Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

শাবাবের স্থাপত্য ভাবনা

গ্রীণ আর্কিটেকচার নিয়ে স্থাপত্য শিল্পে যারা দেশের জন্য সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে স্থপতি শাবাব রায়হান কবীর অন্যতম। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর স্থপতি মিজানুর রহমানের তত্ত¡াবধানে যোগ দেন ‘প্রস্থাপনা’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। সেখানে কয়েক মাস কাজ করার পর দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে স্থাপত্য চর্চা শুরু করেন তিনি। এযাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। ২০০৯ সালে বুয়েট থেকে গ্রীণ আর্কিটেকচারের ওপর মাস্টার অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি আহসানুর রহমান গোল্ড মেডেল এ ভূষিত হন। ছবি আঁকাআঁকি ছিল তার পছন্দের বিষয়। অবসর পেলে এখনো রং তুলি নিয়ে বসে পড়েন ছবি আঁকতে। ভাস্কর্যেও পারদর্শী ছিলেন। ২০০১ সালে স্থাপত্য অধিদপ্তরে সহকারী স্থপতি হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি সহকারী প্রধান স্থপতি হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আর্কিটেক্ট শাবাব রায়হান কবীর মেঝ। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দীপে। কিন্তু তার জন্ম ও বেরে ওঠা ঢাকায়। বাবার নাম মো: শামসুল কবীর। তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ছিলেন। মা রোকেয়া আক্তার আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ছিলেন। শাবাব রায়হানের ছবি আঁকাআঁকির বীজটা ছোটবেলা থেকেই রোপন হয়েছিল। স্কুল জীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ছিল তার নেশা। মূলত মায়ের কাছেই ছবি আঁকার হাতে খড়ি তার। বিভিন্ন সময়ে তার আঁকা ছবি নিয়ে প্রদর্শনীও করেছেন। বাবা-মা চাইতেন বড় হয়ে তাদের সন্তান ডাক্তার হবেন। ডাক্তার হতে পারেননি বলে আফসোস নেই শাবাবের। তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। এটাই তার আনন্দ। গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরী হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৮৭ সালে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছেন স্থপতি ফারুক আহমেদ, আজিজুর রহমান, সেলিম আলতাফ, প্যাট্রিক ডি রোজারিও, শামসুদ্দিন আহমেদ ববি। এরা সবাই প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় আছেন প্রফেসর সামসুল ওয়ারেশ, প্রফেসর শ্যামা আলী ও প্রফেসর আজিজুল মাওলা।

শাবাব রায়হান কবীর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯৭ সালে। পাস করে বের হওয়ার পর স্থপতি মিজানুর রহমানের তত্ত¡াবধানে যোগ দেন ‘প্রস্থাপনা’ নামের একটি ফার্মে। সেখানে নয় মাস কাজ করার পর স্থপতি রাশেদুল হাসান ছবির ‘প্রতিবেশ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। চাকরির পাশাপাশি দুই বন্ধু ফারুক আহমেদ ও আজিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে স্থাপত্য চর্চা শুরু করেন। এখনো কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ১৯৯৯ সালে ‘ডিজাইন ইনোভেশন’ গ্রæপে যোগ দেন তিনি। তারপর বোরাক রিয়েল এষ্টেটএ কিছুদিন চাকরি করার পর ২০০১ সালে স্থপতি শাবাব রায়হান কবীর সহকারী স্থপতি হিসেবে যোগ দেন স্থাপত্য অধিদপ্তরে। বর্তমানে তিনি সহকারী প্রধান স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ইতোমেধ্য শাবাব রায়হান দেশের নামকরা মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল, হোস্টেল, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, আদালত ভবন, কমার্শিয়াল টাওয়ার, অফিস বিল্ডিংসহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ সিরাজগঞ্জের হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট, ইস্কাটনের বিএমইটি ভবন, টুইন টাওয়ার, পান্থপথের ইউটিসি টাওয়ার, গুলশানের হোটেল ওয়েষ্টিন, কাওরান বাজারের বিডিবিএল ভবন, বনানীর মাদারস ভিলা ইত্যাদি। স্থাপত্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান স্থাপতি এ এস এম ইসমাঈলের তত্ত¡াবধানে pppppppppউল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ চট্টগ্রামের পরী পাহাড়ে অবস্থিত নতুন আদালত ভবন, পুরাতন আদালত ভবনের রেনুভেশনের কাজ, ফরিদপুরের ডিসি কোর্ট বিল্ডিং, সিলেট বিভাগের সদর দপ্তর, হযরত শাহ জালাল মাজারের গেট। এছাড়া স্থাপত্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান স্থপতি আহসানুল হক স্বপ্নের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ, নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ, পাবনা মেডিক্যাল কলেজ, মহাখালীতে টিবি হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতাল, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ডায়বেটিকস হাসপাতাল, হার্ট হাসপাতাল, নার্সিং কলেজ, হোস্টেল, গাজীপুরের ৬ একর জমির ওপর বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের তত্ত¡াবধানে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজ, আগারগাঁও-এর সমাজ সেবা অধিদপ্তর ভবন, মিরপুর-১৪ এ প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স, বাংলাদেশের ৩৭টি জেলায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ভবন, বিভিন্ন জেলায় শিশু সংসদন কেন্দ্র, দুস্থ পুনর্বাসন কেন্দ্র, হৃদরোগ ও ডায়বেটিক হাসপাতাল, ২২টি জেলায় সাইক্লোন সেন্টার, সিআরপি ভবনসহ অসংখ্য ভবনের কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু প্রজেক্টের কাজ করছেন।

