Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

কোরবানির হাট, অনলাইনে কেনা বেচার সুবিধা

ইয়াসিন আযিয
ঈদুল আজহার বেশ কয়েকদিন বাকি রয়েছে। তাই দেশে গরুর হাটগুলো এখন জমে উঠেছে। পাশাপাশি অনলাইনেও জমে উঠছে পশুর হাট। বিক্রয় ডটকম, এখানেই ডটকম, আমারদেশ ই-শপ এবং হাটের গরু ডটকমসহ বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটে কোরবানির পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে। এতে সাড়াও মিলছে বেশ। কোরবানির হাটে মানুষের ভিড়, দালালদের খপ্পর, বাজারের অস্থিরতা- এসব ঝক্কি ঝামেলা এড়াতে অনেক ক্রেতা বিক্রেতা বেছে নিয়েছেন পশুর ভার্চুয়াল হাটকে। পশু কেনাবেচার জন্য খোলা হয়েছে নতুন নতুন ফেসবুক পেইজও। এসব পেইজে ক্রেতারা শুধু গরু ছাগলের ছবিই দেখতে পাচ্ছেন না; পশুর দাম, বয়স, দাঁতের সংখ্যা, ওজন, চামড়ার রং, জাত, জন্মস্থান এবং প্রাপ্তিস্থানও দেয়া থাকছে পোস্টে। ক্রেতারা চাইলে স্বচক্ষে পশু দেখতে যেতে পারেন। আর ছবি দেখেই কিনতে চাইলে বিক্রেতা সেই পশু পৌঁছে দিচ্ছেন ক্রেতার ঘরে। হাট থেকে গরু কিনে এনে কয়েক দিন বাড়িতে লালন পালন করার ঝামেলা এড়াতে ক্রেতারা যেমন ওয়েবসাইটগুলোতে চোখ রাখছেন, তেমনি অনেক বিক্রেতা হাটে গরু নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা পোহাতে চান না। তাই তারা ঝুঁকছেন অনলাইনের দিকে।
রাজধানীর মিরপুর শ্যাওড়াপাড়ার সাশ্রয় এগ্রো নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক রাজিউর রহমান বিক্রয় ডটকমসহ একাধিক ওয়েবসাইটে বিক্রির জন্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১১টি গরুর বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। প্রতিদিন তিনি একটি করে গরুর বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন ক্রেতার ফোন পেয়েছি। এখনও কোনো গরু বিক্রি না হলেও দাম দর হচ্ছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকেই বিক্রি শুরু হয়ে যাবে। তিনি আরো জানান, তার কাছে ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। রাজিউর আরও জানান, গত চার বছর ধরে তিনি অনলাইনে কোরবানির গরু বিক্রি করছেন। প্রতিবছর তিনি ১৫ থেকে ২৫টি গরু আনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকেন। রফিকুল ইসলাম নামে আরেক গরু বিক্রেতা জানান, তিনি কালো রংয়ের একটি ষাঁড় বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। এর দাম চাওয়া হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বিকালেই এক এক করে লোক এসে তার গরু দেখে গেছেন। একজন ক্রেতা গরুটি কিনতে ২ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়েছেন। ২২ আগস্ট সকালে একটি লাল রংয়ের বলদ গরুর বিজ্ঞাপন দেয়া জহিরুল ইসলাম জানান, প্রায় ১৪ মণ ওজনের ওই গরুটির উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। লম্বা ৭ ফুট ৩ ইঞ্চি। পাশ প্রায় ৩ ফুট। এর দাম হাঁকানো হয়েছে ৪ লাখ টাকা। তিনি জানান, তার আরও কয়েকটি গরু আছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলোর বিজ্ঞাপন আনলাইনে দেয়া হবে। জহিরুল আরও জানান, তার গরুগুলো রোগ এবং কৃমিমুক্ত। তার সবগুলো গরুই ভ্যাক্সিন করা বলদ। নাজিম উদ্দিন নামে এক গরু ব্যবসায়ী জানান, গরুর হাটে সাধারণ পশুগুলোকে উঁচুতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ কারণে ছোট গরুও অনেক বড় দেখায়। কিন্তু ফার্মে এ সুযোগ নেই। আমাদের একটি ঠিকানা আছে। অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে ক্রেতারা সরাসরি ফার্মে চলে আসেন। কিন্তু হাট থেকে একবার গরু কিনে নেয়ার পর বিক্রেতাদের আর খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ক্রেতা জানবেও না যে গরুটিকে কী খাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু কেউ ফার্মে গরু কিনতে এলে তিনি দেখতে পারেন গরুকে কী খাওয়ানো হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, কেউ আগেভাগে সাশ্রয়ী মূল্যে গরু কিনে আমাদের ফার্মে রাখতে পারে। চাইলে ওই ক্রেতাকে কুরবানির আগে ডেলিভারি দেয়া হয়। গাজীপুরের শ্রীপুরের আবদুল বাতেন বৃহস্পতিবার সকালে একটি ষাঁড় বিক্রির জন্যে ছবিসহ পোস্ট দিয়েছেন। গরুটির দাম চাওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা। জানতে চাইলে টেলিফোনে আবদুল বাতেন বলেন, আমি গরু ব্যবসায়ী নই। অনেক শখ করে কয়েক বছর ধরে কালো রংয়ের এই ষাঁড়টি লালন-পালন করেছি। এর পেছনে এরই মধ্যে ৫-৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। নিজের গাভীর এ বাছুরটি এখন অনেক বড় হয়েছে। বাজারে নিয়ে যাওয়া ঝামেলা হবে বলে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়েছি। এরই মধ্যে দুইজন ক্রেতা ফোন করেছে।
বাড়ির গরু শিরোনামে উত্তরার জাহিদী হাসান নামের এক ব্যক্তি গত ২১ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিক্রয় ডটকমের মাধ্যমে গরু বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। এতে লেখা হয়েছে, মোটা তাজা দেখতে সুন্দর গরু। নিজ বাড়িতে লালন পালন করা গরু। ৮টি গরু বিক্রি হবে। গরুগুলোকে গ্রামের খাবার যেমন- বিচালি, গাছের পাতা, মাঠের ঘাস, ভাতের মাড় খাওয়ানো হয়। কোনো রাসায়নিক দ্রব্য খাওয়ানো হয়নি। বিজ্ঞাপনের নিচে দেয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে, ফোন ধরেন জিয়ারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, তার বাড়ি মেহেরপুরের গাংনীতে। তিনি ১২টি গরু বিক্রি করবেন। তার ভাইয়ের শ্যালক জাহিদী উত্তরায় থাকেন। বিক্রির সুবিধার্থে জাহিদী গরুগুলোর ছবি তুলে উত্তরায় ঠিকানায় ৮টি গরুর বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। গরু কিনতে অনেকেই ফোন করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিগগিরই বাকি গরুর বিজ্ঞাপন দেয়া হবে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা ও অনলাইনে গরুর ক্রেতা শাহীন আলম বলেন, ভিড় ঠেলে কাঁদা মাড়িয়ে কোরবানির হাটে গিয়ে পশু কিনতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। গত বছর অনলাইনের মধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্যে কোরবানির গরু কিনেছিলাম। এবারও একইভাবে পশু কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, মাঠে গরু নিতে গেলে ব্যবসায়ী বা বিক্রেতাদের পরিবহন খরচসহ নানা কারণে ব্যয় বেড়ে যায়। তাই পশুর দামও বেড়ে যায়। কিন্তু অনলাইনে এ ধরনের খরচ লাগে না। তাই তুলনামূলক কম দামে গরু কেনা যায়। শান্তিনগরের ক্রেতা শফিকুল আযম জানান, গত বছর বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় হাটে গিয়ে গরু কিনতে নাকাল হয়েছি। তাই এবার অনলাইন মাধ্যমে গরু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেকগুলো গরু দেখে যেটা পছন্দ হবে সেটা দেখতে ইচ্ছে করলে বিক্রেতার কাছে চলে যাব।
