Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

স্থাপত্য নিয়ে সেলিমের স্বপ্ন

দেশপ্রেম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব  দিয়ে স্থাপত্য শিল্পে যারা দেশের জন্য কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম স্থপতি লুৎফুল কবীর সেলিম। সেলিম নামেই তিনি বন্ধু মহলে পরিচিত। বুয়েটে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৯৬ সালে বুয়েট থেকে পাস করে বের হওয়ার পরই বন্ধু স্থপতি স্বপনকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ক্ষেত্র আর্কিটেক্টস এন্ড ইঞ্জিনিয়ার কনসালটেন্ট নামের একটি ফার্ম। এযাবৎ প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও নির্মাণ করেছেন। স্কুল জীবনে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। খেলাঘর আসর করতেন। ছবি আঁকাআঁকিতে পারদর্শী ছিলেন। খেলাধুলা ছিল তার পছন্দের বিষয়। ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট ভালো খেলতেন। বুয়েটের ব্যাডমিন্টনে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। বুয়েটের ক্রিকেট টিমের সাথেও জড়িত ছিলেন। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।

আর্কিটেক্ট লুৎফুল কবীর সেলিম প্রকৃতিপ্রেমী একজন স্থপতি। ইট, কাঁঠ, বালু ও কংক্রিটের মাঝে খুঁজে ফেরেন প্রকৃতির সান্নিধ্য। আর তাই তার প্রতিটি স্থাপনায় থাকে সবুজের ছোঁয়া। প্রতিটি ডিজাইনের ক্ষেত্রে আলো, বাতাস, সবুজ প্রকৃতি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তিনি। আর্কিটেক্ট লুৎফুল কবীর সেলিম তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। কিন্তু তার বেড়ে ওঠা দেশের বিভিন্ন জায়গায়। সেলিমের বাবার নাম এ কে এম এনামুল হক। তিনি সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা রাজিয়া সুলতানা গৃহিনী। স্কুলে পড়াকালীন সেলিমের ছবি আঁকাআঁকির প্রতি ছিল প্রচণ্ড নেশা। বইপড়া, খেলাধুলা ছিল পছন্দের বিষয়। তবে ছবি আঁকার ঝোঁকটা ছিল অনেক বেশি। ছোটবেলা থেকেই লুৎফুল কবীর সেলিমের ইচ্ছা ছিল স্থপতি হওয়ার। তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আজ তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। পাবনা চাঁটমোহর হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৮৪ সালে। ১৯৮৬ সালে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা চলাকালীন তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছেন মজিবুর রহমান স্বপন, টিটু, মঞ্জু, শাহিন ও আনু। এরা সবাই প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় আছেন সামসুল ওয়ারেস। স্থপতি লুৎফুল কবীর সেলিম ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯৬ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরই বন্ধু স্থপতি মজিবুর রহমান স্বপনকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘ক্ষেত্র আর্কিটেক্টস এন্ড ইঞ্জিনিয়ার’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। মহাখালি ডিওএইচএস-এ তারা খুব সুন্দর করে একটি অফিস সাজিয়েছেন। একই রুমে দুই বন্ধু পাশাপাশি দুই টেবিলে বসে অফিস করেন। তাদের প্রতিষ্ঠানে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ স্থপতি সহ মোট ২০ জন কর্মী কাজ করছেন। ইতিমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের নামকরা হোটেল, অফিস কমপ্লেক্স, কমার্শিয়াল টাওয়ার, রিসোর্ট সহ অসংখ্য আবাসিক বিল্ডিংয়ের ডিজাইন করেছেন।

Shah-Cementতাদের উল্লেযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে কক্সবাজারে নিসর্গ স্টুডিও প্রজেক্ট। যা এখন চার তারকা মানের একটি হোটেল। সেন্টমার্টিনের সীমানা পেরিয়ে ইকো ফ্রেন্ডলী রিসোর্ট। এই দুইটি প্রজেক্টের ডিজাইন ও নির্মাণের পাশাপাশি নিজেরাই পরিচালনা করছেন। এছাড়াও তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে- কক্সবাজারের জেলা পরিষদের সুভাস মিলনায়তন কমপ্লেক্স, গুলশান-২ এ পিংক সিটি, চট্টগ্রামের আইকন বিল্ডার্সের আইকন টাওয়ার, ধানমন্ডি-২৭ এর জেনিটিক প্লাজা, হাটখোলার গোল্ডেননেষ্ট রিয়েল এস্টেট কোম্পানির চৌধুরী মল, লালমাটিয়ার ন্যাশনাল হাউজিং অথোরিটির লালমাটিয়া অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স সহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও নির্মাণ করেছেন প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন তারা। যেমন মিরপুর-১১ তে প্রজেক্ট কনসালটেন্ট হিসেবে নাভানা রিয়েল এস্টেটের ১০ বিঘার উপর ৫০০ ফ্লাটের ‘প্রভানী রীজ ডেল’ নামের একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ডিজাইন করছেন। লুৎফুল কবীর সেলিম তার সব ধরনের কাজ স্থাপত্য নীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনেই করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম শ্যামা কবীর। বীরঙ্গণাদের পূর্ণবাসনের ক্ষেত্রে কাজ করছেন তিনি। এই দম্পতি দুই সনৱানের জনক-জননী।

স্থপতি লুৎফুল কবীর সেলিম বলেন, বর্তমানে বিশ্বে প্রতিযোগিতার বাজারে আমাদের সোনার বাংলা তার নিজস্ব প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হারাতে বসেছে। স্থপতি হিসেবে নিজেকে অপরাধী মনে হয় এই ভেবে যে, স্থাপত্যকর্মের নামে আমরা আসলে কী করছি? আমি বিশ্বাস করি স্থাপত্য প্রকৃতি ও মানুষের জন্য আর সেই লক্ষেই আগামীর প্রতিটি কাজে পরিবেশ বান্ধব স্থাপত্য কর্ম করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি লুৎফুল কবীর সেলিম। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সাথে করতে ভালোবাসেন। স্থাপত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি সেলিম বলেন, আমার আগামীর চিনৱায় একটি শহর নির্মাণের কথা ভাবছি যেখানে প্রকৃতি মূল্যায়িত হবে এবং যে শহরে ইট কাঠের এমন কোনো স্থাপনা তৈরী হবে না যা পরিবেশকে অবহেলা করে।