Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

গ্ল্যামার জগতে আছি পোশাখ তো আলাদা হবেই-এভ্রিল

পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিনোদন আয়োজনে এভ্রিলকে নিয়েই এখনও আলোচনা চলছে। আনন্দ আলোর সঙ্গে তার সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ…

আনন্দ আলো: আপনার এই যে এতো প্রচার তাতো মিডিয়ার মাধ্যমেই হলো। অভিমত কী!

এভ্রিল: মিডিয়ার প্রতি সবার কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। কারণ মিডিয়ার মাধ্যমেই তো মানুষ পরিচিতি পায়। আমি মিডিয়াকে কোনো দোষারোপ করব না। কারণ মিডিয়ার কাজই হচ্ছে সত্যটা তুলে ধরা। কিন্তু আমার ব্যাপারটা একটু বেশি সিরিয়াস হয়ে গেছে। অনেকে এটিকে নেগেটিভ ভাবে নিয়েছে। মানুষ ভেবেছে আমি সত্য গোপন করেছি। কেন তা করলাম সেটাই তো প্রশ্ন! আমার কয়েকটা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সব কিছু মিলে একটা গÐগোল পাকিয়ে গেছে।

আনন্দ আলো: কখন মনে হলো যে একটা গÐগোল পাকিয়ে গেছে। যেদিন পুরস্কার ঘোষনা করা হলো সেই দিনের রাতটা তো আপনার অনেক আনন্দের ছিল?

এভ্রিল: হ্যাঁ রাতটা অনেক আনন্দের ছিল। কিন্তু পরের দিন যে খবরটা বের হলো তাতে আমি মোটেই বিস্মিত হইনি। ওকে… এটাই তো বাংলাদেশ।

আনন্দ আলো: যার সঙ্গে আপনার বিয়ে হয়েছিল সে কি কখনও ফোন করেছিল?

এভ্রিল: না… ঐ ছেলের সঙ্গে তো আমার কথা হয়েছিল মাত্র দুইবার। আর কখনও কথা হয়নি।

আনন্দ আলো: আপনার বিয়ের যে ছবিটা প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে সেটা কোথায় তোলা? আপনার বাসায়?

এভ্রিল: ছবিটা কোথায় তোলা আমার ঠিক মনে নাই।

আনন্দ আলো: এই যে আপনার বিয়ের ছবি ভাইরাল হলো এনিয়ে আয়োজক প্রতিষ্ঠান অন্তর শোবিজের কর্ণধার স্বপন চৌধুরী অথবা অন্য কেউ আপনাকে এব্যাপারে কিছু বলেনি?

এভ্রিল: আমাদের দেখভাল করতেন স্বপন স্যারের স্ত্রী ও তার মেয়ে। ছবিটা প্রকাশ হবার পর তারা আমাকে এব্যাপারে জানতে চায়। এভ্রিল আসল ঘটনাটা কি বলো তো আমাদের। কারণ মিডিয়ার কাছে ব্যাপরটা তো ক্লিয়ার করতে হবে। তখন আমি যে কথা বলেছিলাম এখনও একই কথা বলতে চাই। আমি তো এই বিয়ে মানিনা। কাজেই এব্যাপারে তো কিছু বলার নাই। বাংলাদেশের আইনে ১৬ বছরের কিশোরীর বিয়ে বৈধ নয়। কাজেই আমার এই বিয়ে বৈধ ছিল না।

আনন্দ আলো: কথা উঠেছে আপনি নাকি দুই মাসের প্রেগন্যান্ট ছিলেন?

এভ্রিল: (হাসতে হাসতে) এমন কথা আমিও শুনেছি। এটা কি করে সম্ভব? আমি তো তার সঙ্গে সংসার করিনি। তার বাড়িতে গিয়ে ঘোমটা টেনে বউয়ের মতো ঘুরে বেড়াইনি। কাজেই প্রেগন্যান্ট হলাম কি করে… হা: হা: হা:।

আনন্দ আলো: অনেকে বিয়ের দিনের ভিডিও ও ছবির ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন। যদি আপনার মতের বাইরেই বিয়েটা হয়ে থাকে তাহলে তো মনখারাপ অথবা কান্নাকাটির ব্যাপার ঘটার কথা। কিন্তু সে রকম তো কিছু নাই…

