Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

এই ভালোবাসার রিটার্ন দিতে চাই-মিম

আনন্দ আলো: ২০১৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। অনুভূতি জানতে চাই?

বিদ্যা সিনহা মিম: এই অনুভূতি অসাধারণ। এই অনুভূতির কথা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ের বিষয়টি প্রথমদিকে আমার নিজেরই বিশ্বাস হয়নি। এরপর সবাই যখন শুভকামনা জানাচ্ছিলেন তখন মনে হলো হয়তো ঘটনা সত্যি। আর যেদিন পুরস্কার হাতে পেলাম সেই দিন আমার স্বপ্নের একটি দিন ছিল, যা সব শিল্পীরই থাকে। আর এতবড় খুশির খবর পেলে কার না ভালো লাগে বলুন? গত কয়েক মাসে এতো এতো প্রাপ্তি, তাই এখন আরো সাবধান থাকছি, যাতে কোনো ভুল ডিসিশন না নিয়ে ফেলি। ছবির স্ক্রিপ্ট থেকে শুরু করে সবকিছুতেই একটু বেছে বেছে কাজ করছি। আমি যে ছবির জন্য (জোনাকির আলো) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি সেই ছবির পরিচালক প্রয়াত খালিদ মাহমুদ মিঠুই আমাকে প্রথম খবরটা দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। অথচ তিনি আমাকে পুরস্কার হাতে দেখে যেতে পারলেন না। তিনি বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই অনেক খুশি হতেন।

এই মুহূর্তে একটি খুশির খবর দিতে পারি- সম্প্রতি কোনো কর্তন ছাড়াই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছে আমার অভিনীত নতুন ছবি ‘ভালোবাসা এমনই হয়’। ছবির নির্মাতা আমাদের সবার প্রিয় অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ। শুরুতে ছবিটির নাম ছিল ‘গুডমর্নিং লন্ডন’। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর প্রযোজনায় শিগগিরই এই ছবি মুক্তি দেয়া হবে।

আনন্দ আলো: ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ‘জোনাকির আলো ছবিতে অভিনয়ের সময় কি ভেবেছিলেন এর জন্য এমন স্বীকৃতি পাবেন?

বিদ্যা সিনহা মিম: না, না, সেভাবে একদমই ভাবিনি। তবে শুটিংয়ের সময় পরিচালক আমাকে বলেছিলেন, ‘মিম, তুমি অনেক ভালো অভিনয় করেছ। এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতেও পারো।’ তিনি মাঝে মধ্যেই এ কথাটা আমাকে বলতেন। তাই তো পুরস্কার নেয়ার সময় বার বার তাঁর কথা মনে হচ্ছিল।

আনন্দ আলো: পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে আপনি প্রধানমন্ত্রীকে কিছু একটা বলেছিলেন। কী বলেছিলেন?

বিদ্যা সিনহা মিম: একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে দিনটি (১১ মে, ২০১৬) আমার জন্য সত্যিই মনে রাখার মতো । মঞ্চ থেকে যখন আমার নাম ঘোষণা করা হয়, তখন কিছুটা নার্ভাস হয়ে মঞ্চে উঠে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কারটি গ্রহণ করি। সেসময় তিনি আমাকে শুভেচ্ছা জানান এবং আমিও তাকে ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে গ্রুপ ছবি তোলেন এবং তরুণ শিল্পীরা যে অনেক ভালো কাজ করছে সেই সম্পর্কে তিনি খুব খুশি সেটিও আমাদেরকে জানান। আমাকে দেখে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, তুমি তো খুব লম্বা, তোমার জন্য তো লম্বা হিরো লাগবে? প্রধানমন্ত্রী আমার অভিনয়ের প্রশংসাও করেছেন। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সৈয়দ হাসান ইমাম আংকেল। তিনি আমাকে দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘ও নতুনদের মধ্যে অনেক ভালো কাজ করছে।’ প্রধানমন্ত্রী মজা করে বললেন, ‘ও এত লম্বা, ওর জন্য তো এখন হিরো পাওয়া কঠিন!’ পাশে ছিলেন আলমগীর আংকেল। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে বললেন, ‘তুমি যদি এখনকার হিরো হতে, তাহলে ওর জন্য খুব ভালো হতো।’ আমার অভিনয় জীবনে এই ঘটনাটি সুখের স্মৃতি হয়ে থাকবে। এই ঘটনা থেকে বুঝেছি- আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী খুব সহজেই মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন। বিদায় নেয়ার সময় বললেন, ‘দোয়া করি তুমি অনেক ভালো কাজ করো।’ তাঁর কাছ থেকে এই আশীর্বাদ পাওয়া আমার জন্য অনেক ভালো লাগার ব্যাপার।

আনন্দ আলো: পুরস্কার পাওয়ার পর আপনার কাজের ক্ষেত্রে কেমন পরিবর্তন হবে?

MIM-2বিদ্যা সিনহা মিম: আমি আগেও যেমন ভালো কাজ করেছি, বর্তমানেও সেভাবেই কাজ করব। পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আনব না। সবসময় ভালো গল্প, ভালো চরিত্র এবং ভালো পরিচালকদের কাজ করেছি এবং ভবিষ্যতেও করবো। তবে পুরস্কার পাওয়ার পর এখন দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। আমি এব্যাপারে বেশ সচেতন। আমি কিন্তু আগে থেকেই ভেবেচিনেৱ কাজ করতাম। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

আনন্দ আলো: চলচ্চিত্র নাকি টিভি নাটক বর্তমানে কাজ করার ক্ষেত্রে কোন মাধ্যমকে এগিয়ে রাখবেন?

