Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

নাটক সিনেমা সঙ্গীত এই আছি এই নাই

রেজানুর রহমান

একথা সবাই মানছেন যে আমাদের শোবিজে একটা নাজুক অবস্থা বিরাজমান। এক সময়ের একটা টেলিভিশন চ্যানেল থেকে এখন দেশে অনেকগুলো টেলিভিশন চ্যানেল। ৩০টিরও বেশি। শোনা যাচ্ছে আরো কিছু টিভি চ্যানেল আসি আসি করছে। অথচ দেশের টিভি দর্শকের অনেকের চোখ থাকে প্রতিদিন বিদেশ অর্থাৎ পাশর্^বর্তী দেশের টিভি চ্যানেলের পর্দায়। একটা টিভি চ্যানেল থেকে অনেকগুলো টিভি চ্যানেলের জন্ম হলো। ‘শত ফুল ফুটতে দাও’ আমরা যখন সকলে এই নীতিতে অবিচল তখন ফুল ফুটছে ঠিকই কিন্তু ফুল গন্ধ ছড়াচ্ছে না। অথবা একই ফুল বার বার দেখতে ভালো লাগে না এই মানসিকতায় অনেকে পাশের দেশের বাগান থেকে উৎকট গন্ধওয়ালা নামবিহীন ফুলের প্রতিই আকৃষ্ট হচ্ছেন। এই তালিকায় অধিকাংশ পরিবারে মেয়েরা রয়েছেন। সন্ধ্যা হতে না হতেই অনেক বাসাবাড়িতে উৎকট গন্ধওয়ালা ফুলের প্রদর্শনী দেখার জন্য মহিলাদের অনেকে টিভি সেটের সামনে বসে যান। বিরামহীন গন্ধ শুকতে থাকেন উদ্ভট টাইপের কিছু গন্ধবিহীন ফুলের অর্থাৎ কুরুচিপূর্ণ টিভি নাটকের। দেশের টেলিভিশনে কে কোথায় কি করছেন এ ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণাই নেই। আমাদের দেশে শুধু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে নাটকে অভিনয় করেন এমন শিল্পীর সংখ্যা ৭শরও বেশি। অথচ বড়জোর ৫০/৬০ জনকে চিনে আমাদের দেশের টিভি দর্শক। কিন্তু পাশের দেশের বিভিন্ন টিভি সিরিয়ালের ৫০ জনেরও বেশি তারকা এই দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ জনপ্রিয় তারকার চেয়ে তাদের কেউ কেউ আছেন এগিয়ে।

এত গেল টেলিভিশন নাটকের কথা। সিনেমার কথা যদি বলি তাহলে তো ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে এই মাধ্যমে। এক সময় আমাদের চলচ্চিত্র ছিল কলকাতার চলচ্চিত্রের চেয়েও উন্নত। এখন তারা উন্নত। আর আমরা দিনে দিনে ক্ষয় হচ্ছি। যৌথ সিনেমার নামে চলছে একধরনের অসম প্রতিযোগিতা। অনেকের মন্তব্য, দেশে চলচ্চিত্র, টিভি নাটক এমনকি সংগীতের ক্ষেত্রেও চলছে একধরনের আগ্রাসন। যার ফলে চলচ্চিত্র স্থবির হতে চলেছে। এবার আগ্রাসনের নতুন থাবা পড়েছে টিভি নাটক ও সংগীতের ওপর। কারণ বাংলাদেশে এখন সাধারণ মানুষের একমাত্র বিনোদন ক্ষেত্র হলো টেলিভিশনের ছোট বাক্সটি। পরিবারের যে যেখানেই থাকুক না কেন বাসাবাড়িতে ফেরার পর প্রথমেই নজর দেয় টেলিভিশন নামক যন্ত্রটির প্রতি। টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখতে অনেকে প্রতিদিনের কর্মকাÐ শুরু করে আবার টেলিভিশন দেখতে দেখতে ঘুমাতে যায়। অর্থাৎ এই দেশের অধিকাংশ মানুষের সকাল শুরু হয় টেলিভিশন দেখে। আবার রাতও শেষ হয় টেলিভিশন দেখে। সে কারণে আগ্রাসনটা এবার নতুন করে এসেছে টেলিভিশনের ওপরই। আমরা বোধকরি অনেকেই তা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু বুঝতে পারা পর্যন্ত দায়িত্ব শেষ। অবস্থাটা ঠিক এরকমÑ এক গেরস্থের বউ হঠাৎ একদিন আঁটসাঁট পোশাক পরে সবার সামনে হাজির হলো। আশেপাশের বাড়ির লোকজন তো অবাক। সার্কাস দেখার আনন্দ সবার চোখেমুখে। বউ যেদিকে যায় উৎসাহী লোকজনও সেদিকে যায়। রীতিমত হুলুস্থূল অবস্থা। গেরস্থ বউয়ের বিরুদ্ধে পারিবারিক বৈঠক ডাকলেন। পর্যবেক্ষক হিসেবে পাশের বাড়ির গেরস্থকেও ডাকা হলো। বৈঠকে আঁটসাঁট পোশাক পরা বউকে নিয়ে অনেক কটু কথা বলা হলো। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পাশের বাড়ির গেরস্থের কাছে কিছু জানতে চাওয়া হলোÑ ভাই আপনি কিছু বলেন।

