Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ফেসবুক

শেষ খেয়ার অপেক্ষায়

মূলত আমি কেউ না, না রাজনীতিবিদ, না কবি, না গল্পকার, এমনকি নই তুমুল সংসারী। এক অভিশপ্ত চরিত্র যার কিছুই থাকতে নেই। সাধু কিংবা সন্ত নই, চোখ জ্বলজ্বল করে জীবনের লোভে। চন্দ্রাহত, বিষাদ এবং ভূতগ্রস্ত, বসে থাকি ব্রহ্মপুত্র ঘাটে, শেষ খেয়ার অপেক্ষায়… কথাগুলো মৃত্যুর একদিন আগে নিজের ফেসবুকে লিখেছেন- কবি মাহবুবুল হক শাকিল।

এই রকম ফুলটাইম কবি আর দ্বিতীয়টি দেখিনি

আমি রাতের বেলা মোবাইল ফোন পাশে রেখে ঘুমাই না। রিংগারও অফ থাকে। কিন্তু কী কারণে সে রাতে আমার মোবাইলটা খুব কাছে বেজে উঠেছিল। নাম দেখি, মাহবুবুল হক শাকিল। আমি উদ্বিগ্নস্বরে জিজ্ঞেস করলাম, শাকিল ভাই, কী হয়েছে। তিনি বললেন, এখনই একটা কবিতা লিখলাম। শোনেন…

রাত সাড়ে তিনটা। আমি আধো ঘুমে আধো জাগরণে। আমি কবিতা শুনছি…

আমি এই রকম ফুলটাইম কবি আর দ্বিতীয়টা দেখিনি। কিন্তু কোনোদিন শোনাতেন সকালবেলাতেও। ফোনে কাঁদতেন। আমি বলি, শাকিল ভাই, সকালবেলাতেই শুরু করেছেন। তিনি বলতেন, আপনি আমার মায়ের মতো বলছেন…

মেয়ে মৌপিকে তিনি ডাকতেন– বাপ। মেয়ের সঙ্গে কী কী কথা হয়েছে, সংলাপ দিয়ে দিয়ে বলতেন। বাপ, তুই এটা কর ত। বাপ…

এর আগেও এমনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। আমি উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন করলাম, হয়েছেটা কী। তিনি হাসতেন। যেন হাসপাতালে যাওয়া একটা মজার ঘটনা। গল্প লিখতে শুরু করেছেন। আনিস ভাই, গল্প লিখেছি, আপনাকে পাঠাচ্ছি, পড়ে বলেন। একদিন ভোরে ফোন। এখনি লিখেছি। পড়েন। ছোটআপাকে নিয়ে লেখা তার অপরূপ কবিতাটা শোনালেন।

আরেকদিন শোনালেন মাকে নিয়ে লেখা বড়আপার সেই বিখ্যাত স্মৃতিকথাটা লেখার পেছনের কাহিনি।

আমি সংসারি মানুষ। নিয়ম মেনে রাত ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া মানুষ। আড্ডা ভয় পাই। কিন্তু এই রকম বেহিসাবি কবি জীবন আমার ভালো লাগে। যেমন- আমার ভালো লাগে নির্মলেন্দু গুণকে। যা করেন, তা বলতে লজ্জা পান না। অকপট। মাহবুবুল হক শাকিলেরও কোনো লুকোছাপার প্রয়াস ছিল না। তবে তিনি কবিই হতে চেয়েছিলেন। এটা বিস্ময়কর লাগে। সৈয়দ শামসুল হকের চিকিৎসার খরচের ভার প্রধানমন্ত্রী নিলেন, শহীদ কাদরীকে দেশে আনালেন প্রধানমন্ত্রী, এসবের পেছনে ছিল এই একটাই মানুষ। কবি মাহবুবুল হক শাকিল। কথাগুলো নিজের ফেসবুকে লিখেছেন- কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক।