Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

জীবনটাকে কালারফুল দেখতে চাই-আসাদুজ্জামান নূর

আসাদুজ্জামান নূর দেশবরেণ্য অভিনেতা, সংগঠক। বর্তমান সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। আনন্দ আলোয় একাধিকবার তাঁর সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয়েছে। এই এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ হয়েছিল চতুর্থ বর্ষের অষ্টম সংখ্যায়।

আসাদুজ্জামান নূর বসে আছেন বিশাল স্ক্রিনের টিভির সামনে। গভীর মনোযোগের সঙ্গে তিনি টিভি দেখছেন। মুখে সেই চিরচেনা হাসি। মাঝেমধ্যেই তিনি শব্দ করে হেসে উঠছেন। কী দেখে হাসছেন তিনি? কার্টুন নেটওয়ার্কে তখন হচ্ছিল টম অ্যান্ড জেরি। আসুন পাঠক, তাঁর সত্যি জীবনের গল্প শুনি…

ঢাকার নিউ বেইলী রোডের নওরতোন কলোনি। একটা সময় এখান থেকেই বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় ছড়িয়েছিল আলোর ফুল। শুধু কী নাটক! আজকে বিজ্ঞাপনশিল্পের এই যে প্রসার তার জয়যাত্রাও শুরু হয়েছিল মূলত এখান থেকেই। পুরো আশি ও নব্বই দশক জুড়ে সকাল-সন্ধ্যা একদল সৃষ্টিশীল মানুষের দীপ্ত পদচারণায় মুখর থাকত এই এলাকা। এখন নওরতোন কলোনির চিত্র বদলে গেছে। মিলেনিয়ামের হাওয়ায় হারিয়ে গেছে ডুপ্লেক্স কাঠামো। গড়ে উঠেছে একাধিক হাইরাইজ বিল্ডিং। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় ও এশিয়াটিক এমসিএলের মানুষগুলোও এখন চলে গেছেন নতুন ঠিকানায়। তবে নওরতোন কলোনির মায়া ছাড়তে পারেননি আসাদুজ্জামান নূর। কত যে হাসি-আনন্দ, আশা-নিরাশার  স্মৃতি ছড়িয়ে আছে এখানে। নওরতোন কলোনির একটি হাইরাইজ ভবনের সুপরিসর ফ্ল্যাটে তিনি সাজিয়ে নিয়েছেন আপন ভুবন।

আসাদুজ্জামান নূরের লিভিংরুমে পা রাখতেই মনে ভর করে অন্যরকম অনুভূতি। এটা কী কোনো আর্ট গ্যালারি, নাকি মিউজিয়াম! দেয়ালে মাটির রঙ। ঝুলছে সারি সারি পেইন্টিংস। সবই নামী-দামি শিল্পীর আঁকা। জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, এস এম সুলতান, শফিউদ্দিন আহমেদ, মূর্তজা বশির, পরিতোষ সেন, গোলাম কিবরিয়া, কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান, রফিকুন নবীসহ দেশ-বিদেশের আরো অনেক শিল্পীর আঁকা ছবি। লিভিং রুমের তিনটি খোলা শোকেসে আছে ব্রোঞ্জ-তামা-দসত্মার হরেক রকম পটারি আর পোড়ামাটি-সিরামিকে তৈরি নানা আকৃতির মূর্তি। হাতির দাঁতে তৈরি ধ্যানরত বুদ্ধ, পাথরে গড়া বিষ্ণু মূর্তি আর কিমানো পরনে জাপানির গ্রানাইট প্রতিকৃতি- এসব কিছু শুধু জাদুঘরেই শোভা পেতে দেখা যায়। নিজের এই বিশাল কালেকশন সম্পর্কে আসাদুজ্জামান নূর বললেন, চিত্রকলা আর ভাস্কর্যের প্রতি আমার আকর্ষণ ছাত্রজীবন থেকেই। মিউজিয়ামে ঘুরতে ঘুরতে মনে হতো, এরকম কিছু জিনিস যদি আমি সংগ্রহ করতে পারতাম। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেই তো হয় না, সামর্থ্যও থাকতে হয়। সামর্থ্যের নাগালে থাকা টুকিটাকি শোপিস, মুখোশ, মূর্তি, পটারি তখন থেকেই সংগ্রহ করা শুরু। তারপর সামর্থ্য একটু একটু করে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার কালেকশনও সমৃদ্ধ হতে থাকল। কাজের প্রয়োজনেই আমাকে দেশ-বিদেশে ছোটাছুটি করতে হয়। যেখানেই গেছি, স্যুভেনির হিসেবে এটাসেটা নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। সংগ্রহের ঝোঁকটাও সামর্থ্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। আমি জীবনটাকে কালারফুল দেখতে চাই। তাই রঙ-বেরঙের ছবি দিয়ে সাজিয়েছি চারপাশ। এইসব কালেকশনের ঝোঁকটাকে আমার হবি বললে খাটো করা হবে। এটাকে আমার ভালোবাসা বললেই ভালো হয়।