এভ্রিল: (আবারও হাসতে হাসতে) বিয়ের দিনের যে ছবি গুলো বেরিয়েছে তার কয়েকটিতে আমি গোমড়া মুখে ছিলাম। কয়েকটিতে হাসিমুখ ছিল। সত্যি কথা বলতে কি… আমার অমতে যেহেতু একটা ঘটনা ঘটছে, আমি যে ঘটনা ঠেকাতে পারব না কাজেই আমার কান্নাকাটি করে লাভ হবে না। তখন ভেবেছি ঘটনা ঘটুক। তারপর আমার যা করার তাই করবো। আমাকে অনেকে হাসানোর চেষ্টা করছিলো, অনেকে বুঝানোর চেষ্টা করছিলোÑ আমি কেন মাথা গরম করছি… আমাকে সবাই নানা ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করতেই থাকে। বিশেষ করে আমার বাবা বুঝাতে চাইছিলেন চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। সে কারণে আমি কখনও রাগারাগি আবার কখনও শান্ত ব্যবহার করছিলাম। আসলে আমি তো পালাবার পথ খুঁজছিলাম…

আনন্দ আলো: দেশ বিদেশ থেকে অনেকে আপনাকে নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাজ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। অভিমত কী?

এভ্রিল: সবাইকে থ্যাংকস আমাকে নিয়ে ভাববার জন্য। আমিও মনে করি অ্যাজ এ পারসন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়ায় কাজ করার আমার রাইট আছে। আমি সেটা করে দেখাতে চাই।

আনন্দ আলো: আপনার অতীত নিয়ে মানুষের অনেক কৌতুহল। তাই অতীতের ব্যাপারে প্রশ্ন করছি…

এভ্রিল: সবই ঠিক আছে। কিন্তু মানুষ এতো জেনে কি করবে? আমার অতীতটা কি বদলে দিতে পারবে? সবকিছু কেমন যেন আজব লাগছে…

আনন্দ আলো: মিস ওয়ার্ল্ড হবার জন্য কি কি যোগ্যতা দরকার বলে আপনার মনে হয়। নাচ, গান জানতেই হবে?

এভ্রিল: আমি মনে করি মিস ওয়ার্ল্ড হবার জন্য ডান্স, সং কোনোটাই জরুরি না। একটা হৃদয় খোঁজা হয়। যে হৃদয় অনেক সুন্দর। যোগ্যতা সম্পন্ন একটি মেয়েকে খোজা হয় যে সর্বক্ষেত্রেই পারফেক্ট। দেড় মিনিটের একটা ট্রাডিশনাল নাচ শিখতে বলা হয়েছিল। এটা কোনো ব্যাপারই না। দেড় মিনিটের একটা গান গাওয়া সেটাও তো কঠিন কিছু না। কাজেই আই ডোন্ট থিং… মিস ওয়ার্ল্ড হতে গেলে নাচ গানে পারদর্শি হতেই হবে।

আনন্দ আলো: আচ্ছা আপনার নাম তো ছিল আমেনা। নামটি কি আপনার কাছে ‘খ্যাত’ মনে হয়েছিল…

Avril-1এভ্রিল: (প্রশ্ন টেনে নিয়ে) মোটেই না। নামটা আসলে আমেনা নয় আমিনা। এই নামে শুধু আমার বাবা ডাকতেন। যতদিন পর্যন্ত আমি আমার বাবার সাথে ছিলাম ততদিন তিনি আমাকে আমিনা নামেই ডাকতেন। আমার মা কখনো আমিনা বলে ডাকেন না। তিনি আমাকে ‘আম্মু’ বলে ডাকেন। আমিনা আমার বাবার দেয়া নাম। ওটা আমার ‘নিক’ নেম। ব্যাপারটা এমন নয় যে আমি যেখানেই যাবো আমার ‘নিক’ নামটা বলতেই হবে। আমার সার্টিফিকেট নাম জান্নাতুল নাঈম। আমি সেটাই ব্যবহার করি। যেহেতু আমি মিডিয়াতে কাজ করবো বলে এসেছি তাই মিডিয়ার জন্য একটা নতুন নাম খুঁজেছি। আমি এখানে জান্নাতুল নাঈম ব্যবহার করতে চাইনি। শাকিব খান বলেন, অপু বিশ্বাস বলেন… মিডিয়ায় এসে অনেকেই কিন্তু নিজেদের নাম বদলেছেন। কাজেই আমি মনে করি না এভ্রিল নামে নিজেকে পরিচিত করার ক্ষেত্রে আমি কোনো অন্যায় করেছি। যেটা নিয়ে গোটা জাতি আমার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছে…।

আনন্দ আলো: আপানার কি মনে হয় না আয়োজক প্রতিষ্ঠান আরেকটু ‘বোল্ড’ অথবা সৎ থাকলে আপনাকে এভাবে বিব্রত হতে হতো না?