বিক্রয় ডটকম তার ফেসবুক পেজে লিখেছে- এই ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে কুরবানির অনলাইন ক্রেতাদের জন্য নিয়ে এসেছে আকর্ষণীয় অফার। ত্যাগের মহিমার কোরবানিতে, বিক্রয় গ্রাহকদের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে দেশের বিখ্যাত মীর কাদিম এবং চেন্নাই এক্সপ্রেস গরু। এ গরুগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে- এগুলো সেরা জৈব খাদ্য খেয়ে পালিত, এর মাংস উৎকৃষ্ট, স্বাস্থ্যকর এবং এগুলো ক্ষতিকর ইনজেকশন মুক্ত। ক্রেতারা এই পশুগুলো কিনতে ক্রয়মূল্য থেকে ৭০ ভাগ মূল্য ছাড়ের সুযোগ পাবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে যঃঃঢ়://িি.িনরশৎড়ু.পড়স/য়ঁৎনধহর ভিজিট করা যেতে পারে। বিক্রয় ডটকমের ফেজবুক পেজে সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- সবসময় বিক্রেতার সঙ্গে সরাসরি দেখা করবেন। আপনি যা কিনতে যাচ্ছেন তা দেখার আগে কোনো টাকা পরিশোধ করবেন না। অচেনা কারও কাছে টাকা পাঠাবেন না।
আমারদেশ ই-শপ নামের ওয়েবসাইটের কর্ণধার সাদেকা হাসান জানান, এরই মধ্যে তার ওয়েবসাইটে বেশকিছু গরু-ছাগলের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। অর্ডারও শুরু হয়ে গেছে। আশা করছি বিক্রি অনেক ভালো হবে। অনলাইন গরুর হাট সম্পর্কে জানতে চাইলে এখানেই ডটকমের কর্মকর্তা আফসানা আক্তার বলেন, এ হাটের জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়ছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশ আগে থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতারা অনলাইন হাটের দিকে আগ্রহী হয়ে। গত কয়েকদিন থেকেই সারাদেশে শুরু হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। ইতোমধ্যে দেশ জুড়ে জমে উঠেছে এসব পশুর হাট।
রাজধানী ঢাকার বাইরে বিভাগীয় মহানগরী এবং অন্যান্য নগর-মহানগর, জেলা শহর, উপজেলা সদর ও ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পশু ও হাট-বাজারে এখন জমজমাট গরুর হাট।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর রাজধানীতে সম্ভাব্য পশু কোরবানির সংখ্যা ৩ লাখ ৬১ হাজার ৪১০টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪১ হাজার ৪১০টি। ঈদুল আজহা উপলক্ষে জমে উঠছে রাজধানীর পশুর হাটগুলো। দুই সিটি করপোরেশন এলাকার অস্থায়ী হাটগুলো কোরবানি ঈদের তিন দিন আগেই পুরোদমে জমবে, যদিও ঈদ একদিন পিছিয়ে যাওয়ায় পশু কেনার সুযোগ বেড়েছে বাড়তি আরও একদিন। রাজধানীর বড় পশুরহাট গাবতলী, আফতাবনগর, খিলক্ষেতের বনরূপা, পুরান ঢাকার হাটসহ অন্যান্য এলাকার পশুর হাট ঘুরে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এবার হাটের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। দেশি গরুসহ, ভারতীয়, নেপালি ও বেশ কয়েকটি বিদেশি জাতের গরুও রাজধানীর হাটগুলোয় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে শুক্রবার পর্যন্ত হাটগুলোয় দেশি গরুর সংখ্যাই বেশি দেখা গেছে। কিছু অংশে রয়েছে খাসি ও অন্যান্য পশু।