২০০৩ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম শায়লা মাহবুব। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দম্পতি এক ছেলে সন্তানের জনক-জননী। ছেলের নাম শামাম। স্থপতি শাবাব বলেন, জ্যামিতি নির্ভর কাজ আমার ভালো লাগে। জ্যামিতিক গঠনগুলোকে ভাঙা বা নতুন আঙ্গিক দিতে পছন্দ করি। যা আন্তর্জাতিকতাবাদকে প্রাধান্য দেয়। ডিজাইনে গ্রামার বা প্রিন্সিপাল অন্তত নিষ্ঠা সহকারে মেনে চলার চেষ্টা করি। নান্দনিকতা অনেকটাই মুখ্য বিষয় সেক্ষেত্রে শিল্পের বোধ ও মানে পরিমিতির ব্যাপারটি চলে আসে। ডিজাইনে অবশ্যই কাব্যিকতা থাকতে হবে। আর সর্বোপরি ভবন এবং পরিবেশের সঙ্গে কথোপকথন নির্মাণ করাটা আবশ্যক মনে করি। অনেক সময় ইচ্ছে করে সমাজের প্রচলিত ঘুনেধরা রীতিগুলো ভেঙে বেড়িয়ে আসতে। সে ক্ষেত্রে কখনো কখনো ডিকনস্ট্রাকটিভ আইডিয়া মাথায় ঘোরাফেরা করে। স্থপতি আইজেনম্যান ও জাহা হাদিদকে ভালো লাগে। স্থাপত্য ব্যাকরণের কাল পুরুষ করবুজিয়ের একনিষ্ট ভক্ত শাবাব। গ্রীণ আর্কিটেকচারে স্থপতি কেন ইয়াং এর দর্শন মুগ্ধ করে তাকে। প্রসঙ্গ তুলে বললেন, শৈশবে গ্রীক স্থপতি ডক্সিডিয়াসের তৈরি কাঠামোর ভেতর বড় হয়ে উঠেছি। ফলে স্থাপত্যের স্কেলিং প্রিয় একটি বিষয়। যে কোনো জমির অল্প অংশে ভবন নির্মাণ করতে হলে বেশি খুশি হই। কিন্তু তার সুযোগ খুব কমই পাওয়া যায়। সবুজ স্থাপত্যের চিন্তার শুরুই হলো ভ‚মি ব্যবহার কমিয়ে ফেলা এবং একই সঙ্গে তো সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই ভবনের নকশা প্রণয়ন কাজ করি। যা হয়তো অন্যান্য সবুজ চিন্তাবিদদের সঙ্গে মেলে না। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি শাবাব রায়হান। স্থাপত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে শাবাব বলেন, সাধারণ জনমানুষের জন্য স্থাপত্য চর্চা করছি এবং ভবিষ্যতে এ দেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ পেলে নিজেকে ধন্য মনে করব।