Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

বাঁশ বেত ইট ও মাটিকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বজিৎ

আমাদের কৃষ্টি, কালচার, ঐতিহ্য ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে স্থাপত্যশিল্পে যারা দেশের জন্য কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে স্থপতি বিশ্বজিৎ বড় য়া অন্যতম। বুয়েটে পড়াশোনা করেছেন। বুয়েট থেকে পাস করে বের হওয়ার পর স্থপতি গহর জামিল লস্করের তত্ত্বাবধানে যোগ দেন সিলেটের ‘ইপিসিটি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। এ যাবৎ তিনি বেশকিছু দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধবিহার, বনবিহার কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। ছবি আঁকাআঁকি ছিল তার পছন্দের বিষয়। ১৯৯৬ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত স্থাপত্য অধিদপ্তরে সহকারী চীফ স্থপতি হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি কাজের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত আছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ ‘ময়নামতি’ নামক একটি মননশীল ম্যাগাজিন সম্পাদনার সাথে জড়িত ছিলেন। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন- DSC08728

পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় স্থপতি বিশ্বজিৎ বড় য়া। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান থানার অন্তর্গত পশ্চিম আবুরখীলে। সেখানেই তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বিশ্বজিৎ বড় য়ার বাবার নাম দেব প্রসাদ বড় য়া। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ লিভার ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন। মা প্রয়াত মঞ্জুশ্রী বড় য়া গৃহিণী। স্কুল জীবন থেকে বিশ্বজিৎ ছবি আঁকাআঁকি করতেন। লেখালেখি ছিল তার পছন্দের বিষয়। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু তিনি হয়েছেন একজন সফল স্থপতি। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৮৩ সালে। ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করেন। ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্যবিভাগে। আহসানউল্লাহ হলের ৪৪৮ নম্বর রুমে থাকতেন। তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছে স্থপতি স্বপন সিংহ, কৌশিক বিশ্বাস ও তরুন দত্ত। এরা সবাই বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় আছেন স্থপতি শামসুল ওয়ারেস। বিশ্বজিৎ বড় ুয়া বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রিলাভ করেন ১৯৯৩ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরই সিলেট এয়ারপোর্টের ডিজাইন করার সুযোগ আসে তার। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে স্থপতি গহর জামিল লস্করের তত্ত্বাবধানে যোদ দেন সিলেটের ‘ইপিসিটি’ নামের ফার্মে। সেখানে তিনি দুই বছর চাকরি করার পর ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৯৬ সালে স্থপতি বিশ্বজিৎ বড় ুয়া যোগ দেন স্থাপত্য অধিদপ্তরে সহকারি স্থপতি হিসেবে। বর্তমানে তিনি সহকারি চীফ স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ইতিমধ্যে বিশ্বজিৎ বড় ুয়া দেশের নামকরা বৌদ্ধবিহার, বনবিহার কমপ্লেক্স, এয়ারপোর্ট, মসজিদ, পৌর মার্কেট, বিশ্ববিদ্যালয়, ফায়ার একাডেমী, র‌্যাব কমপ্লেক্স, হোষ্টেল, কোর্ট ভবন, বুদ্ধমূর্তিসহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে- সিলেটের ওসমানী বিমান বন্দরের ফ্রেইট গোডাউনের ডিজাইন, কুয়াকাটার সাগরপাড়ে ঐতিহাসিক শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার, সুনামগঞ্জের পৌরসভা, হবিগঞ্জের পৌর মার্কেট, কামাল উদ্দিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার মেরুন বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার কমপ্লেক্স, বাসাবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের অতীশ কমপ্লেক্স ও ডাইনিং হল নির্মাণ, কুমিল্লার নব শালবন কমপ্লেক্স, খাগড়াছড়ির আর্থ বনবিহার কমপ্লেক্স, রাঙামাটির বনবিহার কমপ্লেক্সের তোরণ, প্রস্তাবিত ১০০ ফুটের বুদ্ধমূর্তি, চট্টগ্রামের আরকেকে বাংলাদেশ শাখা, কুয়াকাটার রাখাইন পল্লীর মডেল হাউস, মুন্সিগঞ্জের অতীশ দীপঙ্করের বাস্তভিটায় স্মৃতিচৈত্য, কক্সবাজারের রামু-উখিয়ায় পুড়ে যাওয়া বৌদ্ধমন্দিরগুলোর নবরুপায়ন ইত্যাদি। সরকারি দপ্তরে বিগত দিনে অনেকগুলো কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে তিনি। তাঁর কাজের মধ্যে রয়েছে ঢাকা সিএমএম কোর্ট ভবন, সাভারের পিএটিসি’র ইনডোর গেমস হল, আন্তর্জাতিক হোস্টেল, সুইমিংপুল, পিএটিসি স্কুল এন্ড কলেজ, বিভিন্ন জেলা সদরে ডিসি কোর্ট ও জর্জ কোর্টসহ অসংখ্য অফিস ভবনের ডিজাইন করেছেন। এ ছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু প্রজেক্টের কাজ করছেন বিশ্বজিৎ বড় ুয়া। সেগুলো হলো দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে র‌্যাব কমপ্লেক্স, পাঁচটি র‌্যাব কমপ্লেক্স ও র‌্যাব ট্রেনিং স্কুল, মিরপুরের ফায়ার বার্ণ হাসপাতাল, ফায়ার একাডেমী ও ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স দফতর যা বাংলাদেশে প্রথম বেইজ আইসোলেশন সিস্টেমে জাপান কর্তৃক নির্মিত হতে যাচ্ছে। বিশ্বজিৎ বড় ুয়া তার সব ধরনের কাজ স্থাপত্যনীতি ও রাজউকের নিয়মকানুন মেনেই করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম স্মৃতি সিংহ। এই দম্পতি তিন কন্যা সন্তানের জনক-জননী।