আসাদুজ্জামান নূর একাধারে রাজনীতিবিদ, অভিনেতা এবং কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা। প্রতিটি সেক্টরেই তিনি পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য। একজন মানুষের পক্ষে এভাবে নিজেকে ছড়িয়ে দেয়া কী করে সম্ভব? উত্তরে তিনি বললেন, প্রতিটি কাজের জন্য যদি আলাদাভাবে সময় ভাগ করে নেয়া যায়। তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমি যেখানেই থাকি আগের দিন রাতে ঘুমোতে যাবার আগে ঠিক করে নেই পরের দিন কী কী করব। পরদিন সেটা অনুসরণ করার চেষ্টা করি। পরিকল্পনা মতো হয়তো সব কাজ করা সম্ভব হয় না। আশিভাগ অনত্মত ঠিক থাকে। বাকি বিশভাগ আবার পরের দিনের সঙ্গে সমন্বয় করে নেই। তাছাড়া যেকোনো কাজই করি না কেন, সব কাজের সমান গুরুত্ব দেই। আসাদুজ্জামান নূর জানালেন, প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িয়ে যাবার পর অভিনয়ে সময় দেয়াটা অনেক কমে গেছে। আগের মতো অভিনয় চালিয়ে যেতে না পারাটা মাঝেমধ্যে তাকে কষ্ট দেয়। বিশেষ করে যখন কোনো তরুণ নাট্যকার বা নির্মাতা তার কাছে এসে বলেন, অমুক চরিত্রটা তৈরি করা হয়েছে শুধু আপনার কথা ভেবেই। কোথাও কেউ নেই-এর বাকের ভাই, অয়োময়ের ছোট মির্জা, আগুনের পরশমণির বদি প্রভৃতি চরিত্র তখন চোখের সামনে ভাসে। অভিনয়ে সময় দিতে না পারার অক্ষমতা তখন তাকে চেপে ধরে। অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর সবচেয়ে মিস করেন থিয়েটারটাকে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, মঞ্চনাটকে আছে আলাদা আবেগ, আলাদা সৌরভ। নিজেকে গড়ে তোলার গ্রুমিংটা তো মঞ্চ থেকেই পেয়েছি। মঞ্চের প্রতি যে কমিটমেন্ট ছিল তা রক্ষা করতে না পারার বেদনা অনুভব করি প্রায়ই। সেই জায়গা থেকেই ঠিক করেছি, যত ব্যসত্মতা থাকুক মঞ্চে আমাকে ফিরতেই হবে। হাজার ব্যসত্মতার পরও আসাদুজ্জামান নূর বছরে টিভির দু’তিনটা একক নাটকে অভিনয় করার চেষ্টা করেন। তবে দীর্ঘদিন হলো কোনো ধারাবাহিক নাটকে তিনি অভিনয় করছেন না। অথচ ধারাবাহিক নাটকগুলোই তাকে দিয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা। ধারাবাহিকের জন্য নিয়মিত একটা শিডিউল দেয়া লাগে। সেটা আপাতত সম্ভব নয় বলে সামনের বছরগুলোতে তাকে কোনো ধারাবাহিক নাটকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

