সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
টিভি নাটক আর চলচ্চিত্র দুটো মাধ্যমেই তার সমান জনপ্রিয়তা। গত ঈদে ব্যতিক্রমী কিছু নাটকে অভিনয় করে দর্শকের মাঝে আলোচিত হন তিনি। সম্প্রতি ক্যারিয়ারের চার নম্বর ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গণেও সরব উপস্থিতির প্রমাণ রেখেছেন। সর্বশেষ ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবিটি নিয়ে দর্শক মহল থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র অঙ্গণেও তিনি আলোচনার ঝড় তোলেন। আর টিভি নাটকে তার উপস্থিতি মানে ভিন্ন কোনো গল্প দেখা এবং ভিন্ন কিছু অভিনয় দেখা। হ্যাঁ, পাঠক অভিনেত্রী জাকিয়া বারি মম’র ক্ষেত্রে এমন কথা বলাই যায়। খুব হিসেব- নিকেশ কষে তবেই প্রতিটি স্টেপে পা ফেলছেন তিনি। অভিনয়ের সঙ্গে দীর্ঘ পথচলা জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর। নিয়মিত কাজ করছেন। দর্শকও তাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে ব্যক্তি জীবন নিয়ে মমর সম্পর্কে রয়েছে নানান আলোচনা সমালোচনা। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে নিজের ভাবনার জায়গাটা কেমন, আসলে কোথায় যেতে চান তিনি এমন নানান বিষয়ে কথা বলেছেন আনন্দ আলো’র সঙ্গে। লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল।
আনন্দ আলো: গত ঈদে আপনার অভিনীত বেশকিছু নাটক প্রচার হয়। যেখানে দর্শক আপনাকে একেকটি নাটকে একেক রকমভাবে দেখতে পেয়েছে। এই যে অভিনয়ে নিজেকে ভিন্ন ভাবে তুলে ধরা এটা কিভাবে করেন?
মম: অভিনয় নিয়ে সারাক্ষণ থাকার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আমি সব সময় চরিত্র নিয়ে ভাবি। তাছাড়া অভিনয় করার জন্য চারপাশের চরিত্রগুলো খুব সহায়তা করে। আর স্ক্রিপ্ট তো আছেই। তবে এর বাইরে যদি বলি তাহলো বলবো- অভিনয় নিয়েই তো আমার বসবাস। একটি স্ক্রিপ্ট যখন হাতে আসে তখন আগে সেটা পড়ে নিজের মধ্যে নেয়ার চেষ্টা করি। ঐ চরিত্রের মধ্যে নিজেকে দেখার চেষ্টা করি। আমি নিজে হলে কেমন করতাম তা ভাবি। এরপর ফাইনালি যেদিন শুটিং থাকে সেদিন তো পুরোই চরিত্রের মধ্যে ডুবে থাকার চেষ্টা করি। আর অভিনয় আসলে করার বিষয় নয়, অনুধাবনের বিষয়। যতটুকু অনুভব করা যায়, তা ফুটিয়ে তুললেই অভিনয় হয়। আসলে হৃদয়ের গভীর থেকে অভিনয় করি বলেই হয়তো দর্শকদের ভালোবাসা পাচ্ছি। ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার হওয়ার পর থেকে অভিনয় শিখে যাচ্ছি। এখনো শেখার মধ্যেই আছি।
আনন্দ আলো: গত ঈদে আপনার অভিনীত অনেকগুলো নাটক প্রচার হয়। একজন অভিনেত্রী হিসেবে এতগুলো নাটকে কাজ করা কী সমর্থন করেন?
