Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

২০১৬ রাইজিং স্টার ক্রীড়াঙ্গন

মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন বিস্ময়কর মিরাজ

টেস্ট অভিষেকের রোমাঞ্চ আর প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামায় স্নায়ুচাপতো আছেই। তার ওপর নতুন বলে বোলিং করা একজন স্পিনারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ আর কী হতে পারে! তবে এই চ্যালেঞ্জটা ‘এ-প্লাস’ পেয়েই উতরেছেন আমাদের মেহেদী হাসান মিরাজ। অসাধারণ ক্রিকেটীয় দক্ষতায় ইংলিশদের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ১৯ বছর বয়সী স্পিনার ৮০ রানে তুলে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে যেটি সেরা বোলিং। মিরাজ প্রসঙ্গ আসছে কলিন ডি গ্র্যান্ড হোমের কারণেই। কিউই পেস বোলিং অলরাউন্ডার ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে পাকিসৱানের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ৪১ রানে ৬ উইকেট, যেটি নিউজিল্যান্ডের হয়ে টেস্ট অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি। ‘বোলার’ মেহেদী হাসান মিরাজের প্রশংসা এখন এই কলিনের সঙ্গে বিশ্বজুড়ে।

সম্পর্কিত

এবার বিশ্ব দেখল ‘ব্যাটসম্যান’ মিরাজের নান্দনিক ব্যাটিং, যে ব্যাটিং মুগ্ধতা ও সৌরভ ছড়িয়েছে। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। রাজশাহী কিংসের মিরাজ যখন ব্যাটিংয়ে এলেন দলের রান তখন ৬ উইকেটে ৪১।  স্কোর বোর্ডে ২ রান যোগ হতেই আরও ১ উইকেটের পতন। কি করবেন মিরাজ! দলের স্কোর বোর্ডে কত রানইবা যোগ করবেন? আগের ৬ ইনিংসে মাত্র ২০ রান করা মিরাজের কাছে প্রত্যাশা আর কতটুকুই বা!

কিন্তু আফ্রিদিকে যেভাবে বাউন্ডারি মেরে শেষ দিকের খেলা শুরু করলেন তাতে মনে হচ্ছিল ২০ ওভার পুরো খেলতে পারলে মিরাজ কিছু একটা করে বসবেনই!  তাই করে বসলেনও মিরাজ। ৩৩ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় তার রান ৪১। আফ্রিদির বলে সাব্বির আউট। ঐ ওভারের শেষ বলে পয়েন্ট ও শর্ট থার্ডম্যান অঞ্চল দিয়ে মিরাজ কাট করে বল পাঠালেন বাউন্ডারিতে।

শেষ দুই ওভারে মিরাজ হাত খুলে খেললেন। সানীর করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারি। এরপর রুবেলের করা ২০তম ওভারের প্রথম বলে শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে বল পাঠালেন বাউন্ডারিতে। পরের বলটিতে হাওয়ায় ভাসিয়ে লং অফ দিয়ে ছক্কা! অসাধারণ মিরাজ। তার কারনেই সেদিন রাজশাহী অনায়াসে ম্যাচ জয় করেছে। জাতীয় দলে অভিষেকের পর নিজের বোলিং প্রতিভা দেখিয়েছেন মিরাজ। এবার ব্যাটিং প্রতিভা দেখালেন বিপিএলেও। শুধু ব্যাটিং প্রতিভা দেখালেন না উপরে ব্যাটিং করার জোর দাবিও তুললেন। নিউজিল্যান্ড টুরে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলতে গেছেন মিরাজ। এখন দেখার পালা সেখানে আমাদের রাইজিং স্টার কতটুকু আলো ছড়ান!

মোসাদ্দেক ভালো ফিনিশার হতে পারে

এবারের বিপিএল এর একটি খেলায় ১৮তম ওভারে শহীদ আফ্রিদির দুই বলে পর পর দুই বাউন্ডারি মেরে দিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। প্রথমটা রিভার্স সুইপে, পরেরটা অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বলে কাট করে। নিজের শেষ ওভারে দুই বাউন্ডারি খাওয়া স্বসিৱদায়ক ছিল না আফ্রিদির জন্য। তবু ওভার শেষে হাত বাড়িয়ে মোসাদ্দেকের মাথার হেলমেটটা নাড়িয়ে বাহাবা দিলেন সাবেক পাকিসৱানী অধিনায়ক।

Mosaddekমোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ব্যাটিং প্রতিভার কথা সবারই জানা। তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারানোর পর ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব সতীর্থ মোসাদ্দেককে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সৈকতের ভেতরে আসলে অনেক বড় খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো একটা ফিনিশার হতে পারে বলে আমি মনে করি।’ ‘ওকে দেখতে অত বেশি বিগ হিটার মনে না হলেও ও অনেক বড় শট খেলতে পারে। আমাদের দেশের অনেক ব্যাটসম্যানই এটা পারে না। এছাড়া ওর শটের অপশন অনেক বেশি। ক্রিকেট বিষয়ে ভালো জ্ঞান আছে। ও জানে কখন কীভাবে ব্যাটিং করতে হবে। সবকিছু যদি ঠিকঠাক রাখতে পারে তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে  অনেক কিছু দিতে পারবে মোসাদ্দেক।

সাধারনত তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে আগেভাগেই মনৱব্য করতে রাজী হন না সাকিব। নিখুঁত দৃষ্টিতে যখন পাখির চোখে পরখ করেন, তখনই মনৱব্য করেন। আসলেই মোসাদ্দেক একজন ভালো ফিনিশার হতে পারেন। তার ঝলক তিনি এর আগে জাতীয় দলে দেখিয়েছেন। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপেও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। এবার যোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগ এসেছে বিদেশের মাটিতে। নিউজিল্যান্ড সফরে এই অলরাউন্ডারের অগ্নিপরীক্ষা হতে। দেখা যাক ক্রীড়া ক্ষেত্রে আমাদের রাইজিং স্টার এবার কতটুকু সাফল্য দেখান।

এশিয়ার সপ্তম ফুটবলার সানজিদা

Sanjidaঅনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল বাছাইয়ে অসাধারণ পারফর্মেন্সের স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশের মেয়ে সানজিদা আক্তার। এএফসি নারী ফুটবলারদের শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে সানজিদা।  সম্প্রতি সেরাদের নিয়ে তালিকা প্রকাশ করেছে এএফসি। অক্টোবরে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল বাছাইয়ে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল দল। এতে দুর্দানৱ পারফর্মেন্স  করে সবার নজর কাড়েন ময়মনসিংহের মেয়ে সানজিদা আক্তার। টুর্নামেন্টে সানজিদা করেন চারটি গোল। যার মধ্যে জর্ডানের বিপক্ষে একটি, ইরানের বিপক্ষে একটি এবং আরব আমিরাতের বিপক্ষে ছিল দু’টি গোল।

মাঠের বাইরেও সানজিদা চটপটে। দলে কেউ ভুল কিছু বললে প্রতিবাদ করে। এই দলে ময়মনসিংহের বিখ্যাত কলসিন্দুরের আট-নয়জন মেয়ের মধ্যে নিজেকে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরছে ৭ নম্বর জার্সি পরে খেলা সানজিদা। অন্যদের চেয়ে একটু ‘সচ্ছল’ পরিবারের এই ফুটবলার ২০১৩ সালে ‘প্ল্যান বাংলাদেশ’ টুর্নামেন্টে খেলতে প্রথম ঢাকায় আসে। সেই শুরু। তবে ২০১৪ নভেম্বরে ইসলামাবাদে সাফ খেলতে যায়নি। যদিও জাপানের কোচ সুকি তাকে চেয়েছেন। কিন্তু সানজিদার বাবা রাজি হননি মেয়ের জেএসসি পরীক্ষার জন্য।

যেভাবে উঠে এলেন মেহেদী মারুফ

Mahedi-Marufক্রিকেটের জন্য প্রিয় খেলা ফুটবল, শৈশবের আনন্দ, বন্ধু এমনকি তারুণ্যের প্রেম- সবকিছুই ত্যাগ করেছেন মেহেদী হাসান সিদ্দিকী। তাকে এখন সবাই চেনেন মেহেদী মারুফ নামে। জীবনের ২৮টি বছর কেটে গেছে। ১২ বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলছেন। তার সমসাময়িক ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম ও তামিম ইকবাল এখন জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার। কিন্তু তিনি এখনও জাতীয় দলে সুযোগই পাননি। এবার সুযোগ এসেছে, বিপিএলে তার আলোকিত পারফরমেন্সের কারণে। না এলেও ভাবনা ছিল না মারুফের। মেহেদী মারুফ তার ক্রিকেটময় জীবন নিয়ে বললেন অনেক কথা।

