সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একই পরিচালকের ছবিতে বাবা-ছেলে নায়ক চরিত্রে অভিনয়ের অফার পেয়েছিল একবারই। সেই পরিচালকের নাম এহতেশাম। যাকে তিনি প্রথম নায়ককের অফার দিয়েছিলেন সেই মানুষটির নাম খাজা মুরাদ। ঢাকার নবাব পরিবারের ছেলে। কিন্তু খাজা মুরাদ সবিনয়ে এহতেশামের ছবির অফার ফিরিয়ে দেন। পরবর্তীতে সেই এহতেশাম ২০ বছর পর খাজা মুরাদের ছেলেকে নায়ক চরিত্রে অভিনয়ের অফার দিলে বাবার মতো প্রথমেই না করেন ছেলে। পরবর্তীতে কি ভেবে যেন রাজি হয়ে যান ছবিতে অভিনয় করতে। ঢাকার চলচ্চিত্রে নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্ব দেয়া নায়ক নাঈম। তার বিপরীতে নায়িকা খুঁজতে খুঁজতে পরিচালক পেয়েও যান সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠা টিনএজ শিক্ষিত, সুন্দরী শাবনাজকে। নাঈম ও শাবনাজকে নিয়ে নির্মিত হয় চাঁদনী নামে টিনএজ লাভ সিনেমা। চাঁদনী নির্মাণের সময় এই সিনেমা নিয়ে মিডিয়ায় যেমন তোলপাড় শুরু হয়। তেমনি আলোচনার ঝড় বয়ে যায় নাঈম-শাবনাজের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে।
১৯৯১ সালের ৪ অক্টোবর চাঁদনী মুক্তি পাওয়ার পর ব্লকবাস্টার বিজনেস করে এবং ঢাকার সিনেমা ইতিহাসে ব্যবসায়িক দিক থেকে সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে। একসময় মিডিয়ায় একটি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সমিতিগুলোর রোষানলে পড়েন শাবনাজ। ওই সময় অনেক তারকা শাবনাজের পাশে দাঁড়ায় তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তার পর্দা প্রেমিক নাঈম। চাঁদনীর পর নাঈম-শাবনাজ জুটির একের পর এক ছবি সাইন করতে থাকেন। আর এভাবেই বাড়তে থাকে শাবনাজ-নাঈমের ঘনিষ্ঠতা। সেই ঘনিষ্ঠতা থেকে ভালোলাগা- তারপর ভালোবাসা, শেষে পরিণয়। প্রেমের সেই দুরন্ত সময়ের কথা নাঈমের মুখ থেকেই শোনা যাক।
ছবি করার সময় শাবনাজের পরিবারের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়। সেই ঘনিষ্ঠতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং সিনেমায় এক সঙ্গে অভিনয় করতে করতে দু’জনের মধ্যে ভালোলাগা এবং ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। সিনেমায় কাজ করতে করতে প্রতিদিন প্রায় ষোল ঘণ্টা এক সঙ্গে থাকতাম। আমার ভালোলাগা, মন্দলাগা। ওর ভালোলাগা, মন্দলাগা বিষয়গুলো শেয়ার করতাম। কখনো ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে নানান বিষয় নেই। পরক্ষণে আবার মিটেও গেছে। আমাদের মধ্যে সুসম্পর্ক আসলে এভাবেই গড়ে উঠে। বোঝাপড়াও ভালো হতে থাকে। একসময় দু’জনেই অনুভব করলাম আমাদের এই সুসম্পর্ক শুধু বন্ধুত্ব ও ভালোবাসায় নয়, পরিণয় পর্যন্ত নিয়ে যাব। প্রথমে আমিই শাবনাজকে নিয়ে ভালোবাসা ও পরিণয়ের কথা জানাই।
সিলেটে একটি ছবির শুটিং করার অবসরে, অসাধারণ একটি জায়গায় সুন্দর পরিবেশে আমি শাবনাজকে প্রপোজ করি। শাবনাজ খুব লজ্জা পাচ্ছিল কথাগুলো শুনতে। যদিও আমরা ছবিতে হরহামেশা নিজের ভালোবাসার কথাগুলো বলি। কিন্তু বাস্তবে সেই কথাগুলো বলা বা শোনা সত্যিই অন্যরকম অনুভূতি হওয়ারই কথা। যা হোক শাবনাজ কথাগুলো শোনার পর তার পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করে আমিও আমার পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করি। এভাবেই আমরা ১৯৯৪ সালে বিয়ে করি। বিয়ে করার পর সবার দোয়ায় সুখে-শানিৱতে প্রতিটি সময় পার করছি।
বিয়ের পর অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। পর্দা জুটি থেকে বাস্তবের স্বামী-স্ত্রী যারা অর্থাৎ নায়িকা, স্ত্রীরা বাস্তব জীবনে কতটুকু সংসারী হয়? আমি বরাবরই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম শাবনাজকে নিয়ে। বিয়ের পর সেই বিশ্বাসটা দৃশ্যমান হয় আরো উজ্জ্বল ভাবে। শাবনাও বলেছেন, নাঈম পর্দায় যেমন আমার দারুণ জুটি ছিল তেমনি বাস্তবেও জুটি হিসেবে দারুণ। এতটা বছর কীভাবে যে পার হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। সবার ভালোবাসায় ২৩টি বছর আমরা এক সঙ্গে সুখে- আনন্দে ভালো আছি।
গত ১৯ নভেম্বর গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে নাঈম ও শাবনাজ আয়োজন করেন চাঁদনী সন্ধ্যা। দুই তারকার প্রথম ছবি চাঁদনী মুক্তি পাওয়ার ২৫ বছর প্রদার্পন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তারার মেলা বসেছিল। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, পরিচালক আজিজুর রহমান, মতিন রহমান, হাফিজুর রহমান, বাদল খোন্দকার, আফতাব খান টুলু, বিশিষ্ট ক্যামেরাম্যান মাহফুজুর রহমান, প্রদর্শক ও প্রযোজক নওশাদ আহমেদ, প্রযোজক একেএম জাহাঙ্গীর খান, খোরশেদ আলম খসরু। তারকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবরী, চম্পা, ইলিয়াস কাঞ্চন, সাদেক বাচ্চু, অরুনা বিশ্বাস, বাপ্পারাজ, রিয়াজ, ফেরদৌস, ওমর সানি, মৌসুমী, পপি, শিল্পী, পূর্ণিমা, সম্রাট, মুনমুন, কেয়া, জায়েদ খান, ইমন, আরেফিন শুভ, বিদ্যা সিনহা মিম, আমীন খান, নিপুন, নিমা রহমান, নওশীন, হিল্লোল, দীপা খন্দকার, শাহেদ আলী, শোয়েব, মৌসুমী নাগ, চুমকি, সুইটি, তারিন, কনা, নিশো ফারহানা, মৌসহ আরো অনেক তারকা।