দুই সিটির পশুর হাট : ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ২২টি অস্থায়ী ও গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। অস্থায়ী হাটগুলোয় এরই মধ্যে কেনাবেচা জমে উঠতে শুরু করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে হাট বসানো হয়েছে ১০টি। এর মধ্যে নয়টি অস্থায়ী আর গাবতলী হাটটি স্থায়ী। হাটগুলো বসেছে কুড়িল ফ্লাইওভারসংলগ্ন পূর্বাচলমুখী ৩০০ ফুট প্রশস্ত সড়কের পাশের বাংলাদেশ পুলিশের হাউজিংয়ের জমি ও আশপাশের খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ ও ১৬ নম্বর সেক্টরের মধ্যবর্তী সেতুসংলগ্ন খালি জায়গা, খিলতে বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, মহাখালীর কড়াইল এলাকার টিঅ্যান্ডটি মাঠ, মিরপুর সেকশন-৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্পের খালি জায়গা, বাড্ডা (ইন্দুলিয়া, দাউদকান্দি, বাঘাপুর), আশিয়ান সিটি হাউজিং ও ভাটারায় (সাইদনগর)। দণি সিটি করপোরেশন বা ডিএসসিসিতে হাট বসেছে ১২টি। হাটগুলো হচ্ছেÑ রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাজারের হাট, সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, ধুপখোলার ইস্ট অ্যান্ড কাব মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ সংলগ্ন জায়গা, জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের ভেতরের জায়গা, ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা এবং শ্যামপুর ও দনিয়াহাট।
গাবতলী পশুর হাট : রাজধানীর সবচেয়ে বড় পশুর হাট গাবতলী। গাবতলী বাস টার্মিনালসংলগ্ন এ পশুর হাটে বছরজুড়ে গরু কেনাবেচা চলে। তবে কোরবানির ঈদে স্থায়ী এ হাট ঘিরে এক আলাদা পরিবেশ গড়ে ওঠে। প্রতিবারের মতো এবারও হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জাল টাকা শনাক্ত করার জন্য প্রতিটি হাসিলঘরে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন বসানো হয়েছে। হাটজুড়ে শতাধিক স্থানে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ১০টি হাসিলঘর বসেছে, হাসিল শতকরা ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাট পরিচালনা কমিটি-সংশ্লিষ্টরা। আগত ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিশেষ নিরাপত্তার জন্য ৫০০ থেকে ৭০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। পশুগুলোকে নামানোর জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে হাটের পশ্চিম পাশে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে গাবতলীর হাটে প্রায় দেড় লাখ পশু রাখার ক্ষমতা আছে, অন্য সময় থাকে ১ লাখ। ঈদ উপলক্ষে এর আয়তন বাড়িয়ে ধারণক্ষমতা বাড়ানো হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলপ্রতি প্রায় ১০ থেকে ২০ হাজার পশু হাটে আসে। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার পশু বেচাকেনা হয়। গাবতলীর হাটে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট, দুম্বাও নিয়ে আসা হয়েছে অন্যবারের মতো। তবে অন্যান্য পশুর তুলনায় বিভিন্ন জাতের গরু বেশি দেখা গেছে। এ ছাড়া কয়েকশ খাসি ও সাত থেকে আটটি উট বিক্রি হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আফতাবনগর পশুর হাট : রাজধানীর রামপুরা-বাড্ডার মধ্যস্থলে অবস্থিত জহিরুল ইসলাম সিটির আফতাবনগর কোরবানির পশুর হাট। সর্বশেষ পাঁচ বছর ধরে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে এ হাটটি। সামনে হাতিরঝিল, ডান পাশে রামপুরা ও বামে বাড্ডা নিয়েই জহিরুল ইসলাম সিটি। ইন্দুলিয়া, দাউদকান্দি, বাঘাপুরÑ এ তিনটি এলাকা ধরেই আফতাবনগর পশুর হাটের বিস্তৃতি। স্থানীয় বাসিন্দা ও ইজারা সংশ্লিষ্ট গাজী বাদল বলেন, অন্তত হাজার বিঘা জায়গার ওপর এখানকার পশুর হাট। কয়েক বছর ধরে আফতাবনগরে এ হাটটি বড় পরিসরে আয়োজন করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের যেমন কুষ্টিয়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী এলাকার পশু খামারি ও ব্যবসায়ীরা এ হাটে তাদের পোষা গরু বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। এখানে ১২টি হাসিলঘর বসানো হয়েছে, সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাহিনী সাতটি ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে। আর ক্রেতা-বিক্রেতাদের সব রকমের সহযোগিতায় ১ হাজার কর্মীবাহিনী নিয়োজিত রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন হাজি বাদল। জাল টাকা নিরূপণের জন্য রয়েছে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন। আফতাবনগরের এ হাটে রামপুরা, বাড্ডা, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, গুলশানসহ আশপাশের সব এলাকার মানুষ কোরবানির পশু সহজে কিনে বাসায় নিতে পারবেন।
খিলক্ষেতের বনরূপা : রাজধানীর খিলতে বনরূপা হাউজিংয়ের খালি জায়গায় কাশফুলের ছড়াছড়ি। তবে এ চিত্র আড়াল হয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কোরবানির পশুবাহী ট্রাকগুলো এই বনরূপা হাউজিং প্রকল্প এলাকার হাটে এসে নামছে। হাটটি ইজারা নিয়েছেন সালাম অ্যান্ড সন্স গ্রæপের রফিকুল ইসলাম। বনরূপার এ হাট ঘুরে দেখা গেল, পুরো হাটকে চারটি বিটে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে এ হাটে কোরবানির গরু আনছেন এমন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বনরূপার এ হাটটি অন্তত ১০ বছর ধরে চলছে। বর্তমানে এটি খিলক্ষেত, সেনানিবাস, এয়ারপোর্ট, উত্তরা, বসুন্ধরাসহ আশপাশের সবারই পশু কেনার গন্তব্যস্থলে পরিণত হয়েছে। কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ থেকে গরু ব্যবসায়ীরা এসেছেন। এরই মধ্যে হাটে হাজার তিনেক গরু নিয়ে আসা হয়েছে। কোরবানি ঈদের আর মাত্র তিন দিন বাকি, এ জন্য সবাই সবার মতো কোরবানির পশু পছন্দ করতে ব্যস্ত। হাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাটের প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোরবানি পশুতে ভরে গেছে। হাটসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বনরূপায় মূলত গরুই বেশি ওঠে। কুষ্টিয়া থেকে আসা আব্দুল আলিমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি সাতটি গরু এনেছিলেন, দুটি বিক্রি হয়েছে। দরদাম ঠিকমতো পেলে বাকিগুলো বিক্রি করবেন। বনরূপায় সবচেয়ে দামি গরুর দাম চাওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এত দাম কেন জিজ্ঞেস করলে মালিক জানান, কয়েক বছর ধরে পোষা এই একটি গরুই হাটে নিয়ে এসেছেন, খরচ আর বর্তমান বাজার বিবেচনায় রেখে ১০ লাখ দাম তুলেছেন। সার্বিক নিরাপত্তায় হাটে সাদা পোশাকের পুলিশ, আনসার ও ইজারাদার-সংশ্লিষ্ট কর্মীবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছেন। এলাকাজুড়ে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
