Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

দীপন-অভিজিৎ-কেউ নেই একুশে বইমেলায়!

পার্থ সনজয়: এ বড় নিদানকাল! চতুর্থাংশ সময় গড়িয়ে বারোতম দিনেও শুদ্ধস্বরের নতুন কোন বই এলো না অমর একুশে বইমেলায়। পাঠকের মন খারাপ। একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ। পুরোনো অনেক বইও নেই। খুঁজে ফিরে পাওয়া গেল অভিজিৎ রায়ের লেখা একটি বই। সমকামীতা। স্কাইপি কিংবা ফেসবুকের ইনবক্সে কথা হয় শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলের সাথে। বলেন, অপেক্ষার কথা। প্রকাশক টুটুলের বাস্তবতাটা অনেক নিষ্ঠুর। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরত এসেছেন। এখন দিন কাটছে চিকিৎসায়। কবে যে সুস্থ হবেন! তবু যুদ্ধটা করছেন টুটুল। যুদ্ধ থেমে নেই তার সহকর্মীদেরও। তবে শুদ্ধস্বরের এই যুদ্ধে খুঁজে পাওয়া যাবে না বাংলা একাডেমিকে। ৬০ বছরের রোশনাই উপচে পড়ছে প্রতিষ্ঠানটির। তাতে কী করে শোকের কালো রঙ মানায়? তাইতো ফয়সল আরেফিন দীপনের হাসি মাখা ছবিটাই ২০১৬ বইমেলায় তাঁর একমাত্র স্মৃতি। গেলো বইমেলাতেও আরেফিন দীপন ছিলেন। আর সব বারের মতোই। তিন বছর আগে বইমেলায় আগুন লাগলো। দীপনের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতিও পুড়লো, অন্য কয়েক স্টলের সাথে। তবু দীপনের স্বপ্নটা পুড়লো না।  ভালো বই, মন জাগানোর বই, চিন্তার বই প্রকাশ করতে দীপন-টুটুলের স্বপ্নটা, যে কোন স্বপ্নের চেয় বড়। ঘাতকের জান্তব উল্লাস থামিয়ে দিল দীপনের স্বপ্ন, গেলো বছরের ৩১ অক্টোবর। তবু মেলায় অংশ নিয়েছে জাগৃতি প্রকাশনী। ফয়সল আরেফিন দীপনকে হারানোর শোক পাশে রেখে স্ত্রী রাজিয়া বেগম জলির ইচ্ছাতেই মেলায় স্টল দিয়েছে জাগৃতি।  সাদা কালো আবহে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাগৃতির স্টল। তাতে দীপনের স্মৃতি চিহ্ন। রক্তাক্ত কলমদানি। রক্তাক্ত পান্ডুলিপি। তার পাশেই দাঁড়িয়ে জলি বলেছেন, আমার হারানোর কিছু নেই। কিন্তু দীপনের বাবা! কাঁধে সন্তানের লাশ বয়েছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বেদনা সাথে নিয়ে মেলায় তিনি আসেন, যদি দীপনের দেখা মেলে! কিন্তু জাগৃতির স্টল ছাড়া, কোথাও দীপনের খোঁজ পান না বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হক। ফয়সল আরেফিন দীপন কিংবা অভিজিৎ রায়-কেউ নেই বাংলা একাডেমির হীরক জয়ন্তীর বইমেলায়। তাদেরকে মুছে ফেলার সব আয়োজন সম্পন্ন! ৩০ জানুয়ারি বাংলা একাডেমি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বইমেলা নিয়ে। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বইমেলার প্রতিশ্র“তি দেন মহাপরিচালক। আয়োজনের এত্ত এত্ত ফিরিস্তি। তার মাঝেই বিনীত ভাবে প্রশ্ন করেছিলাম, অভিজিৎ-দীপনকে মনে রাখার কোন উদ্যোগ মেলা কর্তৃপক্ষের আছে কীনা? প্রথমে এড়িয়ে গেলেন মহাপরিচালক। আবারও প্রশ্নটা করলাম। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইতি উতি করে পাশের অতিথির সাথে কথা বলে জানালেন, বাংলা একাডেমির কোন উদ্যোগ নেই। তবে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান চাইলে, তাদের উদ্যোগে স্টলে স্মৃতিচিহ্ন রাখতে পারে। একাডেমির কোন আপত্তি নেই। বোঝা গেল, এ ঘোর অমানিষা! তাইতো, গেলো বারের রোদেলা প্রকাশনী বন্ধ করে দেবার উদাহরণ টানতেই, মহাপরিচালক বললেন, উস্কানিমূলক বই প্রকাশ করা যাবে না।