Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ফেলুদার সঙ্গে ছোটকাকুর দেখা হলে ব্যাপারটা দারুণ হবে-সন্দীপ রায়

ঢাকায় সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজের নতুন নাটক নির্মিত হয়েছে। এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় এসেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের পুত্র নির্মাতা সন্দীপ রায়। এক বিকেলে বনানীর একটি হোটেলে তাঁর সঙ্গে এক আড্ডায় মিলিত হন আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমান। আড্ডার চুম্বক অংশ আনন্দ আলোর পাঠকদের জন্য।

আনন্দ আলো: কেমন আছেন?

সন্দীপ রায়: ভালো, তোমাদের এখানে এলে ভালোই লাগে। কারণ এটা তো আমার পূর্ব পুরুষের দেশ। আমার দেশও বলতে পারো…

আনন্দ আলো: সত্যজিৎ এর ফেলুদা নির্মিত হচ্ছে ঢাকায়। এ ব্যাপারে আপনার অনুভ‚তি জানতে চাই।

সন্দীপ রায়: অনুভ‚তি অনেক ভালো। ফেলুদা ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছে… কাজেই কী ঘটতে যাচ্ছে তা দেখার জন্য আমার আগ্রহ তো একটু বেশিই থাকবে… এটাই স্বাভাবিক। একদিন কলকাতায় শাহরিয়ার শাকিল ভাই আমার সঙ্গে  দেখা করে বাংলাদেশে ফেলুদা নির্মাণের অনুমতি চান। তার কথায় আমি এক সময় মুগ্ধ হয়ে যাই এবং যখন শুনি যে এর সঙ্গে চ্যানেল আই জড়িত থাকবে, সাগর ভাই থাকবেন তখন এক বাক্যে রাজী হয়ে যাই। কারণ ফরিদুর রেজা সাগরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অন্য রকমের… অনেক ভালোবাসার… সবকিছু ভেবে ঢাকায় ফেলুদা নির্মাণের অনুমতি দেই। ঢাকার ফেলুদাকে আমি এখনও দেখিনি। না দেখে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমাদের কলকাতার ব্যস্ত অভিনেতা পরমব্রত সহ কলকাতার আরও অনেকে অভিনয় করেছে। আপনাদের এখানকার কয়েকজন গুণী অভিনেতাও আছেন। কাজেই ধারণা করছি ঢাকার ফেলুদাও আকর্ষণীয় হবে। তবে আমার একটা পরামর্শ আছে। পরমব্রত ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করছে। ওর বয়সের কথা ভেবে ফেলুদাকে যেন কোনো মেয়ের প্রেমে জড়ানো না হয়। অর্থাৎ ফেলুদা যেন প্রেম না করে, তার যেন বিয়ে না দেয়া হয়।

আনন্দ আলো: আপনার বাবা বিশ্বখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়। তাঁর সঙ্গে আপনার স্মৃতিময় কিছু ঘটনার কথা জানতে চাই…

সন্দীপ রায়: (হাসতে হাসতে) বাবার সঙ্গে স্মৃতি? সে তো অনেক… কোনটা রেখে কোনটার কথা বলব? তবে হ্যাঁ আমার সিনেমায় আসার ব্যাপারটা বলি। ছোটবেলা থেকেই তো বাবাকে সিনেমার সঙ্গে জড়িত নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখতাম। আর তাই সিনেমার প্রতি আমার নিজেরও একটা ভালো লাগা তৈরি হয়। বাবার বিভিন্ন কাজে আগ্রহ দেখাতাম। তার কাজে সহায়তা করতাম। বাবাও চাইতেন আমি তার সঙ্গে সঙ্গে থাকি। কিন্তু তিনি কোনো দিন মুখ ফুটে বলেননি যে আমি সিনেমায় জড়িত হই। বাবার সঙ্গে একজন ফটোগ্রাফার ছিলেন নাম আমানুল হক। তিনি বাংলাদেশের বিশিষ্টি ফটোগ্রাফার। তিনিও আমাকে নানা কাজে উৎসাহ দিতেন। বাবার যে ছবিতে আমি আনুষ্ঠানিক ভাবে জড়িত হই সেই ছবিতে আমানুল হক কাকার সঙ্গে আমিও ছবি তুলতাম। এক সময় বাবার ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে যুক্ত হই। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তার তাকে ক্যামেরা চালাতে নিষেধ করেন। তখন বাবার ছবিতে ক্যামেরা চালানোর ভার আমার ওপর এসে পড়ে। তবে আমার প্রথম প্রেম হলো ছবির এডিটিং করা এবং ফটোগ্রাফি…

