Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আমরা সে পথেই এগুচ্ছি -কনা

এ প্রজন্মের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী দিলশাদ নাহার কনা। নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বেশ কিছু শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। অডিওর পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গানেও ব্যস্ত সময় পার করছেন। এক বিকেলে তার সঙ্গে কথা হয় বর্তমান ব্যস্ততা ও সঙ্গীত জীবন নিয়ে…

আনন্দ আলো: আপনার রেশমীচুড়ি মিউজিক ভিডিওটি ইউটিউবে ৬০ লাখের বেশি দর্শক উপভোগ করেছেন। আপনার অনুভূতি কেমন?

কনা: অনভূতি খুবই ভালো। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো মেয়ে  শিল্পীর মিউজিক ভিডিওর সর্বোচ্চ ভিউয়ার্স হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা আমার জন্য খুবই উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার বিষয়। যখন ভিডিওটি করেছিলাম তখন মনে  হয়েছিল ভালো কিছু একটা হবে। এত ভালো হবে তা কল্পনা করতে পারিনি। শুধু বাংলাদেশে নয়, বাইরে অনেক দেশের দর্শক ভিডিওটি দেখেছে। এটা ভাবলেই আনন্দে মন ভরে যায়।

আনন্দ আলো: এই সাফল্যের রহস্য কী?

কনা: শোনার পাশাপাশি শ্রোতারা ভিডিওতে আমাকে দেখতে চায়। নাচ থাকলেতো কথা নেই। ‘ধিমতানা’র পর এই গানটিও তার প্রমাণ। আমি চেয়েছি হ্যাপি মুডে গানটি করতে। যার মধ্যে আনন্দ আছে, উচ্ছ্বাস আছে। গান শুনলে নাচতে ইচ্ছে করে। ট্র্যাকটি প্রথম শোনার পর নিজেই নাচতে শুরু করেছিলাম। এখন শ্রোতারাও শুনছে, নাচছে। অনেকে ড্যাবম্যাশ করেও ফেসবুকে ছাড়ছেন।

আনন্দ আলো: রেশমীচুড়ি গান ও ভিডিও তৈরির গল্পটা জানতে চাই?

কনা: গানটির সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক কলকাতার আকাশ সেনের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয়। সে নিজ থেকেই গানটি বানিয়ে আমাকে পাঠায়। শুনেই ভালো লাগে। যখন ভিডিওর পরিকল্পনা হচ্ছিল, তখন সেই বলেছিল কলকাতার শিবরাম শর্মার কথা। ভিডিওটির শুটিং ঢাকার ফোক স্টুডিওতে হলেও অনেকে ভেবেছিলেন কলকাতায় হয়েছে।

আনন্দ আলো: অনেকেই বলেন, এই গানটি ‘চিটিয়া কালাইয়ার’ নকল।

কনা: দুএকজন লোক সব সময়ই আমার পেছনে লেগে থাকে। আগেও এমনটা করেছে। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন গানটির কথা, সুর, সঙ্গীতায়োজন কোনো কিছুর সঙ্গেই এই গানটির মিল নেই। কে কী বলল, এসব নিয়ে আমি চিনিৱত নই। দিন শেষে শ্রোতারা কীভাবে গ্রহণ করল সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

আনন্দ আলো: নতুন কি কি মিউজিক ভিডিওর কাজ করছেন?

কনা: বর্তমানে দুটি গানের মিউজিক ভিডিওর কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। একটি ফুয়াদ ফিচারিং ‘ভিতরে বাহিরে’। ভিডিওটি নির্মাণ করছেন তানিম রহমান অংশু ভাই। অন্য গানটি হলো- অটামনাল মুন ফিচারিং ‘সেলফি’। মিউজিক ভিডিওটি নির্মাণ করেছেন আশিকুর রহমান। খুব শিগগিরই ভিডিওটি প্রকাশ করব। এ বছরে আরো আরও কিছু গানের মিউজিক ভিডিও রিলিজ করার ইচ্ছা আছে।

আনন্দ আলো: অনেকেই বলেন, গান এখন ভিডিও নির্ভর হয়ে গেছে। আপনার অভিমত কী?

কনা: খুব সহজে মানুষের কাছে গান পৌঁছানো আর জনপ্রিয়তা পাওয়ার একমাত্র উপায় ভিডিও। তাই গান তৈরির সময়ই ভিডিওর কথা মাথায় রাখতে হয়। গানের কথার সঙ্গে মিল রেখে গল্প আর গ্ল্যামারকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি এসব গানের ভিডিও জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে।

আনন্দ আলো: এখন আর কেউ ১০/১২টি গান দিয়ে অ্যালবাম প্রকাশ করছে না। একটি দুটি সিঙ্গেল করে প্রকাশ করছে। এ বিষয়টিতে আপনার অভিমত কী?

