Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সিনেমায় নিজেকে বদলাতে চাই-সজল

নিজেকে প্রতিনিয়ত নতুনভাবে তৈরি করে চলেছেন তিনি। অভিনয়ের ক্ষেত্রে নিজেকে ভাঙা আর গড়ার মধ্যেই আছেন। এটা অবশ্য নিজেকে প্রতিনিয়ত নতুনভাবে তুলে ধরার জন্যই করা। তাই তো হাসিমাখা মুখে বললেন, ‘দর্শকদের সামনে নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপনের জোর প্রচেষ্টা চলছে আমার। টিভি পর্দায় সচারচর যেভাবে দেখা যায় সেভাবে নিজেকে বড় পর্দায় উপস্থাপন করতে চাই না। তাই তো নতুনভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ হ্যাঁ, পাঠক জনপ্রিয় অভিনেতা আবদুর নূর সজলের কথায় নতুন চলচ্চিত্রে নিজেকে উপস্থাপনের কিছুটা আভাস পাওয়া গেল। টিভি পর্দার এই জনপ্রিয় অভিনেতা চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। ‘রান আউট’ ছবিতে তাকে একভাবে আবিষ্কার করেছিল তার ভক্তরা। আর সম্প্রতি ‘হারজিৎ’ সিনেমায় মাহীর সঙ্গে তার প্রস্তুতি এবং গেটআপ নিয়ে মুখ খুলেছেন সুদর্শন এই অভিনেতা। শুধু তাই নয়- ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে চলচ্চিত্রসহ শোবিজের নানান বিষয়ে আনন্দ আলোর সঙ্গে তিনি বলেছেন অনেক কথা। ‘হারজিৎ’ সিনেমার শুটিংয়ের আগে নগরীর একটি শুটিং হাউজে বসে সজলের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো। লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল।

আনন্দ আলো: এখনকার ব্যস্ততা কী নিয়ে?

সজল: চলচ্চিত্রের শুটিং নিয়েই ব্যসৱ। গত মাসের শুরুর দিকে কয়েকটি নাটকের শুটিং করেছিলাম। এরপর পুরোপুরি চলচ্চিত্রের জন্য সময়টা বরাদ্দ করে রাখি। নতুন ছবি ‘হারজিৎ’- এর শুটিং এর আগে আমার পুরোপুরি প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল। বলা যায় ছবিটির শুটিংয়ের প্রায় এক মাস আগে থেকে অন্য কোনো নাটক কিংবা ফিকশনের শুটিং করিনি। আমার সঙ্গে যখন ছবিটি নিয়ে কথা হয় তখনই বিষয়টি এমনভাবে পাকাপাকি হয়েছিল। গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ‘হারজিৎ’- এর শুটিং শুরু করি। এখনো সেটাই করছি। তবে কয়েকটি ঈদ নাটকেও অভিনয় করেছি।

আনন্দ আলো: এই যে বললেন, ছবিতে অভিনয়ের প্রস্ততি নিতে হয়েছে। তা কি ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন?

সজল: দেখুন, আমি যখন ‘রানআউট’ ছবিতে অভিনয় করেছিলাম তখনও কিন্তু আমার আলাদা একটা প্রস্তুতি ছিল। ঐ ছবিতে অভিনয়ের আগে প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ফাইট শেখা, ড্যান্স শেখা, জিম করা এবং সর্বোপরি চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য আলাদা একটা প্রিপারেশন ছিল। খাবার-দাবার থেকে শুরু করে সবকিছুতেই একটা স্ট্রাকচার মেনটেইন করতে হয়েছিল। টাইমলি খাওয়া, টাইমলি ঘুমাতে যাওয়া, ঘুম থেকে সময় মতো উঠাসহ সবকিছু ঘড়ির ফ্রেম ধরে ধরে করতে হয়েছে। একজন অভিনেতা হিসেবে আমার কথা হচ্ছে- দর্শকরা আমাকে টিভি পর্দায় যেমন দেখেছেন চলচ্চিত্রে যেন সেভাবে না পায় সেটা আমার চিনৱায় সবসময় ছিল। তাই এবারও বদিউল আলম খোকন ভাইয়ের এই ছবিতে সম্পৃক্ত হওয়ার আগেও একটা দীর্ঘ সময় নানান ধরনের প্রস্তুতির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই ছবিতে অন্যরকম এক সজলকে দেখবেন দর্শক। এখন শুধুু এইটুকু বলে রাখি। বাকিটা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দর্শক প্রমাণ পাবেন। এই ছবির জন্যও আমার ড্যান্স, ফাইটিং, অভিনয়ের ভিন্ন কিছু রপ্ত করার কাজ আমাকে করতে হয়েছে। বড়পর্দা আর ছোটপর্দার মধ্যে যে একটা পার্থক্য রয়েছে সেটা যেন সত্যি সত্যি দর্শক আমাকে দেখে আবিষ্কার করেন সেটার জন্যই আমার সব পরিশ্রম। এখন কতটুকু করতে পেরেছি সেটা দর্শকরা ভালো বলতে পারবেন। আমি আমার সর্বোচ্চ দেয়ার চেষ্টা করছি।

