Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ছেলে বাবাকে বলল তোমার ভিতরে কোনো প্রেম নাই-ফেরদৌস ওয়াহিদ

মোহাম্মদ তারেক:

আনন্দ আলো: আপনি কি ফেরদৌস ওয়াহিদ?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: হ্যাঁ। আমি ফেরদৌস ওয়াহিদ।

আনন্দ আলো: আপনি নাকি ডেঞ্জারম্যান?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: নারে ভাই, আমি ডেঞ্জারম্যান না। আমার পরিচালিত প্রথম টেলিফিল্মটির নাম ছিল ডেঞ্জারম্যান। সেখানে আমি ডেঞ্জারম্যান চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম।

আনন্দ আলো: ছোটবেলায় কী হতে চেয়েছিলেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: ছোটবেলায় আমি পাইলট হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হয়ে গেছি গায়ক।

আনন্দ আলো: এত কিছু থাকতে গানে এলেন কেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: ছোটবেলায় আমি রবীন্দ্রসংগীত গাইতাম। তবে কোনো শিক্ষকের কাছে না শিখেই গান গাইতাম। এরপর ক্লাস এইটে ওঠার পর ‘আরমান’ নামে একটি হিন্দি ছবি দেখি। ছবিতে একটি ছোট্ট শিশু গান গায়। গানটি শোনার পর আমার মধ্যে গায়ক হবার জেদ চাপে। ১৯৬৫ সালে ৯ টাকা ৪ আনা দিয়ে আমি একটি গ্রামোফোন কিনি। এটা দিয়ে গান শুনতাম আর শেখার কাজটি করতাম। এরপর গানের প্রতি আমার আগ্রহ দেখে বাবা আমাকে গানের শিক্ষকের কাছে পাঠান। এভাবেই শুরু হয় আমার গান শেখা।

আনন্দ আলো: জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় যে গানটি

ফেরদৌস ওয়াহিদ: ১৯৭৭ সালে আলম খানের সংগীত পরিচালনায় জীবনের প্রথম প্লেব্যাক করলাম। গানটি ছিল ‘ওই দুটি চোখ’। আমি আর সাবিনা ইয়াসমিন গেয়েছিলাম। ছবির নাম ‘অন্তরালে’। ছবিতে লিপসিং করেন সোহেল রানা ও ববিতা। এই গানটি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

আনন্দ আলো: দেশের টিভি দেখেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: দেখব না কেন? আমাদের এতগুলো টিভি চ্যানেল। অবশ্যই দেশের টিভি চ্যানেল দেখি। আমাদের বিভিন্ন চ্যানেলে সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলো দেখি। সংবাদ দেখি। নাটক দেখি। ভালো কিছু হলে ভালো লাগে।

আনন্দ আলো: নিশ্চয়ই প্রতিদিন ফেসবুকে ঢুঁ মারেন। ফেসবুকে বসলে প্রথমে কি খুঁজেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: প্রতিদিন ফেসবুকে বসা হয় না। বসলে প্রথমে দেখি যারা আমাকে ম্যাসেজ দেয় তাদের উত্তর দেই। আর মাঝেমধ্যে জোকস পড়তে ভালো লাগে।

আনন্দ আলো: স্টুডিওতে প্রথম দিন…

ফেরদৌস ওয়াহিদ: ১৯৭৩ সালের কথা। আমি আজম খান ও ফিরোজ সাই একসঙ্গে গান করি। আমাদের সবার নীলমনি আলম ভাই। আমরা গান রেকর্ডিং করব। কিন্তু কীভাবে করব? আমরা তো কিছুই জানি না। একলা একলা কী মাতুব্বরী করব। অভিভাবক হিসেবে তখন একমাত্র ভরসা আমাদের আলম খান। ফিল্মে তিনি মিউজিক ডিরেক্টশন দেন। আমরা সবাই মিলে তাকে ধরলাম। তিনি আমাদের আশ্বাস দিলেন। মনে আছে ১৬০ টাকা হাফ শিফট রেকর্ডিং ভাড়া নিলাম। সারাদিনে উনি আমাদের সমস্ত ফরমেট সাজিয়ে দিলেন। কীভাবে কী করতে হবে। এভাবে সুরটা হবে, এটার পর এটা হবে। এভাবে আমরা চারটা গান করলাম।

আনন্দ আলো: গান গেয়ে প্রথম পারিশ্রমিক…

ফেরদৌস ওয়াহিদ: ১৯৭৭ সালে ‘অন্তরালে’ ছবিতে গান গাওয়ার জন্য পেয়েছিলাম ৩০০ টাকা। ঐ সময় ৩০০ টাকা মানে অনেক টাকা। তখন সোনার ভরি ছিল ৭২ টাকা। জীবনের প্রথম পারিশ্রমিক পাওয়ার স্মৃতিটা এখনোও মনে পড়ে।

আনন্দ আলো: ফ্যাশন বলতে কি বুঝেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: ফ্যাশন বলতে বুঝি যে সময়ের যে চল।

আনন্দ আলো: আপনার গাওয়া কোন গানটি এখনো হৃদয়ে গেঁথে আছে?

