Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

রাজ্জাক ভাই আমার জন্য পালকি বানিয়েছিলেন-ববিতা

আনন্দ আলো: আপনি চলচ্চিত্রে যার বিপরীতে প্রথম নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তাঁর নাম নায়করাজ রাজ্জাক। সেই অনুভূতির কথা জানতে চাই?

ববিতা: সে এক অসাধারণ অনুভূতি। রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে আমার অদ্ভুদ মিল রয়েছে। আমি তখন বেনী দুলানো এক কিশোরী। ‘সংসার’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করলাম রাজ্জাক ভাইয়ের মেয়ের চরিত্রে। ছবিতে মা ছিলেন বড়বোন সুচন্দা আপা। ছবিটি মোটামুটি ব্যবসা করার পর আমার কাছে প্রসত্মাব এলো ‘শেষ পর্যনত্ম’ নামে একটি ছবিতে অভিনয় করার। ছবিতে আমার নায়ক থাকবেন রাজ্জাক। আমি রাজ্জাক ভাইয়ের কথা শুনে হেসে বললাম- এটা কীভাবে হয়? রাজ্জাক ভাই-এর আগের ছবিতে আমার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন এখন নায়ক হবেন কীভাবে? তাছাড়া আমিতো ছবিতে অভিনয় করব না বলেই দিয়েছি। তবে জহির রায়হানের ছবি বলে কথা। অবশেষে রাজি হয়ে গেলাম ছবিতে অভিনয় করতে। যথারীতি শেষ পর্যনত্ম ছবিতে অভিনয় করলাম এবং ছবিটি সুপারহিট ব্যবসা করে। শুধু তাই নয় সারাদেশের মানুষের কাছে প্রশংসা শুনতে শুনতে পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। এরই মধ্যে বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার নারায়ণ ঘোষ মিতা ‘আলোর মিছিল’ নামে একটি ছবি করার প্রসত্মাব দিলেন। তিনি বললেন, ছবিতে রাজ্জাক, রোজি, আনোয়ার হোসেন ও আমি থাকব প্রধান চারটি চরিত্রে। তবে আমার চরিত্রটি হবে রাজ্জাকের ভাগ্নির। আমি এবারও বললাম এটা কীভাবে সম্ভব? তার নায়িকা হিসেবে দর্শকরা আমাকে গ্রহণ করেছেন এখন যদি ভাগ্নির চরিত্রে অভিনয় করি রাজ্জাক ভাইয়ের বিপরীতে সেটা দর্শক কীভাবে গ্রহণ করবে? দাদাকে বললাম আমি আগে ভেবে নেই তারপর আপনাকে জানাবো। বিষয়টি নিয়ে আমি অনেকের সাথে কথা বললাম। সবাই মানা করল। বললো তুমি একজন রোমান্টিক নায়িকা ভাগ্নির চরিত্র করবে কেন? আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি নিয়ে রাতে অনেক ভাবলাম তারপর সিদ্ধানত্ম নিলাম- না ছবিটি করব। দেখিনা এক্সপেরিমেন্ট করে কী হয়। ‘আলোর মিছিল’ রিলিজ হলো। এ ছবিটিও সুপারহিট ব্যবসা করল। যারা হলে বসে ছবি দেখেছেন তাঁরা কেঁদেছেন বিশেষ করে আমার চরিত্রের মৃত্যু দৃশ্য দেখে।

আনন্দ আলো: আপনি বরাবরই রোমান্টিক নায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইতেন। থাকতে চাইতেন এভারগ্রীন। এখনো আপনি এভারগ্রীন। এ সম্পর্কে বলুন?

ববিতা: এখনতো আর এভারগ্রীন নই। বয়স অনেক হয়েছে বেলায় বেলায়। তবে এটা ঠিক আমি আমার লক্ষে স্থির ছিলাম। তাছাড়া আমার যে রোমান্টিক একটা ইমেজ গড়ে উঠেছিল সেটা বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমার নায়ক সহশিল্পী থেকে শুরু করে প্রযোজক পরিচালকরা এ ব্যাপারে আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।

আনন্দ আলো: আপনি চলচ্চিত্রে একটি নাগরিক ইমেজ দাড় করাতে পেরেছিলেন বিশেষ করে শহুরে ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। আপনার স্টাইল ভক্ত দর্শকরা অনুকরণ করতো? সে সম্পর্কে বলুন?

