Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

বন্ধ হোক এই প্রবণতা

রেজানুর রহমান: ভদ্রলোক এক নাগাড়ে নেতিবাচক কথা বলে যাচ্ছিলেন। তার কথার সারাংশ করলে যা দাঁড়ায় তা হলো- আমাদের দেশের কোন কিছুই ভালো না। নাটক ভালো না, গান ভালো না। সিনেমা ভালো না। যা কিছু ভালো সবই নাকি অন্যদেশের। পাশের দেশের একটি আলোচিত হিন্দী ছবির নাম উল্লেখ করে গর্বের সাথে বললেন- ছবিটা দেখেছেন? সালমান খান দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। আমি একা ৭ বার ছবিটি দেখেছি। তারপর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেখেছি দু’বার। ভাই ছবি একটা! কী শর্ট! কী কাহিনী! কী অভিনয়! দুর্দান্ত… ভদ্রলোক এক নাগাড়ে বলেই যাচ্ছেন। বলতে বলতে হঠাৎ আমাদের টিভি নাটকের প্রসঙ্গ তুললেন। তার কথা শুনে মনে হলো আমরা যারা টিভি নাটক বানাই তারা মারাত্মক অন্যায় করছি। আমরা মারাত্মক অপরাধী! বার বার তিনি একই বাক্য উচ্চারণ করছিলেন এসব কিছু হয় নাকি? নাটকের নামে শুধুই ফাইজলামি। পাশের দেশের একাধিক টিভি চ্যানেলের নাম উল্লেখ করে গর্বের ভঙ্গিতে বললেন নাটক বানায় ওরা। কী তাদের অভিনয়! শুধু অভিনয়ই বা বলব কেন? ক্যামেরার কাজ, ঘরবাড়ির আসবাবপত্র, খুঁটিনাটি সবকিছুই সুপার! আর আমাদের এখানে? শুনলাম গত ঈদে নাকি দেশের সবকটি টিভি চ্যানেলে ৩শরও বেশি নাটক, টেলিফিল্ম প্রচার হয়েছে। কোনটাই দেখার মতো না। অখাদ্য! ভদ্রলোকের কথা শুনে মনে হলো আর তাকে ফ্লোর দেয়া ঠিক হবে না। নাটক সিনেমাকে তিনি খাদ্যের সাথে তুলনা করলেন। কজেই তর্কে যেতেই হবে। দেখা যাক এই লোকের জ্ঞানের বহর কেমন? জেনে কথা বলছে নাকি… না জেনে… কথার কথা বলছেন? কথা হচ্ছিলো একটি অফিসে বড় কর্তার রুমে। ভদ্রলোক বড় কর্তার বন্ধু, ব্যবসায়ী। বিনীত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি? হাসি মুখে সম্মতি জানিয়ে বললেন হ্যাঁ অবশ্যই। বলেন… কী বলতে চান? বিনীত ভাবেই তার চোখের দিকে তাকালাম। বললাম এই যে আপনি এতক্ষণ আমাদের টিভি, নাটক, সিনেমা, গান নিয়ে নেতিবাচক কথা বললেন… সত্যি কী আমাদের দেশের কিছুই ভালো না? আমার কথা টেনে নিয়ে ভদ্রলোক প্রতিবাদের ভঙ্গিতে বললেন না, না… কিছুই ভালো না। সব রাবিশ… এবার আমিও প্রতিবাদী হয়ে উঠলাম। সরাসরি প্রশ্ন করলাম ভদ্রলোককে আপনি কি আমাদের টিভি নাটক, সিনেমা দেখেন, গান শোনেন? ভদ্রলোক তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বললেন আমাদের টিভি নাটক, সিনেমার কথা বলছেন? দেখার মতো কী কিছু হয়? ভেতরে ভেতরে অপমানে জ্বলছি। ভদ্রলোক কী জেনে বলছেন? নাকি না জেনে… আবার সরাসরি প্রশ্ন করলাম ভাই শেষবার কখনো আমাদের টেলিভিশনে নাটক দেখেছেন? নাটকের নাম বলতে পারবেন? তিনি অহংকারের ভঙ্গিতে বললেন বললাম তো আমাদের টিভি নাটক দেখি না। কেন দেখেন না? আমাদের এখানে নাটকের নামে যা হয় তা নাটক না। ফাটক। এবার সরাসরি প্রতিবাদ করলাম আপনি ভুল বলছেন। ভদ্রলোক যেন একটু চমকালেন। বললেন আমি ভুল বলিতেছি? কী বলতে চান আপনি? আমি কঠিন কিছু বলতে চাই না। একটা সহজ প্রশ্ন করি আপনাকে? জি করেন। কারও সম্পর্কে না জেনে তার মন্তব্য করা কী ঠিক? না ঠিক নয়। কেন এ প্রশ্ন করলেন? প্রশ্ন করলাম এই জন্য যে… আপনি তো নিজেই বললেন আমাদের টেলিভিশন নাটক দেখেন না। তাহলে কি ভাবে বুঝলেন আমাদের নাটক খারাপ? এসব কিছুই হয় না। সব ভোগাস! ভদ্রলোক এবার কিছুটা থতমত করতে করতে বললেন আমাদের নাটক কী দেখার মতো? সবাই যা বলে আমিও তাই