Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

নুসরাতের স্থাপত্য ভুবন

স্থাপত্যশিল্পে যারা দেশের জন্য সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে স্থপতি নুসরাত জাহান অন্যতম। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রী লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হওয়ার পর স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ পটাশের ‘এ্যাটেলিয়ার রবিন’ ফার্মে কিছুদিন চাকরি করেন নুসরাত। তারপর যোগ দেন এ্যাটেলিয়ার ওয়ান নামের একটি ফার্মে। এ যাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন মাদকদ্রব্য অফিস, কারাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। ছবি আঁকাআঁকি ছিল তার পছন্দের বিষয়। গানেও পারদর্শী ছিলেন। তিনি একজন ফ্যাশন ডিজাইনারও। কণ্যা নামের একটি ফ্যাশন হাউজের কর্ণধার তিনি। ২০০৫ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত স্থাপত্য অধিদপ্তরে সহকারি স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক

দুইবোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় স্থপতি নুসরাত জাহান। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালির গলাচিপায়। কিন্তু তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। নুসরাত জাহানের বাবার নাম খলিলুর রহমান। তিনি একজন ব্যবসায়ী। মা জামালি রহমান একজন গৃহিনী। স্কুল জীবন থেকে নুসরাত ছবি আঁকাআঁকি করতেন। গান গাওয়া ছিল তার পছন্দের বিষয়। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু মা-বাবা চাইতেন না তাদের মেয়ে ডাক্তার হোক। মা-বাবার ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি হয়েছেন একজন সফল স্থপতি।

টিকাটুলির কামরুন্নেসা গভর্নমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৯৪ সালে। ১৯৯৬ সালে মতিঝিল আইডিয়াল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করেন। ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে। ছাত্রী হোস্টেলের ১১৫ নম্বর রুমে থাকতেন। তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছেন স্থপতি এ্যানি, লাকী ও শান্ত। এরা সবাই প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় আছেন স্থপতি জিয়া স্যার ও মুন্নী আপা। নুসরাত জাহান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রিলাভ করেন ২০০২ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরই যোগ দেন স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ পটাশের ‘এ্যাটেলিয়ার রবিন’ নামের ফার্মে। সেখানে কয়েকমাস চাকরি করার পর যোগদেন সালমা আপার ‘এ্যাটেলিয়ার ওয়ান’ নামের একটি কনসালটেডন্সি ফার্মে। সেখানে তিনি দেড় বছর চাকরি করেন। ২০০৫ সালে স্থপতি নুসরাত জাহান যোগ দেন স্থাপত্য অধিদপ্তরে। সেখানে  তিনি সহকারি স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতিমধ্যে নুসরাত জাহান দেশের নামকরা মাদকদ্রব্য অফিস, কারাগারসহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের কাজ করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের  মধ্যে রয়েছে কেরানিগঞ্জের মহিলা কারাগার, সিলেটের কেন্দ্রীয় কারাগার, খুলনার জেলা কারাগার, দিনাজপুরের জেলা কারাগার, কিশোরগঞ্জের জেলা কারাগার, পিরোজপুরের জেলা কারাগার, ফেনির জেলা কারাগার, মাদারীপুরের জেলা কারাগার, ঢাকা ধোলাইখালের মাদকদ্রব্যের আঞ্চলিক অফিস, চিটাগং- এর সিটি কলেজের সামনে মাদকদ্রব্যের আঞ্চলিক অফিস, কেরানিগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কিছু অংশের কাজসহ অসংখ্য অফিস ভবনের ডিজাইন করেছেন।

01-(4)এছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন নুসরাত। সেগুলো হলো সিলেটের মাদকদ্রব্যের অফিস বিল্ডিং, রাজশাহীর মাদকদ্রব্যের অফিসের বিল্ডিং ইত্যাদি। নুসরাত জাহান তার সব ধরনের কাজ স্থাপত্যনীতি ও রাজউকের নিয়ম কানুন মেনেই করেন। ২০০৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি বিয়ে করেন। স্বামীর নাম মোস্তাক আহমেদ। তিনিও একজন আর্কিটেক্ট। রাজউকে কর্মরত আছেন। এই দম্পতি দুই পুত্র সন্তানের জনক-জননী।

স্থপতি নুসরাত জাহান বলেন, শান্তি নয় সংশোধনের মাধ্যমে একজন অপরাধীকে অপরাধের প্রতি ঘৃণা বোধ জাগ্রত করাই হলো আধুনিক কারাগারগুলোর মূল উদ্দেশ্য। তবেই একদিন সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। আর এর জন্য প্রয়োজন একটি সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশ’। ‘তাই রাখিব নিরাপদ, দেখবো আলোর পথ’- কারা অধিদপ্তরের এই মূল শ্লোগানকে মাথায় রেখে নির্মাণ বিধিমালা মেনে কারাগারের জন্য উন্নত ও আধুনিক নকশা করে থাকি। সরকারি দায়িত্ব পালনে পেশার প্রতি দায়বদ্ধ থেকে স্থপতি হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে চেষ্টা করি। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি নুসরাত জাহান।