ববিতা: এটা ঠিক আমার বেশির ভাগ ছবি শহরকেন্দ্রিক। আমার বেশির ভাগ ভক্ত অনুরাগী স্কুল কলেজের পড়ুয়ারা ছিল। তখন আমি পাইপিনওয়ালা ব্লাউজ বানিয়ে পরতাম এটা আমার নিজস্ব স্টাইল ছিল। ছবিতে আমাকে পাইপিনওয়ালা ব্লাউজ পরতে দেখে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা টেইলার্সে গিয়ে এই ধরনের ব্লাউজ বানিয়ে পরতেন। আমি অনেককে এ ধরনের ব্লাউজ পরতে দেখেছি তখন। তখন আমি খুব আনন্দ অনুভব করতাম। আমার নিজস্ব চুলের স্টাইলও ছিল। তখন পার্লারে গিয়ে ভক্তরা বলতেন ববিতা খোপা করে দিন অথবা চুলের কাটিং ববিতার মতো করে দিন। আমি খবর নিয়ে জেনেছি পত্রপত্রিকা থেকে আমার ছবি কেটে টেইলার্স ও পার্লারে ফ্রেম করে রাখা হতো ক্লায়েন্টদের দেখানোর জন্য।

আনন্দ আলো: নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে আপনার চমৎকার বোঝাপড়া ছিল। ব্যক্তিগতভাবে রাজ্জাক আপনাকে আদর করতেন। কেমন ছিল সেই সম্পর্ক?

ববিতা: আগেই বলেছি রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে আমার অদ্ভুত মিল ছিল। দু’জনেই ছোট দু’টি চরিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেছি। তাঁর পছন্দ অপছন্দের সঙ্গে প্রচুর মিল রয়েছে আমার। আমাকে খুবই স্নেহ করেন। তাঁর পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটা আত্মীক সম্পর্ক রয়েছে। রাজ্জাক ভাই পরিচালিত ছবি ‘অননত্ম প্রেমে’ আমি নায়িকা। ‘ও চোখে চোখ পড়েছে’ রোমান্টিক এই গানটির সঙ্গে অভিনয় করার কথা আমার এখনও মনে আছে। কী অসাধারণ গান ছিল খুরশিদ আলমের গাওয়া।

BOBITA-(24)এ ছবির একটি ঘটনা বলি। যা কখনো বলা হয়নি। ছবির শেষ দৃশ্যে চুম্বনের দৃশ্য ছিল। রাজ্জাক ভাই বললেন আমি পয়জন খেয়েছি, তুমি আমাকে চুমু দিবে এবং দু’জনেই শেষ দৃশ্যে মারা যাবো। তাঁর কথামতো দৃশ্য চিত্রায়ন হলো। সবাই হাততালি দিয়ে আমাকে অভিনন্দন জানালেন। কিন্তু আমি খুশি হতে পারিনি। বার বার মনে হচ্ছিল আমি বোধহয় ভুল করলাম। কেন এ ধরনের দৃশ্যে অভিনয় করলাম। রাতে অনেক কাঁদলাম। রাজ্জাক ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, কী হয়েছে? আমি শুধু বললাম রাজ্জাক ভাই এই দৃশ্যে অভিনয় করার জন্য আমার বোধহয় বিয়ে হবে না। কোনো ছেলে আমাকে পছন্দ করবে না। তখন তিনি হেসে বলেছিলেন এটাতো অভিনয়, বাসত্মবিক কোনো কিছু তো নয়। সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়। তবে রাজ্জাক ভাই আমার অতি আপনজন এটা গর্ব করে সমসময় বলি। তিনি আমাকে চলচ্চিত্রে গাইড করেছেন। ভালো কোনটা মন্দ কোনটা আঙ্গুল দিয়ে শিখিয়েছেন। আমার একজন গার্জিয়ানের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি যে একজন শুধু প্রফেশনাল অভিনেতা তাই নয় প্রফেশনাল পরিচালক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর প্রমাণ পেয়েছি ‘অননত্ম প্রেম’ ছবি করার সময়। ঐ ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে শুটিং হয়েছিল। পাহাড় ঘেরা জায়গায় মেকআপ করে হেঁটে যেতে ঘেমে যাওয়ার কথা ভেবে রাজ্জাক ভাই আমার জন্য একটি পালকি বানিয়েছিলেন কাঠ দিয়ে। শুধুমাত্র শুটিং-এর জন্য। আমি পালকিতে বিশ্রাম নিতাম, মেকআপ নিতাম, যাতায়াত করতাম। এখনকার সময়ে এটা ভাবা যায়। শুধু ‘অননত্ম প্রেম নয়’ রাজ্জাক ভাইয়ের রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশনের বেশির ভাগ ছবিতে আমি অভিনয় করেছি।

