Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

প্রতিটি জেলায় গোল্ড ব্যাংকিং চালু করতে চাই-দিলীপ কুমার আগারওয়ালা

পরিচালক, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড

চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজধানীতে এসে বাংলাদেশের শিল্প ব্যবসা বাণিজ্যের নেতৃত্বে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন স্বনামধন্য উদ্যোক্তা ব্যক্তিত্ব দিলীপ কুমার আগারওয়ালা। তিনি বর্তমানে দেশে গোল্ড ব্যাংকিং চালু এবং অর্গানিক পণ্য বিদেশে রপ্তানি করার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে চলেছেন। ২০১৫-২০১৭ মেয়াদে এফবিসিসিআইÑ এর নির্বাচিত পরিচালক হিসেবে সফলভাবে তার দায়িত্ব পালন করে ফেডারেশনের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দিলীপ কুমার আগারওয়ালাকে আবারো ২০১৭-২০১৯ মেয়াদে পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত করেছেন এফবিসিসিআই-এর ভোটাররা। এছাড়া বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতি-এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা প্রণয়নের জন্যে বিশেষ ভ‚মিকা রেখে চলেছেন। বাংলাদেশে ডায়মন্ড জুয়েলারী জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য করে তোলার পেছনে দিলীপ কুমার আগারওয়ালার ভ‚মিকা অগ্রগণ্য। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এর শাখা বাংলাদেশের জেলা শহরগুলোতে ছড়িয়ে দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন দিলীপ কুমার আগারওয়ালা। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজু আলীম।

আনন্দ আলো: ২০১৭-২০১৯ মেয়াদে এফবিসিসিআই নির্বাচনে আপনি পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন, মূল্যায়ন কীভাবে করবেন ?

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: ধন্যবাদ আমার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য। আমি বিভিন্ন ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত     থাকলেও আমার ব্যবসায়িক জীবনের পূর্ণতা এসেছে ফেডারেশনÑ এর ডিরেক্টরশীপের মাধ্যমে। পরিচালক হিসেবে গত দুই বছর আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য সময়, মেধা, শ্রম ও ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছি। নিজের ব্যাপারে মূল্যায়নের কথা নিজে বলা উচিত হবে না। মূল্যায়নের দায়িত্ব ফেডারেশনের সকল মেম্বারদের।

আনন্দ আলো: আপনি তো গত মেয়াদে ডিরেক্টর ইনচার্জ অব স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ক্যাপিটাল মার্কেট হিসেবেও ছিলেন বা এখনো আছেন। আপনার মেয়াদ কালে আপনি এই সেক্টরের জন্য কি ভূমিকা রেখেছেন?

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: আমি পুঁজি বাজারের স্থিতি অবস্থা আনয়নের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অবহিত করণ ও সচেতনতামূলক কর্মকাÐে অংশ গ্রহণ করেছি। এছাড়াও আমি দেশি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে জাতীয়ভাবে চোরাচালান বিরোধী বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছি।

আনন্দ আলো: এফবিসিসিআই নির্বাচনের আগে আপনি আপনার কিছু স্বপ্নের কথা শেয়ার করেছিলেন, সেটা যদি দর্শকদের সঙ্গে আবারো শেয়ার করতেন?

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: এটা আমার একটা পারসোনাল ওপিনয়ন। আমার মনে হয় যেদিন থেকে আমরা স্বপ্ন দেখা বাদ দেব বা স্বপ্ন দেখা ভুলে যাব সেদিন থেকেই আমাদের অগ্রগতিও থেমে যাবে। আমার স্বপ্ন ছিল উন্নত দেশের মতো এদেশেও গোল্ড ব্যাংকিংÑ এর কার্যক্রম চালু করা। জরুরি প্রয়োজনে অসহায় মানুষের হাতে নগদ অর্থ পৌঁচ্ছে দেয়া। স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি, চালু করতে যাচ্ছি গোল্ড ফর ক্যাশ পলিসি। আমার জন্য দোয়া করবেন। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় গোল্ড ব্যাংকিংÑ এর কার্যক্রম শুরু করতে চাই। আমার দ্বিতীয় স্বপ্ন হলোÑ একটি অর্গানিক ফার্ম স্থাপন করা। আমি প্রতিটি চেম্বারকে সম্পৃক্ত করে স্থানীয় জনসম্পদ ও রিসোর্স ব্যবহার করে এবং উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশে অর্গানিক পণ্য রপ্তানি করতে চাই। আমার ইচ্ছা আছে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের শোরুম ওপেন করা। যেসকল জেলা শহরে আমাদের শোরুম নেই পর্যায়ক্রমে সেই সকল জেলায় একটি করে শোরুম স্থাপন করব।

আনন্দ আলো: বর্তমানে তো বাংলাদেশের জুয়েলারী সেক্টরে আনরেস্ট চলছে, কারণ কি এবং এটা প্রশমনে আপনারা সমিতির পক্ষ থেকে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন ?