কনা: বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে আমাদের। তাই আমরা সেই পথেই এগুচ্ছি। কারণ সারা বিশ্বেই এখন শ্রোতারা ইউটিউবে অথবা মোবাইলে গান শুনছে। আমরা গত বছর থেকে এ ধারাটিতে অভ্যস্ত বেশি হয়েছি। তো বেশির ভাগ গানই ডিজিটাললি প্রকাশ হচ্ছে। সঙ্গীতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি।

আনন্দ আলো: চলচ্চিত্রের গানের কী খবর?

konaকনা: প্লেব্যাক চলছে ভালোই। এরই মধ্যে বেশ কিছু নতুন গানে কণ্ঠ দিয়েছি। গানগুলো ভালো হয়েছে। ইমরানের সঙ্গে আমার গাওয়া বসগিরি ছবির ‘দিল দিল দিল’ গানটি বেশ প্রশংসিত হয়েছে। আরো কয়েকটি প্লেব্যাকের অফার আছে।

আনন্দ আলো: বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল ও ভয়েস ওভারের কাজের কী খবর?

কনা: বাংলাদেশে এখনকার ৮৫ শতাংশ বিজ্ঞাপনের ভয়েস ওভার আমার। টিভি ছাড়লে যখন নিজের কণ্ঠ শুনতে পাই, তখন ভালোই লাগে। মজার বিষয় হচ্ছে, আমি এমনভাবে ভয়েস ওভারগুলো দেই, অনেকে ধরতেই পারে না এটা আমার কণ্ঠ। যেমন- ‘এই হলো ভ্যাসলিনের ত্বক সুস্থ করার শক্তি’, ‘হাস আর বাশ, ডাব ফিরিয়ে দেব? কখনোই না’ আমার করা কিছু ভয়েসওভার। ভয়েসওভারের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলেও নিয়মিত কণ্ঠ দিচ্ছি। বিভিন্ন চ্যানেলে আমার গাওয়া জিঙ্গেলে ডজন খানেকের ওপর বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে।

আনন্দ আলো: এখন সঙ্গীতের অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে?

কনা: এখন অনলাইনে গান প্রকাশ হচ্ছে। মোবাইল, ইউটিউব মানুষের গান শোনার ও দেখার বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এখন সিডির মাধ্যম নেই বললেই চলে। এটাই সময়ের দাবি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এটা ভালো। তবে আরো ভালো লাগছে নতুন করে অনেক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অ্যালবামে বিনিয়োগ করছে বলে। কারণ এটা খুব দরকার যখন বেশি কোম্পানি বিনিয়োগ করবে তখন প্রতিযোগিতাও বাড়বে।

আনন্দ আলো: অনেকে বলেন শোবিজে বন্ধু পাওয়া বেশ কঠিন। আপনার বন্ধু কারা?

কনা: শোবিজে অনেকেই আমার ভালো বন্ধু। সমসাময়িক ছেলে সিঙ্গারদের সঙ্গেই আমার ভালো বন্ধুত্ব। আবার জুনিয়রদের সঙ্গেও আমার ভালো সম্পর্ক আছে। কোনাল, লিজা ওরা আমার ঘরের মানুষ। মিডিয়ায় সবার সঙ্গে আমার ভালোসম্পর্ক।

আনন্দ আলো: আপনি গান গেয়ে মানুষকে বিনোদিত করেন। আপনার বিনোদন কী?

কনা: বিনোদন আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আমি বিনোদিত হই যখন মানুষ আমাকে ভালোবাসে, আমার গান শোনে। মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় বিনোদন আমার কাছে নেই।

আনন্দ আলো: এখন বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরে অ্যালবাম রিলিজ হচ্ছে। এতে সুবিধা কী?

কনা: সুবিধা আছে। অর্থনৈতিক ভাবে একটা ভালো ব্যাকআপ পাওয়া যাচ্ছে। কোম্পানিগুলো অনেক ইন্টাররেস্ট হচ্ছে। এখন সবাই এফএম রেডিও, ইউটিউবে গান শুনে।

আনন্দ আলো: আপনি অভিনয়ও করেছেন। এব্যাপারে জানতে চাই।

কনা: এটা জরুরি ছিল না। শখের বসে অভিনয় করেছিলাম। এখন অনেকেই নাটক-সিনেমায় অভিনয়ের কথা বলে। এখন মন থেকে চায় না আমি অভিনয় করি। আগে মন চেয়েছিল অভিনয় করেছিলাম। আমি তো নাটক করেছি, কারো ক্ষতি করি নাই। অভিনয় করেছি শখ পূরণ হয়েছে।

আনন্দ আলো: নতুনরা কেমন করছে?

কনা: খুব ভালো করছে। নতুনদের মধ্যে আমি অনেক সম্ভাবনা দেখতে পাই। তবে একটা কথাই বলবো ধৈর্য নিয়ে গান করতে হবে। রাতারাতি তারকা খ্যাতির জন্য গান করলে হবে না।

আনন্দ আলো: বিয়ে করছেন কবে?

কনা: হ্যা, বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। সব ঠিকঠাক থাকলে এবছরেই বিয়ে করবো ইনশাআল্লাহ।