Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

লোকেশন কস্টিউম ডান্স আর্টিস্ট নো কম্প্রোমাইজ : বিদ্যা সিনহা মিম

তাকে এখন কলকাতার টেলিভিশনের পর্দায় নিয়মিত দেখা যায়।  না, কোনো ফিকশন কিংবা বিজ্ঞাপনে নয়।  কলকাতার সিনেমার সঙ্গীত চ্যানেল গুলোতেই তাকে দেখা যাচ্ছে।  কলকাতার চিত্রনায়ক সোহমের সাথে ‘তোর আর আমার এই হালকা হালকা প্রেম’ শিরোনামের গানটি বেশ ঘটা করেই প্রচার করছে ওপার বাংলার টিভি চ্যানেলগুলো।  ‘ব্ল্যাক’ ছবির এ গানটি এরইমধ্যে দেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।  পাঠক, বলছি লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার বিদ্যা সিনহা মিমের কথা।  এ বছর মিমকে নিয়ে যেনো একটু বেশিই আলোচনা হচ্ছে।  কিছুদিন আগে তন্ময় তানসেন পরিচালিত ‘পদ্ম পাতার জল’ ছবিটি মুক্তি পাওয়া, কলকাতায় ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে অভিনয় করা এবং দেশে নতুন কিছু ছবির কাজে হাত নেয়া সহ চরম ব্যস্ত সময়ই কাটছে এই গ্ল্যামার কন্যার।  ৬ নভেম্বর ‘ব্ল্যাক’ ছবিটি মুক্তি পায় কলকাতায়।  ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই ওপার বাংলায় মিমকে নিয়ে বেশ আলোচনাই শোনা যাচ্ছে।  এ নিয়ে মিমও বেশ উচ্ছ্বসিত।  আর তাই তো ১০ অক্টোবর মিমের জন্মদিনে মিমকে বেশ উৎফুল্ল দেখা গেল।  নিজের ক্যারিয়ার, চাওয়া-পাওয়া এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মিম বলেছেন অনেক কথা।  লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল।

আনন্দ আলো: আপনি দেশের বেশকিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, কয়েকটি ছবিও মুক্তি পেয়েছে।  সামনে আরো ছবি মুক্তি পাবে।  এরই মধ্যে কলকাতায় ‘ব্ল্যাক’ ছবিটি মুক্তি পায়।  সবমিলিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

বিদ্যা সিনহা মিম: চলচ্চিত্রে আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে।  লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার হওয়ার পর ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘আমার আছে জল’ ছবিতে অভিনয় করি।  ক্যারিয়ারের শুরুতে এতো বড় নির্মাতা এবং বড় হাউজের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি বলে নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করছি।  এরপর ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’, ‘তারকাঁটা’, ‘জোনাকির আলো’ ‘পদ্মপাতার জল’ ছবিগুলো মুক্তি পায়।  দর্শকদের কাছ থেকে রেসপন্সও পেয়েছি বেশ।  যৌথ প্রযোজনার ‘ব্ল্যাক’ ছবিটি আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম একটি ছবি।  এই ছবিতে অভিনয় করাটা সত্যিই অন্যরকম এক ভালো লাগার।  ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর বেশ রেসপন্স পেয়েছি।  আর এইমধ্যে ‘তোর আর আমার হালকা হালকা প্রেম’ গানটি অনেকের মুখে শুনেছি।  সোহম চক্রবতর্ী আর আমার জুটি ওপার বাংলার দর্শক খুব পছন্দ করেছেন।  তাই আমি খুব আনন্দিত এই বিষয়ে।  যৌথ প্রযোজনার এই ছবিটির প্রথমে নাম রাখা হয়েছিল ‘রকেট’।  তবে মুক্তির সময় এর নাম পরিবর্তন করা হয়।  এর কাহিনীর সাথে ব্ল্যাক নামটি শতভাগ পারফেক্ট বলে মনে হয়েছে।  ছবিতে আরো অভিনয় করেছেন ভারতের আশীষ বিদ্যার্থী, রজতাভ দত্ত, বাংলাদেশের অমিত হাসান প্রমুখ।  ওপার বাংলায় ছবিটি পরিচালনা করেন রাজা চন্দ ও এপার বাংলায় কিবরিয়া লিপু ছবিটি পরিচালনা করেন।  এপার বাংলার কিবরিয়া ফিল্মস ও ওপার বাংলার দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের যৌথ প্রযোজনায় ছবিটি নির্মিত হয়।  আর খুব শিগগিরই ছবিটি এদেশে মুক্তি দেয়া হবে।  কলকাতা ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার আরো একটি ছবিতেও আমি চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।  অঞ্জন দত্তের ‘মনবাকসো’ ছবিটির শুটিং বর্তমানে থমকে থাকলেও আগামী বছর থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।  আর দেশে খুব শিগগিরই শফিক হাসানের পরিচালনায় ‘রকি’ ছবির শুটিং শুরু করবো।  এতে আমার বিপরীতে অভিনয় করবেন অরিন্দম শীল ও ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত।  গত ঈদে আমার অভিনীত তন্ময় তানসেন পরিাচলিত ‘পদ্মপাতার জল’ ছবিটি মুক্তি পায়।  দর্শক ছবিটির দারুণ প্রশংসা করেছে।  বর্তমানে আমার হাতে প্রায় হাফ ডজন সিনেমার কাজ রয়েছে।  এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সাফিউদ্দিন সাফির ‘ড্রিম গার্ল’, তানিয়া আহমেদের ‘গুডমর্নিং লন্ডন’, মুহাম্মদ মুস্তাফা কামাল রাজের ‘কানামাছি’, রিপন মিয়ার ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’, ওয়াজেদ আলী সুমনের ‘সুইটহার্ট’সহ আরো কিছু ছবি।  সবমিলিয়ে চলচ্চিত্রেই আমার এখন সকল ব্যস্ততা।  বলা যায় আমার ক্যারিয়ার চলচ্চিত্রেই এখন বন্দি।  যেটা একজন অভিনয়শিল্পীর অনেক স্বপ্নের হয়ে থাকে।  কারণ বড়পর্দায়ই একজন অভিনয়শিল্পীর সর্বশেষ জায়গা।  আমি এখন সেই জায়গায় কাজ করছি।  দারুণ উপভোগ করছি।  সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যেনো দর্শকদের আরো ভালো কিছু উপহার দিতে পারি।

