Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

রাকিবুলের স্থাপত্য ভুবন!

আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে স্থাপত্য শিল্পে কাজ করে চলেছেন মো: রাকিবুল হাসান। ২০০৭ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পরপরই তিনি যোগ দেন ‘ভিস্তারা আর্কিটেক্টস’এ। এখনো পর্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ২০০৮ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘অল্টার আর্কিটেক্টস অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এ যাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। দশ বছরের স্থাপত্য চর্চার এ প্রতিষ্ঠানটি অর্জন করেছে বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।
একজন স্থপতি তার কাজ এবং তার চিন্তাশীল উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে সমাজ উন্নয়নের একটি মেকানিজম হিসেবে কাজ করে বলে আমার বিশ্বাস। কোনো জাতি বা সভ্যতার উৎকর্ষতার মাপকাঠিতে স্থাপত্যের স্থান অনস্বীকার্য। সে কারণেই এ জাতির কাছে আমরা সকল স্থপতি দায়বদ্ধ। আমাদের সচেতন পদক্ষেপ অবদান রাখতে পারে জাতির উৎকর্ষতায়Ñ কথাগুলো বললেন স্থপতি রাকিবুল হাসান। এক ভাই এক বোনের মধ্যে ছোট আর্কিটেক্ট মো: রাকিবুল হাসান। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। রাকিবুলের বাবার নাম এম এ হক। তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মা রুবিনা ইয়াসমিন গৃহিণী। ছোটবেলায় গাড়ির ডিজাইন করতেন। বই পড়া ছিল তার পছন্দের বিষয়। নিজের ইচ্ছা থেকে আর্কিটেক্ট হওয়া। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৯ সালে। ২০০১ সালে রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। স্থপতি মো: রাকিবুল হাসান ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ২০০৭ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরপরই তিনি যোগ দেন ‘ভিস্তারা আর্কিটেক্টস’এ। এখনো পর্যন্ত তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০০৮ সালে নিজে গড়ে তোলেন অল্টার আর্কিটেক্টস অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। গুলশান নিকেতনে খুব সুন্দর একটি অফিস সাজিয়েছেন।
ইতোমধ্যে তিনি গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরী, ক্লিনিক, ছাত্রনিবাস, মসজিদসহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ বসুন্ধরার নিয়ামত রেসিডেন্স বিল্ডিং, নিকুঞ্জের মাতলা সিঙ্গেল রেসিডেন্স বিল্ডিং, বসুন্ধরার বেসরকারি ছাত্রনিবাস, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি জামে মসজিদ, সরসিংদীর মনেক্কা মেটানিটি ক্লিনিক, বনানীর ওসাইরিস গ্রæপের হেড অফিসের ইন্টেরিয়র, গুলশান-২ এর এশিয়ান টাইগার হেড অফিসের ইন্টেরিয়র, বনানীর ইপিএল হেড অফিসের ইন্টেরিয়র, নবাবগঞ্জের টিটি এক্স গ্রæপের পৈত্তিক নিবাস, মালিবাগের শেলকোন গ্রæপের কমার্শিয়াল বিল্ডিং, চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের কম্পারিয়ার স্পোর্টস ওয়্যার আমেরিকা রিজুয়ানাল অফিস, চিটাগং-এর জেএমএস গার্মেন্টসের হেড অফিস, গুলশান-২ ভালুগাড়ি হেড অফিসের ইন্টেরিয়রসহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি নতুন প্রজেক্টের কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।