বলতেছি… তার মানে আপনি না দেখেই মন্তব্য করছেন আমাদের কিছুই ভালো না। গত ঈদে আমাদের দেশে সব টিভি চ্যানেল মিলে কম করে হলেও ৩শ টিভি নাটক, টেলিফিল্ম প্রচার হয়েছে। বেশি না পাঁচটি নাটকের নাম বলতে পারবেন… আমার প্রশ্ন শুনে ভদ্রলোক আমতা আমতা করতে থাকলেন। এবার তাকে বললাম ঠিক আছে পাঁচটার নাম বলতে হবে না। একটার নাম বলেন। ভদ্রলোক আবারও আগের জায়গায় নিজেকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করলেন বললাম তো আমাদের এখানে কিছুই ভালো হয় না। তাই দেখি না। প্রতিবাদ করলাম কিছুই ভালো হয় না একথা আপনি বলতে পারেন না। আপনি তো আমাদের টিভি নাটক দেখেনই না। কাজেই ভালো মন্দ মন্তব্য করার অধিকারও রাখেন না। এই যে বললেন আমাদের চলচ্চিত্র ভালো হচ্ছে না। শেষবার কবে সিনেমা দেখেছেন? নাম বলতে পারবেন? আমাদের দেশের সিনেমার ৫ জন নায়ক-নায়িকার নাম বলেন তো প্লিজ… ভদ্রলোক এবার যেনো একটু বিরক্ত হলেন। বললেন আমাদের সিনেমা কী দেখার মতো হয়? আপনি তো না দেখেই মন্তব্য করছেন? আমার প্রশ্ন শুনে ভদ্রলোক বললেন দেখার তো প্রয়োজন মনে করছি না। আশে-পাশের সবাই বলে আমাদের সিনেমা নাকি ভালো না। তার মানে লোকে বলল আর আপনি বিশ্বাস করে ফেললেন? লোকে বলল আপনার একটা কান চিলে নিয়ে গেছে? আপনি যাচাই না করেই লোকের কথা বিশ্বাস করবেন? না তা বিশ্বাস করবো না। তার মানে আপনি আগে দেখবেন আপনার কান ঠিক আছে কি না? হ্যাঁ সেটাই করবো। তাহলে লোকে বলল আমাদের নাটক সিনেমা ভালো না। আপনি যাচাই না করে ঢালাও মন্তব্য করবেন? ভদ্রলোক এবার কিছু বললেন না। হঠাৎ কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে গেলেন। প্রিয় পাঠক, এটি একটি সত্যি গল্প। ইদানিং এধরনের অনেক ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। আমাদের নাকি কিছুই হচ্ছে না। নাটক ভালো না। চলচ্চিত্র ভালো না। গান ভালো না। আমরা অনেকে না দেখে না শুনে ঢালাও মন্তব্য করছি। সম্প্রতি এই প্রতিবেদনের প্রয়োজনে আমরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একটা নির্দিষ্ট সময়ে ৫০টি পরিবারের টিভি রুমে খোঁজ নিয়েছি। চিত্রটি খুব একটা সুখকর নয়। দেশের টেলিভিশনের চেয়ে অন্যদেশের টেলিভিশনের প্রতিই যেন ঝোঁকটা বেশি। এই প্রবণতা ঠিক নয়। যারা দেশকে ভালোবাসি আসুন তারা সকলে এই প্রবণতার বিরুদ্ধে দাঁড়াই। দেশের টেলিভিশন অনুষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেই। মন্তব্য যদি করতেই হয় তাহলে জেনে বলি, দেখে বলি। তারকা তৈরিতে মিডিয়ার ভ‚মিকা নাই! একটি ছবির শুটিং করতে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন আমাদের চলচ্চিত্রের এক তরুণ নায়ক। সেখানে বেশ কয়েকদিন শুটিং করার পর দেশে ফিরে আসেন এই নায়ক। এটা গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ নয়, গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হলো অস্ট্রেলিয়া বাংলা কমিউনিটি টিভি চ্যানেল ও সেখানকার দৈনিক, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারকা। সেই সঙ্গে বলেছেন তারকা সৃষ্টিতে মিডিয়ার কোনো ভ‚মিকা নেই। তারকা শুধুমাত্র সৃষ্টি করে দর্শক ও নির্মাতারা। আমি মিডিয়ার সঙ্গে খুব প্রয়োজন না হলে কথাও বলি না। তার এ ধরনের দাম্ভিক কথা শুনে সেখানকার অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। শুধু অস্ট্রেলিয়া কেন এদেশের চলচ্চিত্র পরিচালকরাও অবাক হয়েছেন তার কথায়। এক পরিচালকতো বলেই ফেলেছেন তরুণ নায়কের