সত্যি বলতে কী… ক্রিকেট আমার প্রিয় খেলা ছিল না। আমি ফুটবল খেলতেই পছন্দ করতাম। বাবা খুব

ফুটবল খেলতে পছন্দ করতেন। টাঙ্গাইলে আমাদের বাড়ির কাছেই মাঠে বাবার সঙ্গেই ফুটবল খেলতে যেতাম। আমি মা-বাবার একমাত্র সনৱান। তখন আমার বয়স ১২। এলাকার তিন বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় ক্রিকেট খেলা শুরু। এরপর আজমদার ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে ৬ মাস কাটিয়ে চলে যাই বিকেএসপিতে। সেখান থেকে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ দলের তামিম, মুশফিকদের সঙ্গে ভারতে খেলতে যাই। এভাবেই ক্রিকেট নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকি। তবে আমার চেষ্টাটা মনে হয় জোরালো ছিল না। যে কারণে সবার নজরে আসতে সময় লাগে। এবার বিপিএলএ আমাকে মানুষ যে রকম চিনেছে, গত ১০ বছরেও তা চেনেনি।’

এবারের বিপিএলে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সবার নজর কেড়েছেন মেহেদী মারুফ। ফিফটি করেছেন দুটি। ঢাকা ডায়নামাইটসকে প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই এনে দিয়েছেন উড়নৱ সূচনা। ১৪ ম্যাচে ২৬.৬৯ গড়ে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৪৭ রান। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ২০টি ছক্কাও হাঁকিয়েছেন তিনিই। বিপিএলে পারফরম্যান্সের পুরস্কারও পেয়েছেন হাতেনাতে। ডাক পেয়েছেন নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় প্রস্তুতি ক্যাম্পের বাংলাদেশ দলে। এবার দেখার পালা আমাদের ক্রীড়া জগতের রাইজিং স্টার ভবিষ্যতে কতদূর যায়!

মালদ্বীপের ফুটবলে পলাশপুরের সাবিনা

Sabinaফুটবলার সাবিনার রয়েছে অনন্য এক অর্জন। সাবিনা খাতুন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ফুটবলার হিসেবে খেলছেন বিদেশের কোনো ক্লাবে। বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের জন্য এ এক আনন্দের খবর। সেই ১৯৭৫ সালে কাজী সালাউদ্দিন খেলেছিলেন প্রথম বিদেশের ক্লাবে হংকংয়ের এফসি ক্যারোলিনে। এরপর কায়সার হামিদ, জুয়েল রানা, প্রয়াত মোনেম মুন্নাসহ অনেকেই খেলেছেন ভারতের বিভিন্ন ক্লাবে। এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন জাতীয় দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। ডাক পেয়েছিলেন আইএসএলে, অ্যাথলেটিক ডি কলকাতা ক্লাবে। এই মুহূর্তে মালদ্বীপের পুলিশ ক্লাবের হয়ে খেলছেন সাতক্ষীরার পলাশপুরের মেয়ে সাবিনা। পাকিসৱানে ২০১৪ মহিলা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ে দুটি গোল করেছিলেন জাতীয় দলের এই স্ট্রাইকার। ঐ খেলাই নজর কেড়েছিল মালদ্বীপ ফুটবল-কর্তাদের। এরপর এলো এই সোনালি সুযোগ। নিজের যোগ্যতায় মালদ্বীপের এই টুর্নামেন্টের জন্য সাবিনার সঙ্গে ৮০০ ডলারের চুক্তি হয়েছে ক্লাবটির। এর বাইরে আবাসন, খাওয়া এবং বিমানভাড়াসহ আনুষঙ্গিক সব খরচই বহন করবে মালদ্বীপ পুলিশ ক্লাব।

বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য এটা বড় প্রাপ্তিই মানছেন বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল কমিটির কো-চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, ‘মহিলা ফুটবলের যে ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে, এটা তারই পুরস্কার। তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা বিদেশের ক্লাবে খেলতে যাচ্ছে, এটা অনেক বড় পাওয়া। আশা করব, আগামী দিনগুলোতে আরও অনেকে বিদেশের মাটিতে খেলবে।’ সাবিনার এই উত্থান রূপকথার গল্পের মতোই। পাঁচ বোনের সংসারে তিনি চতুর্থ। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু মেয়েকে পড়ানোর খরচ চালানোর সামর্থ্য ছিল না বাবা সৈয়দ গাজীর। অথচ সেই মেয়েই ফুটবল খেলে উপার্জন করছেন, সংসারের উন্নতিতে রাখছেন অবদান। বর্তমানে সাতক্ষীরা কলেজের দিবা-নিশি শাখায় উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছেন সাবিনা।

ডানপিটে সাবিনা স্কুলে ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন। সেখানেই চোখ পড়ে জেলা ফুটবল কোচ ‘আকবর স্যারের’। তিনিই প্রথম ২০০৯ সালে ঢাকায় আনেন সাবিনাকে। সেবার খেলেন সিটিসেল জাতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে। সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার তো পেলেনই, বোনাস হিসেবে পরের বছর এসএ গেমসেও ডাক পেলেন সাবিনা। এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধারাবাহিকভাবে খেলেছেন ঢাকা মহানগর মহিলা ফুটবল লিগে, কেএফসি জাতীয় মহিলা ফুটবলে হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। সর্বশেষ গত মৌসুমেও ১৭ গোল করে হন সর্বোচ্চ গোলদাতা। এ পর্যনৱ ঘরোয়া ফুটবলে ১১৬টি গোল করেছেন ‘গোলমেশিন’ খ্যাত সাবিনা। মেয়েদের উপার্জনেই সংসারটা চলছে সাবিনাদের। এতে এতটুকু আক্ষেপ নেই। বরং তৃপ্তির সঙ্গে বললেন, ‘আমরাই বাবার ছেলে। প্রথম মহিলা ফুটবলার হিসেবে বিদেশে খেলতে যাচ্ছি শুনে খুব খুশি আমার বাবা-মা।’ শুরুটা করে দিলেন সাবিনা। এবার তার পথ ধরে সানজিদা, লিপিদেরও এগিয়ে যাওয়ার পালা। ব্রাজিলের প্রমীলা ফুটবলার মার্তা সাবিনার আদর্শ। ব্রাজিলের মতোই একদিন বিশ্বে মাথা উঁচু করে খেলতে চান সাবিনারা।

ব্রেট লি হওয়ার পথে যাত্রা শুরু

পেসারহান্ট কর্মসূচিতে দ্রুততম বোলার হওয়ার পরই স্বপ্নটার কথা জানিয়েছিলেন ইবাদত হোসেন চৌধুরী। হতে চান ব্রেট লি’র মতো গতিময় বোলার। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে কতটা এগোলেন তিনি? ১৭ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বিসিবির হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) স্কোয়াডে সুযোগ পেয়ে ইবাদত পা দিয়েছেন স্বপ্নযাত্রার প্রথম ধাপে। দলের অন্যদের মতো লিস্ট ‘এ’ কিংবা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা তাঁর নেই। এমনকি ভাঙেননি বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সিঁড়িও। এইচপিতে সুযোগ মিলেছে ফাস্ট বোলার অন্বেষণ কর্মসূচিতে প্রথম হওয়ার সনদ পেয়েই। অবশ্য স্কোয়াডে থাকা আরেক পেসার নূর আলম সাদ্দামও এসেছেন পেসারহান্ট থেকে। তবে তিনি গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন ব্রাদার্সের হয়ে, ১০ ম্যাচে নিয়েছেন ১১ উইকেট।

Ebadotইবাদতের সুযোগ পাওয়াটা ব্যতিক্রম বলতে হবে আরও একটি কারণে। চাকরি করেন বিমানবাহিনীতে। চাকরির ফাঁকেই ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়া। বছর দুয়েক আগে একবার সুযোগ পেয়েছিলেন জাতীয় দলের নেটে। ক’দিন বোলিংয়ের পর নজর কাড়েন হিথ স্ট্রিকের। বাংলাদেশের সাবেক এই পেস বোলিং কোচ তাকে নিয়মিত প্রাকটিসে আসতেও বলেছিলেন। কিন্তু তখন অনুমতি মেলেনি বিমানবাহিনী থেকে। তবে তাকে পেসারহান্টে আবার অংশ নিতে দেয় বিমানবাহিনী। নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাই তার অশেষ কৃতজ্ঞতা।