মম: সত্যি কথা বলতে কী আমি এটা সাপোর্ট করি না। তবে ঈদে যতগুলো নাটক দর্শক দেখেছেন সবগুলোই কিন্তু একসাথে শুটিং করা না। দেখা গেছে ছয় মাস আগে করা নাটকও ঈদে প্রচার হয়েছে। স্পেশালি ঈদকে কেন্দ্র করে কিছু নাটকে অভিনয় করেছি। আগে শুটিং করা নাটক এবং ঈদ উপলক্ষে করা নাটক- অর্থাৎ দুই সময়ের নাটক একসাথে প্রচার হয়েছে। আরেকটি কথা হলো- আমি যেহেতু সিঙ্গেল নাটকে বেশি অভিনয় করি, তাই সারা বছরই একক নাটকে অভিনয় করা হয়। ফলে দর্শক আমাকে একক নাটকেই বেশি দেখতে পায়।
আরেকটি বিষয় শেয়ার না করলেই নয়। আমি চাই একটি চরিত্র করার পর আরেকটি চরিত্রে অভিনয় করার জন্য বেশ কিছুদিন সময় নিতে। কিন্তু আমি এটাকে প্রফেশনালি নেয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
আনন্দ আলো: অনেক পরিচালকের কাছ থেকে শিল্পীদের ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া যায়, ঠিক মতো অভিনয় না পারা, সময় মতো শুটিং স্পটে না আসা, চরিত্রের ব্যাপারে না বোঝাসহ আরো নানান অভিযোগ…
মম: আমি মানছি অভিযোগগুলো। কিন্তু সেটা কী সবার ক্ষেত্রে? অবশ্যই না। যাদের ব্যাপারে শোনা যায় এই উত্তর তারা দিবেন। আমি আমারটা বলতে পারি। আমি সঠিক সময়ে শুটিং সেটে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করি, স্ক্রিপ্ট পড়ে সেটে যাই এবং অভিনয়ের সময় শুধু অভিনয়ই করি এবং অভিনয় নিয়েই ভাবি। চরিত্রের মাঝে ডুবে থাকার জন্য ব্যক্তি জীবনে আমার কতো সমস্যা হয়েছে- সেটা তো আমি জানি। আমি অভিনয়ে ডুবে থাকা একজন শিল্পী। একটু বুঝিয়ে বললে ক্লিয়ার হবে। চরিত্রের যুক্তি, চরিত্রের উদ্দেশ্য, চরিত্রের চারপাশের ঘটে যাওয়া বিষয়বসৱু আমাকে যদি আশ্বস্থ না করে তাহলে আমি ঠিকমতো চরিত্রটা পোর্টেট করতে পারি না। আমি বলছি না যা করছি খুব ভালো করছি। একটি চরিত্রের জন্য স্ক্রিপ্টে দেখা যায় দশটি লাইন দেয়া আছে। কিন্তু সেখানে আরো বিশটি লাইন আছে, সেটা স্ক্রিপ্টে নাই, আমাকেই খুঁজে বের করত হবে যেটাকে আমরা সাবটেক্সট বলি। প্রত্যেকটা চরিত্রের জন্য সাবটেক্সট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই সাবজেক্টটা আমি খুঁজি। আর তা খোঁজার জন্য সেই চরিত্রটির মধ্যে ডুবে থাকতে হয়।
আনন্দ আলো: আচ্ছা, নিজের অভিনীত নাটক দেখা হয়?
মম: সময় পেলেই টিভি দেখি। তবে নিজের কাজটা আগে দেখার চেষ্টা করি। নিজের নাটক নিজে যদি না দেখি, তাহলে তো ভুল ত্রুটি খুঁজে বের করতে পারবো না। আমার নিজের প্রতিটি কাজই দেখে মনে হয়- ইস! এটা তো ঠিক হয়নি। আরো ভালো করা যেতো। যদি সিক্যুয়েন্সটির শুটিংয়ের জন্য আরও বেশি টাইম পেতাম তাহলে হয়তো আরো ভালো করা যেতো। কিন্তু কিছু করার নেই। এমন অনেক হয়েছে শুটিংয়ের সময় আমার মনে হয়েছে শট-টি ভালো হয়নি। আরেকবার দিলে ভালো হবে। কিন্তু পরিচালক তার সময়ের জন্য নেয়নি। এমন অনেক লিমিটেশন নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়।
আনন্দ আলো: এবার একটু চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলি। নতুন দু’টি চলচ্চিত্রে যুক্ত হয়েছেন…