Ferdous-Wahid-1ফেরদৌস ওয়াহিদ: আমার গাওয়া অনেক গানই হৃদয়ে গেঁথে আছে। তবে ‘এমন একটা মা দে না’, ‘আগে যদি জানিতাম’, মামুনিয়া গানগুলো মাঝে মাঝে হৃদয়ে নাড়া দেয়।

আনন্দ আলো: আমার ভালোবাসার গান?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: মহেশ খালির বাঁকে ছবির ‘আমার প্রেমের তরি বৈয়া চলে’ গানটি আমার জীবনের সেরা একটি গান। প্রয়াত মুকুল চৌধুরীর লেখা, আলম খানের সুরে গানটি আমি আর সাবিনা ইয়াসমিন গেয়েছিলাম। ছবিতে ঠোঁট মেলান নায়ক ওয়াসিম ও নায়িকা সুচরিতা। ঐ গানটা এখনো মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। স্টেজে যখনই আমি গান গাইতে যাই তখনই এই গানটার প্রচুর অনুরোধ আসে।

আনন্দ আলো: গান ছাড়া আর যা ভালো করতে পারেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: অভিনয় ভালো করতে পারি। ডিরেকশন দিতে পারি।

আনন্দ আলো: ছেলের সঙ্গে গান করতে গিয়ে একবার নাকি ফাপড়ে পড়েছিলেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: হ্যারে ভাই… সে কথা আর কী বলব? ‘অবশেষে’ নামে আমাদের দ্বৈত একটা অ্যালবাম বের হয়েছিল। সেখানে একটা গান ছিল ‘ভালোবাসব প্রতিদিন’। সেই গানটা আমার কোনোমতেই হচ্ছিল না। হাবিব তখন আমাকে দিয়ে এই গানটা ১২৩ বার গাওয়ায়। এরকম আরো অনেক ঘটনা আছে। যেমন প্রাণআপ বিজ্ঞাপনের তিনটা জিঙ্গেল আমি আর ন্যান্সি করি। প্রাণআপের শেষ জিঙ্গেলটা যখন করতে যাই তখন হাবিব সরাসরি বলল, তোমার ভেতরে আজকে কোনো প্রেম নাই। তুমি গাইছো সব ঠিক আছে। কিন্তু তোমার ভেতরে প্রেম পাচ্ছি না। তুমি এক সপ্তাহ পরে প্রেম নিয়ে এসো। আমি আর ছেলেকে কি বলব? এক সপ্তাহ পর আবার গেলাম। ছেলে ঐদিন আড়াইঘণ্টা চেষ্টা করল তারপরেও গানটা হলো না। আবার এক সপ্তাহ পরে গেলাম। ২০ মিনিটে গানটা হয়ে গেল। ছেলে আমাকে বলল, আজকে তোমার প্রেমটা কোথা থেকে আসল?

আনন্দ আলো: প্রথম দর্শনে প্রেমে বিশ্বাস করেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: অবশ্যই। প্রথম দর্শনেই তো প্রেম হয়। মানুষ বলে জানি ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না। তবে ভেবেচিন্তে প্রেম হয় না।

আনন্দ আলো: প্রথম কার প্রেমে পড়েছিলেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম ১৮ বছর বয়সে। সেটি ছিল ব্যর্থ প্রেম। আমি ছেঁকা খেয়েছিলাম। ঐ সময় যদি আমি ছেঁকা না খেতাম তা নাহলে আজকে আমি ফেরদৌস ওয়াহিদ হতাম না।

আনন্দ আলো: সারারাত গল্প করার মতো বন্ধু…

ফেরদৌস ওয়াহিদ: সারারাত গল্প করার মতো বন্ধু একজনই সে হচ্ছে স্ত্রী। আর স্ত্রী যদি প্রেমিকা হয় তাহলে সুখের সীমা থাকে না।

আনন্দ আলো: হাড় ভাঙলে জোড়া লাগে, মন ভাঙলে জোড়া লাগে না কেন?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: জোড়া লাগানোর দরকার কী? দুই টুকরো দুজনকে দিলেই তো হয়।

আনন্দ আলো: আপনার সবচেয়ে দুর্বল দিক?

ফেরদৌস ওয়াহিদ: আমি সহজ সরল একজন মানুষ। আমি সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করি। এটা আমার সবচেয়ে বড় দুর্বল দিক।