Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সবুজ আঁচলে নগর-মুকিত মজুমদার বাবু

পৃথিবী রক্ষার মূলমন্ত্র হলো সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ। সুস্থ পরিবেশ মানেই সুন্দর পৃথিবী। পরিবেশের সুস্থতার সঙ্গে জড়িত থাকে অনেকগুলো নিয়ামক। তাই সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিতকরণে পরিবেশের প্রতিটি উপাদানের প্রতি মানুষের আচরণ হতে হয় বন্ধুভাবাপন্ন। দিন দিন মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হচ্ছে এবং সেইসঙ্গে চাহিদাও বাড়ছে। শিল্প-কারখানার বর্ধিতায়ন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, উঁচু উঁচু দালানকোঠার চাহিদা নগরায়নকে ক্রমশই বাড়িয়ে তুলছে। পৃথিবীর মোট গ্রীন হাউস গ্যাসের ৮০ ভাগ তৈরি করছে শহর ও নগর কেন্দ্রগুলো। ধীরে ধীরে গ্রামগুলো পরিবর্তিত হয়ে শহরের রূপ নিচ্ছে। ক্রমবর্ধিত এই নগরায়ন আমাদের সবুজ সতেজ প্রাকৃতিক পরিবেশকে একটু একটু করে যেন ¤øান করে দিচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতির এই বিবর্ণ রূপ আমরা দেখতে চাই না। চাই প্রকৃতি সংরক্ষিত হোক, উন্নয়নও ত্বরান্বিত হোক।
দেশে পরিবেশ আইন না মেনে কল-কারখানা নির্মাণ ও কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম, জলাশয় ভরাট ও দখল করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ, নদীতে অপরিকল্পিত বাঁধ দেয়া, যেখানে সেখানে ইটভাটা তৈরি, বনাঞ্চল ধ্বংস করে উন্নয়ন কার্যক্রম হরহামেশাই চলছে। এসব কর্মকাÐ সুস্থ পরিবেশের অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। এদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন থাকা সত্তে¡ও তা মানা হচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রেই।
জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ আমাদের শহরগুলোর একটি বড় সমস্যা। জলাশয় শহরের অতিরিক্ত পানি ধরে রাখতে এবং বিভিন্ন জলজপ্রাণীর আবাসস্থল টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু পর্যাপ্ত জলাশয় না থাকায় বর্ষাকালে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় জলাবদ্ধতা স্থায়ী হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়া বৈধ-অবৈধ আবাসন প্রকল্পগুলো নগরীর চরিত্র বদলে দিচ্ছে। বর্তমানে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদী শিল্পবর্জ্যরে নালায় পরিণত হয়েছে।
ঢাকা মহানগরীর উদ্যানগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। অথচ একটি সুস্থ সুন্দর নগরীতে উদ্যানগুলো ফুসফুসের মতো কাজ করে। সুস্থ নগরীর জন্য দরকার উন্মুক্ত পার্ক, খেলার মাঠ, জলাশয় ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের নগরগুলো কংক্রিটের জঞ্জালে পূর্ণ! এখানে বৃক্ষের সজীবতা কিংবা জলাভূমির শোভা খুঁজে পাওয়া ভার। এখানকার বাতাস, মাটি, পানি সবই দূষণে দূষিত।
পরিবেশ রক্ষার জন্য পরিবেশবান্ধব নগরায়ন অপরিহার্য। নগরীর আশপাশের শিল্প-কারখানাগুলোতে বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু করা, পরিবেশ নীতিমালা মেনে উন্নয়ন কার্যক্রম চালানো, সংরক্ষিত এলাকাগুলো নির্ঝঞ্ঝাট রাখা, নির্দিষ্ট স্থানে গৃহস্থালীসহ অন্যান্য ময়লা ফেলা, সর্বোপরি জনগণের সচেতনতা-নগরায়নকে পরিবেশবান্ধব করতে সহায়তা করবে। উন্নত জীবনযাপন এবং সকল উন্নয়ন কার্যক্রমের মূল উপাদান হলো বিদ্যুৎ। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনিয়ন্ত্রিত বিদ্যুৎ এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার কমানো জরুরি। বিদ্যুতের বিকল্প সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতি লাঘব করা যায়। বর্জ্য পরিশোধন ও পুনঃব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী প্রস্তুত করা সম্ভব।
২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৭৫ ভাগ লোক বাস করবে নগর এলাকায় এবং এই নগরায়ন প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বেশি অগ্রযাত্রা ঘটবে এশিয়ায়। একটি শহর যখন গড়ে ওঠে বা উন্নতির দিকে ধাবিত হয় তখন যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগই ওই শহরটিকে পরিবেশবান্ধব হতে সাহায্য করে। পরিকল্পনামাফিক পর্যাপ্ত রাস্তা, পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা, শিল্প-কারখানা ও ইটভাটার জন্য নির্দিষ্ট স্থান ও পর্যাপ্ত পরিমাণ সবুজ বনানীর ব্যবস্থা করা জরুরি। পরিবেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ না করে পরিবেশ সহায়ক কর্মকাÐই মানুষ ও পৃথিবীর জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। নগরায়নের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণটাও জরুরি যেখানে বৃক্ষের সজীবতা নাগরিক ব্যাধির শুশ্রƒষা করবে, চিত্তকে কলুষমুক্ত করবে।
লেখক: চেয়ারম্যান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন