Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ভালো গানের ভালো ভিডিও এখন সময়ের দাবী-ইমরান

এ সময়ের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী ও কম্পোজার ইমরান। গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিক ভাবে শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়ে আসছেন তিনি। তার সুর ও সঙ্গীতায়োজনে অন্য শিল্পীদের কণ্ঠে শ্রোতাপ্রিয় গানের সংখ্যাও কম নয়। এক বিকেলে ইমরান আনন্দ আলোকে বলেছেন, তার বর্তমান ব্যস্ততা ও সঙ্গীত জীবন নিয়ে নানা কথা। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।

আনন্দ আলো: শফিক তুহিনের কথায় আপনার গাওয়া ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ গানটি সম্প্রতি ইউটিউবে দুই বাংলার সব গানকে পেছনে ফেলে এককোটি ভিউয়ার্সের রেকর্ড গড়েছে। আপনার অনুভূতির কথা জানতে চাই?

ইমরান: এ গানটির মাধ্যমে যে ভালোবাসা পেয়েছি সেটা খুব কম মানুষের ভাগ্যে জোটে। ভিন্নধর্মী কিছু করবার ইচ্ছা ছিল। শফিক তুহিন ভাইয়ের লেখা এ গানটি আমার ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। সব মিলিয়ে শ্রোতা, ভক্ত, শুভানুধ্যায়ীদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

আনন্দ আলো: এ গানের পর নিশ্চয়ই নিজের প্রতি দায়িত্ব ও আপনার শ্রোতাদের প্রত্যাশা আরও বেড়ে গেছে?

ইমরান: অবশ্যই। ঠিক তাই এখন দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে। এ কারণেই আরও মানসম্পন্ন কাজ করার চেষ্টা করছি। সময় নিয়ে কাজ করছি।

আনন্দ আলো: ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ গানটির নেপথ্যের গল্প জানতে চাই?

ইমরান: এই গানটা আমি প্রথম বানিয়েছিলাম একটা সিনেমার জন্য। তখন গানটার শিরোনাম ছিল ‘বলতে পাখি কত কী’ প্রডিউসারে সঙ্গে আমার বনিবনা না হওয়ার কারণে গানটি ছবিতে আর দেইনি। পরে শফিক তুহিন ভাইকে দিয়ে গানটা আবার নতুন করে লেখাই। গানের কথা ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ শুরুতেই গানটি স্টুডিও ভার্সনে ছাড়া হয়। তারপর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রিলিজ হওয়ার ৫ দিনের মাথায় গানটির ব্যাপারে শ্রোতাদের ব্যাপক রেসপন্স পাই। এখনও গ্রামগঞ্জ থেকে অনেক রেসপন্স পাচ্ছি। তখন তিনমাসের মধ্যে গানটির স্টুডিও ভার্সন ১২ লাখ ভিউয়ার্স দেখেছে, শুনেছে। সে কারনে সিদ্ধান্ত নেই গানটির একটা অফিশিয়ালি মিউজিক ভিডিও দরকার। স্টুডিও ভার্সনে এত রেসপন্স পাচ্ছি, নিশ্চয়ই এক্ষেত্রেও একটা ফিডব্যাক পাওয়া যাবে। তারপর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের জন্য জন্য গানটির মিউজিক ভিডিও বানানো হলো। ৫ এপ্রিল অফিশিয়ালি গানটি রিলিজ করলাম। ভিডিওতে মডেল ছিল তানজীন তিশা। ১ বছর ৫ মাসের মাথায় এই গানের ভিউয়ার্স এখন ১ কোটি ১২ লাখ আমার চ্যানেলে। আর স্টুডিও ভার্সন থেকে ৪১ লাখ। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো গানের মিউজিক ভিডিও ১ কোটি ভিউয়ার্স অর্জন করেছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, কলকাতার কোনো গানের এককোটির ভিউয়ার্স নেই। এটা একটা ইতিহাস।

আনন্দ আলো: আপনার ‘বাহুডোরে’ গানটিও বেশ সাড়া ফেলছে?

ইমরান: হ্যা, দারুণ সাড়া পাচ্ছি। এগানটিও সব ধরনের শ্রোতারা গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন স্থানে গেলে গানটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখেই বুঝতে পারি। এরই মধ্যে ইউটিউবেও ১২ লাখেরও বেশি দর্শক দেখেছে গানটি।

আনন্দ আলো: আপনি একের পর এক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। এ সফলতার রহস্য কী?

ইমরান: রহস্য কি সেটা জানি না। তবে চেষ্টা করছি ভালো কাজ করতে। সময়ের সঙ্গে চলতে। নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করতে। শ্রোতারা গানগুলো গ্রহণ করছেন এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।

আনন্দ আলো: গান এখন ভিডিও নির্ভর হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

 

ইমরান: ভালো গানের সঙ্গে একটি ভালো মানের ভিডিও হলে সেই গানটি দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছায়। তাই গানের ভিডিওটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আনন্দ আলো: মিউজিক ভিডিওতে সম্মানি কেমন?

ইমরান: সম্মানির ব্যাপারটা এখনো স্থির পর্যায়ে আসেনি। এতদিন যাবৎ মিউজিক ভিডিওতে আর্টিষ্টরাই প্রডিউস করতো। এখন কোম্পানিগুলো প্রডিউস করছে। ইউটিউবে গান ডাউনলোড করার পর সেটা থেকে একটা রেভ্যুনিউ পাচ্ছেন আর্টিষ্টরা।

আনন্দ আলো: এ পর্যন্ত আপনার কতগুলো মিউজিক ভিডিও হয়েছে। পছন্দের মিউজিক ভিডিও কোন্‌টি?

ইমরান: এ পর্যন্ত আমার যতগুলো মিউজিক ভিডিও বের হয়েছে সবগুলোই আমার পছন্দের। একেকটা একেক রকমের। তার মধ্যে আমার ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ গানটি একটা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বলতে পারেন এটা আমার পছন্দের একটা গান। তাছাড়া আমার সর্বশেষ যে মিউজিক ভিডিওটি বের হয়েছে। সেটা হচ্ছে ‘সবাইতো চলে যাবে’। ভিডিওটি অ্যাকটিং ধরনের। সবার প্রশংসা পেয়েছে। এই গানটির মিউজিক ভিডিও আমার অনেক ভালো লেগেছে।

আনন্দ আলো: ভারতের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী পলক মুচ্ছালের সঙ্গে কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতা কেমন?

ইমরান: ভারতের জনপ্রিয় শিল্পী পলক মুচ্ছালের সঙ্গে দ্বৈত অ্যালবাম করার অভিজ্ঞতা সত্যিই দারুণ। খুব ভালো লাগছে। এটি আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম ভিন্নধর্মী একটি কাজ। এ ইচ্ছে বাস্তবায়নের জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাতে চাই জুলফিকার রাসেল ভাই ও সাউন্ডটেকের কর্ণধার বাবুল ভাইকে।

আনন্দ আলো: একটা গানের ক্ষেত্রে কথা, সুর, কণ্ঠ কোন্‌টাকে প্রাধান্য দেন?

ইমরান: আমার নিজের কথা বললে বলব গানের কথা, সুর ও মউজিক আমার কাছে জরুরি একটা গানের ভেতর সব সময় সিগনেচার মিউজিক রাখার চেষ্টা করি। গানটির আইডেনটিটি ওই মিউজিকটাই। মিউজিকটা যেন একটা গানে বারবার রিপিট হয় সেটা মাথায় রাখি। মিউজিকের কারণে মানুষ গানটি মনে রাখে। রাইট টিউন, রাইট গায়কি সব কিছু ভালো হলে গান অবশ্যই ভালো হবে।

আনন্দ আলো: সম্প্রতি আপনি একটি নাটকেও গান করেছেন। এ প্রসঙ্গে কিছু বলুন?

imranইমরান: সালাউদ্দিন লাভলু ভাইয়ের নতুন ধারাবাহিক নাটক ‘সোনার পাখি রুপার পাখি’র জন্য গানটি গেয়েছি। গানটির সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন মকসুদ জামিল মিন্টু। আমি অ্যালবাম ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত গান করলেও নাটকে খুব একটা করা হয়নি। এবার দু’জন প্রিয় মানুষের সঙ্গে কাজ করতে সুযোগ হলো। লাভলু ভাই আমার খুবই পছন্দের একজন নির্মাতা। তার নাটকে গান করলাম। অন্যদিকে মকসুদ জামিল মিন্টু ভাই আমাদের দেশের বরেণ্য একজন সুরকার। তিনি এ গানটি তৈরি করেছেন। এ কাজটি করতে পেরে ভীষণ ভালো লেগেছে। আমি আশাকরি গানটি সবার ভালো লাগবে।

আনন্দ আলো: অনেকেই বলেন, এখনকার গান দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকছে না। আপনি কতটুকু একমত?

