Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে ভালোবাসেন আশরাফুল!

আধুনিক স্থাপত্য শিল্পে যারা দেশের জন্য কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে আশরাফুল আলম আহমেদ অন্যতম। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৮ সালে উত্তরায় গড়ে তোলেন ‘আহমেদ হোসাইন আর্কিটেক্টস এন্ড অ্যাসোসিয়েট’ নামের একটি ফার্ম। ২০১১ সালে আইবিএ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর সহপাঠী ও পার্টনার শওকত এবং প্রকৌশলী বন্ধুৃ লিটনকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘গ্লাসিয়াস বিল্ডার প্লাস লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ যাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন তৈরি করেছেন। স্কুল জীবনে ছবি আঁকাআঁকিতে পারদর্শী ছিলেন। বই পড়া তার পছন্দের বিষয়। গানও ভালো গাইতে পারেন। অবসর সময়ে এখনো গান নিয়ে বসে পড়েন। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক

স্থপতি আশরাফুল আলম আহমেদের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার। কিন্তু তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। আশরাফুলের বাবার নাম মো: ফরিদুল আলম। তিনি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রক, অর্থ ও হিসাব রক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। মা সাজেদা বেগম গৃহিনী। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আশরাফুল আলম সবার ছোট।

ছোটবেলা থেকেই আশরাফুলের ইচ্ছা ছিল স্থপতি হওয়ার। ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আজ তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। ঢাকার সেন্ট যোসেফ হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৯৭ সালে। ১৯৯৯ সালে নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনাকালীন তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছেন স্থপতি শওকত, ইশতিয়াক, রাফি, মুসা ও ইসরাত প্রমুখ। তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। তার প্রিয় শিক্ষক সামসুল ওয়ারেস স্যার।

শিক্ষাজীবনে স্থপতি দেওয়ান শামসুল আরিফ ভিস্তা আর্কিটেকচারাল কন্সালটেন্টস এর তত্ত্বাবধানে পেশাদার কাজের হাতে খড়ি হয় আশরাফুল আহমেদের। সেখানে তিন বছর চাকরি করেন।

স্থপতি আশরাফুল আলম আহমেদ ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ২০০৬ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরই আশরাফুল যোগ দেন স্থপতি আহসানউল্লাহ মজুমদারের ফার্মে। সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দুই বছর চাকরি করেন। ২০০৮ সালে উত্তরায় গড়ে তোলেন ‘আহমেদ হোসাইন আর্কিটেক্টস এন্ড অ্যাসোসিয়েটস’ নামের নিজস্ব ফার্ম। একই সঙ্গে বুয়েটের সহপাঠী ও পার্টনার শওকতকে সঙ্গে নিয়ে চট্টেশ্বরী রোডে চট্টগ্রাম শাখার দায়িত্ব নেন। ২০১১ সালে আরেক প্রকৌশলী বন্ধু লিটনকে সঙ্গে নিয়ে তিনজন মিলে গড়ে তোলেন গ্লাসিয়াস বিল্ডার প্লাস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। উত্তরায় তিনি খুব সুন্দর একটি অফিস সাজিয়েছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞ স্থপতি ও প্রকৌশলীসহ মোট ১৫ জন কর্মী কাজ করছেন। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের নামকরা হোটেল, ফ্যাক্টরি, কলেজ, রেস্টুরেন্ট, শোরুম, কনভেনশন সেন্টার, অফিস বিল্ডিং, কমার্শিয়াল টাওয়ার বিউটি পার্লারসহ অসংখ্য আবাসিক ভবনের ডিজাইন করেছে। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেণ্ড হেমায়েতপুরে সুইসটেক্ট প্রিন্টারস লিমিটেডের লেবেল ফ্যাক্টরি, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কিং ফ্লাওয়ার মিল, ঢাকা ও চট্টগ্রামে এমএম ইস্পাহানি লিমিটেডের অফিস, চট্টগ্রামের আমবাগানে এ কে খান গ্রুপের হেড অফিস ও বিভিন্ন জোনাল অফিস, চট্টগ্রামে বিবিএস কেবলস-এর অফিস ও শোরুম, বাকলিয়ায় এমইবি হাউজ, জিইসির মোড়ে এমআইসি অফিস, প্রগতি ইন্সুরেন্স লিমিটেডের চট্টগ্রামের অফিস, চট্টেশ্বরী রোডে এপিক প্রপার্টিজের অফিস, কুমিরায় বিবিসি ষ্টিল ও শীতলপুর স্টিলের অফিস, ষোল শহরে রেড লাউঞ্জ বিউটি পার্লার, আগ্রাবাদ হোটেলের ইস্ট প্যান এশিয়ান কুইজিন রেস্টুরেন্ট, জিইসির মোড়ে রান্ধে ভূ রেস্টুরেন্ট, কক্সবাজার কলাতলীর ব্লু ওশেন হোটেল, ইস্পাহানি স্কুল এন্ড কলেজ (নতুন ক্যাম্পাস), কালামিয়া বাজারে আহাদ কনভেনশন সেন্টার, অরুণা পল্লীতে ড: সাব্বিরের বাসভবন, ঢাকা উদ্যানে আব্দুস সামাদের বাসভবন, সার্সন রোডে গ্লাসিয়াস অমরাবতী অ্যাপার্টমেন্ট, মোহাম্মদপুরে আহমেদ হোসাইনের বাসভবন, ইপিজেড-এ ডা: সাইফুদ্দীনের বাসভবন, ফেনীতে মিশ্র ব্যবহার বহুতল ভবন ইফেক্ট চন্দ্রিমা টাওয়ার, বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি যেমন নবী নগরে বার্জার পেইন্টস, টঙ্গী কালুরঘাটে ইউনিলিভার বাংলাদেশ, রাজেন্দ্রপুরে কোটস বাংলাদেশ ফ্যাক্টরির সম্প্রসারণ, মিরপুর ডিওএইচএসএ রিয়াল এডমিরাল শাহিন ইকবালের বাসভবনসহ অসংখ্য অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং। এছাড়াও বিভিন্ন ডেভেলপারের অসংখ্য অ্যাপার্টমেন্ট ভবন এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন আবাসিক ভবনের ইন্টেরিয়ার প্রজেক্ট। আশরাফুল আলম আহমেদ তার সব ধরনের কাজ স্থাপত্যনীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনেই করেন।