মানুষের জীবনে এগিয়ে যাবার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা। একথা আসাদুজ্জামান নূর মনেপ্রাণে সমর্থন করলেও নিজের জীবন তার পরিকল্পনা ছাড়াই এগিয়ে গেছে। অভিনয়-ব্যবসা-রাজনীতি, কোনোটাই পরিকল্পনা মতো হয়ে ওঠেনি। তার নিজের ভাষায়, কীভাবে কীভাবে যেন একেকটার মধ্যে পড়ে গেছি। পরিস্থিতিই আমাকে যেখানে নেয়ার পৌঁছে দিয়েছে সেখানে। আসাদুজ্জামান নূর ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই পেয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ণ সদস্য পদ। কিন্তু ব্যক্তিগত ক্ষোভ আর মতপার্থক্যের কারণে সেই রাজনীতি ছেড়ে দেন। আবার কখনো রাজনীতি করবেন মোটেও ভাবেননি। ভাবেননি কখনো অভিনয় করবেন। ’৭২ সালের শেষের দিকে নীলফামারী থেকে ঢাকায় আসেন। চাকরি নেন বিজ্ঞাপন সংস্থা বিটপিতে। সেখানে রামেন্দু মজুমদারও চাকরি করতেন। গড়ে ওঠে তার সঙ্গে সহজ সম্পর্ক। রামেন্দু মজুমদারের সম্পাদনায় বের হওয়া ‘থিয়েটার’ পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন কিছুদিন। পাশাপাশি বিনোদন সাপ্তাহিক চিত্রালীতেও নাটক নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। চিত্রালীর জন্য একবার আলী যাকেরের সাক্ষাৎকার নিতে গেলেন আসাদুজ্জামান নূর। আলী যাকের তার মধ্যে কী দেখলেন তিনিই জানেন। সরাসরি নূরকে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যুক্ত হতে আহ্বান জানান। নাটক করা শুরু হয়ে গেল। এরই মাঝে আসাদুজ্জামান নূর বিটপির চাকরি ছেড়ে প্রেস রিলেশন অফিসার হিসেবে যোগ দেন সোভিয়েত দূতাবাসে। ১৯৭৮/’৭৯ সালের দিকে আলী যাকের আসাদুজ্জামান নূরকে এশিয়াটিকে কাজ করতে বলেন। প্রথমে চাকরি নিয়ে এশিয়াটিকে যুক্ত হলেও কিছুদিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক অংশীদার হয়ে ওঠেন। একই সাথে চলতে থাকে মঞ্চ ও টিভিতে অভিনয়। এশিয়াটিক কিছুদিনের মধ্যেই ‘রাইজ’ করে। সেখান থেকে একটা দুটো করে এখন মোট ৬টির মতো কোম্পানি হয়েছে। সব কোম্পানির ব্যবস্থাপনার সঙ্গেই আসাদুজ্জামান নূর সরাসরি যুক্ত।