পাশের বাড়ির গেরস্থ একটু যেন বিরক্ত এবং বিব্রতও। তিনি বললেনÑ এটা আপনাদের পারিবারিক ব্যাপার। আমার নাক গলানো ঠিক হবে না।

কয়েকদিন পরের ঘটনা। পাশের বাড়ির গেরস্থ হৈচৈ শুরু করে দিয়েছেন। ঘটনা কি? ঘটনা হলো তার স্ত্রীও আঁটসাঁট পোশাক পরেছে। এভাবেই বাইরে যেতে চায়। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়েছে।

এই গল্পের একাধিক উপসংহার টানা যেতে পারে। উপসংহার এক. দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা রাখুন। অন্যথায় দাঁতে পোকা লেগে যেতে পারে।

উপসংহার দুই. সুযোগ থাকলে প্রতিবেশীর সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হন। অন্যথায় আপনার বিপদে তাকে নাও পেতে পারেন।

উপসংহার তিন. অন্যে বিপদে পড়েছে আর আপনি হাসছেন। এটা করবেন না। হয়তো দেখা যাবে আপনি বিপদে পড়েছেন তখন সেই লোক হাসছেন। তখন আপনার কেমন লাগবে?

উপসংহারের পাল্লা আর ভারি করতে চাই না। এবার প্রত্যাশার কথাটা বলি। আমরা আনন্দ আলো পরিবার মনে করি আমাদের শোবিজ অনেক বড় ও মর্যাদাবান অনেক মানুষ এই জগতে বিচরণ করছেন। মেধা ও মননে আমরা কারো চেয়ে কোনো অংশে কম নই। একথা আমরা বহুবার প্রমাণ করেছি। এই ইতিহাস তো এখনো মুছে যায়নি একদা আমাদের টেলিভিশন নাটক দেখার জন্য পাশের দেশের কলকাতার বাসাবাড়িতে অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি, পাতিল বাঁশের ডগায় রেখে ডিশ অ্যান্টেনা বানানো হয়েছিল। বাকের ভাইয়ের ফাঁসী হবে কি হবে না তা দেখার জন্য কলকাতার মানুষজনও উদগ্রীব ছিল।

আর এখন আমরা তাদের নাটকের চরিত্র নিয়ে সারাক্ষণ উদগ্রীব থাকি। কেন এই অবস্থা? এমনতো নয় আমাদের ঢাল নাই, তলোয়ার নাই, আমরা নিধিরাম সর্দার। আমাদের সবই আছে। আমাদের অনেক টেলিভিশন চ্যানেল আছে, শত শত অভিনেতা, অভিনেত্রী, নির্মাতা, নাট্যকার আছেন। তবুও কেন আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি?