পেসারহান্টে সর্বোচ্চ গতিতে (ঘণ্টায় ১৩৯.৯ কিলোমিটার) বোলিং করা ইবাদত পরে পেস বোলিং কোচ সরওয়ার ইমরানের অধীনে সুযোগ পান দুই সপ্তাহ অনুশীলন করার। এরপর একটা বিরতি। তবে বসে থাকেননি। প্রশিক্ষণ চালিয়ে গেছেন। তার পুরস্কারও পেয়েছেন ইবাদত। সুযোগ পেয়েছেন পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে। পূর্ণাঙ্গ সিরিজে লম্বা এক বহর নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিউজিল্যান্ডে। সেই বহরে সঙ্গী  সিলেটের তরুণ ক্রিকেটার ইবাদত হোসেন। ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ যেমন মিরাজকে তুরুপের তাস হিসেবে খেলিয়েছিল, ইবাদতও নিউজিল্যান্ডে তুরুপের তাস হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন। দেখা যাক কী হয়!

আফিফকে যেন শুধু বোলার বানানো না হয়

Afifমাত্র ১৭ বছর বয়সী ক্রিকেটার আফিফের স্পিন ভেলকি দেখে সবাই যেন হতবাক। বিপিএল অভিষেকে এমন দাপুটে পারফরম্যান্স কমই দেখা গেছে গত চার আসরে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখনো অভিষেক হয়নি তার। বিপিএল-এ সেমিফাইনালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রাজশাহীর দলে আফিফকে নেয়াটা জুয়ার মতোই ছিল ড্যারেন সামির ক্ষেত্রে। তবে সবশেষে আফিফ হোসাইন জ্বলে উঠলেন, দলকে জেতালেন এবং নিজে ম্যাচসেরা হলেন। বিপিএল-এর ইতিহাসে পাঁচ উইকেট নিয়ে রেকর্ড করলেন-যা এর আগে কোনো দেশি বা বিদেশি এই সাফল্য দেখাতে পারেনি। সবাই যখন তাকে ভালো স্পিনার হিসেবেই আখ্যায়িত করলেন, তখন তিনি নিজেই বললেন আগে আমি একজন ব্যাটসম্যান, তারপর বোলার। আফিফ হোসাইনের প্রথম শ্রেণির ম্যাচে অভিষেক না হলেও ঢাকা ফাস্ট ডিভিশন ক্রিকেট লীগ খেলছেন বিকেএসপি দলের হয়ে।

একজন ক্রিকেটার পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হিসেবে দলে ঢুকলেও তাকে বোলিং করানোর পাশাপাশি বানানো হয় নিচের পজিশনের ব্যাটসম্যান। সাকিব, রিয়াদ, নাসির, শুভাগত, মিরাজসহ অনেকেই এই পজিশনে খেলছে। তার মধ্যে একমাত্র রিয়াদ ও সাকিবই নিজেদের যোগ্যতাবলে টপ অর্ডারে আসতে পেরেছেন। অথচ ক্রিকেট বিশ্বে অলরাউন্ডারদের ওপেনিং ব্যাট করার অহরহ উদাহরণ আছে। ইরফান পাঠান, শেবাগ, দিলশান, জ্যাক ক্যালিস, জয়সুরিয়া, আফ্রিদি, ওয়াটসনসহ অনেকেই ওপেনিং ব্যাটসম্যান। যারা ব্যাটে বলে নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন সবসময়।

কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটে এমনটা কল্পনাও করা যায় না। উল্টো নাসির, শুভাগত ও মিরাজের মতো ব্যাটসম্যানকেও ব্যাট করতে হয় বোলারের পজিশনে, যা একজন ব্যাটসম্যানের জন্য চাপের জায়গা নিঃসন্দেহে। এই পজিশনে ব্যাট করে সবাই নিজের সেরাটা দিতে পারে না। উল্টো হারিয়ে যেতে হয়। অভিষেকেই মাঠ মাতানো আফিফ হোসাইনও সম্ভবত এই ভাবনাটা ভেবে রেখেছেন, না হলে বোলিংয়ে ৫ উইকেট নেয়া আফিফও কেন বলবেন, আগে আমি ব্যাটসম্যান, তারপর  বোলার।