Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

নায়করাজের কান্না!

চরিত্রের প্রয়োজনে একজন অভিনেতা রূপালী পর্দায় কাঁদেন। তাঁর কান্না দেখে সিনেমা হলে বসে দর্শকও কাঁদেন, কষ্ট পান। বাসত্মবে যদি কোনো জনপ্রিয় অভিনেতা তাঁর অগনিত ভক্ত দর্শকদের সামনে কাঁদেন তাহলে দৃশ্যটি কেমন হবে একবার ভাবুনতো। আর সেই অভিনেতা যদি নায়ক রাজ রাজ্জাক হয়?

এটা কোনো সিনেমার দৃশ্য নয় বাসত্মবের ঘটনা এটি। গত ৩ এপ্রিল ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। এই দিনে এফডিসিতে সরকারী ভাবে আয়োজন করা হয় চলচ্চিত্রমেলা। পরিপাটি করে সাজানো মেলা উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সঙ্গে ছিলেন চলচ্চিত্র মেলার আহ্বায়ক নায়করাজ রাজ্জাক। সকাল ১০ টায় বিশাল মঞ্চে মেলা উদ্বোধন করার সময় মন্ত্রী, নায়করাজ, এফডিসির কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কয়েকজন প্রবীন শিল্পী ছাড়া তেমন কেউ ছিলেন না অনুষ্ঠানে। অথচ অনেকেই আশা করেছিলেন যেহেতু চলচ্চিত্র দিবসটি চলচ্চিত্রের শিল্পী কলা কুশলীদের জন্য বিশেষ একটি দিন কাজেই এদিনে তারা যে যেখানেই থাকুন না কেন একবার হলেও আসবেন। তারকা শূন্য এই চলচ্চিত্র মেলা দেখে মন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করে নায়ক রাজ রাজ্জাককে বিনয়ের সঙ্গে বলেন, আপনার চলচ্চিত্র তারকারা কোথায়? আপনাদের ডাকে তারা না আসার কারন কী? আপনারা তাদের হাজির করতে পারলেন না?

প্রবীন অভিনেতা সবার শ্রদ্ধেয় জন নায়করাজ রাজ্জাক আজীবন চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য যুদ্ধ করেছেন। শিল্পীদের বিভিন্ন দাবী আদায়ে সংগ্রাম করেছেন। সেই তাকেই কিনা শিল্পীদের জন্য এভাবে অপমান হতে হলো। কথাগুলো তিনি সহ্য করতে না পেরে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন। বার বার তিনি চোখ মুছছিলেন। তাঁর এই কান্না দেখে উপস্থিত অন্য সবাই কান্না ধরে রাখতে পারেননি। পরে সাংবাদিকদের সামনে এসে নায়ক রাজ শুধু বললেন, শিল্পীর আজ আমাকে সবার সামনে অপদনত্ম করল। ওরা আজ অনেক বড় তারকা। আমার কথা শুনবে কেন? আর কিছু বলতে পারেননি তিনি।

নায়ক রাজের কষ্টটা যেন কোনো ভাবেই কমছিল না। তিনি কোনো ভাবেই তা সামাল দিতে পারছিলেন না। গত ১৬ এপ্রিল ছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের পথিকৃত আবদুল জব্বার খানের জন্মশত বার্ষিকী। এই দিনটি শিল্পী কলা একাডেমি ও ন্যাশনাল আকাইর্ভ যৌথ ভাবে পালন করার উদ্যোগ নেয়। ছয় দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। তিনি বক্তৃতায় বলেন কলকাতায় মাত্র ১০ মিনিট কথা হয়েছিল আমার পিতৃ সমতুল্য মানুষ আবুদল জব্বার খানের সঙ্গে। ওই ১০ মিনিটেই তিনি আমার আপনজন হয়ে উঠেছিলেন। ঢাকায় আসার পর তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। তখন ঢাকায় আমার পরিচিত বলে কেউ ছিল না। এ কথা বুঝতে পেরে তিনি আমাকে পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন, তোমার যে কোনো কাজে আমি পাশে আছি। আমি জানি তুমি পারবে এবং তোমাকে পারতেই হবে। জব্বার ভাই আমি আজ পেরেছি। সারা বাংলাদেশের মানুষের আমি ভালোবাসা পেয়েছি। তারা আমাকে আপন করে নিয়েছে। কিন্তু আপনার সাজানো গোছানো চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা যে আজ….। এই কথা বলে নায়ক রাজ অঝোরে কাঁদতে থাকেন। নিরব নিসত্মব্ধ হয়ে যায় পুরো হল ঘর। সামনে উপসিত্মত অতিথিরা চোখ মুছতে থাকেন।