সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
কলকাতা থেকে রাজর্ষি দাস: আমাদের কলকাতা মন্দিরের নগরী আর ওপারের ঢাকা হলো মসজিদের নগরী। মন্দির আর মসজিদ দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়। কিন্তু উৎসব পার্বণে সকলেই যেন এক সূত্রে বাধা। আর তাই আনন্দ আলো এবার সঙ্গী হয়েছিল ওপারের পুজা উৎসবে। কলকাতার ২৫০টি পুজা মন্ডপে আনন্দ আলো এবছর বন্ধুর ভূমিকা পালন করেছে। কলকাতায় দোকানিয়াস অ্যাডলিং দশভূজা সম্মান ২০১৫ প্রদান উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও শ্রেষ্ঠ পুজা মন্ডপ নির্ধারনের জন্য এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আনন্দ আলো ছিল এই প্রতিযোগিতার মিডিয়া পার্টনার।
ঢাকা আর কলকাতা বৃহৎ অর্থে বাংলাদেশ আর ভারতের পুজা উৎসব প্রায় একই রকম। তবে কলকাতার চিত্রটা একটু ভিন্ন। পুজা উৎসব মানেই কলকাতায় সব কিছুই বদলে যাওয়ার দৃশ্য। মানুষের জীবন যাত্রা, খাওয়া দাওয়া, লাইফ স্টাইল সব কিছুই বদলে যায় পুজা উৎসবকে ঘিরে। বিশেষ করে দল বেধে পুজা মন্ডপে প্রতিমা দর্শনের আনন্দ মিছিলে মিশে যায় সকলে। এই পুজা মন্ডপ থেকে সেই পুজা মন্ডপ, এই পাড়া থেকে সেই পাড়া দল বেধে ঘোরাঘুরি চলে অধিক রাত পর্যন্ত। মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা দর্শন করে ভক্তরা মনের কোনে বাছাই করে নেন শ্রেষ্ঠ মন্ডপকে। এটা নয়, ওটা ভালো হয়েছে। ওটার চেয়ে ঐটা আরও ভালো। এই বাস্তবতাকে মাথায় রেখেই কলকাতায় শুরু হয়েছিল দশভুজা সম্মাননা প্রদানের উদ্যোগ। এবার এই উদ্যোগের আন্তরিকতা ছিল বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার মতো। ‘ঢাক ঢোল, ধুপের গন্ধে মেতে উঠুন আমাদের সঙ্গে’ üদয় ছোঁয়া এই শ্লোগানের উজ্জ্বলতায় এবারের প্রতিযোগিতা হয়ে ওঠে অন্যবারের চেয়ে আরও বেশী স্বত:স্ফূর্ত, আরও বেশী প্রাণবন্ত।
কলকাতার পূজা মন্ডপ তৈরী করতে শিল্পীরা এবারও মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ইতিহাস ঐতিহ্যকেই। পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাসের পূজা বলে পরিচিত সুরুচী সংঘের মন্ডপের এবারের থিম ছিল তামিল নাড় রাজ্যের অপরূপ সৌন্দর্য। বহুবছরের প্রতিক্ষিত ছিট মহল সমস্যা এবার সমাধান হয়েছে দুই দেশের আন্তরিকতায়। সেই ছিট মহলকে উপজীব্য করে পূজা মন্ডপ করেছিল কসবা শক্তি সংঘ। বাংলাদেশের উপ হাই কমিশনার কলকাতায় অফিসিয়াল ভাবে এই পূজামন্ডপ উদ্বোধন করেছেন। কাশিবোস লেন তাদের পূজা মন্ডপের বিশেষ থিম করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। এবার পল্লী সংঘ দুর্গা মন্ডপ মাটি দিয়ে তৈরী করে সেরা প্রতিমা অ্যাওর্য়াড পেয়েছে। এই পূজা মন্ডপ কলকাতার মেয়র রতনদে’র পূজা বলে পরিচিত। চিটলা অগ্রনী পূজা মন্ডপ বড় বড় ড্রাম দিয়ে তৈরী করেছিল বিশ্বখ্যাত চিত্র শিল্পী সান্তানা ডানডি। এই পূজা মন্ডপ- পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ববি হাকিমের পূজা বলে পরিচিত। সুবচয় সংঘ বিশাল ফুলের আকৃতিতে পূজা মন্ডপ তৈরী করেছিল। যা দেখে দশনার্থীরা অনেক আনন্দ পেয়েছে। এই মন্ডপটি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির নাক তলা উন্নয়ন সংঘের পূজা বলে পরিচিত।
উন্নয়ন মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাসের সুরুচী সংঘ-এর পূজা মন্ডপ দেখতে এবার প্রায় ৭০ হাজার দর্শনার্থী এসেছিল বলে আয়োজক কমিটি জানিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবার পূজার গান রচনা করেছেন। গানের সুর করেছেন খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক জিৎ গাঙ্গুলী। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল। গানের মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেন কলকাতা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নির্মাতা রাজ চক্রবর্তী। মিউজিক ভিডিওর নির্মাণ পরিকল্পনায় ছিলেন মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস। সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের কাছে ‘মা’ শব্দটি মধুরতম একটি শব্দ। এই গানে সেকথাই প্রকাশ পেয়েছে।
