Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

স্থাপত্য চেতনার বিকাশে কাজ করে চলেছেন শুভজিৎ

আধুনিক স্থাপত্য শিল্পে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করে চলেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম শুভজিৎ চৌধুরী। ২০০৬ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিন থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৯ সালে তিনি শাহজালাল ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে লেকচারাল হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্য চর্চার সঙ্গেও জড়িত আছেন। এ যাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। স্কুল জীবনে ছবি আঁকাআঁকিতে পারদর্শী ছিলেন। বই পড়া ছিল তার পছন্দের বিষয়। এবার শাহ্‌ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক

স্থপতি শুভজিৎ চৌধুরী তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেট জেলায়। তার বাবার নাম মনোজ কুমার চৌধুরী। তিনি একজন প্রকৌশলী ছিলেন। মা শিবানী চৌধুরী গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন শুভজিৎ। খেলাঘর আসর করতেন।

স্কুলে পড়াকালীন শুভজিৎ চৌধুরীর ছবি আঁকাআঁকির প্রতি ছিল প্রচণ্ড নেশা। বই পড়া ছিল পছন্দের বিষয়। তবে ছবি আঁকার ঝোঁকটা ছিল অনেক বেশি। সিলেট শিল্পকলা একাডেমি থেকে চিত্রকলা বিভাগে দুই বছরের কোর্স সম্পন্ন করেন। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল স্থপতি হওয়ার। ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আজ তিনি হয়েছেন একজন সফল স্থপতি।

Shah-Cement-Projectসিলেটের ব্লু বার্ড উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শুভজিৎ এসএসসি পাস করেন ১৯৯৭ সালে। ১৯৯৯ সালে সিলেট এমসি সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। সেখানে পড়াশোনা চলাকালীন তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছেন স্থপতি সাদেকুল বাশার, সাবরিন আকতার। তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। তার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন স্থপতি অনির্বান মোস্তফা ও বিজন বিহারী শর্মা আর আইডল স্থপতি বশিরুল হক, মাজহারুল ইসলাম ও লুইকান।

স্থপতি শুভজিৎ চৌধুরী ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ২০০৬ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরই যোগ দেন স্থপতি এহসান খানের অধীনে ‘ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ’ নামের একটি ফার্মে। তারপর ২০০৭ সালে স্থপতি কাজী আরিফের এন ভিশন আর্কিটেক্টস নামের প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে তিনি দেড় বছর চাকরি করেন। ২০০৮ সালে সিলেটের লিভিং ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে একবছর শিক্ষকতা করেন। ২০০৯ সালে সিলেটের শাহজালাল ইউনিভার্সিটিতে স্থাপত্য বিভাগে লেকচারাল হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের তিনি স্থাপত্যের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্য চর্চার সঙ্গেও জড়িত আছেন।

ইতোমধ্যে শুভজিৎ চৌধুরী দেশের নামকরা কমার্শিয়াল টাওয়ার, অফিস বিল্ডিং, কর্পোরেট অফিস, শহিদ মিনার, ফিলিং স্টেশনসহ অসংখ্য আবাসিক ভবনের ডিজাইন করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে- সিলেটের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ও সংগ্রহশালা, জালালাবাদ পেট্রল পাম্প আম্বর খানা, নন্দন কানন অ্যাপার্টমেন্ট, সিলেটের এমসি কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল ধীরেশ চন্দ্র সরকারের বাগবাড়ি, ছাতক বাজারের মনিকা কমপ্লেক্স, এমসি কলেজের প্রধান ফটক, আল্লাহু চত্বর, ঈদগাহ্‌ এমসি কলেজ ফিল্ডের সৌন্দর্যবর্ধন, সিলেটের ডা. মাহমুদুল মজিদ চৌধুরীর রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের রিকি স্ট্রেন ও ইন্টেরিয়র ডা. রেজাউল করিমের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, ডা. শমীরউদ্দিনের বাসভবন, লামা বাজারে শামসুল ইসলামের রেসিডেন্স বিল্ডিংসহ অসংখ্য আবাসিক ভবন। ২০১১ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম শুকলা সাহা। তিনি একজন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার। এ দম্পতি এক সনৱানের জনক জননী।

স্থপতি শুভজিৎ চৌধুরী বলেন, আমার কাজে আমি চেষ্টা করি প্রথমত পরিসরের ব্যবহারিক উপযোগিতাকে প্রাধান্য দিতে। এর মধ্যে স্থানিক জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ, সূর্যালোক প্রকৃতিকে Shah-Cement-Project-1কাজে লাগিয়ে ভবনের অভ্যন্তরে বাসযোগ্য আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করি। তাছাড়া এই বাংলা অঞ্চলের সহজলভ্য নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার এবং ভূ-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রকাশের উপর নির্ভরশীল সহজাত রুচিবোধ ভাবনায় থাকে। নিজস্ব একটি শৈলী সৃষ্টিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যদিও তা সময় ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সাপেক্ষ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি শুভজিৎ বলেন, বাংলাদেশের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের স্থপতি ইনস্টিটিউট ও স্থপতিদের মনন ও দক্ষতা বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও আমরা দেখতে পাই এ দেশের জলবায়ু ভূ-প্রকৃতি, ঐতিহ্য ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ইত্যাদিকে উপেক্ষা করে ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে উপযোগী বিজাতীয় ধারার স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত ভবনের সংখ্যা বেড়েও চলেছে। যা আমাদের জাতীয় পরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। স্থপতিদের এবং স্থাপত্য শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতীয় চেতনাবোধের বিকাশ খুবই জরুরি। যে সমাজে স্থপতিরা তাদের স্থাপত্য সৃষ্টি করেন, সেই সমাজের সাধারণ মানুষকে বাঙালি জাতির নিজস্ব স্থাপত্যের প্রতি সচেতন করতে না পারলে বাংলা অঞ্চলের স্থাপত্য তার গতি পথ হারাবে। কারণ জীবন জীবিকার তাগিদে স্থপতি এই সমাজের উপর নির্ভরশীল। স্থাপত্য পেশা ও শিক্ষকতার পাশাপাশি আগামীতে ইচ্ছা আছে স্থাপত্য পেশায় নিয়োজিত সিলেটে আমরা যারা আছি এবং আমরা যাদের ভবনের কাজ করে থাকি তাদের মাঝে বাঙালির স্থাপত্য চেতনা ও রুচিবোধ বিকাশের জন্য সম্মিলিতভাবে কিছু একটা করার।