Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

কিসের টানে বইয়ের মেলায়?

ফরহাদ আলম
ছেলেটির পকেট হাতড়ে সবেমোট পাওয়া গেলো সতেরো টাকা। আমার দিকে আলতো করে মুখটা উচিয়ে চকচকে একটা হাসির দ্যুতি ছড়িয়ে জলজ্বলে চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন। তার এই গল্পটি অন্য আর দশজন মানুষের তুখোড় কোন গল্পের কাতারে মেলাতে চায় না ছেলেটি। এ নেহাতই নাকি তার এক ধরনের পাগলামী। প্রতিবছর উত্তরবঙ্গের জেলা জয়পুরহাট থেকে ছুটে আসে ছেলেটি বাংলা একাডেমির মাঠে, এই ভাষার মাসে,এই বই মেলার মাঠে। খ্যাতিমান কোন লেখকের অটোগ্রাফ সাদা কাগজে টুকে নিয়ে গিয়ে বন্ধুদের দেখানোর উদ্দেশ্যে নয়, কিংবা একটা সেলফি তুলে জানান দিতে নয় যে সেও আছে বই মেলায় । আস্তে করে প্রশ্ন করলাম, তাহলে কেন এই ছুটে আসা? আবারো চকচকে একটা হাসি,“ আসলে কেন যে আসি সেটা বলতে পারবো না ,তবে একুশে বই মেলা শুরু হলেই টিভি ও পত্র-পত্রিকায় খবর দেখে মনের মধ্যে কেমন কেমন যেন করে । মাসব্যাপি বই মেলা আর আমি আসবো না বই মেলায় তা কি করে হয়। ঠিক এমন একটা বোধ থেকেই প্রতিবছর একদিনের জন্য এই ঢাকায় ছুটে আসা।” কথাগুলো বলতে বলতে একসময় ছেলেটির চোখ কিছু একটা ভেবে ভিজে ওঠে । সবেমাত্র অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে । যাওয়া আসার টাকা লাগে। খাবারের জন্য টাকা লাগে গাড়িভাড়া লাগে। ট্রেনে আসার সময় টিটির চোখ ফাকি দিতে গিয়ে কখনো কখনো টয়লেটে আতœগোপন করতে হয় এরকম আরো কতো কি। তবুও তাকে নাকি আসতেই হবে। ছেলেটির কি সহজ সরল উক্তি “ভাষার জন্য কতোমানুষ প্রান দিয়েছে ,আমাদের তো আর এখন সে সুযোগ নেই তাই বলে কি একটু কষ্ট করে বইমেলাটা ঘুরে যেতে পারবো না।” একটু অনুরোধ করলাম একটা হাসি মাখা ছবির জন্য। লজ্জাবনত মুখটি নিচের দিকে করে না সূচক মাথা নাড়ালো। সে আজকে ছবি উঠাবে না সেই সাথে নিজেকে নিয়ে গোপন একটি তথ্যও দিয়ে গেলো। শামীম একটু আধটু কবিতা লেখে, ই”েছ আছে সামনের বই মেলায় একটা কবিতার বই বের করবে। তখন যদি দেখা হয় তাহলে নিজে থেকেই ছবি ওঠার জন্য পোজ দেবে।