এটা এখন সবারই জানা আছে যে, আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারীর ছেলে। শৈশব-কৈশোর আর তারুণ্যের প্রথম ভাগটি কেটেছে উত্তরবঙ্গের ছোট্ট মফস্বল শহর নীলফামারীতে। বাবা আবু নাজেন মোহাম্মদ আলী এবং মা আমিনা বেগম দুজনই ছিলেন স্কুলশিক্ষক। দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে আসাদুজ্জামান নূর সবার বড়। হুমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’-এর শফিক চরিত্রে অভিনয় করে আসাদুজ্জামান নূর যখন মোটামুটি বিখ্যাত। বিয়ের কাজটি তখনই টুপ করে সেরে নেন। সেটা ছিল ১৯৮২ সাল। বিয়েটা হয় পুরোপুরি পারিবারিক পছন্দে। মা ও বড় মামিই বিয়ের ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। কনে শাহীন আক্তার তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা সদ্য ডাক্তার। বিয়ের পর মগবাজারের চারতলা বিল্ডিংয়ের চারতলার একটি ফ্ল্যাটে সাজিয়ে নেন সংসার। স্বামী-স্ত্রীর টোনাটুনির সংসার নয়, মা-ভাইবোনসহ সেটি ছিল একান্নবর্তী পরিবার। আসাদুজ্জামান নূর বাবা হন ১৯৮৪ সালে। ছেলে সুদীপ্ত বর্তমানে লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ করছেন। মেয়ে সুপ্রভা জন্ম নেয় ১৯৮৯ সালে। বর্তমানে সে ‘এ’ লেভেলে পড়াশোনা করছে। ছেলেমেয়ের মধ্যে কার প্রভাব বেশি, বাবা নাকি মায়ের? উত্তরে আসাদুজ্জামান নূর বললেন, এটা বলা মুশকিল। আসলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওদের দুজনের আলাদা আইডেন্টি গড়ে উঠছে বলে আমার মনে হয়। আমি তো সারাক্ষণ বাইরে ব্যসত্ম থাকি। আমার কাছে ওরা ওদের অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ খুব কমই পায়। ছেলেমেয়েদের আবদার-আহ্লাদ সবই ওদের মা সামলায়। বাবা এত বড় একজন নামকরা অভিনেতা, তার সনত্মানদের কী কারো মধ্যে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়নি? আসাদুজ্জামান নূর জানালেন, অভিনয়ের প্রতি ছেলের আগ্রহ একেবারেই নেই। মেয়ের মধ্যে কিছুটা আগ্রহ ছিল। কিন্তু পড়াশোনার চাপে ওইদিকে ঝুঁকতে পারেনি। তবে বাবার অভিনয় সে মন দিয়ে দেখে সবসময়। লেখালেখির প্রতিই এখন তার বেশি ঝোঁক। ডেইলি স্টারে প্রায়ই তার লেখা ছাপা হয়। আসাদুজ্জামান নূরের স্ত্রী ডা. শাহীনা আক্তার বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ইউনিভার্সিটির এসোসিয়েট প্রফেসর। চিকিৎসাশাস্ত্রের শিক্ষক হলেও কাঠখোট্টা তিনি মোটেও নন। বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগেই তিনি ছিলেন আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয়ের দারুণ ভক্ত। বিয়ের বছরখানেক আগে একদিন রাসত্মায় তিনি দেখা পান প্রিয় অভিনেতার। রিকশায় করে আসাদুজ্জামান নূর যেন কোথায় যাচ্ছেন। মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসে ফিরে সহপাঠীদের সামনে তার সেকি উচ্ছ্বাস! আজ আসাদুজ্জামান নূরকে দেখলাম…। কে জানত, এই প্রিয় মানুষটির সঙ্গেই তার জীবন কাটবে। দু’একজন সহপাঠী বিয়ের পর এই ব্যাপারটা ডা. শাহীন আক্তারকে মনে করিয়ে দিয়েছেন। অভিনয়ে নিরনত্মর প্রেরণা দিয়ে গেলেও স্বামীর প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়ানোর ব্যাপারে স্ত্রী হিসেবে প্রথমে তার আপত্তি ছিল। কারণ রাজনীতি আর রাজনীতিক নিয়ে আমাদের অনেকেরই প্রচলিত ধারণা ইতিবাচক নয়। পরবর্তীতে অবশ্য আসাদুজ্জামান নূর যে ইমেজ নিয়ে রাজনীতি করছেন, তাতে স্ত্রী-পরিবারেরও সমর্থন চলে আসে। রাজনীতিতে যুক্ত হবার পেছনে বন্ধু-সহকর্মী ও আত্মীয়স্বজনের উৎসাহকে তিনি বড় করে দেখেন সবসময়।