আশার কথা শোবিজ সংশ্লিষ্ট প্রায় প্রতিটি সেক্টরে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব এসেছে। নতুন নেতারা ইতোমধ্যে অনেক আশার বাণী শুনিয়েছেন। এবার অপেক্ষার পালাÑ দেখি না কী হয়?

আচার আচরণের একটা নির্ধারিত ফ্রেম থাকা দরকার

Ñগাজী রাকায়েত

সভাপতি, ডিরেক্টরস গিল্ড

নির্বাচনের মাধ্যমে ডিরেক্টরস গিল্ড নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেছে। নাটক চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে ডিরেক্টরকে বলা হয় ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’। ডিরেক্টরদেরও একজন ক্যাপ্টেন আছেন। তার নাম গাজী রাকায়েত। ২১ ফেব্রæয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মিছিলে তার সঙ্গে কথা হলো আনন্দ আলোর।

আনন্দ আলো: একুশের শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে যাচ্ছেন। পরিচালকের দৃষ্টিতে কিছু বলুন।

গাজী রাকায়েত: এই মুহূর্তে আমাদের সামনে পিছনে অনেক মানুষ, হাজার হাজার… সবার হাতে ফুল। এই সুন্দর দৃশ্য পৃথিবীর আর কোথাও পাবেন না। একুশের ভোরে শহীদ বেদিতে ফুল দিতে পারার গল্পও তো জীবনের শ্রেষ্ঠ গল্প হতে পারে।

আনন্দ আলো: ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছাড়া আর কোনো ছবিতে অথবা নাটকে কি একুশে ফেব্রæয়ারি এত মায়া ছড়িয়েছে?

গাজী রাকায়েত: জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’র কথা যদি বলেন তাহলে বলবো এটি পৃথিবীর একটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র। পরবর্তীতে নাটক সিনেমায় একুশে ফেব্রæয়ারি বহুবার উঠে এসেছে। তবে জীবন থেকে নেয়ার মতো এতটা আবেগ ছুঁতে পারেনি।

আনন্দ আলো: ডিরেক্টরস গিল্ডের সাংগঠনিক অবস্থান এখন কেমন? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

গাজী রাকায়েত: সাংগঠনিক অবস্থান বিগত সময়ের তুলনায় অনেক সুদৃঢ়। কিছুদিন আগে সংগঠনের উদ্যোগে পিকনিক হয়েছে। সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। ডিরেক্টরদের স্বার্থ সংরক্ষণ করাই আমাদের এখন প্রধান কাজ। এই লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল মালিকদের সঙ্গে পৃথকভাবে আমরা বৈঠক করবো।

আনন্দ আলো: কিছুদিন আগে বাংলাদেশের টেলিভিশন মাধ্যমের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আপনারা একটি যৌথ আন্দোলনে নেমেছিলেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশও করেছেন। সেই আন্দোলনের সাফল্য কতটুকু পেয়েছেন বলে মনে করেন?

গাজী রাকায়েত: দেখুন ঐ আন্দোলন যে একেবারেই সফল হয় নাই তা বলা যাবে না। আন্দোলনের ফলে আমাদের টেলিভিশন মাধ্যমের অনেক সংকটের কথা উঠে এসেছে। এটাওবা কম কিসে। তবে একটা কথা বলতে পারি যেকোনো আন্দোলনে নামার আগে সঠিক ভাবে যোগ্য নেতা নির্বাচন করাটা জরুরি। এই ক্ষেত্রে আমাদের বোধকরি অদূরদর্শিতার অভাব ছিল।

আনন্দ আলো: ডিরেক্টরদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলছেন। কিন্তু আমাদের শোবিজ কি সেইভাবে প্রস্তুত? স্বার্থ রক্ষার আগে নিয়মনীতি রক্ষারও তো প্রশ্ন আসে?

