সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
সৈয়দ ইকবাল: হঠাৎই ঢাকায় দুই বন্ধুর দেখা। অনেক দিন পর দু’জনের দেখা হওয়ার আনন্দে আত্মহারা। তাই তো বেশ জোরে জোরেই রাস্তায় কথা বলা শুরু করলো দু’জনে। তাদের কান্ডকারখানায় ব্যস্ত রাস্তায় মানুষের বেশ জটলা লেগে যায়। শুধু তাই নয়, রাস্তার গাড়িগুলো মানুষের জন্য আটকে থাকে বেশকিছুক্ষণ। খানিক পরেই দূর থেকে একটা ‘কাট’ শব্দ ভেসে আসে। সবার দৃষ্টি তখন ‘কাট’ শব্দটি বলা মানুষটির দিকে। উপস্হিত সকলেই বুঝে ফেললেন এটা শুটিং-এর দৃশ্য। নগরীর উওরার একটি ব্যস্ত এলাকায় এমনিভাবে পাওয়া গেলো অভিনেতা শ্যামল মাওলা ও নয়নকে। তারা আরটিভিতে প্রচার চলতি ধারাবাহিক নাটক ‘অনাকাঙখিত সত্য’র শুটিং করছিলেন। এক পর্যায়ে নাটকটির পরিচালক শ্রাবণী ফেরদৌস তাদের কাছে এলেন। ক্লোজ শট নেয়ার পালা। নেয়া হলো সেটা। এরই মধ্যে কথা হলো পরিচালক শ্রাবণী ফেরদৌসের সঙ্গে। কথায় কথায় নাটকটি সম্পর্কে বললেন, ‘এটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ধারাবাহিক নাটক। প্রতিটি পর্বে আলাদা আলাদা গল্প থাকে। প্রতিদিনই নতুন গল্প নিয়ে নাটকটি শুরু হয় এবং সেদিনই সেটা শেষ হয়। প্রতিটি গল্পের আলাদা একটা শিরোনাম থাকে। এই গল্পটির নাম ‘ক্রেডিট কার্ড’। ’ গল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ জীবিকার তাগিদে গ্রাম থেকে একটি ছেলে শহরে আসে। অনেক কষ্টে একটি ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ড ডিপার্টমেন্টে ছেলেটির চাকরী হয়। তার কাজ হলো ক্রেডিট কার্ড কাস্টমারদের সার্ভিস দেয়া। এমনিভাবে একদিন একটি বাসায় যায় সে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে। সেখানে তার সাথে দেখা হয় তারই ভালোবাসার মানুষের সাথে। যে ভালোবাসা সে গ্রামে থাকার সময় লালন করেছিল। তার বিয়ে হয় শহরের ধর্নাঢ্য এক ব্যক্তির সাথে। ঘটনাক্রমে বেরিয়ে আসে একটি অনাকাঙখিত সত্য। ’ পরিচালকের সঙ্গে কথা শেষ হতে না হতেই ডাক পরলো পরবতর্ী সিক্যুয়েন্সের। এবারের দৃশ্যে আছে সোনিয়া হোসেন, শ্যামল মাওলা ও কল্লোল। দৃশ্যে কল্লোল আর সোনিয়া স্বামী-স্ত্রী। ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দেয়ার জন্য বাসায় আসেন শ্যামল। তাকে দেখে সোনিয়া তো অবাক! কোনো কথা না বলেই সোনিয়া স্হান ত্যাগ করে। নেয়া হলো দৃশ্যটি। এবার নেয়া হবে সোনিয়া রুমে এসে কিছু একটা ভাবছে এবং চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। কিন্তু সোনিয়ার কিছুতেই চোখ দিয়ে পানি আসছিল না। তাই পরিচালক বার বার মেকআপ আর্টিস্টকে বলছিলেন চোখে গ্লিসারিন দেয়ার জন্য। দেয়া হলো গ্লিসারিন। এবার যেনো সোনিয়ার চোখে পানির সে্্রাত নামতে শুরু করলো। দু’বারেই টেক হলো দৃশ্যটি।
বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা। রাতের কিছু ইনডোর দৃশ্যের শুটিং হবে। এই ফাঁকে কথা হলো শ্যামল মাওলার সঙ্গে। নাটকটির প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন, ‘খুব ইন্টারেস্টিং গল্পটা। আমার চরিত্রও অন্যরকম। এই প্রথম এমন চরিত্রে অভিনয় করছি। দর্শক অন্য এক শ্যামলকে দেখতে পাবেন। ’