বিদ্যা সিনহা মিম: দেখুন, একজন অভিনয়শিল্পীর স্বপ্নই থাকে বড় পর্দায় কাজ করার। আমি চলচ্চিত্রে কাজ করছি এবং বোধকরি সফলও হয়েছি। শুরুতে যদি ‘আমার আছে জল’ ছবির কথা বলি তাহলে বলবো হুমায়ূন আহমেদ-এর মতো প্রতিথযশা নির্মাতার ছবিতে কাজ করা সত্যিই যেকোনো অভিনয় শিল্পীর জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। আর ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর মতো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের আশীর্বাদ পাওয়া এটাও অনেক আনন্দের। সেই ধারাবাহিকতায় ‘তারকাঁটা’, ‘জোনাকীর আলো’ ছবিগুলোতে অভিনয় করি। এখন মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘সুইটহার্ট’সহ বেশকিছু ছবি। নতুন করে করছি ‘দাগ’ ও ‘রক’ ছবি দুটি। অন্যদিকে কলকাতার ‘ব্ল্যাক’ ছবিটিতে অভিনয় করি। যেটি কলকাতায় মুক্তি পাওয়ার পর বেশ প্রশংসা পাই। তাই তো সেখানে সোহমের সাথে আরেকটি ছবি করার বিষয়ে কথাবার্তা ফাইনাল হয়েছে। ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে আমার আর সোহমের মধ্যে দারুণ একটা বোঝাপড়ার জায়গা তৈরি হয়েছে। তাই নতুন কাজটি ভালো হবে বলেই আমি বিশ্বাস করছি। ফলে এই মুহূর্তে চলচ্চিত্রের বাইরে কিছু চিনৱা করতে পারছি না। তবে বিজ্ঞাপনে কাজ করছি। অনেকেই মনে করেন বিজ্ঞাপন ১ মিনিটের হওয়ায় বোধকরি। সময় ও শ্রম কর্ম লাগে এই ধারনা ভুল। বরং বিজ্ঞাপনে অল্প সময়ের মধ্যে দর্শকের মনে প্রভাব রাখার জন্য অনেক বেশি শ্রম দিতে হয়। যদিও এ চ্যালেঞ্জটুকু নিতে আমার বেশ ভালো লাগে। তাই সুযোগ পেলেই বিজ্ঞাপনে অভিনয় করি। বিজ্ঞাপনের ওপর আমার এক ধরনের নেশা তৈরি হয়েছে । তবে টিভি নাটকে এই মুহূর্তে আমাকে দেখা যাবে না।

আনন্দ আলো: আপনার ভক্তরা আপনাকে সাহিত্যিক হিসেবেও পেয়েছেন। লেখালেখির খবর কী?

MIM-1বিদ্যা সিনহা মিম: (একটু হেঁসে) সত্যি কথা বলতে কী সাহিত্যের বিষয়ে আমি খুবই দুর্বল। সময় পেলেই বই পড়ি। সেই পড়ার অভ্যাস থেকেই আসলে লেখালেখির প্রতি সখ্যতা গড়ে ওঠে। ২০১২ সালে আমার প্রথম লেখা বই ‘শ্রাবনের বৃষ্টিতে ভেজা’ প্রকাশিত হয়। ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস ‘পূর্ণতা’। দুটো বই-ই বইমেলায় ভালো সাড়া ফেলে। এখনো মাঝে মাঝে সময় পেলে লিখি। তবে নতুন বই কবে আসবে সেটা বলতে পারছি না। মনের ভাবনাগুলো লিখে রাখতে পারলে ভালো লাগে। হয়তো চলতে চলতেই কোনো গল্প মাথায় আসে তখুনি সেটা লেখার চেষ্টা করি। তবে সবসময় সেটা হয়ে উঠে না।

আনন্দ আলো: চলচ্চিত্রের পরিবেশ এখন কেমন দেখছেন?

বিদ্যা সিনহা মিম: আমাদের চলচ্চিত্রে তো নানান ধরনের সমস্যা রয়েছেই। আমাদেরকে সমস্যার মাঝেই কাজ করতে হচ্ছে। তবে নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও কিছু তরুণ নির্মাতা এসেছেন যারা আসলে ভালো কাজ করছেন। কিন্তু তাদের ছবি মুক্তি দেয়া নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ছবি মুক্তি দেয়ার সিস্টেমটায় নানান ঝামেলা রয়েছে। এই বিষয়টির সমাধান হওয়া উচিত। একটি ভালো ছবির জন্য প্রথমে একটি ভালো গল্প প্রয়োজন। এই অভাবটা আমাদের এখানে প্রকট। সবাই কেমন জানি একই ফরম্যাটের গল্প নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসে। এটা পরিহার করা উচিৎ বলে আমি করি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ হতে পারে। এতে দর্শক উৎসাহী হবে প্রেক্ষাগৃহে আসার জন্য।

আনন্দ আলো: নিজের কোনো স্বপ্নের কথা বলা যায়?

বিদ্যা সিনহা মিম: একটা সময় স্বপ্ন ছিলো চলচ্চিত্রের এই অঙ্গনে নিজের অবস্থান তৈরি করা। আজ বোধকরি সেটা হয়েছে। মানুষের অনেক ভালোবাসা পাচ্ছি। যেখানেই যাই সবাই কাছে এসে কথা বলেন, স্নেহ করেন, দোয়া দেন। ভালোই লাগে। তখন মনে হয় এই মানুষগুলোর জন্য আমার সারা জীবন কাজ করে যাওয়া উচিৎ। দর্শকদের প্রতি দায়বদ্ধতা আসলেই অনেক। তাদের এই ভালোবাসার রিটার্ন সারাজীবন দিয়ে যেতে চাই। ভালো ভালো কিছু চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের হৃদয়ে সারাজীবন ঠাঁই পেতে চাই।