Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

দেয়ালের ত্বকেরও যত্ন প্রয়োজন

রহমান সাহেব অনেক কষ্ট করে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির কাজ শেষ করেন তিনি। বাড়িটি নির্মাণের ঠিক কয়েক ক’বছর পরই দেয়ালে দেখা দেয় ড্যাম্প সহ নানান ধরনের সমস্যা। এজন্য তিনি দ্বারস্ত হয়েছেন নানান জায়গায়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না। এরইমধ্যে রহমান সাহেব এক বন্ধুর মাধ্যমে পেয়ে গেলেন ড্যাম্প হয়ে যাওয়া দেয়ালের কিভাবে যত্ন নিতে হয় সেই ব্যাপারে গুরুত্বপুর্ন তথ্য।

আপনি অনেক টাকা খরচ করে বাড়ি করলেন, নামিদামি রড সিমেন্টসহ টাইলসও ব্যবহার করলেন। কিন্তু দেয়ালের দিকে যদি যত্নবান না হন তাহলেই ঘটবে যতো বিপত্তি। অনেকেই বাড়ি করার পর ঘরের দেয়ালকে তেমন গুরুত্ব দিতে চান না। যেনোতেনোভাবে একটু রং করেই মনে করেন দেয়াল সাজানো শেষ। আসলে কিন্তু তা নয়। একটি বাড়ি কেবল ইট-বালুর সংমিশ্রণ নয়, এটি হয়ে ওঠে একজন মানুষের রুচি এবং ব্যক্তিত্বের পরিচয়েরও অংশ। আপনার ব্যক্তিত্ব এবং মূল্যবোধ বোঝা যায় আপনার বাড়িটি দেখে। কারন একটি বাড়ি তো শুধু বাড়িই নয়। একটি বাড়িকে ঘিরে থাকে ভালোবাসা আর একটু একটু করে জমানো স্মৃতির অ্যালবাম। তাই বাড়ির মধ্যে জমে থাকা সবকিছুই কিন্তু জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি হয়ে ভেসে ওঠে। এক্ষেত্রে দেয়ালটা স্মৃতির সেই অ্যালবামে কিভাবে যেনো ঠাঁই পেয়ে যায়। মনের অজানেৱই আঁকতে থাকে নানান স্মৃতিকাব্য। তাই ঘরের দেয়ালেই যদি দেখা দেয় ড্যাম্প, তাহলে তা অবশ্যই চিনৱার বিষয়।

ঘরের দেয়ালে ড্যাম্প নানা কারণে হতে পারে। কখনো তা হয় আপনার নিজের ভুলের জন্যই। আবার কখনো তা হয়ে থাকে প্রাকৃতিক কারণেও। বাংলাদেশের জলবায়ু মূলত উষ্ণ ও আর্দ্র। আর এই আর্দ্রতার ফলে দেখা দেয় ড্যাম্প। অন্যদিকে অনেকের রুমে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা থাকে না। ফলে ঘরে একটি গুমোট পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আর তাতেই অল্প অল্প করে ঘরের দেয়ালে ড্যাম্প হতে থাকে।

অনেক সময় ঘরে লম্বা সময় ধরে এসি চলে থাকে, যা ঘরের দেয়াল ড্যাম্প হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই সারাক্ষণ এসি না চালিয়ে দিনে অনৱত ঘন্টা দুয়েকের জন্য ফ্যান চালিয়ে ঘরের জানালা খুলে দেয়া উচিৎ। এতে ঘরে আলো প্রবেশ করবে আর এসি থেকে দেয়ালে জমা হওয়া বিন্দু আকারের পানি শুকিয়েও যাবে। যা আপনার ঘরের দেয়ালকে রাখবে ড্যাম্প থেকে মুক্ত। আপনি যত সুন্দর করেই ঘর সাজান না কেনো ঘরের দেয়ালে যদি আর্দ্রতার কারণে ড্যাম্পের সৃষ্টি হয় তবে পুরো আয়োজনটাই মাটি। আর এতে ঘর দেখতে যতটা না খারাপ দেখাবে তার চেয়ে আপনার মন বেশি খারাপ হয়ে যাবে। ঘরের দেয়াল ড্যাম্পের কারণে শুধু প্রেস্টিজেরই ক্ষতি হয় না সেই সাথে শারীরিক ক্ষতিও হয়। অ্যাজমা ও অ্যালার্জির যন্ত্রণা বাড়াতে এই ড্যাম্প বেশ খানিকটাই দায়ি, যা বাস্তবিক অর্থে  আমাদের কারোই কাম্য নয়।

দেয়ালে ড্যাম্প দেখা দিলে সাময়িকভাবে দেয়ালের সেই নির্দিষ্ট স্থানে মাদুর বা শীতল পাটি লাগিয়ে দিতে পারেন। তাছাড়া ঘরের দেয়ালের স্যাঁতসেঁতে ভাব দূর করতে একটি পাত্রে নিম পাতা নিয়ে তা পোড়াতে পারেন। এতে সৃষ্ট ধোঁয়া আপনার ঘরের বাজে গন্ধ দূর করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও নানা রকম স্টোন, প্লাস্টিক বা ব্রিক টাইলস ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ব্যবহারের ফলে দেয়ালটি যেমন রক্ষা পাবে তেমনি ঘরে  যুক্ত হবে নতুন মাত্রা। আবার দেয়াল যদি অল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে তবে ওয়ালপেপারও লাগানো যেতে পারে। সে জন্য প্রয়োজন একটু বাড়তি সতর্কতা। সেক্ষেত্রে দেয়ালটিকে প্রথমে একটু প্রিপেয়ার করে নিতে হবে। যেমন দেয়ালের আলগা আস্তরগুলো তুলে ফেলে, দেয়ালে ভালো করে ঘষে নিয়ে পুরো দেয়ালে প্লাস্টিক বোর্ড লাগিয়ে নিতে হবে সমান করে। এই প্লাস্টিক বোর্ডের উপর দিয়ে ওয়ালপেপার লাগাতে হবে।

তবে দেয়ালের পারমানেন্ট সুরক্ষার জন্য বাজারে প্রচলিত দেয়ালের অ্যান্টি-ড্যাম্প সলিউশন ব্যবহার করুন। এতে দেয়ালের রঙ দীর্ঘস্থায়ী হবে। অবশ্যই দেয়ালের বাইরে ও ভেতরে ভালো মানের ইমালশন রঙ ব্যবহার করতে হবে। ড্যাম্প হওয়া দেয়ালে চুনকাম না করাই ভালো। এতে দেয়ালের রঙ আরো খারাপ হবে।

ছোট ছোট কিছু সতর্কতা মেনে চললেই আপনার বাড়ির দেয়াল ভালো থাকবে বছরের পর বছর। আর ঘরের দেয়াল ভালো তো মনও ভালো। মন ভালো তো সবই ভালো।