আনন্দ আলো: টিভি মিডিয়া থেকে যারাই চলচ্চিত্রে কাজ করতে যায় তাদের নিয়ে নানান ধরনের নেতিবাচক কথা শোনা যায়।  সেটা নির্মাতা কিংবা অভিনয়শিল্পী যে কেউই হতে পারে।  এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

Jonakir_Alo_468100241বিদ্যা সিনহা মিম: এমন কথা প্রায়শই শোনা যায়।  এফডিসি কেন্দ্রিক যারা কাজ করেন তারাই নানান ধরনের নেতিবাচক কথা বেশি বলে থাকেন।  কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন টিভিতে যাকে দর্শক এমনি দেখে ফেলেন, তাকে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দর্শক টিকেট কেটে দেখেন না, টিভি শিল্পীদের দিয়ে ফিল্মি অভিনয় হয় না এমন নানা মন্তব্য শুনতে হয়।  এখানে আমি বলবো ছবির গল্প, নির্মাণশৈলী এবং চমক থাকলে দর্শক তা অবশ্যই দেখবে।  টিভি মিডিয়া থেকে বড় পর্দায় অভিনয় করে, নির্মাণ করে কোনো ছবিই কী হিট হয়নি? অনেক ছবি দর্শক দেখেছেন।  ‘মনপুরা’, ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’, টেলিভিশন’, ‘গেরিলা’-সহ এমন অনেক ছবির কথা বলা যাবে।  তাছাড়া এমন অনেক ছবি আছে যেগুলো দেশ-বিদেশে নানান উৎসবে পুরস্কৃতও হয়েছে বেশ কয়েকটি ছবি।  যেগুলোর নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী টিভি মিডিয়া থেকেই এসেছেন।  আমার ‘আমার আছে জল’, ‘তারকাঁটা’, ‘জোনাকির আলো’, ‘পদ্মপাতার জল’ ছবিগুলোও কিন্তু দর্শক হলে গিয়ে দেখেছেন।  তাই আমি আসলে এমন কথায় মোটেও চিন্তিত নই।  দর্শকই হলো আমাদের কাজের প্রধান সমালোচক।  তারা যেটা ভালো মনে করবে সেটাই হবে।  একটি ভালো ছবি অবশ্যই দর্শক দেখবেন।

আনন্দ আলো: তবে ছোটপর্দা থেকে অনেকেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।  একটি বা দু’টি ছবিতে অভিনয় করে তারা ফিল্মপাড়া থেকে বিদায়ও নিয়েছেন…

