’তে যেনো প্রিয়জনকে নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার না হলেই নয়। এটা যে শুধু হোটেল-রেস্টুরেন্টে হতে হবে বিষয়টি এমন নয়। বাসা-বাড়িতেও যেকেউ চাইলে সাজিয়ে নিতে পারেন ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। হরেক রকম ক্যান্ডেল বা মোম, সুগন্ধি ক্যান্ডেল এবং বাহারি সব খাবার বা প্রিয় মানুষটির পছন্দের মেন্যু করে সাজিয়ে নিতে পারেন বিশেষ দিনে বিশেষ ক্যান্ডেল লাইট ডিনারটি। আর বিশেষ দিনে কেউ যদি ঝক্কিঝামেলা নিতে না চান তাহলে বেশকিছু হোটেল বা রেস্টুরেন্টেও করতে পারেন এই রোমান্টিক আয়োজন।

5নগরীর পাঁচ তারকা হোটেল যেমন প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, ওয়েস্টিন, রেডিসন ব্লু, লা মেরেডিয়ান, রিজেন্সিসহ ন্যানদোস, এএন্ডডব্লিউ, থার্টি থ্রি, শর্মা হাউজ, ওহ! ক্যালকাটা, স্কাই ভিউ রেস্টুরেন্টসহ বেশকিছু নামিদামি রেস্টুরেন্টে পাবেন ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের নানান আয়োজন। একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন কোন রেস্টুরেন্ট এই ভ্যালেন্টাইনে কী অফার দিচ্ছে। মনে রাখবেন ভালোবাসা দিবসে সবচাইতে রোমান্টিক ডেট হলো ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। প্রিয় মানুষটির জন্য বছরের একটি দিনই এই ডিনারের মাধ্যমে ভিন্নভাবে কাটাতে পারেন। দেখুন না প্রিয় মানুষকে নিয়ে এই ভ্যালেন্টাইনে ভিন্ন রকম এক আনন্দ দিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করা যায় কিনা।

ক্যান্ডেল লাইট ডিনার যখন বাড়িতে: বিশেষ দিনটিতে কেউ যদি পরিকল্পনা করে রাখেন বাড়িতে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করবেন তাহলে জেনে নিন কিছু বিষয়। এদিনে ব্যবহারের জন্য টেবিলে সাজিয়ে রাখতে পারেন কিছু সাদা বাসন। এসব ঘরে নিমেষেই একটি ক্ল্যাসিক চেহারা নিয়ে আসবে। চাইলে একেবারে পুরো সাদা ডিনার সেট নিয়ে আসতে পারেন। বা অল্প যতটা লাগবে ততটা। ব্যবহার করার জন্য ঘরে রাখা কোনো ভালো চামচ-ছুরিই ব্যবহার করতে পারেন। তবে সেসব ব্যবহার না করতে চাইলে সোকেশের ভেতর থেকে কোনো হালকা বাসন কোসন বের করে নিন। কোনো একটি বড় পানির গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন। এসব বড় গ্লাস অনায়াসে আপনার টেবিলটি করে তুলবে আরো আকর্ষণীয়। টেবিলে কোনো সুন্দর টেবিলক্লথ রাখতে পারেন। হতে পারে সেটা কোনো সাদা টেবিলক্লথ। আর সাদা টেবিলক্লথের মাঝখানে রাখার জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু কালারফুল মোম। আজকাল বাজারে সুগন্ধি টাইপ মোম পাওয়া যায়। যা রোমাঞ্চকর আলোর পাশাপাশি সুগন্ধে একটা রোমান্টিক পরিবেশ সৃষ্টি করবে। টেবিল এবং টেবিলের আশপাশে একটি সুন্দর ফুলদানি রেখে সেখানে কিছু সতেজ ফুল রেখে দিন। নিমেষেই বদলে যাবে ঘরের মুড। আর পাশাপাশি মুড বদলে যাবে আপনারও। আর আয়োজনটা যদি নেহায়েত আপনারই হয় তাহলে সেই ফুলের তোড়ায় কোনো ভালো ভালো উইশ লিখে রাখতে পারেন।

মডেল: সদ্য বিবাহিত তারকা দম্পতি অভিনেতা-নির্মাতা রাজিব সালেহীন ও অভিনেত্রী শর্মীমালা

মেকআপ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, স্থান: থার্টি থ্রি রেস্টুরেন্ট, কৃতজ্ঞতা: মাহদীন তারিক, ছবি: রাকিবুল হক