শুটিং হাউসটির ড্রয়িংরুমে এসে দেখা গেলো অভিনেতা নয়নকে। নিজের ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এই পর্যন্ত আসার নানান কথা তিনি শেয়ার করলেন আনন্দ আলো’র সঙ্গে। বললেন, ‘১৯৯২ সালে প্রথম মঞ্চনাটকে অভিনয় দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু। এরপর ২০০১ সালে নাট্যকেন্দ্রে যোগ দেই আমি। সেখানে মঞ্চগুরু তারিক আনাম খানের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছি এই মাধ্যমে। ২০০২ সালে জাহিদ হাসানের নাটকের মধ্যদিয়ে টিভি নাটকে আমার যাত্রা শুরু। ’ আলোচনায় আসে তার সম্প্রতি অভিনীত ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি ‘জালালের গল্প’র প্রসঙ্গও। ছবিটিতে নিজের বেশি অভিনীত কমেডি চরিত্রের বাইরে গিয়ে সিরিয়াস একটি চরিত্রে অভিনয়ের গল্পও বলেন। তিনি বলেন, ‘জালালের গল্প ছবিতে এমন চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার বলা যায়। ছবির শুরুতেই আমার চরিত্র এবং চরিত্রটি আমি সচারচর যেমন চরিত্রে অভিনয় করি মানে কমেডি ধাচের না। তাই একজন অভিনেতা হিসেবে বিষয়টা বেশ চ্যালেঞ্জ ছিলো। নিজেকে বার বার আয়নার সামনে দাড় করিয়ে গলাচিপে ধরে বলেছি ‘নয়ন, তুমি কিন্তু এখানে কমেডিয়ান না। সিরিয়াস চরিত্র। ’ শেষমেষ ছবিটি অনেক সফল হয়েছে। একজন অভিনেতার আর কী চাওয়া থাকতে পারে বলুন। ’ কথাগুলো এ নাগাড়ে বলার পর নয়নের চোখে মুখে আত্মতৃপ্তির ছাঁয়া। খানিকটা চুপ তিনি। এরপরই আবার বললেন, ‘আমার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয় তৌকীর আহমেদের ‘জয়যাত্রা’র মাধ্যমে। সবচেয়ে ভালো লাগছে এই ভেবে যে, দুটো ছবিই দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচকদের বেশ নজর কেড়েছে। ’
এরই মধ্যে নয়নের ডাক পরলো। পরবতর্ী সিক্যুয়েন্সের দৃশ্যধারণ করা হবে। নয়ন গেলেন কস্টিউম বদলাতে। এখানে বলে রাখা ভালো নির্মাতা দম্পতি শুভ্র খান ও শ্রাবণী ফেরদৌসের পরিচালনায় ধারাবvহিক নাটক ‘অনাকাংঙখিত সত্য’। আরটিভিতে প্রচার হওয়া ভিন্নধমর্ী এই ধারাবাহিকটি নিয়ে শুভ্র খান বলেন, এটি অনেক গবেষণাধর্মী একটি কাজ। যেহেতু সত্য ঘটনা অবলম্বনে তাই অনেক তথ্য ঠিকমতো উপস্হাপন করতে হচ্ছে। আমরা ঘটনাটা ঠিক রেখে স্ক্রিপ্টে বেশ নাটকীয়তাও দেই। এতে করে দর্শকদের কাছে নাটকটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতি বেশ কয়েকটি গল্পের নাটক নির্মাণ করে থাকি। প্রতিটি গল্পে থাকেন আলাদা আলাদা অভিনয়শিল্পী। এবারের লটে একে আজাদ সেতু, ঈশিকা খান, তৌসিফ, শ্যামল মাওলা, নয়ন, সোনিয়া হোসেন, আসিফসহ আরো অনেকে অভিনয় করেছেন। ’ এই পর্যন্ত নাটকটির ৬৮টি পর্ব প্রচার হয়েছে। শোবিজের প্রায় জনপ্রিয় সব অভিনয়শিল্পী অনাকাঙখিত সত্যে অভিনয় করেছেন। দর্শক চাহিদা অনুযায়ী নাটকটি চলতে থাকবে বলে জানান শুভ্র খান। নাটকটি প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ৮.২০ মিনিটে আর টিভিতে প্রচার হচ্ছে।