আনন্দ আলো: আপনি ছবিতে হাল ফ্যাশনের পোশাক পরতেন এবং অসাধারণ করে মেকআপ গেটআপ করতেন এসব কী নিজেই ডিজাইন করতেন?

ববিতা: আমি প্রতিটি ছবিতে গল্প অনুযায়ী পোশাক পরেছি। কখনো সেই পোশাক দেশের ডিজাইনারদের দিয়ে করিয়েছি, কখনো দেশের বাইরে থেকে এনেছি। আমি প্রায় ইউরোপ, আমেরিকা, সিঙ্গাপুরে যেতাম কখনো ফেস্টিভ্যালে, কখনো বেড়াতে। আসার সময় ছবির চরিত্র অনুযায়ী সুটকেস ভর্তি করে ড্রেস নিয়ে আসতাম। শুধু আমার নয় আমার নায়কের জন্যও ড্রেস কিনতাম। তবে ড্রেসের জন্য কখনো প্রযোজকের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিতাম না। আর মেকআপ গেটআপ ছিল কিছুটা আমার নিজস্ব এবং কিছুটা ছবির মেকআপম্যানের।

আনন্দ আলো: আপনার বিয়ে নিয়ে ঐ সময় পত্র-পত্রিকায় অনেক গসিপ প্রকাশ হয়েছিল। বিশেষ করে বিয়ের দিন নাকি পালিয়ে রাজ্জাক সাহেবের বাসায় উঠেছিলেন?

ববিতা: অনেক আগের ঘটনা। সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল আজ বলছি। আমার বাবা অসুস্থ হওয়ার পর বার বার চাপ দিচ্ছিলেন মৃত্যুর আগে তোর বিয়েটা দেখে যেতে চাই। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলমের সঙ্গে। বিয়ের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যনত্ম বাসায় অনুষ্ঠান হবে এবং রাতে সোনারগাঁও হোটেলে পার্টি হবে। বাসার অনুষ্ঠানে শুধু আত্মীয়-স্বজন এবং কাছের মানুষেরা আসবেন এবং রাতের অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রের, শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সাংবাদিকদের দাওয়াত দেয়া হলো। কাউকে বলা হয়নি কী উপলক্ষে এই দাওয়াত। আমি আগের দিন বিয়ের নানান কাজে ব্যসত্ম ছিলাম এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে হঠাৎ মনটা যেন কেমন হয়ে গেল। মাথায় নানান কথা ঘুরপাক খেতে লাগল। কিছুতেই ঘুম হলো না। সকাল হওয়ার পর বাসার পেছন দরজা দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম রাজ্জাক ভাইয়ের বাসায়। রাজ্জাক ভাই ও লক্ষ্মী ভাবীকে বললাম আমি এ বিয়ে করতে পারব না। আমার কেন জানি ভয় করছে। রাজ্জাক ভাই অবাক হয়ে বললেন, এটা কেমন কথা আজ তোমার বিয়ে সব আয়োজন সম্পন্ন এখন বলছো বিয়ে করবো না। লক্ষ্মী ওকে বাসায় নিয়ে যাও আমি আসছি। আমাকে লক্ষ্মী ভাবী জড়িয়ে ধরে বাসায় নিয়ে গেলেন পরে রাজ্জাক ভাই এলেন এবং যথারীতি বিয়ে হয়ে গেল। এই ঘটনা বিভিন্ন পত্রিকায় গসিপ আকারে পত্রিকায় লেখা হয় আমি নাকি রাজ্জাক ভাইকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছি বিয়ের আসর থেকে।

আনন্দ আলো: আপনার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেকের স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন সাংবাদিক, গীতিকার, লেখক ও স্ক্রীপট রাইটার আহমদ জামান চৌধুরী। তাঁর ‘বাদী থেকে বেগম’ ছবিতে আপনি তিনটি চরিত্রে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সেই অনুভূতির কথা বলুন?