বিদ্যা সিনহা মিম: এটা আসলে যার যার টিকে থাকার বিষয়।  আর দর্শকই তো আসল।  দর্শক যাকে গ্রহণ করে নিবেন, সেই টিকে থাকবে।  তবে সঠিক দিক নির্দেশনাটাও প্রয়োজন।  আমি খুব ভাগ্যবান যে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নামি-দামি পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছি, বিগ বাজেটের ছবি করার সুযোগ পেয়েছি এবং গল্প ও শৈল্পিক নির্মাণের ছবিতে কাজ করেছি।  এটা সত্যিই অনেক পজিটিভ একটা বিষয়।  দর্শক আমাকে কতোটা গ্রহণ করেছেন সেটাই হচ্ছে বিষয়।  দর্শক যদি পছন্দ করেন তাহলে আমি তাদের জন্য কাজ করবো আর দর্শক যখন আমাকে আর চাইবে না- তখন আর কাজ করবো না।

আনন্দ আলো: টিভি নাটকে আপনি একসময় নিয়মিত কাজ করেছেন।  এখন চলচ্চিত্রের কাজ করার কারনে টিভি নাটকে আপনাকে দেখাই যাচ্ছে না।  তারমানে কী ছোটপর্দাকে বিদায় দিলেন?

বিদ্যা সিনহা মিম: বিষয়টা আসলে এমন না।  ছোট পর্দায় কাজ কিন্তু করা হয়।  যমুনা টিভির একটি বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে।  হ্যাঁ, এটা ঠিক যে নাটক বা টেলিফিল্ম করা হচ্ছে না।  আমি কখনোই বলিনি টিভি নাটকে অভিনয় করবো না।  ব্যস্ততা চলচ্চিত্রকে ঘিরে হয়ে গেছে।  আর আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা যেহেতু সিনেমা এখন সেখানেই বেশি কাজ করছি।  আর চলচ্চিত্রে একজন অভিনয়শিল্পী কাজ করার ইচ্ছাটা অবশ্যই থাকে।  সেটা আমারও আছে।  তাই চলচ্চিত্রের শুটিং নিয়ে এখন বেশি ব্যস্ত রয়েছি।

আনন্দ আলো: যেহেতু কলকাতার ছবিতে কাজ করেছেন, তাই সেখানকার কাজ আর আমাদের এখানে কাজের মধ্যে কী পার্থক্য চোখে পড়ে?

বিদ্যা সিনহা মিম: তাদের মধ্যে প্রফেশনালিজম রয়েছে বেশ।  কাজের সময় কাজ আর আড্ডার সময় আড্ডা চলে।  আর একটি কাজের বাজেট যাই থাকুক না কেন- কিছু বিষয়ে কখনোই কম্প্রোমাইজ করে না যেমন- লোকেশন, কস্টিউম, ডান্স, আর্টিস্ট।  যেখানে যেটার প্রয়োজন সেখানে তাই যোগান দিয়ে থাকেন।  আর আমাদের এখানে দেখা গেছে, বাজেট কিংবা আনুষঙ্গিক অনেক কিছু মিলিয়ে পরিচালক বা টিম যে প্ল্যান করেন সেটা দেখে গেছে শেষ পর্যন্ত থাকে না।  আর ওদের ওখানে সময়ের ব্যাপারে খুব সিনসিয়ার।  ৯টা মানে ৯টা।  ঘড়ির সময় ধরে কাজ করা হয়।  তাদের পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ খুবই উন্নত।  আমাদের এখানে এটা তেমন উন্নতি হয়নি।  তবে একঝাঁক তরুণ মেধাবি নির্মাতা এখন খুব ভালো কাজ করছে।  তাই তো কাজের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।  নতুন ধারার কাজ হচ্ছে এখন।  সেই দিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন আমাদের কাজ নিয়েও বিশ্বে আলোচনা হবে।

আনন্দ আলো: এবার একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি।  মিমকে বিয়ের পিড়িতে দেখা যাবে কখন?

বিদ্যা সিনহা মিম: আপাতত এই বিষয়ে কোনো চিন্তা ভাবনা নেই।  আর এটা পরিবারের বিষয়।  তারা যেটা ভালো মনে করবে সেটাই হবে।  অভিনয়টাকে ভালোবাসি, তা নিয়েই থাকতে চাই।  সময় হলে পরিবারই সব ব্যবস্হা করবে।