আনন্দ আলো: টেলিভিশন মিডিয়ায় আপনার দীর্ঘ দিনের পথচলা। এখন চলচ্চিত্রেও অভিনয় করছেন। চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান কতটুকু ইতিবাচক মনে হচ্ছে?

sajol-2সজল: দেখুন, একজন অভিনেতার অভিনয়ের ক্ষেত্রে নানান বাঁক থাকে। উত্থান থাকে, পতন থাকে, চরিত্র নির্বাচনের নানান দিকও থাকে। শুরুতে আমি টিভি মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি বেশ কয়েক বছর। একটা সময়ে এসে অভিনয়ের দিকে যাই। সেটার জন্যও কিন্তু আমার একটা প্রস্তুতি ছিল। কারণ অভিনয়টা রপ্ত করার বিষয় ছিল। সেই জায়গা থেকে দীর্ঘ পথ অতিক্রমের পর চলচ্চিত্রের দিকে পা বাড়াই। বলা যায় সময় নিয়েছি বেশ। নিজেকে যখন প্রস্তুত মনে হয়েছে তখনই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পা বাড়াই। মনে আছে শুরুর দিকেও কিন্তু চলচ্চিত্রে কাজ করার জন্য অনেক প্রসৱাব পেয়েছিলাম। তখন আত্মবিশ্বাসের জায়গা ঐভাবে তৈরি হয়নি বলে চলচ্চিত্রে কাজ করেনি। সময় নিলাম। টিভি নাটকেই অভিনয় করে গেলাম। যখন নিজের ভেতর একটা শক্তি কাজ করলো, মনের দিক থেকে সাহসটা পেলাম- তখনই চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করি। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘নিঝুম অরণ্যে’, তন্ময় তানসেনের ‘রান আউট’ ছবি দুটি মুক্তি পায়। আর এখন করছি বদিউল আলম খোকনের ‘হারজিৎ’ ছবিটি। যেখানে মাহী রয়েছেন আমার বিপরীতে। সব মিলিয়ে আমি কতটুকু দর্শকদের মন জয় করতে পারলাম সেটা দর্শকই ভালো বলবেন। আমি শুধু এইটুকু বলবো- নিজের আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ দেয়ার চেষ্টা করছি।

আনন্দ আলো: আমাদের চলচ্চিত্রে একটি বিতর্ক আছে- যারা টেলিভিশন মিডিয়ায় কাজ করে থাকেন তারা যখন চলচ্চিত্রে যান, তখন দর্শকরা নাকি তাদেরকে টিকিট কেটে প্রেক্ষাগৃহে দেখতে যেতে চান না। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

সজল: এই বিতর্কটি আছে। এটা আমি অস্বীকার করবো না। পাশাপাশি এটাও তো আছে যতজন অভিনয়শিল্পীই টেলিভিশন মিডিয়া থেকে চলচ্চিত্রে গেছেন, তারা সকলেই কী ব্যর্থ? সফল কী কেউ নেই? আবার অনেক অভিনয়শিল্পী আছেন যারা সিনেমায় ক্যারিয়ার শুরু করার পর টেলিভিশন মিডিয়ায় কাজ করেছেন। এমনকি তারা এখনো করছেন। পাশাপাশি তারা বড়পর্দায়ও কাজ করেছেন। তাদেরকে কী প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টাকা দিয়ে টিকিট কেটে দেখেননি? অবশ্যই দেখেছেন। এই বিতর্ক থাকবেই। তবে আমার কথা হচ্ছে- ভালো মন্দের বিচারক হচ্ছে দর্শক। কোনো রকম বিতর্কে না গিয়ে আমি বলবো- দর্শক যদি আমাকে ভালোবাসেন এবং আমাকে বড়পর্দায় দেখতে চান- তাহলে তারা অবশ্যই প্রেক্ষাগৃহে টাকা দিয়ে টিকেট কেটে আমাকে দেখবেন। এখানে আরেকটি বিষয় না বললেই নয় তা হলো-সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়। তাই বর্তমানে মানুষের অনেক ক্ষেত্রেই মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। একটা সময় এই বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি নেতিবাচক কথা শোনা যেত। এখন আর সেটা গুরুত্ব বহন করে না। সত্যিকারের অভিনয় জানা এবং দর্শক গ্রহণযোগ্যতা থাকলে এখন দর্শক যেকোনো অভিনয়শিল্পীকেই গ্রহণ করছেন। ভালো গল্পের ছবি হলে দর্শক আগ্রহ দেখাচ্ছে। এক্ষেত্রে দর্শক মোটেই ভাবছে না- অমুককে তো টিভিতে দেখে ফেলেছি- তাকে আবার প্রেক্ষাগৃহে দেখার কী হলো। কারণ দর্শক নায়ক-নায়িকা দেখার পাশাপাশি ভালো একটি গল্পও দেখতে চায়। অনেক ভালো অভিনয়শিল্পীর ছবি গল্প ভালো ছিল না বলে সুপার ফ্লপ হয়েছে আবার অনেক কম জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীর সিনেমা শুধু গল্পের জন্য হিট হয়েছে- এই নজিরও রয়েছে। তাই আমি এসব নিয়ে একদম মাথা ঘামাই না।