বিচারকার্য: ১৯ অক্টোবর থেকে ফাইনাল বিচারকার্য শুরু হয় মোট ১৭টি পূজা মন্ডপ নিয়ে। বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় কলকাতা স্টল্ট লেক-এর ডি সুবরানী হোটেলে। এখান থেকে বিচারক সহ ৬০ জনের একটি টিম বের হয়। তাদের সাথে ৩০টি মটর সাইকেলের একটি শোভাযাত্রাও ছিল।
বিচারক মন্ডলী: সেমিফাইনালে ৬০টি পূজা মন্ডপ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এই পর্বে বিচারক হিসেবে অংশ নেন আশীষ সিংহ রায়, প্রসেনজিৎ সিংহ, অমিত কুশারী, বিউটি প্রোডাক্ট ব্লোসম ক্লোসার- এর টিম ও মিল্কফার্ম অর্গানাইজেশন গর্ভনমেন্ট অব ইন্ডিয়া।
চূড়ান্ত বিচারক মন্ডলী: ফাইনাল বা চূড়ান্ত পর্বের বিচারক ছিলেন বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, টিভি পলিটিক্যাল প্রোগ্রাম এনালিষ্ট ও বিখ্যাত বিউটি কনসালটেন্ড পাপিয়া সিংহরায়, বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার অনর্ব সেন গুপ্ত, বিদূব্রত বন্দোপাধ্যায়, সম্পাদক দৈনিক একদিন, দিবদ্রিতা বন্দোপাধ্যায়, ফিল্ম ডিরেক্টর সৌমিত্র গুপ্ত, ডিরেক্টর স্বর্নালী সরকার, সিনিয়র সাব এডিটর এপিপি, শিল্পী সম্ভামূর্তি, সাংবাদিক বর্তমান দৈনিক পত্রিকা। আরো উপস্হিত ছিলেন মিডিয়া পার্টনার ও স্পন্সর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
যারা পুরস্কার পেলেন
২১ অক্টোবর পুরস্কার বিতরন করা হয়। মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আয়োজক ও বিচারকরা।
এবারের দূর্গা পুজায় দোকানিয়াস এ্যান্ডলিংক দশভূজা সম্মান ২০১৫’র প্রথম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেছে সুরুচী সংঘ, দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছে তালা বারউয়ারী দূর্গোৎসব, ততৃীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছে ৪১ পল্লী ক্লাব হরিদেবপুর। শ্রেষ্ঠ প্রতিমার পুরস্কার পেয়েছে ৯৫ পল্লী যোদপুর র্পাক, শ্রেষ্ঠ থিমের পুরস্কার পেয়েছে কাসীবোস লেন দূর্গাপূজা কমিটি, শ্রেষ্ঠ আলোকসজ্জার পুরস্কার পেয়েছে নেতাজী কলোনী লো ল্যান্ড সার্বজনীন দূর্গোৎসব সমিতি। নতুন উদ্যোগের পুরস্কার পেয়েছে দমদম অরুন দল সংঘ, শ্রেষ্ঠ পরিবেশের পুরস্কার পেয়েছে নোলীন সরকার স্ট্রিট সার্বোজনিন পূজা কমিটি, শ্রেষ্ঠ সংগঠনের পুরস্কার পেয়েছে দর্জিপাড়া ব্যায়াম সমিতি, কম বাজেটে সেরার সেরা পুরস্কার পেয়েছে হালসি বাগান সার্বোজনিন পূজা কমিটি, প্রথম শ্রেষ্ঠ থিম মিউজিকের পুরস্কার পেয়েছে চিটল অগ্রনী সংঘ, তৃতীয় শ্রেষ্ঠ থিম মিউজিকের পুরস্কার পেয়েছে অবসর সার্বজনিন দূর্গোৎসব সমিতি।
এই প্রথম দেশের বাইরে প্রতিযোগিতামূলক কোনো উদ্যোগের মিডিয়া পার্টনার হয়েছিল ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেডের বিনোদন পাক্ষিক আনন্দ আলো। আনন্দ আলোর পক্ষে দোকানিয়াস এ্যাডলিংক দশভূজা সম্মান ২০১৫-এর বিচার কার্যে অংশ নেন বিশিষ্ট অভিনেতা ও চ্যানেল আইয়ের কর্মকর্তা শহিদুল আলম সাচ্চু এবং আনন্দ আলো’র হেড অব মার্কেটিং হুমায়ূন কবির হিমু।
দোকানিয়াস এ্যাডলিংক, দশভূজা ২০১৫ এর কনসেপ্ট ও ম্যানেজমেন্ট বাই রাজশী দাস ওনার এফথ্রি ইনকর্পোরেশন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন সান্তানুজ পোদ্দার ওনার এ্যাডলিংক। গ্র্যান্ড স্পন্সর দোকানিয়াস, পাওয়ার্ড বাই ব্লোসম ক্লোসার, টিভি মিডিয়া পার্টনার: নিউজ টাইম টিভি চ্যানেল, প্রিন্ট মিডিয়া পার্টনার: দৈনিক একদিন, ম্যাগাজিন মিডিয়া পার্টনার: আনন্দ আলো (বাংলাদেশ), রেডিও পার্টনার: রেড এফএম, ইসপিটালিটি পার্টনার: ডি সুবরানী হোটেল, ক্রিয়েটিভ পার্টনার: অরিয়ন গ্রাফিকস, গিফট পার্টনার: প্রিন্ট টু গিফট।