এভ্রিল: আই থিং সো… উনারা যদি মন থেকে চাইতেন তাহলে হয়তো আমিই বাংলাদেশ মিস ওয়ার্ল্ড হিসেবে সাংহাই শহরে যাবার জন্য তৈরি হতাম। তবে এনিয়ে আমার কোন আফসোস হচ্ছে না। বরং আমার ভেতরে নিজেকে তৈরি করার জেদটা আরো প্রকট হয়ে উঠেছে।

আনন্দ আলো: আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন…

এভ্রিল: এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলবো না। তবে একটি তথ্য দিয়ে রাখি এসএসসিতে ফোর পয়েন্ট ফোর পাওয়ার পর এইচএসসিতে যখন কেউ গোল্ডেন জিপিএ পায় তাকে মেধাবী বলা উচিৎ। আমি বর্তমানে ল পড়ছি। এরপরও যদি কেউ আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাহলে আমার বলার কিছু নাই।

আনন্দ আলো: আপনি নাকি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন?

এভ্রিল: এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। অনেকেই আমাকে এব্যাপারে ফোন করেছেন তাদেরকে বলতে চাইÑ জীবনে এর চেয়ে বাজে সময় পার করেছি কিন্তু আত্মহত্যার মতো বিষয়ে জড়ায়নি। আর এখন এই বয়সে তো প্রশ্নই ওঠে না। আসলে কিছু মানুষ অজানা কারণে আমার পিছু লেগেই আছে। তারা যেন আর আমাকে জীবিতই দেখতে চায় না। নইলে কারও মৃত্যুর মিথ্যে খবরও কী  কেউ এভাবে ছড়াতে পারে! আমি মনে করি, আত্মহত্যা করার মতো কিছু হয়নি। অনেক সংগ্রাম করে, অনেক বাধা পেরিয়ে আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাতেও আমি অভ্যস্ত। হতাশ হয়ে মরে যাওয়ার মতো মেয়ে আমি নই। দেশের অসংখ্য মানুষ, গণমাধ্যমকর্মীরা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। আমাকে সাহস যুগিয়েছেন। সেই সাহসকে অনুপ্রেরণা হিসেবে ধারণ করেই আমি সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

আনন্দ আলো: সমালোচকদের উদ্দেশ্যে আপনার বক্তব্য কী?

এভ্রিল: সমালোচকদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই- একটাবারও কী ভেবেছেন, চারপাশের প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে কতটা সংগ্রাম করে আমাকে আজ এ অবস্থানে আসতে হয়েছে? তিলে তিলে নিজেকে তৈরি করেছি। না পেয়েছি বাবা কিংবা পরিবারের সমর্থন। আপনারা আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন? ১৬ বছরের একটা মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিলে কেন সেটার কোনো শাস্তি হয় না।

আনন্দ আলো: আপনার কী মনে হয়- আপনি হেরে গেছেন?

এভ্রিল: প্রশ্নই ওঠে না। বরং আমি জিতেছি। আজ আমার পশে অনেক ভক্ত এবং মিডিয়া আছে। আমি মন করি এখান থেকেই আমার পথচলা শুরু।

আনন্দ আলো: অনেকেই বলে থাকেন আপনার জীবনাচরণে অনেক সমস্যা আছে। বেশি আপডেট জীবন যাপন আপনার, যেটা আমাদের সমাজে সাংঘর্ষিক…

এভ্রিল: আসলে এখন তো অনেক কথাই হবে। আমার পরিবার থেকে আমি কিছুটা বিচ্ছিন্ন কারন তাদের কথামতো বাল্য বয়সে সংসার করেনি। আর আমি যেহেতু গ্ল্যামার জগতে কাজ করি তাই আট দশজন সাধারণ মানুষ থেকে পোশাক আশাক আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে কথা বলার কী আছে বুঝলাম না। আমার জানামতে, আমি যেমন চলাফেরা করছি এটা ঠিক আছে। বাইরে থেকে আসলে অনেক কথাই বলা যায়। আমি জানি আমি আসলে কী!

আনন্দ আলো: বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?

এভ্রিল: চলচ্চিত্র সহ কিছু বিজ্ঞাপন এবং নাটক-টেলিফিল্মে কাজ করার কথা চলছে। আমি আসলে কিছুদিন সময় নিয়ে তারপর কাজ করতে চাই। নিজেকে কিছু সময় দেই। তারপর কাজ করবো। আর আমি যেহেতু মোটরবাইক ইয়ামাহার সঙ্গে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করি তাই সেখানেও কিছু ব্যস্ততা রয়েছে। তাদের বিভিন্ন বাইকের ইভেন্টে থাকতে হবে।

আনন্দ আলো: নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

এভ্রিল: ভালো কিছু কাজ করে মানুষের হৃদয় জয় করতে চাই। মানুষের মনে দাগ কেটে থাকবে এমন কাজ করতে পারলে ভালো লাগবে- এটাই আমার চাওয়া। আমার আরেকটা ইচ্ছা হচ্ছে, বাল্য বিবাহ রোধে কাজ করা। ভবিষ্যতে পথশিশু এবং উদ্বাস্তু নারীদের নিয়েও কাজ করার ইচ্ছে আছে।