ইমরান: এই কথাটার সঙ্গে আমি একমত নই। এখন ভালো ও খারাপ সব ধরনের গানই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ভালো গানই টিকে থাকে। আর দীর্ঘদিন গান টিকছে কি না তার জন্য তো সময় দিতে হবে। এখনকার ভালো গানগুলোকেও সময় দিতে হবে, আগে থেকে কিছু বলা যাবে না।

আনন্দ আলো: এখন গান মোবাইলে রিলিজ হচ্ছে। এতে সুবিধা কী?

ইমরান: এখন গান বিভিন্ন অ্যাপস এ বের হচ্ছে। এর সুবিধাটা হচ্ছে, নতুন একটা আয়ের উৎস সৃষ্টি হলো। আগে যেমন- সিডি বিক্রি হয়ে আয় হতো। তারপরে রিংটোন, ওয়েলকাম টিউনের মাধ্যমে একটা আয় হতো। এখন ইউটিউবের মাধ্যমেও আয় হচ্ছে। আবার নতুন করে মোবাইল অ্যাপসে ডাউনলোডের মাধ্যমে গান শুনছে মানুষ। সেখান থেকেও আয়ের একটা উৎস চলে আছে। আয়ের উৎস যে কোনো মাধ্যমেই হোক সেটাকে আমরা স্বাগতম জানাব।

আনন্দ আলো: গায়ক হিসেবে কম্পোজার ইমরান আর কম্পোজার হিসেবে গায়ক ইমরানের সমালোচনা করুন?

ইমরান: কম্পোজার হিসেবে বলব, গায়ক ইমরানকে আরও অনেক বেশি চর্চা করতে হবে। আর গায়ক হিসেবে বলব, কম্পোজার ইমরানের আরও অনেক বেশি গান শোনা দরকার।

আনন্দ আলো: নতুনদের মধ্যে কম্পোজিশনে কারা ভালো করছে?

ইমরান: এ প্রজন্মের অনেকের কাজই ভালো লাগে। প্রীতম ভালো করছে, রাফি ভালো করছে। ওদের কাজ আমার কাছে খুবই ভালো লাগে।

আনন্দ আলো: আপনার বেশির ভাগ গান প্রেম, বিরহ, বিচ্ছেদ-এর কারণ কী?

ইমরান: আমি যেটা পারব সেটাইতো করব। যেটা ভালো পারব না সেটাতে আমাকে পারদর্শিতা দেখেও লাভ নাই। যদি সেটা ভালো না হয়। যেটাতে আমি নিজেকে পারফেক্ট ভাবে প্রেজেন্ট করতে পারব সেটাই আমার সিঙ্গনেচার।

আনন্দ আলো: আপনার কাছে প্রেম কী?

ইমরান: আমার কাছে প্রেম মানে বিশ্বাস, প্রেম মানে সেক্রিফাইস, প্রেম মানে একটা সম্পর্কের মধ্যে সৎ থাকা।

আনন্দ আলো: গানে না এলে কি হওয়ার ইচ্ছা ছিল?

ইমরান: আমার বাবার ইচ্ছা ছিল আমি যেন ব্যাংকার হই। আর আমার ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। শেষ পর্যন্ত হয়েছি সঙ্গীত শিল্পী।

আনন্দ আলো: জীবন সঙ্গী করতে চান এমন কাউকে পেয়েছেন কী?

ইমরান: এখন পর্যন্ত জীবন সঙ্গী করার মতো কাউকে পাইনি। এর মধ্যে যদি কাউকে পেয়ে যাই, অবশ্যই তাকে ধরে রাখার চেষ্টা করবো।