মম: হ্যাঁ। ‘আমি শুধু তোর হবো’ শিরোনামের একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। সম্প্রতি ছবিটির মহরত হয়েছে। এতে আমার বিপরীতে নীরব অভিনয় করবেন। ছবির গল্প এবং লোকেশনগুলো ভালো হবে। আসলে ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবিটির পর অনেক ছবিতে কাজ করার প্রসৱাব পাই। কিন্তু কোনোটির গল্প, কোনোটির কো-আর্টিস্ট আবার কোনোটির ইউনিট পছন্দ হয়নি। তবে নতুন ছবিটির বিষয় আলাদা। চলচ্চিত্রে কতটুকু কি করতে পেরেছি, সেটা দর্শকই ভালো বলতে পারবেন। বাকিটা নতুন ছবি মুক্তির পরই বলা যাবে। ‘স্বপ্নবাড়ি’ নামের নতুন আরেকটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। এ ছবিতে আনিসুর রহমান মিলনের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করার কথা রয়েছে।
আনন্দ আলো: এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আপনার ব্যক্তি জীবন নিয়ে নানান কথা শোনা যায়…
মম: কিছু মানুষ আছে যারা আসলে সার্বক্ষণিক অন্যের বিষয় নিয়ে মেতে থাকতে পছন্দ করেন। অন্যদের মুখরোচক আলোচনা নিয়ে তারা আলোচনা করে আনন্দও পায়। এই যে, আমি অভিনয় করছি- এটা নিয়ে কিন্তু একেবারেই আলোচনা হচ্ছে না। কোন নাটকে কেমন অভিনয় করলাম, খারাপ কি ভালো- সেটা নিয়ে আলোচনা হওয়ার বিষয় আছে। আলোচনা হচ্ছে আমি কার সাথে প্রেম করি, স্বামীর সাথে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি…। আমি যার সাথে আছি ভালোই আছি। কাজ করছি। প্রতিনিয়ত ব্যসৱ আছি।
আনন্দ আলো: আপনাকে স্যোশাল মিডিয়ায় বেশ একটিভ দেখা যায়…
মম: হ্যাঁ, আমি প্রতিনিয়ত আমার কাজের আপডেট, নিজস্ব কিছু ভাবনা এবং যা ভক্তদের সাথে শেয়ার করা যায় তা আপডেপ দিয়ে থাকি। আসলে এটা হচ্ছে আমার নিজস্ব একটা জগৎ। যখন কোনো কিছুই ভালো লাগে না তখন ফেসবুকে ঢু মারি। এমনকি আমার কোন নাটক কখন প্রচার হবে তার আপডেটও দিয়ে থাকি। এতে করে ভক্তরা দেখতে পারছেন এবং তাদের ভালো লাগা-মন্দ লাগা শেয়ার করছেন। আসলে ভক্তদের সাথে তো আমাদের সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম নেই। তাই আমি ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পছন্দ-অপছন্দ বোঝার চেষ্টা করি। আমাকে নিয়ে কেউ নেতিবাচক মনৱব্য করলে সেটারও রিপ্লাই দেই। আমি অন্যভাবে বিষয়টাকে নেই না।
আনন্দ আলো: বন্ধুত্বটা আপনার কাছে কী?
মম: বন্ধুত্ব মানে আমার কাছে ওপেন রিলেশনশীপ। সবকিছু একদম খোলা বইয়ের মতো থাকবে। যখন ইচ্ছে পড়া যাবে আবার যখন ইচ্ছে বন্ধ করে দেয়া যাবে। এটাই হচ্ছে বন্ধুত্ব। আর হচ্ছে বিশ্বাস। বন্ধুত্বে অবশ্যই বিশ্বাস থাকতে হবে। পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও মুগ্ধতার উপর বন্ধুত্ব টিকে থাকে। সর্বোপুরি বন্ধুত্বকে পরিচর্চা করতে হয়। আসলে যেকোনো সম্পর্কেই পরিচর্চা প্রয়োজন। না হয় সেটা হারিয়ে যায়।
আনন্দ আলো: মম কী থামতে জানে?
মম: ‘জানি একদিন আমি চলে যাবো এই পৃথিবী ছেড়ে, যতো বুক ভরা দুঃখ-কষ্ট নিয়ে’…. এই গানটির কথাগুলো আমি খুব মানি। যখন খুব নির্জনে একা একা থাকি, তখন এই কথাগুলো মনের মধ্যে অজানেৱই বেজে ওঠে। তাই থামা মানে যদি কাজ অফ করা হয়, তাহলে সেটাকে আমি থামা বলবো না। সেটাকে আমি অবসর বলবো। আমি থামা বলবো- হারিয়ে যাওয়াকে…। দূর, বেশি ইমোশনাল কথা বলছি (হঠাৎ নিজেকে বদলে)। আপাতত থামা থামির প্রশ্নই ওঠে না। কাজ করে যেতে চাই। আরো অনেক দূর যাবো। ভালো ভালো কাজের মাধ্যমে দর্শকদের ভালোবাসার প্রতিদান দিবো। থামবো তো সেদিন, যেদিন নিঃশ্বাসটুকু থাকবে না।