গাজী রাকায়েত: আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ তুলেছেন। আনন্দের সংবাদ মিডিয়ার প্রায় প্রতিটি সেক্টরের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব এসেছে। এখন দরকার সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ একটি প্ল্যাটফরম গড়ে তোলা। শোবিজ কীভাবে চলবে তার একটা গাইড লাইন থাকা জরুরি। এক্ষেত্রে পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি পেশাগত রেসপেক্টও জরুরি। এজন্য নিয়মনীতিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের আচার আচরণকে নীতিমালার মাধ্যমে একটি ফ্রেমে আনতে হবে। তবেই কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাবে।

 

একটি যৌথ সংগঠন এখন সময়ের দাবি

Ñমুশফিকুর রহমান গুলজার

সভাপতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নতুন নেতৃত্ব এসেছে। অনেকে মনে করছেন এবার চলচ্চিত্র শিল্পে গতি সঞ্চার হবে। এ ব্যাপারে কথা বলেছেন পরিচালক সমিতির নব নির্বাচিত সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার।

আনন্দ আলো: কেমন আছেন?

গুলজার: ভালো।

আনন্দ আলো: পরিচালক সমিতির সভাপতি হিসেবে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন। অনুভ‚তি জানতে চাই?

গুলজার: অনুভ‚তি চমৎকার। এবার চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে আরো কিছু কাজ করতে চাই।

আনন্দ আলো: সেটা কেমন? বুঝিয়ে বলবেন?

গুলজার: যে যাই বলুক একথাতো সত্য চলচ্চিত্র, নাটক, সংগীতসহ সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রেই একটা অস্থিরতা চলছে। সিনেমা সিনেমার জায়গায় নাই। টিভি নাটক টিভি নাটকের জায়গায় নাই। সংগীতের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একটা আগ্রাসন চলছে। এজন্য ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ দরকার। আশার কথা শোবিজের সকল সংগঠনে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব এসেছে। সবার স্বপ্ন প্রায়ই একই রকম। সবার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাও একই রকম। কাজেই এই মুহূর্তে সকল সংগঠনের সমন্বয়ে একটা ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফরম গড়ে তোলা জরুরি।

আনন্দ আলো: সেটা কেমন?

গুলজার: আপনাকে একটা সহজ উদাহরণ দেই। কলকাতায় ‘ইম্পা’ নামে একটি জোটভুক্ত সংগঠন আছে। সেখানে নাটক, সিনেমায় কাজ করতে হলে এই সংগঠনের অনুমতি নিতে হয়। আমাদের এখানেও এমন সংগঠন দরকার। কলকাতায় আমাদের কেউ চলচ্চিত্র বা নাটকে অভিনয় করতে গেলে অথবা নির্মাণে জড়িত হতে চাইলে তাকে বা তাদেরকে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের অনুমতি নিতে হয়। আর আমাদের এখানে ওদের যে কেউ এসে কোনো অনুমতি ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদেরও একটা জবাবদিহিমূলক সংগঠন থাকা জরুরি।

আনন্দ আলো: পরিচালক সমিতির ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাই।

গুলজার: ইতিমধ্যে ২১ ফেব্রæয়ারি কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’ এর ওপর এফডিসিতে আমরা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। নায়করাজ রাজ্জাক, সুচন্দাসহ অনেকে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। চলচ্চিত্রে তারকা সংকট দূর করার জন্য আবার নতুন মুখের সন্ধানে কর্মসূচি চালু হচ্ছে। এবার পরিচালক সমিতিই এর নেতৃত্ব দিবে। আশা করছি মার্চের মাঝামাঝি এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারব। ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর নিয়মিত ওয়ার্কশপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিচালক সমিতি। প্রতি ৩ মাসে একবার এফডিসিতে এই ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হবে। চলচ্চিত্রের পর্দায় নতুন নতুন লোকেশন তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে পরিচালক সমিতি। এরই আওতায় ৮ মার্চ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপসমূহ ভ্রমণ করবে পরিচালক সমিতির একটি প্রতিনিধি দল। ৫০ জন চিত্র পরিচালক এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন। তারা দক্ষিণাঞ্চলের কুকরী মুকরী, মনপুরা, ঢালের চর প্রভৃতি এলাকা পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফিরবেন ১১ মার্চ। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য এলাকাতেও লোকেশন দেখার কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

আনন্দ আলো: যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে কিছু বলুন।

গুলজার:  (ভেবে নিয়ে) কাগজে কলমে নিয়ম মেনেই যৌথ প্রযোজনার ছবি হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সমানে সমানে কাজের পরিবেশ গড়ে উঠছে না। এক্ষেত্রে পারস্পরিক আন্তরিকতা জরুরি।

আনন্দ আলো: আপনার নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? নতুন ছবির খবর…?