ববিতা: আমার অভিনয় জীবনে ‘বাদী থেকে বেগম’ অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি ছবি। এ ছবিতে তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। ছবিটি প্রয়াত বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক, গীতিকার আমার অতিপ্রিয় মানুষ আহমদ জামান চৌধুরী খোকা ভাইয়ের পাণ্ডুলিপি নিয়ে করা। ছবির চমৎকার সব গান তাঁর লেখা। ছবিটি তিনি প্রযোজনাও করেছিলেন। এ ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য রাজ্জাক ভাই ও আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাই। আমি খোকা ভাইয়ের স্নেহ, ভালোবাসা ও সহযোগিতা সব সময় পেয়েছি। তিনি অত্যনত্ম বিচক্ষণ, সুশিক্ষিত ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ ছিলেন। খোকা ভাইদের মতো মানুষের জন্য আজকে আমি ববিতা হতে পেরেছি।

আনন্দ আলো: নায়ক জাফর ইকবালের সঙ্গে আপনার অত্যনত্ম সুন্দর বন্ধুত্ব ছিল। তাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় নানান কথা হতো। আপনার মুখ থেকে সেসব শুনতে চাই?

ববিতা: অসাধারণ মেধাবী একজন অভিনেতা ছিলেন জাফর ইকবাল। দেখতে যেমন অসাধারণ ছিলেন তাঁর ব্যবহার ও আচার-আচরণও ছিল অত্যনত্ম মার্জিত। গান পাগল মানুষ ছিলেন। আমাকে ইংরেজি ও বাংলা গান শিখিয়েছেন। আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব ছিল।

একবার বিটিভির আনন্দ মেলা অনুষ্ঠানে জাফর ইকবাল গাইলেন সুখে থাক ও আমার নন্দিনী। হয়ে কারো ঘরণী। তখন আমার বিয়ে হয়ে গেছে। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন গানটি তিনি ববিতাকে উদ্দেশ্য করে গেয়েছেন। গানটি প্রচার হওয়ার পরের দিন থেকে এদেশের তরুণ-তরুণীদের মুখে মুখে ফিরতে থাকে। আমি তাঁকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম ইকবাল গানটি কী আমাকে উদ্দেশ্য করে গেয়েছেন। তাঁর স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে উত্তর দিয়েছিলেন- আরে নাহ। আলাউদ্দিন আলী বললেন, গানটি এভাবে করি সবাই বলবে ববিতাকে উদ্দেশ্য করে গানটি গাওয়া হয়েছে।

আনন্দ আলো: আনত্মর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ববিতা চলচ্চিত্র নায়িকা হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ ছবির মাধ্যমে। সেই গল্পটি কেমন?