Noor-Family
রাত করে ঘুমানোর কারণে আসাদুজ্জামান নূরের দিনের শুরুটা হয় একটু দেরিতে। সকাল ৮টার দিকে তিনি বিছানা ছাড়েন। সকালের হালকা চা-নাশতা সেরে বেরিয়ে পড়েন হাঁটাহাঁটি করতে। প্রতিদিনই অনত্মত আধঘণ্টা হাঁটা তার অভ্যাসের অংশ। হাঁটাহাঁটি সেরে ফ্রেশ হয়েই ছোটেন অফিসে। বেইলি রোড টু বনানী। ঢাকার বিরক্তিকর যানজটের কারণে সময় লেগে যায় ঘণ্টাখানেক। এই ফাঁকে খবরের কাগজগুলো দেখে নেন। অফিসে পৌঁছে একটার পর একটা মিটিং, এটা সেটা কত কাজ। লাঞ্চ সেরে নেন অফিসেই। সন্ধ্যা নেমে এলেও বাসায় ফেরা হয় না। কারণ পার্টি অফিসে যেতে হয়, মিটিং-সমাবেশ বিভিন্ন কর্মসূচি থাকে। তাছাড়া নানারকম সামাজিকতাও তাকে রক্ষা করে চলতে হয়। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা, সাড়ে ১১টা বেজে যায়। ডাইনিং টেবিলে বসেন পরিবারের সব সদস্যের সাথে। পারিবারিক কথাবার্তা হয় ডিনার করার সময়টাতেই। বই পড়াটা আসাদুজ্জামান নূরের কাছে রিক্রিয়েশনের মতো। বেশিরভাগ দিন ঘুমাতে যাবার আগে তিনি বই পড়েন। কখনো কখনো বসেন টিভি স্ক্রিনের সামনে। খবর, টকশো মনোযোগ দিয়ে দেখেন। কখনো কখনো নাটকও দেখেন। তবে সবচেয়ে বেশি দেখেন কার্টুন ছবি ‘টম অ্যান্ড জেরি’। বিছানায় যেতে যেতে বেজে যায় ১টা-দেড়টা। নীলফামারীতে গেলে পাল্টে যায় আসাদুজ্জামান নূরের রোজনামচা। সেখানে আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বেশির ভাগ সময় কাটে তার। আবার রাজনৈতিক কর্মসূচিও অনেক সময় উল্টে-পাল্টে দেয় প্রতিদিনের রুটিন। বছরের দুটো ঈদ তিনি সপরিবারে পালন করেন দুজায়গায়। রোজার ঈদটা ঢাকায় আর কোরবানির ঈদটা নীলফামারীতে।

আসাদুজ্জামান নূর তার শিল্পী সত্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে চান জীবনের শেষ প্রানেত্ম পৌঁছেও। ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় দিয়ে তিনি মঞ্চে ফিরছেন শিগগিরই। বন্ধু হুমায়ূন আহমেদ খুউব করে বলছেন, তার পরবর্তী ছবিতে অভিনয়ের জন্য। হুমায়ূন আহমেদের ‘চন্দ্রকথা’ ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের পর বন্ধুর অনুরোধ রক্ষা করতে তার ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ ছবিতে ছোট্ট একটা চরিত্রে দু’তিন মিনিটের জন্য অভিনয় করেছেন। এবার মনে হচ্ছে এভাবে হুমায়ূন আহমেদকে আর সানত্ম্বনা দেয়া যাবে না। আসাদুজ্জামান নূরের জন্য তিনি তার আগামী ছবিতে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র তৈরি করে রেখেছেন। আসাদুজ্জামান নূর জানালেন, সামনে তিনি কী করবেন না করবেন কিছুই ঠিকঠাক বলতে পারছেন না। সবকিছুই নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের ওপর।