Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

স্থাপত্যে তরুণদের উৎসাহ দিয়ে চলেছেন তিনি

আধুনিক স্থাপত্য শিল্পে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করে চলেছেন তাদের মধ্যে এস. এম. নাজিম উদ্দীন পায়েল অন্যতম। ২০০০ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিন থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ডিসিপ্লিনেই সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। এ যাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। স্কুল জীবনে ছবি আঁকা-আঁকিতে পারদর্শী ছিলেন। কবিতার বই পড়া ছিল তার পছন্দের বিষয়। ক্রিকেট ভালো খেলতেন। এবার শাহ্‌ সিমেন্টে সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।

স্থাপত্যের ক্ষমতা অপার এবং তা বুঝতে হলে প্রয়োজন নির্জলা বিশ্বাসের। স্থাপত্য চর্চায় থাকতে হবে একনিষ্ঠ একাগ্রতা। কেননা স্থাপত্যকর্ম আবর্তিত হয় মানুষের প্রয়োজন, সৌন্দর্যবোধ, তার ঐতিহ্য আর ভবিষ্যৎকে নিয়ে। স্থাপত্য ব্যক্তি, রাষ্ট্র, সর্বোপরি সময়ের পরিচায়কও বটে। কথাগুলো বললেন খ্যাতিমান স্থপতি এস. এম. নাজিম উদ্দীন পায়েল। রাজধানী ঢাকা থেকে বহুদূরের শহর খুলনায় ১৬ বছর ধরে ওখানকার মানুষকে পরিচিত করছেন সমকালীন স্থাপত্য রীতির সঙ্গে।

খুলনা অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় রয়েছে তার নান্দনিক স্থাপত্য কর্মের উপস্থিতি। সব খানেই চেষ্টা করেন নিজস্ব রীতিতে কিছু করার। তাই তার প্রতিটি কাজে ফুটে ওঠে আধুনিক স্থাপত্য রীতির ধারা। সঙ্গে নিজস্ব মুন্সীয়ানা। কাজ করার সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন ব্যবহারকারীদের চাহিদা। সঙ্গে থাকে সমসাময়িক প্রযুক্তি ভাবনা। আর্কিটেক্ট এস. এম. নাজিম উদ্দীন পায়েল দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মেঝ। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা খুলনা শহরে। তার বাবার নাম মৃত: ডা: এস. এম. নূরুল ইসলাম। মা লুৎফুননেসা পারভীন গৃহিণী। স্কুলে পড়াকালীন পায়েলের ছবি আঁকাআঁকির প্রতিছিল নেশা। কবিতার বই পড়া ছিল পছন্দের বিষয়। তবে খেলাধুলার প্রতি ঝোঁকটা ছিল অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্রিকেট টীমেও ছিলেন।

mir-towerছোটবেলা থেকেই পায়েলের ইচ্ছা ছিল স্থপতি হওয়ার। তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আজ তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। খুলনার সেন্টজোসেফ’স হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৯২ সালে। ১৯৯৫ সালে খুলনা সরকারি বি, এল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। সেখানে পড়াশোনা চলাকালীন তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছেন স্থপতি তপন ধর, আসিফ ইমতিয়াজ ও মিজান। এরা সবাই প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। তার পছন্দের শিক্ষক ছিলেন মো: আলী নকী আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন শিক্ষক ও মাহবুব মালিক প্রিন্সের কথা, যাদের হাত ধরে খুলনাতে স্থাপত্য চর্চা শুরু হয় তার।

স্থপতি এস. এম নাজিম উদ্দীন পায়েল ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ২০০০ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরই পায়েল যোগদেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনেই শিক্ষক হিসেবে। বর্তমানে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের তিনি স্থাপত্যের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্য চর্চার সঙ্গে জড়িত আছেন। ইতোমধ্যে এস. এম. নাজিম উদ্দীন পায়েল দেশের নামকরা কমার্শিয়াল টাওয়ার, অফিস বিল্ডিং, কর্পোরেট অফিস, ইন্ড্রাস্ট্রি, সী ফুড, হোটেল, হাসপাতাল, মসজিদসহ অসংখ্য আবাসিক ভবনের ডিজাইন করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ঢাকার জাহাঙ্গীর গেটের স্বাধীনতা টাওয়ার, উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ ভবন বগুড়াস্থ ডেলটা টাওয়ার, খুলনার ডেলটা টাওয়ার, ঢাকা নিকুঞ্জের কে, ভি, এ লিয়াজো ভবন, মিরপুর- পাইকপাড়া জামে মসজিদ, খুলনার এ হোসেন প্লাজা, সম্রাট বাজার, সাভার-নবীননগরের বার্জার পেইন্টস ফ্যাক্টরী, খুলনার একে এগ্রো ইন্ড্রাস্ট্রি, এটলাস সী  ফুড, খুলনা শপিং কমপ্লেক্স, যশোর বেনাপোল এর কাজ টাওয়ার, খুলনার সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কলাবাগানের আকাঙক্ষা সবুরন টাওয়ার, খুলনার সিসভাগ গুলফিশান, প্রিয়াংগন, হাতেম আলী হাসপাতাল, হোটেল অ্যাম্বাসাডর, দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাজী হানিফ কমপ্লেক্স, অপসোনিন রিজিওনাল অফিসসহ অসংখ্য অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং। ২০০৯ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম তাজভীনা সুলতানা। তিনি একজন অ্যাডভোকেট। এ দম্পতি এক কন্যা সন্তানের জনক-জননী। মেয়ের নাম আরিবাহ নাজিম।

shadin-towerস্থপতি এস. এম. নাজিম উদ্দীন পায়েল বলেন, আমি অনেক তরুণ স্থপতিকে উদ্বুদ্ধ করছি যাতে তারা তাদের নিয়মিত স্থাপত্য পেশার পাশাপাশি মূল কেন্দ্রের বাইরে ছোট শহরগুলোতে এমন কি গ্রামাঞ্চলেও স্থাপত্য চর্চার বিস্তার ঘটায়। তাহলে রাজধানী থেকে মফস্বল, মফস্বল থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সামগ্রিক মৌলিক স্থাপত্য চর্চা দেখা যেতে পারে। আমার স্থাপত্য চর্চার শুরুটা ছিল সুবিধাবঞ্চিত নগরের জন্য স্থাপত্য। ভবিষ্যতে ইচ্ছা সরাসরি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য তথা সবার জন্য স্থাপত্য চর্চার সুফল নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে ঠিক রেখে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দেন তিনি। এই স্থপতি তার নিজের কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চান স্থপতি এস. এম. নাজিম উদ্দীন পায়েল।