IEB-01eস্থপতি রাকিবুল হাসান বলেন, ২০০৮ সালে দেশের অন্যতম স্থাপত্য ফার্ম ‘ভিস্তারা আর্কিটেক্টস’এ যোগদানের মধ্য দিয়ে দেশ বরেণ্য স্থপতি মুস্তাফা খালীদ পলাশের সঙ্গে স্থাপত্য চর্চার সুযোগ হয়ে ওঠে। কালের পরিক্রমায় গুরুর সান্নিধ্যে অনেকগুলো প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে নিজের অভিজ্ঞতার ভান্ডার করার পাশাপাশি চালিয়ে গেছি ব্যক্তিগত স্থাপত্য চর্চা। স্থাপনার ভাবনা বলতে যা আমাকে সবচেয়ে বেশি বিবেচনার সম্মুখীন করে তা হলোÑ মানুষের অভিজ্ঞতা। কোনো একটা স্থাপনায় একজন মানুষের অভিজ্ঞতা তার বোধগম্যতা অগ্রাধিকার পায়। তার সঙ্গে সহায়ক এবং অন্যতম বিবেচনার বস্তু হলো পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রী এবং স্থানীয় প্রাসঙ্গিকতা। যে কোনো স্থাপনা যদি মানুষ, প্রকৃতি এবং স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি দায়িত্ববান না হয় সেটা খুব টেকসই কোনো স্থাপনা হয় না বলে আমি মনে করি। এটা প্রাথমিক বিবেচনা।
দ্বিতীয়ত বলা যায় সুশৃঙ্খল নকশা প্রণয়নের কাঠামোগত সুশৃঙ্খলতা বাহুল্যবর্জিত সরল, সাধারণ, বোল্ড স্থাপত্য অভিব্যক্তি আমার স্থাপনা চর্চার অন্যতম বিবেচনা। দশ বছরের এ চর্চার পথে নিজের স্থাপত্য চর্চা প্রতিষ্ঠান ‘অল্টার আর্কিটেক্টস এন্ড অ্যাসোসিয়েটস’ অর্জন করেছেন বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড। যেমন- ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে আইএবি-আইইবি কর্তৃক আয়োজিত ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন কনভেনশন সেন্টার ডিজাইন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে। ২০০৯ সালে আইএবি-আইসটুডে ডিজাইন প্রতিযোগিতায় ইন্টেরিয়র বিভাগে প্রথম স্থান। এছাড়াও ২০০৭ সালে কনকর্ড-এর প্রতিভাবান অ্যাওয়ার্ড, ২০০৬ সালের হাতিল ফার্নিচার ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড ফর চিলড্রেনস ফার্নিচার ডিজাইন এবং ২০১২ সালের বাণিজ্যমেলায় বেস্ট মিনি প্যাভিলিয়ন অ্যাওয়ার্ড।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিশন কনভেনশন সেন্টার প্রকল্পটি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকল্পটি ভৌগোলিক অবস্থান ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং ক্লায়েন্টের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে প্রকল্পটি নকশা প্রণয়ন করা হয়। নকশা প্রণয়নে আমার কাছে যা অগ্রাধিকার পেয়েছে তা হলো প্রকল্পটি হবে জনমানুষের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। প্রকল্পটি চরিত্র বিবেচনা করলে এটা একটি জনমানুষের মিলন মেলা হওয়ার একটি প্রসিদ্ধ স্থান বলে মনে হয়। এখানে গ্রাউন্ড ফ্লোরটিকে প্রায় লক্ষাধিক স্কয়ারফিট উন্মুক্ত স্থানকে করা হয় ওপেন প্লাজা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুরো প্রকল্পটিতে থাকবে মানুষের বিচরণ। খোলা চত্বরের এক সবুজ আশ্রয়। নগরীর যানবাহনকে আড়াল করে চত্বরটিকে করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী ও রমনা পার্কের সংযোগস্থলে। খুবই স্পর্শকাতর এ জায়গাটিকে করা হয়েছে প্রকৃতির মাঝে একটি শান্ত অবকাঠামো হিসেবে, যেখানে প্রকৃতির নিস্তব্ধতাকে আলিঙ্গন করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অত্যন্ত সরল সাধারন স্থাপনা করে সাবলীল অভিব্যক্তি দেয়া স্থাপনাটি প্রকৃতির সঙ্গে, জনমানুষের কলকাকলিতে মিশে একাকার হয়ে যায়। চত্বরটি উৎসর্গ করা হয়েছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। চত্বরটিতে স্থাপন করা হয় সাতটি আলোক স্তম্ভ এবং অসংখ্য আলোক বিন্দু। রাতের আঁধারে পুরো চত্বরটি আলোকিত হয়ে উঠবে মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের আলোর মহিমায়। বাহ্যিক আড়ম্বর বিবর্জিত ১২০০ পার্কিংসহ চার বেজমেন্টের এ প্রকল্পে রয়েছে ১৫০০ লোক ধারণক্ষম মাল্টি পারপাস হল, ৭৫০ আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম, ২টি সেমিনার কক্ষ এবং বাণিজ্যিক ফ্লোর সমূহ। চত্বরে নিচেই রয়েছে একটি মসজিদ। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন রাকিবুল। পাশাপাশি পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে তৎপর থাকেন সর্বদা।