SHah-Cement-1২০১২ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম আয়েশা আক্তার সুমি। তিনি মুন্সীগঞ্জের একজন অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এ দম্পতি এক পুত্র সন্তানের জনক-জননী। ছেলের নাম মুয়াম্মার যুহাইর আল ফরীদি। স্থপতি আশরাফুল আলম আহমেদ বলেন, পেশাগত দিক দিয়ে মূলত বিল্ডিং ডিজাইনের উপরে বেশি জোর দিয়ে থাকি। একই সঙ্গে পছন্দ সই কাজ পেলে ইন্টিরিয়র ডিজাইনও করি। আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক ভবনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানার ডিজাইনও সমানভাবে গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। ভবনের সুন্দর ও রুচিশীল স্পেস বের করা এবং ত্রিমাতৃক বৈশিষ্ট্য যতটুকু আনা সম্ভব সেটা করি। ব্যবহার কারীদের প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নান্দনিক ডিজাইন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকে। আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করে ভবনের চেহারার মধ্যে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করি। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে প্রজেক্ট ফলপ্রসূ হওয়ার বিষয়টিও বিবেচ্য। আমাদের দেশের মৌসুমী জলবায়ুর সঙ্গে মিল রেখে ভবনের ভিতর বাহির কথোপকথন স্থাপত্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে অবকাঠামোগত দিকে ভবন কোনো অংশে যাতে দুর্বল না হয় সেই অনুযায়ী নকশা প্রকৌশলীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রণয়ন করা হয়। ভূমিকম্প সহনশীলতার বিষয় গুলো অবশ্যই প্রকৌশলী দেখেন। ভবনে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের পাশাপাশি যথাযথ কোড মেনে করার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক চাপ থাকে বিল্ডিং কোড (রাজউক ও সিডিএ) লঙ্ঘনের। ক্লায়েন্টকে নিয়ম মানার ব্যাপারটা বোঝানো ও সুষ্ঠুভাবে নির্মাণ কাজ শেষ করার বিষয়টা এখন স্থপতিদের জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। সর্বোপরি সাইটে কাজ চলাকালীন পুরো সমন্বয়সাধন যা কি না স্থপতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ড্রইং অনুযায়ী সব কাজ ঠিকমত হচ্ছে কি না এবং সাইটে কর্মী ও দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের শতভাগ প্রয়োগ হচ্ছে কি না তা তদারকি করা হয়। কারণ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে এটাই মূল সূত্র। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি আশরাফুল আলম আহমেদ। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চেষ্টা করেন। স্থাপত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি আশরাফুল আলম আহমেদ বলেন, ভবিষ্যতে ঢাকার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও আবাসন সমস্যা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে। পূর্বাচল ও উত্তরার পাশাপাশি ঢাকার পশ্চিমাংশে যে আবাসিক এলাকাগুলো গড়ে উঠেছে যেখানে এরকম কাজ করার সুযোগ আছে। একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব ইমারত ডিজাইন (গ্রীন বিল্ডিং)-এ ভূমিকা রাখার পরিকল্পনাও রয়েছে।