আনন্দ আলো: আপনি টেলিভিশন মিডিয়ার জনপ্রিয় একজন অভিনেতা। তাই বর্তমান টেলিভিশন নাটক নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

সজল: টেলিভিশন নাটক এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই আমার মিডিয়ায় যাত্রা শুরু। আমার মামা প্রখ্যাত নির্মাতা-অভিনেতা আফজাল হোসেনের কাছে আমার অভিনয়ের হাতেখড়ি। এই জনপ্রিয় মানুষটির ‘হীরাফুল’ নাটকের মাধ্যমে আমার পরিচিতি আসে। এর আগে যদিও বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছিলাম। তবে জনপ্রিয়তা ঐ ‘হীরাফুল’ নাটকের মাধ্যমেই হয়। সে যাই হোক। সত্যি কথা বলতে কী একটা সময় টেলিভিশন মিডিয়ায় একটি নাটক প্রচার হওয়ার পর যে সাড়াটা পেতাম সেটা এখন আর পাওয়া যায় না। কারণ অনেক চ্যানেল অনেক কাজ। তবে আমার বিচারে অনেক দর্শক এখন টিভি দেখে। ইউটিউবে আমাদের নাটকের দর্শক প্রচুর। তবে দর্শককে নাটক দেখানোর যে সিস্টেম আমাদের এখানে রয়েছে- তা বদলাতে হবে। সময়ের সঙ্গে সবকিছুরই পরিবর্তন হয়। তাই আমাদেরও বদলাতে হবে। দর্শককে একটি প্রোডাকশন কোন প্রকার টেনশন ছাড়াই দেখার সুযোগ করে দিতে হবে। আর অবশ্যই টিভি নাটকের নির্মাণ বাজেট বাড়াতে হবে। কেননা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের নাটকের কথাই যদি বলি- তারা একটি প্রোডাকশনের একেকটি পর্ব করার জন্য যে বাজেট পায় তার অর্ধেকও আমাদের নির্মাতারা পান না বলে আমার বিশ্বাস। তাই বাজেট ছাড়া আধুনিক নির্মাণ আশা করা যাবে না।

আনন্দ আলো: ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?

sajol-1সজল: আমি আসলে কখনোই কোনো কিছু খুব পরিকল্পনা করে করিনি। তবে আজ পর্যন্ত যা কিছু করেছি তার সবকিছুই আল্লাহ ভালোর জন্য করেছেন। এখন পর্যন্ত ভুল কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নিজের প্রতি বিশ্বাস এবং মানুষের ভালোবাসায় কাজ করে যাচ্ছি। তাই আমার মন যেটা ইতিবাচক বলে আমি সেটাই করি এবং আমি সফল হই। তাই খুব বেশি পরিকল্পনা করে কাজ করা হয় না আমার। দর্শকদের জন্য কাজ করে যেতে চাই সারাজীবন। দর্শকদের ভালোবাসায় নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই।

আনন্দ আলো: এবার ব্যক্তিজীবনে আসি। বিয়ের ফুল কবে ফুটবে?

সজল: ফুল ফোটার সময় হলে আপনা আপনিই ফুটে যাবে। এটা কী জোর করে ফোটানোর বিষয়… হাঁ হাঁ হাঁ। মজা করছিলাম। সত্যি কথা বলতে কী- এই মুহূর্তে বিয়ে কিংবা সংসার নিয়ে কোনো চিনৱা-ভাবনা নেই। আর এই বিষয়টি আমি আমার পরিবারের হাতেই রেখে দিয়েছি। উনারা যেটা সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাই হবে। তবে এখন যে বিষয়টি নিয়ে চিনৱা-ভাবনা নেই সেটা সত্যি। সময় হলে হাক-ডাক দিয়ে ঘটাও করে বিয়েটা করবো। কেননা আমি বিশ্বাস করি- আমার মিডিয়ার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সকলের অধিকার আছে আমার বিয়েতে মজার করার। তাই চুপি চুপি এই কাজটি সারার ইচ্ছা নেই। সকলের ভালোবাসা নিয়েই কাজটি করতে চাই। তবে এখনো দর্শকদের অনেককিছু দেয়ার বাকি আছে এবং অভিনয়ের অনেক কিছু জানার বিষয় রয়েছে। তাই নিষ্ঠার সাথে অভিনয়টা করতে চাই। আর বিয়ে? সময় হলে সবাই তা দেখবেন।