Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

স্বামী-স্ত্রীর স্থাপত্যভুবন

সময়কে বিবেচনায় নিয়ে আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে স্থাপত্য শিল্পে যারা কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে তামান্না সাঈদ ও সেলিম আলতাফ অন্যতম। তারা স্বামী-স্ত্রী। দুজনই বুয়েটে পড়াশোনা করেছেন। স্বামী-স্ত্রীসহ তিন বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন ‘সিনথেসিস আর্কিটেক্টস’ নামের একটি ফার্ম। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন তৈরি করে অনেকের নজর কেড়েছেন। এবার আনন্দ আলোর ব্রাইডল সংখ্যায় শাহ্‌ সিমেন্ট সুইট হোমে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।

স্থপতি তামান্না সাঈদের গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলায়। কিন্তু তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা খুলনায়। তামান্নার বাবার নাম সাইদুর রহমান। তিনি চাকরিজীবী ছিলেন। মা জায়াদা রহমান। তিনি একজন অধ্যাপিকা ছিলেন। তার বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। তিন ভাই বোনের মধ্যে তামান্না সাঈদ সবার ছোট। বড় বোন ডাক্তার আর ভাই এয়ার ফোর্সের গ্রুপ ক্যাপ্টেন।

ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তামান্না। বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতেন। ছবি আঁকাআঁকির প্রতি ছিল তার নেশা। গান গাওয়া ছিল তার পছন্দের বিষয়। তবে ছবি আঁকার প্রতি ঝোঁক ছিল অনেক বেশি। নিজের ইচ্ছা থেকেই আর্কিটেক্ট হওয়া তার। খুলনা সরকারি করনেশন গার্লস হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৮৭ সালে। ১৯৮৯ সালে ঢাকার বদরুন্নেসা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা চলাকানীন তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছেন স্থপতি রিপন, বিপ্লব, তাজিনা, মুন্নু, মিলি, প্যাট্রিক ও দুলদুল। এরা সবাই প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। তার প্রিয় শিক্ষকের মধ্যে আছেন স্থপতি সামসুল ওয়ারেস ও শামা। তামান্না সাঈদ ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯৭ সালে। স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা চলাকালীনই সেলিমের সঙ্গে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৯৯ সালে।

স্থপতি সেলিম আলতাফের বাড়ি নড়াইল জেলায়। সেখানেই তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। সেলিমের বাবার নাম ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা নাজমা সুলতানা গৃহিণী। তিন ভাই বোনের মধ্যে সেলিম মেঝ। নড়াইল সরকারি হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৮৬ সালে। ১৯৮৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। সেলিম আলতাফ ব্যাচেলার অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯৭ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরই স্বামী-স্ত্রী দু’জনই ‘আইকন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে কিছুদিন চাকরি করার পর ১৯৯৮ সালে তিন বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন ‘সিনথেসিস আর্কিটেক্টস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে বনানীর নাজির অ্যাসুরেন্স টাওয়ার, চট্টগ্রাম নাসিরাবাদের পাম গ্রোভ, হাতিরঝিলের হোসনে আজিজ ভিলা, ধানমন্ডির ব্র্যাক আড়ং টাওয়ার, বনানী ডিওএইচএস-এর চেয়ারম্যান হাউস, পাবনার মানামা রহমান হাইটস, উত্তরার শরীফ রেসিডেন্স বিল্ডিং, উত্তরার আর্টিসান হোটেলের ইন্টেরিয়র, খিলগাঁও এর মানামা এমডব্লিউ হাইটস, ব্র্যাক আড়ং কমার্শিয়াল বিন্ডিংসহ অসংখ্য অ্যাপার্টমেন্ট বিন্ডিংয়ের ডিজাইন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি ইন্টেরিয়র কাজও করে থাকে।

shahcement-proস্থপতি তামান্না সাঈদ ও সেলিম আলতাফ সব ধরনের কাজ স্থাপত্যনীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনেই করেন। নবদম্পতির বাসা কী ধরনের হতে পারে? এ প্রশ্নের জবাবে স্থপতি তামান্না সাঈদ বলেন, অনেক স্বপ্ন, আশা আর ভালোবাসা নিয়ে সূচনা হয় নবদম্পতির জীবন। ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা দুটি মানুষ বিবাহের মতো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একই ছাদের নীচে শুরু করে তাদের যুগল জীবন। নবদম্পতির বাসা কেমন হওয়া উচিত এ প্রশ্নের উত্তর হতে পারে খুবই টেকিনক্যাল অর্থাৎ কোন ফার্নিচারের সাইজ কী হবে, কোথায় রাখা হবে, ঘরের রঙ কী হবে ইত্যাদি। কিন্তু সবচেয়ে বেশি প্রঘোজনীয় বিষয়টি হচ্ছে নবদম্পতির বাসার পরিবেশ। সহজ, সরল, ভালোলাগা ও আনন্দের অনুভূতি ছড়িয়ে থাকবে সর্বত্র। এই ভালোলাগার অনুষঙ্গ হিসেবেই আসবে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য আসবাব থেকে শুরু করে অতিক্ষুদ্র অনিবার্য উপাদান। যুগল জীবনে দুজনের ভালোলাগা ও মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই তৈরি হবে ঘরের প্রতিটি কোন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফার্নিচার ঘরের পরিবেশকে বদ্ধ করে তুলতে পারে। তাই বাহুল্য পরিহার করতে হবে। বাসার ভেতরের পরিবেশ হবে যেন ঘরের এক একটি অংশ অন্য অংশের পরিপূরক, ঠিক যেন নবদম্পতির সম্পর্কের পারস্পরিক নির্ভরতার মতো। সৌখিন ফ্রেম আর ফ্রেমে বন্দী যুগল ছবি হতে পারে নবদম্পতির বাসার এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সুন্দর একটা সময় কাটানোর জন্য থাকতে পারে কফি কর্ণার ও মিউজিক কর্ণার বিভিন্ন ধরনের ল্যাম্পসেড  আর সঠিক আলোর ব্যবহার বাসার পরিবেশে আনতে পারে ভিন্ন মাত্রা। বাসার পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে তুলতে প্রয়োজন গাছপালা আর পর্যাপ্ত পানির উপস্থিতি। ঘরের কোনে মাটির পাত্রে রাখা পানিতে ছোট্ট শাপলা বা পদ্ম, বারান্দার টবের গাছ আর ঘরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা লতার শৈল্পিক বিন্যাস ঘরের পরিবেশকে করবে শানিৱময়।

কাজের বৈশিষ্ট্য সম্পকে তামান্না বলেন, প্রতিটি প্রজেক্টের রয়েছে নিজস্ব চাহিদা। কাজের শুরুতেই সেই ইটারনাল নিডটাকে বুঝবার চেষ্টা করি। আর্কিটেকচার ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন সকল ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। ফাংশন ও এসসেটিক এই দুইয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে সিমপ্লিসিটি অর্জনের চেষ্টাই কাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য। ইন্টেরিয়র ডিজাইনে রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। নানা ধরনের লাইটসেড ডিজাইন করে আনন্দ পাই। কোলাজ ওয়ার্ক করতে ভালোলাগে। কাজের প্রতি ভালোবাসা আর মমতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই আগামীর পথে।