Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

 রফিক আজাদও চলে গেলেন!

এ যেন মৃত্যুর মিছিল। আমাদের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক জগতের প্রিয় মানুষেরা একে একে চলে যাচ্ছেন পরপারে। খালিদ মাহমুদ মিঠুর অকাল মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই খবর এলো বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি রফিক আজাদ আর নেই। তিনিও না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ইন্নালিল্লাহে… রাজেউন।

ভাত দে হারামজাদা তা না হলে মানচিত্র খাবো অথবা হে কলম উদ্ধত হয়োনা নত হও, নত হতে শেখো, তোমার উদ্ধত আচরণে দ্যাখো, কী যে দুঃখ পেয়েছেন ভদ্রমহোদয়গণ… অথবা আমাকে খুঁজো না কাশ্মীরের স্বচ্ছ ডাল হ্রদে…।

অসাধারন এই কবিতা গুলো বাংলাভাষার অন্যতম সেরা ও প্রধান কবি রফিক আজাদের লেখা। একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়া এই মহান কবি ১২মার্চ আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন। চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

তাঁর চার ছেলে দুই মেয়ে। দুই ছেলে অভিন্ন আজাদ ও অব্যয় আজাদ থাকেন কানাডায়। তারা দেশে আসার পর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কবির মরাদেহ দাফন করা হয়। সদা হাস্যোজ্জল রফিক আজাদ এদেশের সাহিত্য অঙ্গনের প্রাণপুরুষ ছিলেন। সাহিত্য আড্ডা বা আসরে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন তিনি। আধুনিক মনস্ক এই কবি গত দু’টি একুশের বইমেলায় আসতে পারেননি অসুস্থতার কারনে।

একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারজয়ী এই কবির বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।

মসিত্মস্কে রক্তক্ষরণের পর রফিক আজাদ প্রায় দুই মাস ধরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন।

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘অসম্ভবের পায়ে, সীমাবদ্ধ জলে, সীমিত সবুজে, নির্বাচিত কবিতা, চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া, পাগলা গারদ থেকে প্রেমিকার চিঠি, প্রেমের কবিতা সমগ্র, হৃদয়ের কী বা দোষ, কোনো ক্ষেদ নেই ও প্রিয় শাড়ি গুলি।

ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে তাকে একুশে পদক দেওয়া হয়।

১৯৪১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানায় এক সমভ্রানত্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কবি রফিক আজাদ। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্ব কনিষ্ট। তার বাবার নাম সলিম উদ্দিন খান, মা রাবেয়া খান। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ই ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বাবা-মার কঠিন শাসন উপেক্ষা করে ভাষা শহীদদের স্মরণে মিছিল করেন তিনি।

চিরদিনই প্রতিবাদী এই কবি তার দ্রোহকে শুধু কবিতার লেখনীতে আবদ্ধ না রেখে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন জাতির চরম ক্রানিত্মকালে, ১৯৭১ এ পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গনের সৈনিক হিসেবে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে বীরত্ব দেখান তিনি।

তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর পাস করে কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতায়।

এরপর কাজ করেন বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন, উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে।

রফিক আজাদ বাংলা একাডেমির মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’এর সম্পাদক ছিলেন। ‘সাপ্তাহিক রোববার’ পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। এছাড়া একসময় টাঙ্গাইলের মওলানা মুহম্মদ আলী কলেজের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনাও করেন তিনি।

১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক পান কবি রফিক আজাদ। সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কারসহ আরও বেশ কয়েকটি পুরস্কার।

বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি রফিক আজাদ। আধুনিকতার সব বৈশিষ্ট্য তার কাব্যে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, দেশাত্মবোধ, নারী স্বাধীনতা, মূল্যবোধ, ইতিহাস চেতনা, সমাজ ভাবনা, ঐতিহ্যপ্রীতি- নানান উপাদান রফিক আজাদের কাব্যিক বোধবুদ্ধিকে সুষমামণ্ডিত করে তোলে।