গুলজার: কিশোর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি ছবি নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করেছি। আশা করা যায় মে মাসের দিকে ছবির কাজ শুরু করতে পারব।

 

ত্রিপক্ষীয় সমঝোতায় একটি নীতিমালা করবো

-শহীদুল আলম সাচ্চু

সভাপতি, অভিনয় শিল্পী সংঘ

Natokবাংলাদেশে অভিনয় শিল্পীর সংখ্যা কত? এ কথার উত্তর দেয়া কঠিন। তবে যদি প্রশ্ন করা হয় শুধু টিভি নাটকে অভিনয় করেন এমন অভিনয় শিল্পীর সংখ্যা কত? তাহলে জটজলদি উত্তর দেয়া যাবে। টিভি নাটকে অভিনেতা-অভিনেত্রীর সংখ্যা এখন ৭শরও বেশি। অবশ্য বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পীর সংখ্যা আরো বেশি। বেশ কয়েক বছর আগে গঠিত হয় অভিনয় শিল্পী সংঘ। শুরুতে সংগঠনটি বেশ গতি পেয়েছিল। কিন্তু একসময় সংগঠনের কাজ থেমে যায়। ‘এই আছি এই নাই’ অবস্থার মধ্যদিয়ে চলতে থাকা দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছেন। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন গুণী অভিনেতা, সংগঠক শহীদুল আলম সাচ্চু। সম্প্রতি আনন্দ আলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।

আনন্দ আলো: অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে আপনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

শহীদুল আলম সাচ্চু: আনন্দ আলোকে অনেক ধন্যবাদ।

আনন্দ আলো: প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ ভোটে অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি হলেন। অনুভ‚তি জানতে চাই।

সাচ্চু: অনুভ‚তি অনেক ভালো।

আনন্দ আলো: সংগঠন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

সাচ্চু: (মৃদু হেসে) এই মুহূর্তে জরুরি কাজ মনে করছি সংগঠনের প্রতিটি সদস্যের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের পরিকল্পনা এগিয়ে নেয়া। এজন্য দরকার সাংগঠনিক শৃঙ্খলা। পাশাপাশি জবাবদিহিতার পরিবেশও জরুরি। আমরা নির্বাচিত হবার পর ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছি। এমনও হচ্ছে কোথাও কমিটির ৪/৫ জনের সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্রই সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ৫/১০ মিনিটের একটা মিটিংও করে ফেলি আমরা। সবাই বেশ অ্যাকটিভ। দেখা যাক ভবিষ্যতে কি হয়।

আনন্দ আলো: সভাপতি হিসেবে এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ কি দেখছেন?

সাচ্চু: চ্যালেঞ্জতো একটাই শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষা করা। এজন্য শিল্পীদেরও শিল্পীসুলভ আচরণ দরকার। অভিনয়ের ক্ষেত্রে তরুণ শিল্পীরা মাঝে মাঝেই বিড়ম্বনার শিকার হন। তাদের পারিশ্রমিক নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। আপনি একজন শিল্পীকে আপনার নাটকে যুক্ত করবেন অথচ তাকে পারিশ্রমিক দিবেন না তাতো হবে না। এ ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ঠ পরিচালক, প্রযোজক সহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গেও বৈঠক করবো। মোটকথা আমরা সর্বক্ষেত্রে শিল্পীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গেও বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নাচ, গানের মানুষজন প্রতিবছর সরকারিভাবে সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে বিদেশে যায়। এক্ষেত্রে অভিনয় শিল্পীদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করবো আমরা। বয়স্ক আর্টিস্টদের জন্য একটা ওল্ডহোম গড়ার পরিকল্পনা আছে। এজন্য জায়গাজমির খোঁজ করা হচ্ছে। আশাকরি অচিরে এ ব্যাপারে ঘোষণা দিতে পারবো।