Bobitaববিতা: দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এফডিসিতে একজন অপরিচিত ক্যামেরাম্যান ববিতার একের পর এক ছবি তুলছেন। কেউ একজন বললেন, ভদ্রলোক ভারত থেকে এসেছেন। ছবি তুলে তিনি চলে গেলেন তাঁর পরিচয়ও জানা হলো না। এর কয়েকদিন পর ভারত থেকে একটি চিঠি এলো সত্যজিত রায় ববিতাকে নিয়ে একটি ছবির কথা ভাবছেন। নিচের ঠিকানায় যেনো যোগাযোগ করি। আমি হেসেই উড়িয়ে দিলাম। বললাম কেউ বোধহয় দুষ্টুমি করে চিঠিটা লিখেছে। এর বেশ কদিন পরে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ফোন এলো বাসায়। তারা বললো সত্যজিৎ রায় আপনাকে নিয়ে ছবি করতে চায়। এই নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করুন। ভদ্রলোকের নাম নন্দ ভট্টাচার্য। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো। তিনি ভারতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। বড়বোন সুচন্দনাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে গেলাম। সকাল বেলা হোটেল থেকে গেলাম সত্যজিৎ রায়ের বাসায়। মেকআপ নিয়ে অসাধারণ করে সেজে গেলাম। তিনি আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বললেন, তুমি এতো মেকআপ নিয়েছ কেন? তুমিতো এমনিতে সুন্দরী। নন্দ দা হলেন ছবির প্রযোজক। তিনিও সঙ্গে ছিলেন। আমাকে সত্যজিৎ রায় দেখে বললেন, তুমি এতো লজ্জা পাচ্ছ কেন। না ভয় পেয়েছ। সুচন্দা আপাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ও অভিনয় পারেতো। আপা বললেন, এরই মধ্যে দু’তিনটি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছে। তিনি বললেন, ঠিক আছে কাল ইন্দ্রপুরী স্টুডিতে এসো সকাল ১০টায়। তবে কোনো মেকআপ নিয়ে নয়। পরের দিন কাঁটায় কাঁটায় সকাল ১০টায় গেলাম। তিনি চেয়ার পেতে আরাম করে বসে আছেন। আমাকে হাল্কা মেকআপ দেয়া হলো। সাধারণ গৃহবধূর মতো করে শাড়ি পরতে বলা হলো। এরপর শুরু হলো ছবি তোলা ও ক্যামেরায় স্ক্রীন টেস্ট। কিছুক্ষণ পর সত্যজিৎ রায় নিজে ক্যামেরায় লুক দিয়ে বললেন, ইউরেকা। আমি আমার ‘অশনি সংকেত’ ছবির অনঙ্গ বউ পেয়ে গিয়েছি’। উপমহাদেশের খ্যাতিমান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়ের বিপরীতে ‘অশনি সংকেত’ ছবিটি আমার জীবনে একটা ইতিহাস হয়ে আছে।

আনন্দ আলো: আপনার তো এখন অখন্ড সময়। কী করে সময়গুলো পার করেন আপনি?

ববিতা: আমি একজন প্রকৃতিপ্রেমী। বাসায় অসংখ্য গাছ লাগিয়েছি। মাছের অ্যাকুরিয়াম আছে। ময়না, টিয়া, লাভবার্ডসহ নানান জাতির পাখি আছে আর কাছে আমার একটি কুকুর। এদের নিয়ে আমার সময়গুলো কেটে যায় মহা আনন্দে। যদি দেশের বাইরে যাই কুকুরটি বুঝতে পারে। আমার চলে যাওয়া দেখে কাঁদে। বাসায় আসার পর কোলে উঠে বুকের সঙ্গে লেগে থাকবে। জীবনের বেশির ভাগ সময় অভিনয় নিয়ে ব্যসত্ম থেকেছি যে কারণে প্রকৃতি, পশু-পাখির প্রেম এগুলোর সংস্পর্শে আসা সম্ভব হয়নি। এখন সে সব পেতে চাই। আমি অল্প বয়স থেকে ডায়রি ও নোটবুক ব্যবহার করি। নোটবুক ও কলম আমার বেডের সঙ্গেই থাকে। যখন যা মনে পড়ে বা টিভি রেডিও এবং সংবাদপত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকলে লিখে রাখি। এটা আমার কলেজ জীবনের একটা অভ্যাস।

আমার একমাত্র ছেলে অনিক। এবার কানাডা থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছে। ও প্রায়ই বলে মা আমার বন্ধুর মা অনেক ভালো রান্না করতে পারেন। আজ মজা করে খেয়েছি। তখন ভাবি আমি ভালো অভিনেত্রী হতে পেরেছি বোধহয় কিন্তু ভালো মা কী হতে পেরেছি? আমার ছেলের জন্য প্রায় রান্না করি বিভিন্ন রেসিপি। এজন্য বিশিষ্ট রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসীর একটা রান্নার বই কিনেছি। এই বই দেখে ছেলের প্রিয় সব রেসিপি রান্না করার চেষ্টা করি আর রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনি। যখন পড়বে মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে…।