আনন্দ আলো: বাংলাদেশের বিশিষ্ট অভিনেত্রী ববিতা সত্যজিৎ রায়ের একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। সেই সময়ের কথা একটু বলবেন…?

সন্দীপ রায়: (উৎসাহ নিয়ে) হ্যাঁ, হ্যাঁ, ববিতার কথা মনে পড়ছে। একজন দক্ষ অভিনেত্রী। আমি তো তখন বাবার সঙ্গে পুরো দস্তুর ফিল্মে জড়িয়ে গেছি। ববিতার অনেক ছবি তুলেছিলাম। ববিতাকে কোনো ইনস্ট্রাকশনই দিতে হয়নি। ববিতার সঙ্গে দেখা হলে আমার কথা বলবেন। তার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে এবার দেখা হলো না। ও হ্যাঁ, একটা কথা মনে করিয়ে দেই। ববিতার বোন চম্পা আমার ছবিতে অভিনয় করেছেন। গৌতম ঘোষের পদ্মা নদীর মাঝি ছবিতে চম্পার অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। ‘টার্গেট’ নামে আমার একটি ছবিতে চম্পা অভিনয় করে। ওমপুরীও ছিলেন সেই ছবিতে। চম্পা ভালো অভিনয় করেছিলেন।

আনন্দ আলো: বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে আপনাদের রায় পরিবারের অবদান অনেক। কলকাতার চেয়ে ঢাকায় বোধকরি রায় পরিবারকে নিয়ে বেশি চর্চা হয়Ñ আপনার মন্তব্য জানতে চাই?

fELODAসন্দীপ রায়: হ্যাঁ এটা সত্য, বাংলাদেশে ঢাকায় আমাদের রায় পরিবারকে নিয়ে অনেক চর্চা হয়। অনেক ভালো ভালো বই আছে রায় পরিবারের ওপর। বাবা একবার রায় পরিবারের ওপর একটা ডকুমেন্টারি করতে চেয়েছিলেন। সে জন্য লোকে পাঠিয়েছিলেন এদেশে আমাদের পৈত্রিক ভিটেমাটি কেমন আছে তা দেখার জন্য। কিন্তু আমাদের পৈত্রিক ভিটেমাটির অবস্থা ভালো না থাকায় বাবা শেষ পর্যন্ত ডকুমেন্টারিটি করার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

আনন্দ আলো: আবার ফেলুদার কথায় আসি। বাংলাদেশে ছোটকাকু নামে একটি টিভি সিরিয়াল বেশ জনপ্রিয়। ফরিদুর রেজা সাগরের ছোটদের সিরিজ উপন্যাস ছোটকাকু অবলম্বনে এটি নির্মাণ করেন জনপ্রিয় নির্মাতা আফজাল হোসেন। কোনো একটি নাটকে ফেলুদার সঙ্গে কী ছোটকাকুর সাক্ষাৎ ঘটানো যেতে পারে?

সন্দীপ রায়: (ভেবে নিয়ে) হ্যাঁ এটা হতেই পারে। ফেলুদার সঙ্গে ছোটকাকুর দেখা হলে দারুণ একটা ব্যাপার হবে। এটি করা যেতে পারে তবে বিষয়টা যেন কখনই আরোপিত মনে না হয়।