পুরান ঢাকার পশুর হাট : রাজধানীর পুরান ঢাকায় এবারের কোরবানির ঈদে বেশ কয়েকটি পশুর হাট বসেছে। হাটের ভেতরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গরু, মহিষ ও খাসি সারি করে বেঁধে রাখা হয়েছে। গরুর সঙ্গে বিক্রেতার পাশাপাশি হাটের ইজারা নেয়া লোকজনের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। পুরান ঢাকার ধুপখোলা মাঠ পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায় গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল বাঁধা রয়েছে। পুরান ঢাকার এ এলাকায় যে পশু বিক্রি হচ্ছে, এর মধ্যে গরু ও ছাগলের সংখ্যা বেশি। ধুপখোলা ইস্ট অ্যান্ড কাব মাঠ ছাড়াও পুরান ঢাকার অন্যান্য পশুর হাটগুলো হলোÑ লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট-সংলগ্ন খালি জায়গা, বেড়িবাঁধ ও তার আশপাশের খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন খালি জায়গা। ইজাদার-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার পশুর হাট নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যেই থাকতে হবে। বাইরে কোনোভাবেই পশু বিক্রি করতে দেয়া হবে না। এখনো সেভাবে জমে না উঠলেও তারা আশা করছেন, ঈদের ঠিক তিন-চার দিন আগে থেকেই জমজমাট পশু বিক্রি শুরু হবে। পশুর হাটকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি থাকবে ডিবি, সিআইডিসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা হাটের নিরাপত্তা জোরদার করেছেন। চেকপোস্ট বসিয়ে মাঝে মধ্যে তল্লাশি করছে। সিসি টিভির মাধ্যমে সার্বক্ষিণক মনিটরিং করা হচ্ছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা হাটে মিশে গিয়ে অপরাধী শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। আবার ক্রেতা-বিক্রেতার লেনদেন সঠিকভাবে করতে জাল টাকার নোট শনাক্ত মেশিনসহ ব্যাংকগুলো সহযোগিতা করছে।
অনলাইনেও পশুর হাট : কয়েক বছর ধরেই অনলাইনে গরু কেনাবেচায় জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কোরবানির পশু কেনাবেচায় খোলা হয়েছে নতুন নতুন ফেসবুক পেজ। কোনো কোনো পেজ আবার কয়েক বছরের পুরনো। এসব পেজ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্রেতাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়ে দিচ্ছেন পেজের উদ্যোক্তারা। গরু-ছাগলের ছবি, পশুর দাম, বয়স, দাঁতের সংখ্যা, ওজন, চামড়ার রং, জাত, জন্মস্থান ও প্রাপ্তিস্থানও তারা উল্লেখ করছেন। এক্ষেত্রে ক্রেতারা চাইলে সুচক্ষে পশু দেখতে যেতে পারেন। আবার কেউ ছবি দেখেই কিনতে চাইলে বিক্রেতা সেই পশু পৌঁছে দিচ্ছেন ক্রেতার ঘরে। ‘ফেসবুকে গরুর হাট’, ‘গাবতলী কাউ হাট’ নামে একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে। এ রকম ফেসবুকসহ অনলাইনের মাধ্যমে গরু-ছাগল কোরবানির পশু বিক্রি করার অনেক প্রতিষ্ঠান খুলেছেন উদ্যোক্তরা। অনেকে আবার একেবারে বিনা পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করেছেন। অনলাইনে গরু-ছাগল বিক্রির আরও উল্লেখযোগ্য সাইট হলোÑ বিক্রয় ডটকম, আমার দশ ই-শপ, এখানেই ডটকম, সাশ্রয় এগ্রো। এ ছাড়া ফেসবুক পেজের মধ্যে রয়েছেÑ গরু, গাবতলী গরুর হাট, গাবতলী কাউ ক্যাটেল মার্কেট, ঢাকা গরুর হাট, আফতাবনগর গরুর হাটসহ আরও অনেক পেজ। শুধু ঢাকা নয়, বাইরের জেলা শহরগুলোতেও এমন গরুর হাটের ফেসবুক পেজ রয়েছে।