Dilip-Kumar-Agarwal-1দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: জি ঠিকই বলেছেন, বাংলাদেশের জুয়েলারী সেক্টরে সম্প্রতি যা ঘটেছে তা অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক। সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতির পক্ষ থেকে আমাদের সুস্পষ্ট দাবি জাতির সামনে তুলে ধরেছি। আমরা আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা তাঁর মাতৃকোমল হৃদয় দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করবেন। তিনি আমাদের সকলের অভিভাবক। বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতির পক্ষ থেকে ২৮ লাখ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের যৌক্তিক দাবি পূরণের জন্য বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ জানাচ্ছি।

আনন্দ আলো: জুয়েলারী শিল্পের জন্য সরকারের তরফ থেকে দেয়া সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বলুন ? আরো কি ধরনের সুবিধা দিলে দেশে এ ধরনের ব্যবসার বিকাশ ঘটবে ?

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: প্রথমেই বলি আমাদের বর্তমান সরকার খুবই ব্যবসা বান্ধব সরকার। সকলেই জানেন যে বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহ দেয়ার জন্য বর্তমান সরকার সারাদেশে বিশেষ ইকোনোমিক জোন তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। ব্যাংক ঋণের হার সিঙ্গেল ডিজিটে চলে এসেছে। সেক্ষেত্রে জুয়েলারী শিল্পের জন্য একটি স্পেশাল জোন তৈরি করে জমি বরাদ্দ ও অবকাঠামো নির্মাণে সাহায্য করতে হবে এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও সহজে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাব যে, জুয়েলারী শিল্পের জন্য একটি ব্যবসা বান্ধব ও টেকসই স্বর্ণ নীতি মালা প্রণয়ন করার জন্য যাতে আমরা নিরাপদে ও সহজে এ ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারি।

আনন্দ আলো: দেশের ব্যবসায়ী সমাজের একজন নেতা হিসেবে বর্তমান ব্যবসায়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন করুন।

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: আমার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা বলে- বাংলাদেশ এখন একটা ভালো ও সম্ভাবনাময় বাজার, এখানে আছে সহজলভ্য শ্রম, আছে ব্যাংকের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা আর অনেক সফল ব্যবসায়ী। বাজার মূলধন, শ্রমিক আর উদ্যোক্তা এই তিনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একটি সফল ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঠিক দিক নির্দেশনা। আমার মতে, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ব্যবসায়িক ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশ একটি সঠিক জায়গা।

আনন্দ আলো: একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি সম্প্রতি আপনি প্রেম’স কালেকশনস্ নামে একটি নতুন ফ্যাশন হাউজ-এর কাজে হাত দিয়েছেন কারণ কি ?

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা:  আপনাকে আবারো ধন্যবাদ। আসলে এদেশের ফ্যাশন সচেতন মানুষের কথা মাথায় এনে ঐতিহ্য ও আধুনিকতা বিবেচনা করে প্রাচ্য ও পাশ্চত্যের এক অপূর্ব সমন্বয়ে প্রেম’স কালেকশনের সৃষ্টি। মূলত এদেশের অবকাঠামো, ম্যানপাওয়ার, ডিজাইন ও বিশ্বমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যেই প্রেম’স কালেকশনে হাত দেয়া।

আনন্দ আলো:  একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নতুন ও উদীয়মান ব্যবসায়ীদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: পরামর্শ বলতে শুধু একটা কথাই বলব- দেখুন ২০০৫ সালে আমিও একজন সাধারণ ব্যবসায়ী ছিলাম আজ আমি শুধু চারটা কারণে- প্রথমত আমি স্বপ্ন দেখতাম বড় ব্যবসায়ী হবার, দ্বিতীয়ত- আমি যদি কোন কমিটমেন্ট করি তবে তা আজও পর্যন্ত রক্ষা করি, তৃতীয়ত- কঠোর পরিশ্রম, চতুর্থ- টাইম মেনে চলা। ৪টি বিষয় মেনে চলুন। সফল আপনি হবেনই। হয় আজ না হয় কাল তা না হলে পরশু।