স্থপতি বিশ্বজিৎ বড় ুয়া বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্থাপত্য পেশা চর্চা খুবই জটিল কাজ। সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় তথা মানুষের চাহিদার নিরিখে তার স্বপ্নীল চাহিদাকে স্থাপত্যিক চিন্তায় এনে সমন্বিত করাই হলো লক্ষ। অর্থাৎ ব্যক্তির ইচ্ছেকে সামষ্টিক বিচারে কার্যত অর্থবহ করে তোলাই হলো আমার উদ্দেশ্য। বিশেষ করে বৌদ্ধবিহারসমূহ পরিকল্পনা, একক বাড়ি নির্মাণ, ফ্লাটবাড়ি নির্মাণ ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে তার নিজস্বতার পাশাপাশি স্পেস কোয়ালিটিকে যথাযথ করে সর্বসাধারণের গ্রহণযোগ্যতা প্রদান করাই উদ্দেশ্য। আমি সিমপ্লিসিটি পছন্দ করি এবং ফর্মের চেয়ে ফাংশনকেই বেশি প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা করি। তাতে বাহ্যিক অবয়বে আড়ম্বরতা না থাকলেও সামগ্রিক বিচারে তার যথার্থতাই প্রকাশ পায়। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজের প্রতি নজর দেন স্থপতি বিশ্বজিৎ বড় ুয়া। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি বৌদ্ধবিহার নিয়েই বেশি কাজ করছি। মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ধর্মীয় স্পেসসমূহ শুধু ধর্মচর্চার কেন্দ্রবিন্দু না হয়ে তাতে সামাজিক আচার নিষ্টতা ও জ্ঞানচর্চার মিলন কেন্দ্র হিসাবে তুলে ধরাই আমার মূল লক্ষ। পাশাপাশি দেশীয় সংস্কৃতিকে ধারণ করে এখানকার বাঁশ, বেত, ইট, মাটির ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদা নিরসনে স্বল্পপরিসরে আবাসন চাহিদা মিটানোর উপায় উদ্ভাবনে সক্রিয় থাকতে চাই।          ছবি: রাকিবুল হক ও সংগ্রহ