এ ধরনের মন্তব্য কা জ্ঞানহীন। বান্ধবীকে খুশি করতে মেন্টাল নামের একটি ছবিতে এই প্রথম অভিনয় করছেন সময়ের জনপ্রিয় এক গায়িকা তার বিপরীতে আছেন দেশের এক নম্বর নায়ক শাকিব খান। তবে পুরো ছবির নায়িকা তিনি নন, তার গাওয়া একটি গানের দৃশ্যে অংশ নিচ্ছেন এই কিশোরী কণ্ঠ তারকা। তার সঙ্গে এই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতের খ্যাতিমান গায়িকা শান। এই গানের দৃশ্যধারণ করা হয়েছে ব্যাংককের পাতায়াতে। বেশ ব্যয়বহুল এই গানের চিত্রায়ন নিয়ে ঝামেলা বেঁধেছে প্রযোজক ও পরিচালকের মধ্যে। পরিচালক বলেছেন এই গান চিত্রায়নের সিদ্ধান্ত প্রযোজকের, প্রযোজক বলেছেন না এটা পরিচালকের। এই নিয়ে এফডিসিতে সেদিন মজা করলেন অনেকে। জনপ্রিয় নবীন এক পরিচালক বললেন গায়িকার মায়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হলো প্রযোজকের। বান্ধবীকে খুশি করতেই তার কিশোরী মেয়েকে গায়িকা থেকে নায়িকা বানালেন তাও আবার শাকিব খানের বিপরীতে। অনেকেই বিরক্ত! হঠাৎ করেই শোবিজে একজন নায়ককে নিয়ে নানান কথা শোনা যাচ্ছে। ঠিক সময়মতো শুটিং স্পটে না আসা, চরিত্র অনুযায়ী শট না দেয়া কিংবা তার পছন্দমতো কো-আর্টিস্ট সিলেক্ট করার জন্য পরিচালককে চাপ দেয়াসহ নানান বিষয়ে তাকে নিয়ে অনেক পরিচালকের অভিযোগের কথা শোনা যায়। জানা গেছে, তার কাছে কোনো নির্মাতা স্ক্রিপ্ট নিয়ে গেলেই কো-আর্টিস্ট নতুন অভিনেত্রী শার্লিন কিংবা ঈশিকা খানকে নেয়ার কথা বলেন তিনি। এতে করে অনেক নির্মাতাই তার হাতে জিম্মি হচ্ছেন বলে জানান। শুধু তাই নয়, কোনো নির্মাতা তার পছন্দ অনুযায়ী অভিনেত্রী নেয়ার কথা বললে তিনি জানান, আমার পছন্দ অনুযায়ী নায়িকা নিলে কাজটা করে আনন্দ পাবো। সিকুয়েন্স তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। তার এমন ঘটনায় কোনো কোনো নির্মাতা তাকে বাদ দেয়ারও ঘটনা ঘটেছে। অনেক নির্মাতাই অভিযোগ করে জানান, এই নায়ক শুটিং স্পটে প্রায় সময়ই ২টার পর আসেন। তবে তার পছন্দমতো নায়িকা নিলে ঠিকই শুর্টিং স্পটে দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে পাওয়া যায়। নায়িকা বলে কথা! বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবি বø্যাক। ছবির শুটিং হয়েছে ব্যাংককের বিভিন্ন মনোরম লোকেশনে। এ ছবির নায়িকা বাংলাদেশের বিদ্যা সিনহা মীম, নায়ক ভারতের সোহম। বিদ্যা সিনহা মীম শুটিং-এ গিয়েছিলেন তার পুরো পরিবার নিয়ে। বাবা অধ্যাপক ধিরেন্দ্রনাথ, মা ছবি সাহা ও বোন মমি ছিলেন মীমের সঙ্গে। রাজা চন্দ্র পরিচালিত এ ছবির শুটিং-এর সময় নাকি মীম সার্বক্ষণিক ব্যস্ত ছিলেন মা, বাবা ও বোনের দেখভাল নিয়ে। এটা নিয়ে অবশ্য পরিচালক ও প্রযোজকের তেমন কোনো আপত্তি ও মনকষ্টের কারণ ছিল না। কিন্তু মীম যখন পুরো পরিবার নিয়ে বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সে যেতেন বিপত্তি হতো তখন। নায়িকা বলে কথা। তাই প্রোডাকশন থেকে অচেনা অজানা শহরে শুটিং গাইড হিসেবে লোক দেয়া হতো। দেয়া হতো একটি গাড়ি। কিন্তু ঝলমলে এই শহরে ঘুরতে ঘুরতে ভুলেই যেতেন শুটিং এর কথা। বিদেশ বিভ‚ঁইয়ে দুই তিন ঘন্টার পর ক্যামেরা ওপেন হতো। তাতে কী আর কাজ হয়। পরে দুই দিনের শুটিং-এর জায়গায় লেগে য়ায় চার দিন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে খরচ। মীমের এই রথ দেখা আর কলা বেচায় বেজায় চটেছেন পরিচালক ও প্রযোজক। এ কারণেই বø্যাক ছবির পরিচালক সারাক্ষণ মুখ কালো করে থাকতেন।