আনন্দ আলো: একটা অভিযোগ আছে দেশের অনেক মানুষ দেশের টেলিভিশনের নাটক দেখে না। এ ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই।

সাচ্চু: এই অভিযোগ মোটেই সত্য নয়। যারা একথা বলে তারা না বুঝে বলে। আমার সঙ্গে এ ব্যাপারে অনেকেই তর্ক করেন। আমি তাদেরকে যখন প্রশ্ন করি কোন নাটকটা ভালো না, নাম বলেন তো। তখন তারা সদুত্তর দিতে পারে না। কারণ তারাতো না দেখেই মন্তব্য করে। তবে হ্যাঁ, একথা সত্য দর্শকদের সঙ্গে আমাদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই দূরত্ব কমাতে চাই। অবশ্য এজন্য আমরা মোটেই দায়ী নই। টেলিভিশন চালাতে গেলে বিজ্ঞাপন লাগবে। বিজ্ঞাপন ছাড়া বলবে না। তবে একটা বিষয়ে জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। তাহলো আপনি বিজ্ঞাপনের জন্য নাটক প্রচার করবেন নাকি নাটকের জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন? টিভি চ্যানেল মালিকদের এ ব্যাপারে একটা স্থির সিদ্ধান্তে আসা জরুরি।

আনন্দ আলো: দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে নিয়মিত ডাবিং সিরিয়াল চলছে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?

সাচ্চু: ডাবিং সিরিয়াল খারাপ একথা আমি বলবো না। এর ফলে আমাদের কিছু শিল্পীর নতুন কাজের দুয়ার খুলে গেছে। অনেকে ডাবিং শিল্পী হিসেবেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তবে এক্ষেত্রে একটি কথা আছে, ডাবিং সিরিয়াল প্রচারের ক্ষেত্রেও একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করা জরুরি। আপনি আপনার চ্যানেলে শুধু ডাবিং সিরিয়ালই চালাবেন তাতো হতে পারে না।

আনন্দ আলো: আপনি শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বললেন। কিন্তু অভিযোগ শোনা যায় অনেক শিল্পী তার কাজের ক্ষেত্রে কমিটেড না। অনেকে একদিনে একাধিক নাটকের শুটিং করেন। কল টাইমে সেটে হাজির হন না। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?

সাচ্চু: অভিযোগ একেবারেই উড়িয়ে দেয়ার মতো না। আমাদের শোবিজের উন্নয়নের স্বার্থে সবার উচিত নিয়মনীতি মেনে চলা। আমরা অচিরে এ ব্যাপারে তিন সংগঠন যেমন আমাদের অভিনয় শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টরস গিল্ড ও প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন মিলে একটি যৌথ নীতিমালা তৈরি করবো। এই নীতিমালার ভিত্তিতে সবকিছু চলবে।

আনন্দ আলো: তিন সংগঠনের সমন্বয়ে এরকম একটি নীতিমালা আগেও তৈরি হয়েছিল…?

সাচ্চু: আমরা সেটাকে সামনে রেখেই নতুন সিদ্ধান্ত নিব। মোটকথা শোবিজে একটা শৃঙ্খলা দরকার। অভিনয় শিল্পী সংঘ এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে চায়। আমরা আমাদের সংগঠনকে একটি মর্যাদাবান সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

আনন্দ আলো: আপনার অভিনয়ের খবর কি?

সাচ্চু: আপাতত অভিনয় শিল্পী সংঘের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। আমাদের নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ থেকে ভোট দিতে ঢাকায় আসার পথে একজন সদস্য মারা যান। তার ছেলের একটি চাকরির সন্ধান করা হচ্ছে। প্রিয় সদস্যের মৃত্যু দিবসটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার জন্য প্রতিবছর ১০ ফেব্রæয়ারি মানবিক দিবস পালন করা হবে।

আনন্দ আলো: আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।

সাচ্চু: ধন্যবাদ আনন্দ আলোকেও।